ছবি সংগৃহীত
অনলাইন ডেস্ক : আইনি স্বীকৃতি দিয়ে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন এবং এর ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। একই সঙ্গে দলটি সংসদ নির্বাচনে প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (পিআর) পদ্ধতির বাস্তবায়ন, নির্বাচনে সমান সুযোগের নিশ্চয়তা এবং ফ্যাসিবাদী শক্তি ও তাদের সহযোগীদের বিচারের দাবি জানিয়েছে।
সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম (চরমোনাই পীর) এসব দাবি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, গত বছরের জুলাই মাসে যে অভ্যুত্থান হয়েছিল, সেটি শুধু রাজনৈতিক ক্ষমতার পালাবদলের জন্য ছিল না; বরং স্বৈরতন্ত্র নির্মূল, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাধীন করা, ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরি এবং জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জন্য ছিল। কিন্তু দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও সেই লক্ষ্য পূরণ হয়নি। বরং বিভিন্ন পক্ষের রাজনৈতিক স্বার্থের কারণে জুলাই সনদকে দুর্বল করে ফেলা হয়েছে।
তিনি অভিযোগ করেন, সরকার সংস্কার ও বিচারকে উপেক্ষা করে একতরফাভাবে নির্বাচন আয়োজনের দিকে এগোচ্ছে। এতে করে দেশে আবারো পুরনো রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ফিরে আসতে পারে। তার মতে, অভ্যুত্থানের যে গণতান্ত্রিক প্রত্যাশা ছিল, সেটি পূরণ করতে হলে এখনই জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দিয়ে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। অন্যথায় নির্বাচনের পর আর কোনো দল এই সনদের প্রতি দায়িত্ব পালন করবে না।
আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে চরমোনাই পীর বলেন, মাত্র কয়েকজনকে গ্রেফতার দেখিয়ে বিচারের নাটক চলছে, অথচ মূল হোতারা বিদেশে পালিয়ে থেকে এখনো চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে। এতে করে অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া বিপ্লবীদের জীবন হুমকির মুখে পড়েছে। তিনি বিচার ব্যবস্থাকে জেলা পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি বিদেশে পালিয়ে থাকা অভিযুক্তদের ফিরিয়ে আনা এবং তাদের দ্বারা পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারের দাবি জানান।
জাতীয় পার্টির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে তারা ফ্যাসিবাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে। অবৈধ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে স্বৈরশাসকদের বৈধতা দিয়েছে। বর্তমানে দলটি আবারো সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। এজন্য তিনি জাতীয় পার্টিসহ ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার এবং বিচার চলাকালীন তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার দাবি জানান। পাশাপাশি এসব শক্তিকে তিনি ভারতীয় আধিপত্যবাদী শক্তির প্রকাশ্য এজেন্ট বলেও উল্লেখ করেন।
নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে চরমোনাই পীর বলেন, বর্তমান প্রশাসন পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করছে। লন্ডন বৈঠক ও একতরফাভাবে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। এতে মাঠ প্রশাসনও একটি নির্দিষ্ট দলের প্রতি পক্ষপাত দেখাচ্ছে। তিনি বলেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ছাড়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। এজন্য অবিলম্বে প্রশাসনকে নিরপেক্ষ করতে হবে এবং সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতে হবে
নির্বাচন পদ্ধতি প্রসঙ্গে ইসলামী আন্দোলনের আমীর বলেন, গত ৫৪ বছরে প্রচলিত পদ্ধতিতে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, তা শুধু রাজনৈতিক অস্থিরতা ও দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্র দুর্বল হয়েছে, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকারিতা হারিয়েছে এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতি ধ্বংস হয়েছে। তিনি বলেন, ব্যক্তিখাতের কিছু উন্নয়ন হলেও সামগ্রিকভাবে দেশ পিছিয়েছে। এজন্য সংসদের উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন আয়োজনের বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, ইসলামী আন্দোলন কোনো রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে নয়, বরং জনগণের অধিকার, শহীদদের রক্ত ও গণঅভ্যুত্থানের চেতনার প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই এই দাবিগুলো তুলছে। তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, দাবি বাস্তবায়ন না হলে আন্দোলন আরও কঠোর হবে এবং সময়ের সাথে সাথে তা দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে।
সংবাদ সম্মেলনে ইসলামী আন্দোলন তাদের পরবর্তী কর্মসূচিও ঘোষণা করে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় বিক্ষোভ ও সমাবেশ, ১৯ সেপ্টেম্বর বিভাগীয় শহরগুলোতে বিক্ষোভ এবং ২৬ সেপ্টেম্বর দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিক্ষোভ মিছিল।
চরমোনাই পীর বলেন, আমরা সংস্কার, বিচার ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ধারা চাই। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে হবে, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন করতে হবে এবং ফ্যাসিবাদী শক্তিকে বিচারের মুখোমুখি আনতে হবে। অন্যথায় জনগণের ত্যাগ ও শহীদদের রক্ত বৃথা যাবে।