এত অস্ত্র কোথায় পায় ইসরায়েল?

ছবি সংগৃহীত

 

গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় নির্বিচারে আগ্রাসন চালাচ্ছে ইসরায়েল। এতে গাজা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। দীর্ঘ এই সময়ে ৪০ হাজার ৮৭৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ৯৪ হাজার ৪৫৪ জন। আরও নিখোঁজ রয়েছে বহু সংখ্যক মানুষ।

 

দীর্ঘ ১১ মাস ধরে চলমান এই যুদ্ধে বিপুল অস্ত্রের প্রয়োজন হয়েছে। কিন্তু এত কোথায় পায় ইসরায়েল?

যুক্তরাষ্ট্র

 

ইসরায়েল সবচেয়ে বেশি মারণাস্ত্র সহায়তা পেয়ে আসছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে থেকে। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এসআইপিআরআই) তথ্য অনুসারে, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ইসরায়েলের প্রধান প্রচলিত অস্ত্র আমদানির ৬৯ শতাংশই এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে।

 

যুক্তরাষ্ট্র ১০ বছর মেয়াদি একটি চুক্তির আওতায় ইসরায়েলকে ৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বার্ষিক সামরিক সহায়তা দিয়ে থাকে। এর উদ্দেশ্য ইসরায়েলকে তার প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে গুণগত সামরিক শক্তিতে এগিয়ে রাখা।

 

মার্কিন গণমাধ্যম গত মার্চে জানায়, গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে তখন পর্যন্ত বাইডেন প্রশাসন চুপিসারে ইসরায়েলের কাছে ১০০টির বেশি ধাপে সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি করেছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এর মূল্য ডলারের হিসেবে এমন পরিমাণ ছিল, যে ক্ষেত্রে কংগ্রেসকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানোর দরকার হয় না।

 

এসব অস্ত্রের মধ্যে হাজার হাজার গাইডেড বোমা, ছোট ব্যাসের বোমা, বাংকার বাস্টার ও ছোট অস্ত্র ছিল বলে জানা গেছে।

জার্মানি

যুক্তরাষ্ট্রের পর ইসরায়েলে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র রফতানি করে জার্মানি। এসআইপিআরআইয়ের তথ্যমতে, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ইসরায়েল যে অস্ত্র আমদানি করেছে, তার ৩০ শতাংশ জার্মানির।

 

২০২২ সালে ইসরায়েল তিনটি উন্নত ডাকার শ্রেণির ডিজেলচালিত সাবমেরিন কিনতে জার্মানির সঙ্গে ৩৩০ কোটি মার্কিন ডলারের (৩ বিলিয়ন ইউরো) একটি চুক্তি করে। এগুলো ২০৩১ সালের পর থেকে সরবরাহ করা হতে পারে।

 

বর্তমানে ইসরায়েলি নৌবাহিনী জার্মানির নির্মিত ডলফিন শ্রেণির সাবমেরিন ব্যবহার করে। এগুলোর স্থলে তারা ডাকার শ্রেণির ডিজেলচালিত সাবমেরিন ব্যবহার করবে।

 

গত বছর ইসরায়েলের কাছে ইউরোপীয় দেশটির অস্ত্র বিক্রির আর্থিক মূল্য ছিল ৩৬ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার (৩২ কোটি ৬৫ লাখ ইউরো)। ২০২২ সালের তুলনায় তা ১০ গুণ বেশি। গত বছরের ৭ অক্টোবরের হামলার পরই এই অস্ত্র রফতানি লাইসেন্সগুলোর বেশির ভাগ মঞ্জুর করা হয়েছিল।

 

জার্মান সরকার গত জানুয়ারিতে বলেছিল, বিক্রির প্যাকেজে ৩০ কোটি ৬৪ লাখ ইউরোর সামরিক সরঞ্জাম ও ২ কোটি ১০ লাখ ইউরোর যুদ্ধাস্ত্র রয়েছে।

 

জার্মানির ডিপিএ নিউজ এজেন্সির তথ্যমতে, পরে ৩ হাজারটি বহনযোগ্য অ্যান্টি-ট্যাংক অস্ত্র এবং স্বয়ংক্রিয় বা আধা স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্রের জন্য ৫ লাখ গুলি বিক্রির বিষয়টি প্যাকেজে অন্তর্ভুক্ত হয়।

ইতালি
ইসরায়েলে অস্ত্র রফতানির দিক থেকে ইতালির অবস্থান তৃতীয়। তবে এসআইপিআরআইয়ের তথ্যমতে, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ইসরায়েল যত অস্ত্র আমদানি করেছে, তার মাত্র শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ ইতালির। আমদানি করা অস্ত্রসহ সামরিক সরঞ্জামের মধ্যে হেলিকপ্টার ও নৌ আর্টিলারি অন্তর্ভুক্ত থাকার বিষয়টি জানা যায়।

 

যুক্তরাজ্যভিত্তিক চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী দ্য ক্যাম্পেইন এগেইনস্ট আর্মস ট্রেড (সিএএটি) বলছে, ২০২২ সালে ইসরায়েলের কাছে ইতালির সামরিক পণ্যের রপ্তানি ও লাইসেন্সের মূল্য ছিল ১ কোটি ৭০ লাখ ইউরো (১ কোটি ৮৮ লাখ মার্কিন ডলার)।

 

ইতালির অর্থবিষয়ক একটি সাময়িকী দেশটির জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যের বরাত দিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এ প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালে ইসরায়েলের কাছে ইতালির অস্ত্র ও গোলাবারুদ বিক্রির অর্থমূল্য ছিল ১ কোটি ৩৭ লাখ ইউরো।

 

যুক্তরাজ্য
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে যুক্তরাজ্য সরকার বলেছিল, ২০২২ সালে ইসরায়েলের কাছে ব্রিটিশ সামরিক পণ্যের রফতানি অপেক্ষাকৃত কম ছিল। এর পরিমাণ ছিল ৪ কোটি ২০ লাখ পাউন্ড (৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার)।

যুক্তরাজ্যের ডিপার্টমেন্ট ফর বিজনেস অ্যান্ড ট্রেডের নথি অনুসারে, এ সংখ্যা ২০২৩ সালে ১৮ দশমিক ২ মিলিয়ন পাউন্ডে নেমে আসে।

 

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ৩১ মের মধ্যে ইসরায়েলে সামরিক পণ্য বিক্রির জন্য ৪২টি রফতানি লাইসেন্স ইস্যু করে যুক্তরাজ্য সরকার। আর এই সময়ে বিদ্যমান লাইসেন্স ছিল ৩৪৫টি।

 

যুক্তরাজ্যের ডিপার্টমেন্ট ফর বিজনেস অ্যান্ড ট্রেড বলেছে, লাইসেন্সের আওতায় থাকা সামরিক সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে সামরিক বিমান, সামরিক যান ও যুদ্ধ নৌযানের উপাদান।

 

ব্রিটিশ চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী সিএএটি বলেছে, যুক্তরাজ্য ২০০৮ সাল থেকে ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রির জন্য মোট ৫৭ কোটি ৬০ লাখ পাউন্ডের রপ্তানি লাইসেন্স দিয়েছে। এর বেশির ভাগই ছিল যুদ্ধবিমানে ব্যবহৃত উপাদানের জন্য।

 

চলতি সেপ্টেম্বরে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি গাজায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে ব্যবহৃত হয়—এমন সামগ্রীর জন্য দেওয়া প্রায় ৩০টি রফতানি লাইসেন্স অবিলম্বে স্থগিত করার ঘোষণা দেন।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষাশিল্প
যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় ইসরায়েল নিজস্ব প্রতিরক্ষাশিল্প গড়ে তুলেছে। তারা এখন বিশ্বের নবম বৃহত্তম অস্ত্র রফতানিকারক। এ ক্ষেত্রে তারা বড় পরিসরের হার্ডওয়্যারের পরিবর্তে উন্নত প্রযুক্তিগত সামরিক পণ্যগুলোর ব্যাপারে গুরুত্ব দিচ্ছে।

 

এসআইপিআরআইয়ের তথ্যমতে, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বৈশ্বিক অস্ত্র বিক্রিতে ইসরায়েলের অবদান ২ দশমিক ৩ শতাংশ। ইসরায়েলের কাছ থেকে অস্ত্র আমদানিকারক প্রধান তিনটি দেশ হলো ভারত (৩৭ শতাংশ), ফিলিপাইন (১২ শতাংশ) ও যুক্তরাষ্ট্র (৮ দশমিক ৭ শতাংশ)।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ২০২৩ সালে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষাসামগ্রী রফতানির পরিমাণ ছিল ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি।

 

এই রফতানির মধ্যে আছে আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা (৩৬ শতাংশ), রাডার ও ইলেকট্রনিক যুদ্ধব্যবস্থা (১১ শতাংশ), ফায়ার ও অস্ত্র উৎক্ষেপণ সরঞ্জাম (১১ শতাংশ) এবং ড্রোন ও এভিওনিক্স (৯ শতাংশ)।

 

২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে, অর্থাৎ গাজা যুদ্ধ শুরুর ঠিক আগে ইসরায়েলের কাছ থেকে অত্যাধুনিক অ্যারো ৩ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কিনতে ৩৫০ কোটি ডলারের একটি চুক্তিতে সম্মত হয় জার্মানি। এটি দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র রুখতে ব্যবহৃত হয়।

ইসরায়েলে মার্কিন সামরিক মজুত
১৯৮৪ সালে ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্রের একটি বড় ভান্ডার স্থাপন করে যুক্তরাষ্ট্র। আঞ্চলিক সংঘাতের সময় যাতে সংশ্লিষ্ট এলাকায় অবস্থানরত মার্কিন সেনাদের দ্রুত এখান থেকে অস্ত্র সরবরাহ করা যায়, সে জন্যই ভান্ডারটি স্থাপন করা হয়। পাশাপাশি জরুরি পরিস্থিতিতে ইসরায়েলকে দ্রুত অস্ত্র দেওয়াটাও এই ভান্ডার স্থাপনের একটি উদ্দেশ্য।

গাজা যুদ্ধ শুরুর পর একই ভান্ডার থেকে ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ করা হয় বলে জানা গেছে। সূত্র: বিবিসি

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» চোরাচালান প্রতিরোধে কোস্টগার্ডকে আন্তরিক হয়ে কাজের আহ্বান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার

» সোনারগাঁয়ে হাসিনা-রেহানা-জয়ের নামে মামলা

» হিন্দু ভাইদের উসকানি দিচ্ছে আ’লীগের লোকজন: জামায়াত সেক্রেটারি

» বেঁধে দেওয়া দামে মিলছে না ডিম-ব্রয়লার মুরগি

» একটি মহল অন্তর্বর্তী সরকারকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্ষমতায় রাখতে চায় : মির্জা ফখরুল

» ভারতে যাওয়ার সময় কুমিল্লায় আটক আ.লীগ নেতা

» ভারতের বিপক্ষে যেসব মাইলফলকের হাতছানি টাইগারদের

» ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে তারেক রহমানের বিবৃতি

» কেন কাজলকে সহ্য করতে পারতো না শাহরুখপুত্র আব্রাম?

» সাংহাইয়ে শক্তিশালী টাইফুন ‘বেবিনকা’র আঘাত

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

এত অস্ত্র কোথায় পায় ইসরায়েল?

ছবি সংগৃহীত

 

গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় নির্বিচারে আগ্রাসন চালাচ্ছে ইসরায়েল। এতে গাজা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। দীর্ঘ এই সময়ে ৪০ হাজার ৮৭৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ৯৪ হাজার ৪৫৪ জন। আরও নিখোঁজ রয়েছে বহু সংখ্যক মানুষ।

 

দীর্ঘ ১১ মাস ধরে চলমান এই যুদ্ধে বিপুল অস্ত্রের প্রয়োজন হয়েছে। কিন্তু এত কোথায় পায় ইসরায়েল?

যুক্তরাষ্ট্র

 

ইসরায়েল সবচেয়ে বেশি মারণাস্ত্র সহায়তা পেয়ে আসছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে থেকে। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এসআইপিআরআই) তথ্য অনুসারে, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ইসরায়েলের প্রধান প্রচলিত অস্ত্র আমদানির ৬৯ শতাংশই এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে।

 

যুক্তরাষ্ট্র ১০ বছর মেয়াদি একটি চুক্তির আওতায় ইসরায়েলকে ৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বার্ষিক সামরিক সহায়তা দিয়ে থাকে। এর উদ্দেশ্য ইসরায়েলকে তার প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে গুণগত সামরিক শক্তিতে এগিয়ে রাখা।

 

মার্কিন গণমাধ্যম গত মার্চে জানায়, গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে তখন পর্যন্ত বাইডেন প্রশাসন চুপিসারে ইসরায়েলের কাছে ১০০টির বেশি ধাপে সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি করেছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এর মূল্য ডলারের হিসেবে এমন পরিমাণ ছিল, যে ক্ষেত্রে কংগ্রেসকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানোর দরকার হয় না।

 

এসব অস্ত্রের মধ্যে হাজার হাজার গাইডেড বোমা, ছোট ব্যাসের বোমা, বাংকার বাস্টার ও ছোট অস্ত্র ছিল বলে জানা গেছে।

জার্মানি

যুক্তরাষ্ট্রের পর ইসরায়েলে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র রফতানি করে জার্মানি। এসআইপিআরআইয়ের তথ্যমতে, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ইসরায়েল যে অস্ত্র আমদানি করেছে, তার ৩০ শতাংশ জার্মানির।

 

২০২২ সালে ইসরায়েল তিনটি উন্নত ডাকার শ্রেণির ডিজেলচালিত সাবমেরিন কিনতে জার্মানির সঙ্গে ৩৩০ কোটি মার্কিন ডলারের (৩ বিলিয়ন ইউরো) একটি চুক্তি করে। এগুলো ২০৩১ সালের পর থেকে সরবরাহ করা হতে পারে।

 

বর্তমানে ইসরায়েলি নৌবাহিনী জার্মানির নির্মিত ডলফিন শ্রেণির সাবমেরিন ব্যবহার করে। এগুলোর স্থলে তারা ডাকার শ্রেণির ডিজেলচালিত সাবমেরিন ব্যবহার করবে।

 

গত বছর ইসরায়েলের কাছে ইউরোপীয় দেশটির অস্ত্র বিক্রির আর্থিক মূল্য ছিল ৩৬ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার (৩২ কোটি ৬৫ লাখ ইউরো)। ২০২২ সালের তুলনায় তা ১০ গুণ বেশি। গত বছরের ৭ অক্টোবরের হামলার পরই এই অস্ত্র রফতানি লাইসেন্সগুলোর বেশির ভাগ মঞ্জুর করা হয়েছিল।

 

জার্মান সরকার গত জানুয়ারিতে বলেছিল, বিক্রির প্যাকেজে ৩০ কোটি ৬৪ লাখ ইউরোর সামরিক সরঞ্জাম ও ২ কোটি ১০ লাখ ইউরোর যুদ্ধাস্ত্র রয়েছে।

 

জার্মানির ডিপিএ নিউজ এজেন্সির তথ্যমতে, পরে ৩ হাজারটি বহনযোগ্য অ্যান্টি-ট্যাংক অস্ত্র এবং স্বয়ংক্রিয় বা আধা স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্রের জন্য ৫ লাখ গুলি বিক্রির বিষয়টি প্যাকেজে অন্তর্ভুক্ত হয়।

ইতালি
ইসরায়েলে অস্ত্র রফতানির দিক থেকে ইতালির অবস্থান তৃতীয়। তবে এসআইপিআরআইয়ের তথ্যমতে, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ইসরায়েল যত অস্ত্র আমদানি করেছে, তার মাত্র শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ ইতালির। আমদানি করা অস্ত্রসহ সামরিক সরঞ্জামের মধ্যে হেলিকপ্টার ও নৌ আর্টিলারি অন্তর্ভুক্ত থাকার বিষয়টি জানা যায়।

 

যুক্তরাজ্যভিত্তিক চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী দ্য ক্যাম্পেইন এগেইনস্ট আর্মস ট্রেড (সিএএটি) বলছে, ২০২২ সালে ইসরায়েলের কাছে ইতালির সামরিক পণ্যের রপ্তানি ও লাইসেন্সের মূল্য ছিল ১ কোটি ৭০ লাখ ইউরো (১ কোটি ৮৮ লাখ মার্কিন ডলার)।

 

ইতালির অর্থবিষয়ক একটি সাময়িকী দেশটির জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যের বরাত দিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এ প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালে ইসরায়েলের কাছে ইতালির অস্ত্র ও গোলাবারুদ বিক্রির অর্থমূল্য ছিল ১ কোটি ৩৭ লাখ ইউরো।

 

যুক্তরাজ্য
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে যুক্তরাজ্য সরকার বলেছিল, ২০২২ সালে ইসরায়েলের কাছে ব্রিটিশ সামরিক পণ্যের রফতানি অপেক্ষাকৃত কম ছিল। এর পরিমাণ ছিল ৪ কোটি ২০ লাখ পাউন্ড (৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার)।

যুক্তরাজ্যের ডিপার্টমেন্ট ফর বিজনেস অ্যান্ড ট্রেডের নথি অনুসারে, এ সংখ্যা ২০২৩ সালে ১৮ দশমিক ২ মিলিয়ন পাউন্ডে নেমে আসে।

 

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ৩১ মের মধ্যে ইসরায়েলে সামরিক পণ্য বিক্রির জন্য ৪২টি রফতানি লাইসেন্স ইস্যু করে যুক্তরাজ্য সরকার। আর এই সময়ে বিদ্যমান লাইসেন্স ছিল ৩৪৫টি।

 

যুক্তরাজ্যের ডিপার্টমেন্ট ফর বিজনেস অ্যান্ড ট্রেড বলেছে, লাইসেন্সের আওতায় থাকা সামরিক সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে সামরিক বিমান, সামরিক যান ও যুদ্ধ নৌযানের উপাদান।

 

ব্রিটিশ চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী সিএএটি বলেছে, যুক্তরাজ্য ২০০৮ সাল থেকে ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রির জন্য মোট ৫৭ কোটি ৬০ লাখ পাউন্ডের রপ্তানি লাইসেন্স দিয়েছে। এর বেশির ভাগই ছিল যুদ্ধবিমানে ব্যবহৃত উপাদানের জন্য।

 

চলতি সেপ্টেম্বরে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি গাজায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে ব্যবহৃত হয়—এমন সামগ্রীর জন্য দেওয়া প্রায় ৩০টি রফতানি লাইসেন্স অবিলম্বে স্থগিত করার ঘোষণা দেন।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষাশিল্প
যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় ইসরায়েল নিজস্ব প্রতিরক্ষাশিল্প গড়ে তুলেছে। তারা এখন বিশ্বের নবম বৃহত্তম অস্ত্র রফতানিকারক। এ ক্ষেত্রে তারা বড় পরিসরের হার্ডওয়্যারের পরিবর্তে উন্নত প্রযুক্তিগত সামরিক পণ্যগুলোর ব্যাপারে গুরুত্ব দিচ্ছে।

 

এসআইপিআরআইয়ের তথ্যমতে, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বৈশ্বিক অস্ত্র বিক্রিতে ইসরায়েলের অবদান ২ দশমিক ৩ শতাংশ। ইসরায়েলের কাছ থেকে অস্ত্র আমদানিকারক প্রধান তিনটি দেশ হলো ভারত (৩৭ শতাংশ), ফিলিপাইন (১২ শতাংশ) ও যুক্তরাষ্ট্র (৮ দশমিক ৭ শতাংশ)।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ২০২৩ সালে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষাসামগ্রী রফতানির পরিমাণ ছিল ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি।

 

এই রফতানির মধ্যে আছে আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা (৩৬ শতাংশ), রাডার ও ইলেকট্রনিক যুদ্ধব্যবস্থা (১১ শতাংশ), ফায়ার ও অস্ত্র উৎক্ষেপণ সরঞ্জাম (১১ শতাংশ) এবং ড্রোন ও এভিওনিক্স (৯ শতাংশ)।

 

২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে, অর্থাৎ গাজা যুদ্ধ শুরুর ঠিক আগে ইসরায়েলের কাছ থেকে অত্যাধুনিক অ্যারো ৩ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কিনতে ৩৫০ কোটি ডলারের একটি চুক্তিতে সম্মত হয় জার্মানি। এটি দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র রুখতে ব্যবহৃত হয়।

ইসরায়েলে মার্কিন সামরিক মজুত
১৯৮৪ সালে ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্রের একটি বড় ভান্ডার স্থাপন করে যুক্তরাষ্ট্র। আঞ্চলিক সংঘাতের সময় যাতে সংশ্লিষ্ট এলাকায় অবস্থানরত মার্কিন সেনাদের দ্রুত এখান থেকে অস্ত্র সরবরাহ করা যায়, সে জন্যই ভান্ডারটি স্থাপন করা হয়। পাশাপাশি জরুরি পরিস্থিতিতে ইসরায়েলকে দ্রুত অস্ত্র দেওয়াটাও এই ভান্ডার স্থাপনের একটি উদ্দেশ্য।

গাজা যুদ্ধ শুরুর পর একই ভান্ডার থেকে ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ করা হয় বলে জানা গেছে। সূত্র: বিবিসি

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com