সংগৃহীত ছবি
অনলাইন ডেস্ক : অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, দেশের মানুষ বারবার আশাহত হয়েছে। তারা যেন আর আশাহত না হয়। কারণ এবার তারা হোঁচট খেলে আর উঠে দাঁড়াতে পারবে না। তিনি আরও বলেন, জুলাই-আগস্টের গণহত্যার বিচার এবং রাষ্ট্রের সংস্কার কাজ এগিয়ে চলছে। আর আমরা যে সময় পাবো তার মধ্যে যেন এই কাজগুলোকে এগিয়ে নিতে পারি।
মঙ্গলবার ) রাজধানীর প্রেস ইন্সটিটিউট, বাংলাদেশ (পিআইবি) মিলনায়তনে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত তারুণ্যের উৎসব-২০২৫ উপলক্ষে প্রামাণ্য চিত্র ও চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মাহফুজ আলম আরও বলেন, শেখ হাসিনা পুলিশ বাহিনী ও বিজিবিকে রক্ষীবাহিনীতে পরিণত করেছিলেন। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর নৈতিক মনোবল ভেঙে দিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে গড়ে ওঠা সেনাবাহিনীকে কনটামিনেটেড (দূষিত) করে গেছেন। শেখ হাসিনা ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। তিনি জুলাই থেকে আগস্টে তার প্রমাণ রেখে গেছেন। আর এ জন্যই তাকে বাকশাল গঠন করতে হয়নি। প্রশাসনকেই তিনি বাকশাল হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন।
তিনি বলেন, তার (শেখ হাসিনা) পরিকল্পনা ছিল মুজিব আদর্শের ট্যাবলেট (গুলি) খাইয়ে কয়েক প্রজন্মকে পঙ্গু করে রাখা। রাষ্ট্রের টাকা খরচ করে শেখ হাসিনা আদর্শিক গুণ্ডাদের পুষতো। সেখানে সাংবাদিকরাও ছিল। তারা হত্যাকাণ্ডের সময় পরিবেশ স্বাভাবিক করতে মৌলবাদ বিরোধী তকমা লাগিয়ে তা বৈধ করেছে। পুরো ব্যবস্থা এমনভাবে গড়েছেন যেখানেই হাত দেওয়া হয়, সেখানেই গুণ্ডাদের পাওয়া যায়।
উপদেষ্টা বলেন, শেখ হাসিনা শুধু প্রতিষ্ঠান নয়, ব্যক্তি মানুষকেও দূষিত করে রেখে গেছেন। তাই কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে সংস্কার করে ফ্যাসিবাদ দূর করা সম্ভব নয়।’ শেখ হাসিনা তরুণদের বন্দী করে রেখেছিলেন একটি মতাদর্শের মধ্যে। তরুণদের ক্ষোভ-ঘৃণাকে ইতিবাচক দিকে পরিচালিত করতে হবে। অবশিষ্ট ফ্যাসিবাদ দূর করতে হবে। জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানকে সামগ্রিক বিপ্লবে রূপান্তর করতে হবে। শেখ হাসিনা যে মানসিকতা তৈরি করেছেন, সে দূষণে তরুণ সমাজও যুক্ত হয়েছে। সেখান থেকে তরুণ সমাজকে মুক্ত করতে হবে, দেশের ১৮ কোটি মানুষকে মুক্ত করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, ব্যক্তি এবং কাঠামো থেকে ফ্যাসিবাদ দূর করতে হবে। শহীদ এবং আহতদের প্রত্যাশা থেকে নতুন বন্দোবস্তের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার ও প্রতিষ্ঠানের সংস্কার প্রয়োজন। প্রতিষ্ঠানগুলোর আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন। আর এ জন্য সমাজের মধ্যে বোধের জন্ম দিতে হবে। শহীদ আবু সাঈদের বোধ সকল মানুষের মধ্যে জাগ্রত করতে হবে। তার মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। মানুষের স্মৃতিতে সব সময় তা জাগ্রত রাখতে হবে।
তিনি বলেন, ডিজিটালি একসেসেবিলিটি থাকায় তরুণরা লাইভ বুলেটের সামনে দাঁড়িয়ে এই শতাব্দীর ফ্যাসিস্টকে তাড়িয়ে দিয়েছে। তরুণদের রাগ, বিক্ষুদ্ধতাকে ইতিবাচকভাবে কাজে লাগিয়ে ফ্যাসিবাদের হাত থেকে দেশকে উদ্ধার করতে হবে। বিশ্বের তরুণদের জন্য আমাদের তরুণরা অনুকরণীয় হয়ে উঠবে। দেশের তরুণরাই গণতান্ত্রিক মানসিকতা এবং সকলের জন্য আগামীর রাষ্ট্র গড়ার নেতৃত্ব দেবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন এ উপদেষ্টা।
তথ্য ও সম্প্রচার সচিব মাহবুবা ফারজানার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও শহীদ শাকিলের মা বিবি আয়েশা। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন পিআইবির মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ।সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আব্দুল্লাহ ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ।