সংগৃহীত ছবি
অনলাইন ডেস্ক : অভ্যুত্থানের এক বছরের মাথায়ও গুম, খুন ও ধর্ষণের ঘটনার বিচার নিশ্চিত না করতে পারায় জনগণের সামনে প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ।
তিনি বলেন, আমরা অনেককিছুর স্বপ্ন দেখিয়েছিলাম, কিন্তু আমরা কিছুই বাস্তবায়ন করতে পারিনি। রোববার (৩ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার’ ঘোষণার সমাবেশে দেওয়া এক বক্তব্যে তিনি ক্ষমা চান।
সমাবেশের শুরুতেই আবদুল হান্নান মাসউদ বলেন, আজ থেকে ঠিক এক বছর আগে, এই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকেই আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম- এই দেশের জনগণ আর একটি মুহূর্তের জন্যও ফ্যাসিবাদী শাসন সহ্য করবে না। আমরা বলেছিলাম, এই শহীদ মিনার থেকেই শুরু হবে গণতন্ত্রের, মানবিকতার, ন্যায়ের, ও নৈতিকতার পুনর্জন্ম। কিন্তু এক বছর পর দাঁড়িয়ে বলতে হচ্ছে- আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি রাখতে পারিনি। আজ আমরা এই মঞ্চ থেকে জনগণের কাছে মাথা নিচু করে ক্ষমা চাই।
তিনি বলেন, আমরা বলেছিলাম, নতুন একটি রাষ্ট্র গড়ব- যেখানে গুম থাকবে না, খুন থাকবে না, ধর্ষণ, দখল, রাজনৈতিক দমন থাকবে না। কিন্তু আজ আমি দাঁড়িয়ে আছি, এই শহীদ মিনারেই, আর আমার বুকের ভেতর ভারী হয়ে আছে সেই সব মানুষের কান্না, যাদের সন্তান আর ফিরে আসেনি, যাদের বোন অপমানিত হয়েছে, যাদের ভাইকে গুলি করে মেরে ফেলা হয়েছে রাষ্ট্রীয় বর্বরতায়। আমরা বিচার দিতে পারিনি, প্রতিশ্রুতি রাখতে পারিনি, আমরা ব্যর্থ হয়েছি।
বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি একে একে স্মরণ করেন বিডিআর বিদ্রোহে নিহত সেনা কর্মকর্তাদের পরিবার, সীমান্তে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঝুলে থাকা কিশোরী ফেলানী, র্যাবের গুলিতে পা হারানো লিমন, বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার তরুণ, গুম হওয়া নেতা ইলিয়াস আলী ও নজরুল আজমী এবং ধর্ষণের শিকার সেই নারী যার ভাই এনসিপির জুলাই বিপ্লবে শহীদ হয়েছিলেন।
আবদুল হান্নান মাসউদ বলেন, আমরা সেই পিতাদের কাছে ক্ষমা চাইছি, যাদের সন্তান বিডিআর বিদ্রোহের নামে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। আমি ক্ষমা চাইছি আমার সেই বোন ফেলানীর কাছে, যার লাশ ২৪ ঘণ্টা সীমান্তে কাঁটাতারে ঝুলে ছিল। আমি ক্ষমা চাইছি সেই লিমনের কাছে, যে কিশোর বয়সেই পা হারিয়েছে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর গুলিতে। আমি ক্ষমা চাইছি ইলিয়াস আলীর পরিবারের কাছে, আজমীর পরিবারের কাছে, যারা দীর্ঘদিন ধরে গুমের যন্ত্রণা বয়ে চলেছেন। আমি ক্ষমা চাইছি সেই ধর্ষিতা বোনের কাছে, যার ভাই আমাদের আন্দোলনের শহীদ অথচ আমরা এখনো তাকে ন্যায়বিচার দিতে পারিনি।
তিনি বলেন, আমরা এমন একটি রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখিয়েছিলাম, যেখানে মানুষ স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশ করতে পারবে, কোনো দল করতে পারবে হুমকি ছাড়াই। কিন্তু আজও সেই রাষ্ট্রব্যবস্থা আসেনি। বরং আমরা সবাই মিলে এই জনগণের স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছি। আজ সেই স্বপ্নভঙ্গের বেদনা নিয়েই দাঁড়িয়েছি এখানে। আমরা ব্যর্থ হয়েছি- এটাই স্বীকার করছি।