নঈম নিজাম : একটা সময় ভদ্রলোকের সব ছিল। ক্ষমতা, দাপট, বিত্তবৈভব কোনো কিছুর কমতি ছিল না। রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলে মানুষ সালাম দিত। সরকারি কর্মকর্তারা ডাকতেন ‘স্যার’। নিজের নির্বাচনী এলাকায় যত নির্দেশ দিতেন বাস্তবায়ন হতো। ঢাকা শহরে এমপি হোস্টেলে অফিস ছিল। এলাকার মানুষ এসে থাকত। ভদ্রলোকের আলাদা বাড়িও ছিল ঢাকায়। নির্বাচনী এলাকা ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে গেলে থাকতেন নিজের বাড়িতে। লোকজনের ভিড় লেগেই থাকত। ঘর থেকে বের হয়ে হাঁটলে পেছনে থাকত বহর। তোষামোদকারীর অভাব ছিল না। আদেশ-নির্দেশ বাস্তবায়নকারীর সংখ্যাও ছিল অনেক। এমপি হোস্টেলে সকালসন্ধ্যায় থাকত জনস্রোত। গাড়িতে যেতেন সভা-সমাবেশে। বিপদে-আপদে দাঁড়াতেন মানুষের পাশে। ক্ষমতার দাপুটে মুহূর্তে করতেন সব সমস্যার সমাধান। বঙ্গভবন, প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের অফিসে যখন তখন প্রবেশ করতেন। প্রেসিডেন্টের রুমে প্রবেশ করতে পারা কোনো বিষয় ছিল না। প্রেসিডেন্টের বাড়িতেও যেতেন। তিনি বিয়ে করেছিলেন প্রেসিডেন্টের পরিবারে। ক্ষমতার দুনিয়ার অলিগলি তার চেনা। এই ভদ্রলোকের নাম জজ মিয়া। পুরো নাম এনামুল হক জজ মিয়া। ময়মনসিংহের গফরগাঁও থেকে ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে সংসদে নির্বাচিত হয়েছিলেন জাতীয় পার্টির টিকিটে। ব্যক্তিগত সম্পর্কের জেরে পেয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্নেহ। পাকিস্তান আমলে চাকরি করতেন সেনাবাহিনীতে। তখনই পরিচয় সেনা কর্মকর্তা এরশাদের সঙ্গে। স্বাধীনতার পর সেই সম্পর্কের জেরে বিয়ে করেন এরশাদ ও রওশনের পালিত মেয়ে নাজমা আক্তারকে। তিনি ছিলেন রওশনের বোন মমতা ওহাবের মেয়ে। জন্মের পর থেকে কন্যাস্নেহে মেয়েকে মানুষ করেন এরশাদ ও রওশন। বিয়েও দেন তারা। পাত্র পুরনো পরিচিত জজ মিয়া। প্রথম জীবন সুখের ছিল নাজমা ও জজের। সেনাপ্রধানের বাড়িতে যেতেন, থাকতেন। এরশাদের সামরিক শাসন জারির পর রাজনীতিতে জড়ান জজ মিয়া। জাতীয় পার্টির ক্ষমতাকালে দুবার এমপি হন।
সেই জজ মিয়া মারা গেলেন গত সপ্তাহে। পত্রিকায় প্রকাশিত হলো দুবারের এমপি জজ মিয়ার শেষ জীবনের করুণ কাহিনি। ৮৩ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যু হয়েছে আশ্রয়ণ প্রকল্পে। অথচ একসময় শুনতাম মমতা ওহাবের অনেক সম্পদের কাহিনি। জজ মিয়ার নামও থাকত আলোচনায়। মৃত্যুকালে কোনো কিছুই ছিল না। নিঃস্ব অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। কবি নজরুল বলেছেন, ‘চিরদিন কাহারও সমান নাহি যায়… আজিকে যে রাজাধিরাজ কাল সে ভিক্ষা চায়… অবতার শ্রীরামচন্দ্র যে জানকীর পতি/তারও হল বনবাস রাবণ-করে দুর্গতি/আগুনেও পুড়িল না ললাটের লেখা হায়।’ কবির আক্ষেপই আমাদের চারপাশের সত্যিকারের বাস্তবতা। আজ যিনি যত বড় ক্ষমতাবান কাল তার কী পরিণতি কেউ জানি না। এই জীবনে অনেক মন্ত্রী, এমপি, রাজনীতিবিদ, ক্ষমতাবানকে দেখেছি। তাদের দাপুটে অবস্থানের শেষ ছিল না। ক্ষমতা হারানোর পর কারও কোনো হদিস নেই। শাহ মোয়াজ্জেমের মতো বিত্তবৈভবের মালিক দাপুটে নেতার মৃত্যুও হয়েছিল একাকী। মেয়ে থাকতেন বিদেশে। শেষ বয়সে তাঁর গুলশানের বাড়িতে অনেকটা একাই থাকতেন তিনি। আওয়ামী লীগের ১৯৯৬-২০০১ অথবা ২০০৯ মেয়াদের অনেক নেতার খবর কি আমরা জানি? বিএনপি আমলের আলোচনায় না-ই বা গেলাম। জজ মিয়ার কেস আলাদা। ১৯৯০ সালে ক্ষমতা হারানোর পর বদলে গেল তাঁর জীবন। স্ত্রীর মৃত্যুর পর আবার বিয়ে করলেন। নতুন করে ঘরসংসার করলেন শুরু। সেখানেও সমস্যার শেষ ছিল না। আগের সন্তানদের দিয়ে দিলেন সম্পদ। বেছে নিলেন আরেকটা জীবন। ঢাকা ও গফরগাঁওয়ের বাড়িও দিয়ে দিলেন। নিজের বলে থাকল না কিছু। শেষ সম্পদ পৌরসভার ১২ শতাংশ জমি দিয়ে দেন মসজিদের নামে। তারপর ওঠেন এক রুমের ভাড়া বাসায়। ঘুমাতেন মেঝেতে। চলতেন কষ্টে। দেখার কেউ ছিল না। কঠিন সংগ্রামে শেষরক্ষা হয় ভূমিহীনের কোটায় পাওয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সেখানে থাকতেন। কষ্টের জীবনে চিকিৎসার সামর্থ্য ছিল না। ঘরে ঠিকমতো চুলা জ্বলত না।
দুই দিনের ক্ষমতার দুনিয়ায় এই তো জীবন! যারা ক্ষমতা, অর্থবিত্তের বড়াই করেন তারা কী শিক্ষা নেবেন জজ মিয়ার জীবন থেকে? সেদিন পত্রিকার পাতায় দেখলাম চট্টগ্রামে মৃত বাবার রেখে যাওয়া প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকার ভাগাভাগি নিয়ে সন্তানরা লাশ দাফনে বাধা দেন। কষ্ট পেলেও বিস্মিত হইনি। পৃথিবীর নিষ্ঠুরতার গভীর চোরাবালিতে আমরা আটকে আছি। ভদ্রলোক সরকারি চাকরি করতেন। তিন মেয়ে, দুই ছেলেকে নিয়ে সুখের সংসার ছিল। একসময় সন্তানরা বড় হন। ছেলেমেয়েদের বিয়ে দেন। তিনি নিজেও যান অবসরে। এই ভদ্রলোকের জীবনের বিপত্তি এখানেই শুরু। মানুষটি হঠাৎ ক্যান্সারে আক্রান্ত হলেন। চলার পথে আলোর গতিতে নেমে আসে অন্ধকার। ছেলেরা ব্যস্ত তখন নিজের সংসার নিয়ে। বাবাকে দেখার সময় তাদের নেই। এগিয়ে আসেন তিন মেয়ে। বাবার পাশে দাঁড়ান। শুরু করেন চিকিৎসা। সে সময় চিকিৎসা ব্যয়ে ব্যাংকে গচ্ছিত কিছু টাকা তুলতে হয়। খরচও হয়। কিন্তু মানুষটিকে আর বাঁচিয়ে রাখা গেল না। মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে ক্লান্ত হয়ে তিনি চলে গেলেন। মেয়েরা বাবার লাশ নিয়ে এলেন গ্রামে দাফন করতে। দুই ভাই বাধা দিলেন দাফন কাজে। লাশ পড়ে থাকল অ্যাম্বুলেন্সে। পাড়াপড়শি ভিড় জমালেন। মসজিদের ইমাম এলেন। সবাই চেষ্টা করলেন এ বিরোধ মেটাতে। অনুরোধ করলেন। বললেন, লাশ এভাবে ফেলে রাখতে হয় না। পারলেন না। সম্পদের হিসাব-নিকাশ শেষ না হলে দাফন হবে না, ছেলেদের সাফ কথা। সময় গড়িয়ে ২৪ ঘণ্টা পার হলো। ছেলেরা লাশ দাফন করতে দেবেন না। বেলা আরও গড়াতে থাকে। ঘরের ভিতর ঝগড়া-বিবাদ শেষ হচ্ছে না। খবর পেয়ে এলেন পুলিশের ওসি। বাকি থাকলেন না উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও। তিনিও এলেন। ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফেরা এলাকার মানুষ আবার এলেন। তারা সব খুলে বললেন প্রশাসনের কাছে। জানালেন ভদ্রলোকের সন্তানরা কোনো কিছু শুনতে নারাজ। তিন বোনও সব ঘটনা জানালেন প্রশাসনকে। বললেন, ভাইয়েরা দেখতেন না বলেই তারা বাবাকে তাদের কাছে নিয়ে চিকিৎসা করিয়েছেন। অল্প কিছু টাকা তাদের বাবা ব্যাংক থেকে তুলেছেন। বাকি টাকা ব্যাংকে আছে। তারা ডকুমেন্টস দেখালেন। সব শুনে প্রশাসনিক কর্মকর্তারা ছেলেদের বোঝালেন টাকা এখনো ব্যাংকে আছে। খরচ হয়েছে অল্প। চিন্তার কারণ নেই। লাশ দাফন হোক আগে। তারপর থানায় বসে সম্পদের বণ্টন হবে। এ নিয়ে আর বাড়াবাড়ির সুযোগ নেই। প্রশাসনের নরমে-গরমে লাশ দাফনের কাজ শেষ হলো। ঘটনাটি শুনে মনটা বিষণ্ন হলো। হায়রে অর্থ! হায়রে বিত্ত! একটা মানুষ সারা জীবন লড়ে যায় পরিবার-পরিজনের জন্য। সেই মানুষটার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে পরিবার লিপ্ত হয় সম্পদের বণ্টননামায়। কীসের জন্য এত লড়াই? এত সংগ্রাম?
মরমি কবি হাসন রাজা ছিলেন একজন জমিদার। তাঁকে নিয়ে অনেক ধরনের মিথ আছে। তাঁর বিয়ে, লক্ষেèৗ থেকে বাইজি আনা নিয়ে অনেক গল্প আছে। তিনি ছিলেন ভিন্ন ধরনের জনহিতৈষী। আয়ের অংশ ব্যয় করতেন মানুষের কল্যাণে। গান, কবিতা লিখতেন মানুষের কথা চিন্তা করে। আগের দিনের জমিদাররা দামি ঘরবাড়ি বানাতেন। হাসন রাজা প্রাসাদ বানানোর দিকে মনোযোগ দেননি। দুই দিনের দুনিয়ায় বজরা সাজিয়ে হাওরে রাত কাটানোয়ও ছিল তাঁর আনন্দ। হাসন রাজার বাড়ি না করা নিয়ে প্রজাদের আক্ষেপ ছিল। সেই আক্ষেপ প্রসঙ্গে তিনি লিখলেন, ‘লোকে বলে বলেরে/ঘরবাড়ি ভালা নাই আমার/কি ঘর বানাইমু আমি শূন্যেরও মাঝার।’ ভালো করে ঘর বানিয়ে কয়দিন থাকবেন সেই আক্ষেপও করেছেন হাসন রাজা। একজন বিখ্যাত লেখকের বইতে অনেক দিন আগে পড়েছিলাম ঘর বানানো নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে কথোপকথন। সেই লেখকের হাতে কিছু অর্থ আসার পর স্ত্রী বললেন, এবার একটা ভালো দেখে বাড়ি কর। জবাবে তিনি বললেন, ঘরের চেয়ে বড় সন্তানদের মানুষ করতে পারা। দুই দিনের দুনিয়ায় আমার বাবা থাকেননি দাদার তৈরি করা বাড়িতে। আমি থাকছি না বাবার করা বাড়িতে। আমার সন্তানরা মানুষ হলে আমার করা বাড়িতে থাকবে না। আর মানুষ না হলে বিবাদে লিপ্ত হবে এই ঘরবাড়ির ভাগাভাগি নিয়ে। তারা তখন গালমন্দ করবে আমাকে। কেন এত কম রেখে গেলাম। ব্যক্তিগত জীবনে একজন শ্রদ্ধাভাজন সাংবাদিকের মৃত্যুর পর বাবার লাশ রেখেই তাঁর সন্তানদের দেখেছি বাড়ির বণ্টন নিয়ে ঝগড়ায় লিপ্ত হতে। সামাজিক মাধ্যমে পরস্পরকে দোষারোপ করে লেখালেখি করতে। মানুষ এমন করে কীভাবে? জীবন চলার জন্য সম্পদের দরকার আছে। তাই বলে রক্তের সম্পর্ক ধুলোয় মিশে যাবে অর্থবিত্তের লোভে?
লোভী ভণ্ডদের দুনিয়ায় আদর্শ এখন হিমাগারে। সততা, নিষ্ঠা জাদুঘরে। রাজনীতি অনেকের কাছে এখন লাভজনক ব্যবসায়। নির্বাচনী এলাকা অনেকটা বাণিজ্য নগরী। জমিদারপুত্র মণি সিংহ রাজনীতিতে এসেছিলেন মানবসেবা করতে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় জীবনের বড় অংশই কাটালেন কারাগারে। নিজের পরিবার-পরিজনের কথা ভাবেননি। আদর্শ বাস্তবায়ন করেছেন ত্যাগের মহিমায়। এখন সবকিছু বদলে গেছে। আদর্শ এখন বাক্সবন্দি। তারুণ্য আদর্শ খোঁজে না। চারদিকের লুটপাটের চিত্র তাদের কাছে টানে। কিছু মানুষ অর্থ ও ক্ষমতা হলে কথা বলতে পারে না। তারা বুঝতে চায় না এই অর্থ ও ক্ষমতা অনেক বেশি ক্ষণস্থায়ী। আজকের দাপুটে জীবন কাল না-ও থাকতে পারে। তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়তে পারে সব। আগের যুগের জমিদারবাড়িগুলো এখন শুধুই স্মৃতিচিহ্ন। ইট-বালি খসে পড়ছে। অথচ একদা এসব বাড়িতে রংমহল ছিল। আনন্দ উৎসবের কমতি ছিল না। শাসন ও খাজনা ওঠানোর জন্য লাঠিয়াল বাহিনী ছিল। জমিদারবাড়ির সামনে দিয়ে জুতা পরে হাঁটা যেত না। তাই খালি পায়ে হাঁটত প্রজারা। সময় বদলে গেছে। শাসনের ধরনে এসেছে পরিবর্তন। কিছু মানুষ ক্ষমতা পেয়েই ভুলে যায় অতীত। হয়ে ওঠে বেসামাল। অর্থসম্পদ আর ক্ষমতার লড়াইয়ে কাটিয়ে দেয় জীবন। একবারও ভাবে না মৃত্যুর চেয়ে বড় সত্য কিছু নেই। আজ চলে গেলে কাল কিছু থাকে না। পুরনো জমিদারবাড়ির ইট-বালি-পাথরের মতো সব খসে পড়বে। আত্মীয়স্বজন ভুলে যাবে দ্রুত। বাবা-মায়ের জন্য বছরে একবার মৃত্যুদিন পালনের সময় থাকে না উচ্চশিক্ষিত সন্তানদের হাতে। বড্ড অবহেলায় কবরের চিহ্নও মিশে যায়। কবি নাজিম হিকমতের আক্ষেপের মতো শোকের মেয়াদ বছরও থাকে না।
পাদটীকা : সেদিন অভিজাত এক বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলাম। আয়োজন ছিল নগরীর পাঁচ তারকা হোটেলে। খাওয়া-দাওয়া শেষে পাত্রপাত্রী দেখে বের হওয়ার মুহূর্তে খেয়াল হলো মোবাইল ফোন হারিয়েছে! ভাবলাম ভিআইপিদের অনুষ্ঠান। মোবাইল চোর এখানে থাকবে কেন? ভুলে গিয়েছিলাম, ভদ্রলোকদের পাশে চোর লুকিয়ে থাকে। ফোন উদ্ধারের আশায় ফরিদা ইয়াসমিনের নম্বর থেকে নিজের নম্বরে কল দিলাম। দুবার রিং হলো। তার পর থেকে বন্ধ। জাতীয় প্রেস ক্লাব সভাপতি এবার স্ত্রীর ভূমিকা নিলেন। গম্ভীর মুখে বললেন, আবারও হারিয়েছ! তোমার বারবার এমন হয় কেন? উদ্ধার অভিযানে বিভিন্ন সংস্থাকে ফোন করলাম। অনুরোধ করলাম ফোনটি উদ্ধার করে দিন। মাঝে মাঝে খবর দেখি, মোবাইল ফোন চোরচক্র আটক। এক বন্ধুর সঙ্গে শতভাগ বাজি ধরে বললাম, আমার ফোন উদ্ধার হবে না। আমার জীবনে হারানো ফোন উদ্ধারের ঘটনা নেই। বেশির ভাগ মানুষের জীবনে যা হারিয়ে যায় তা আর ফেরত আসে না। এলেও থাকে না আগের মতো!
লেখক : সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন। সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন