ফাইল ফটো
অনলাইন ডেস্ক :নানা নাটকীয়তার পর বিসিবির নতুন সভাপতি হয়েছেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল। গতকাল (৩০ মে) ফারুকের পরিচালক পদ থেকে মনোনয়ন বাতিলের দিনে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ কাউন্সিলর হিসেবে মনোনীত করে বুলবুলকে। এনএসসির ক্ষমতাবলে বিসিবির পরিচালক হয়েছেন তিনি। তারপর হয়েছেন বিসিবির প্রেসিডেন্ট।
সরকারি হস্তক্ষেপের কারণে এর আগে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ডকে নিষিদ্ধ করেছিল আইসিসি। সরকারি হস্তক্ষেপের প্রভাব যেকোনো দেশের ক্রিকেট বোর্ডে পড়লে কঠোর অবস্থান নেয় আইসিসি। তাই শঙ্কা জেগেছিল যে, এনএসসির সরাসরি হস্তক্ষেপে নিষেধাজ্ঞায় পড়তে পারে বিসিবিও।
তবে এ ব্যাপারে স্পষ্ট করেছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। তিনি বলেছেন, ‘ক্রিকেটের অবনমন আর বিপিএল অব্যবস্থাপনার জন্যই ফারুক আহমেদকে সরিয়েছে এনএসসি। আইসিসির নিয়ম মেনেই তাকে অপসারণ করা হয়েছে। বিসিবির নিষেধাজ্ঞায় পড়ার কোনো শঙ্কা নেই।’
বৃহস্পতিবার (২৯ মে) ১০ সদস্যের বিসিবি বোর্ডের ৮ পরিচালকই ফারুক আহমেদের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে ক্রীড়া মন্ত্রণালয় বরাবর চিঠি দেন। সেই চিঠিতে ফারুককে ‘স্বেচ্ছাচারী’, ‘আধিপত্যবাদী’ বলা হয়েছে। তা ছাড়া তার বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ ছিল। পরিচালকদের সেই প্রস্তাবে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) ফারুকের মনোনয়ন বাতিল করে দেয়।
এর আগে এনএসসি মনোনীত পরিচালক হিসেবে বিসিবির সভাপতি হয়েছিলেন ফারুক আহমেদ। তিনি যে উপায়ে সভাপতি হয়েছিলেন, অপসারিতও হলেন একই সূত্র ধরে। এর আগে অবশ্য যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার বাড়িতে বুধবার বৈঠক করেছিলেন ফারুক। সেখানে তাকে পদত্যাগ করতে বলেছিলেন সজীব ভুঁইয়া।
কিন্তু ফারুক পদত্যাগ না করে সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘আমি কেন পদত্যাগ করব? আমাকে কোনো কারণ জানানো হয়নি। যদি বলা হতো, আমি কোথায় ব্যর্থ হয়েছি, তাহলে বুঝতাম। শুধু জানানো হয়েছে, উপরমহল আমাকে আর চায় না। কোনো ক্রিকেটীয় কারণ বলা হয়নি। তাই পদত্যাগ করব না।’
তবে তাকে কেন অপসারণ করা হয়েছে, সেই কারণটা অবশ্য পরে জানায় এনএসসি। ২০২৫ বিপিএলে ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক ইস্যুতে সত্যানুসন্ধান কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ করে তারা। সেই রিপোর্টে অব্যবস্থাপনার সব দায় দেওয়া হয়েছে ফারুকের কাঁধে। মনোনয়ন বাতিলে এনএসসি এটাই সামনে এনেছে।
শুক্রবার (৩০ মে) ফারুক আহমেদের চেয়ারে বসেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল। সেই প্রক্রিয়াও সারা হয়েছে দ্রুততম সময়ে। বিসিবির সভাপতি হতে হলে প্রথমে হতে হবে কাউন্সিলর, তারপর বোর্ডের পরিচালক, এরপর ভোটে হতে হবে নির্বাচিত। কিন্তু আমিনুল ইসলাম কাউন্সিলরই ছিলেন না!
বৃহস্পতিবার রাতে বিসিবির জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) মনোনীত কাউন্সিলর হিসেবে অনুমোদন দেওয়া হয় আমিনুল ইসলামকে। এনএসসির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের গঠনতন্ত্রের অনুচ্ছেদ: ১৩.২ (খ) (৪) মোতাবেক মো. আমিনুল ইসলামকে পরিচালক হিসেবে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ কর্তৃক মনোনীত করা হলো।’
অনলাইনে এক সভা করে আমিনুলের কাউন্সিলরশিপ দ্রুত অনুমোদনও করেন ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালকরা। তাই নতুন বিসিবি সভাপতি হতে আর কোনো বাঁধা থাকে না। গতকাল বিকেলে বোর্ড সভায় পরিচালকরা নতুন সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করেন আমিনুলকে।
তবে বিসিবিতে সরাসরি সরকারি হস্তক্ষেপের কারণে আইসিসির নিষেধাজ্ঞায় পড়ার শঙ্কা ছিল। আইসিসি, ফিফার মতো সংস্থাগুলো বোর্ডে সরকারি হস্তক্ষেপ মানে না কোনোভাবে। সরকারের হস্তক্ষেপের কারণে যুক্তরাষ্ট্র আর ভারতের মতো ফুটবল ফেডারেশনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল ফিফা।
এর আগে, বোর্ডে সরকারের হস্তক্ষেপের অভিযোগে পাকিস্তান আর শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট বোর্ডকেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল আইসিসি। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের আইসিসির নিষেধাজ্ঞায় পড়ার কোনো শঙ্কা নেই। এ ব্যাপারে আজ যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা নিজেই পরিষ্কার করেছেন।