‘একক ডিগ্রি দিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিংকে বিবেচনা করার সুযোগ নেই’: ফয়েজ আহমদ

ছবি সংগৃহীত

 

অনলাইন ডেস্ক :  প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেছেন, ‘একটি দেশের প্রকৌশল সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি কোন একক প্রতিষ্ঠান কিংবা একক ডিগ্রি কিংবা একটি মাত্র ডোমেইন দিয়ে বিবেচনা করার সুযোগ নেই।’ বুধবার (২৭ আগস্ট) নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে এ কথা বলেন তিনি।

 

পাঠকদের জন্য তার ওই পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো

বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার এবং ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের রেষারেষি অত্যন্ত লজ্জাজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে, এখানে মারামারি, হুমকি, হিংসাত্মক আক্রমণ দেখা যাচ্ছে। উভয় পক্ষ রাস্তার আন্দোলনে নেমেছে। দুই গ্রুপ প্রকৌশলীর মুখোমুখি হওয়ার বিষয়টি নতুন নয়, তবে হানাহানি ও হিংসাত্মক উসকানি নতুন। এসব পেশাগত দক্ষতা কিংবা উৎকর্ষকে নির্দেশ করে না।

 

একটি দেশের প্রকৌশল সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি কোন একক প্রতিষ্ঠান কিংবা একক ডিগ্রি কিংবা একটি মাত্র ডোমেইন দিয়ে বিবেচনা করার সুযোগ নেই। উপরন্তু ইঞ্জিনিয়ারিং এর সংজ্ঞা শুধু বাংলাদেশের মানহীন, মধ্যমান কিংবা সীমিত পরিসরের উচ্চমান বিএসসি ডিগ্রি বা বিএসসি কারিকুলাম দিয়েই নির্ধারণ হবে এটা কেমন হয়ে গেল না?

 

ইউরোপীয় স্ট্যান্ডার্ডস মতে দেশের প্রকৌশল শিক্ষা ৩ রকমের হতে পারে-
১. মূলত থিউরিটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এডুকেশন যেমন বাংলাদেশের বুয়েট কুয়েট রুয়েট চুয়েট এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্স ওয়ার্ক গুলো মূলত থিউরিটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং তার সাথে যুক্ত থিউরিটিক্যাল সায়েন্স। এখানে হাতেকলমে শিক্ষা কম, ম্যাথ ফরমুলা থিওরি বেশি। অর্থাৎ যাকে আমরা সেশনাল কোর্স বলি তা মোট কোর্স ওয়ার্কের ১৫ থেকে অনূর্ধ্ব ২০%।

 

এই ধারার উচ্চতর ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি কোর্সের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত দেশের ইঞ্জিনিয়ারিং সমস্যার সমাধান, উচ্চতর ইঞ্জিনিয়ারিং গবেষণা, ইঞ্জিনিয়ার ইনোভেশন, রিসার্চ ও ডেভেলপমেন্ট, উচ্চতর ইঞ্জিনিয়ারিং অপারেশনস, মেইন্টেনেন্স এবং ডিজাইন প্ল্যানিং ইত্যাদি। বিশেষকরে ট্রেনিং, ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল কলেজের শিক্ষকতা, অধ্যাপনা।

 

২. ফিফটি-ফিফটি মিক্স
থিউরিটিক্যাল এবং অ্যাপ্লায়েড ইঞ্জিনিয়ারিং এডুকেশন ৫০-৫০ থিউরিটিক্যাল এবং অ্যাপ্লায়েড কোর্স ওয়ার্ক। বাংলাদেশে এ জাতীয় ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা নাই বললেই চলে।
আমি একটা করার চেষ্টা করছি। ইন্ডাস্ট্রির দক্ষতা তৈরির জন্য আমি এমন একটা ইন্সটিটিউট করার চেষ্টা করছি যেখানে শ্রমবাজারের দক্ষতার ভিত্তিতে কোর্স ওয়ার্ক তৈরি হবে।

 

৩. ২৫-৭৫ মিক্স
২৫% থিউরিটিক্যাল এবং ৭৫% অ্যাপ্লায়েড ইঞ্জিনিয়ারিং এডুকেশন এর উদ্দেশ্য ইঞ্জিনিয়ারিং এবং শিল্পের সাধারণ অপারেশন, মেইন্টেনেন্স, ডিজাইন, প্ল্যানিং। বাংলাদেশে এই জনবল সরবরাহ করে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ গুলো। পাশাপাশি সব ডোমেইনেই গবেষণা, ইঞ্জিনিয়ারিং ইনোভেশন, ডেভেলপমেন্ট একটা ন্যাচারাল বিষয়।

 

বাংলাদেশের মূল সমস্যা ৩টা –
১. এই কোর্স ওয়ার্কের মধ্যে কোনো অ্যাকাডেমিক সংযোগ নাই। আপার কিংবা লোয়ার অ্যাকাডেমিক ফ্লো কোনোটাই নাই- কেই একটায় খুব ভাল করলে অন্যটাতে যেতে পারেন না, বা একটা কারো কাছে কঠিন লাগলে অন্যটায় যেতে পারেন না। ইউরোপে এটা আছে।
২. দেশ চলতে সবার দরকার। দেশে কেউ নিজ পেশার বাইরে অন্যকে পেশাগত সম্মান দিতে চায় না।
৩. চাকরির হাহাকার।

 

মূলত ইঞ্জিনিয়ারিং চাকরি কম থাকায় ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারদের ১০ম গ্রেডে বিএসসি ইঞ্জিনিয়াররা আবেদন করতে চান। আবার পদ স্বল্পতা থাকা ৯ম গ্রেডে বিএসসি ইঞ্জিনিয়াররা চাকরির পর্যাপ্ত সুযোগ পাচ্ছেন না। এখানে ১১তম গ্রেডের বিষয়টি এনে একটা সেটেলমেন্ট দরকার যা প্রকৌশলীদের লিডারশিপকে সল্ভ করতে হবে। আবার অপরাপর কারণের পাশাপাশি এই চাকরি কম থাকার কারণেই বিএসসি ইঞ্জিনিয়াররা বিসিএস-এ ঝুঁকছে।

 

নরমালি একটা দেশে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার সংখ্যায় বেশি থাকে, বাংলাদেশে বেশি হয়ে গেছে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার। আমাদের এখন দরকার প্রদত্ত শিক্ষা কোর্স ও সার্টিফিকেট সংখ্যার আলোকে ১১, ১০, ৯ এই তিন গ্রেডের আসন সংখ্যার বিন্যাসকে রিভিউ করা। কোটার ভিত্তিতে এক গ্রেডের প্রমোশন করিয়ে অন্য গ্রেডের চাকরি কমানো কাম্য হতে পারে না।

 

সমস্যার ফাঁকে ভাল প্রকৌশলীরা দেশ ছেড়ে বিদেশ যাচ্ছেন। একটি সমীক্ষায় দেখেছি বুয়েটের চারভাগের তিন ভাগ শিক্ষার্থী বিদেশ যাতে চান এবং অন্তত অর্ধেক তাতে সফল। দেখা যাচ্ছে বুয়েটের ছেলেমেয়েরা হয় বিদেশ যাচ্ছে না হয় বিসিএস-এ। প্রশ্ন হচ্ছে, দেশের ইঞ্জিনিয়ারিং সমস্যার সমাধান কে করবে?

 

এই যখন বাস্তবতা, তখন কিছুটা বেশি পড়া (কিন্তু একই বা প্রায় একই কাজ করা) একদল অভিজাত ভাবা ইঞ্জিনিয়ার বলছে ‘ইঞ্জিনিয়ার’ নামের এই এলিট স্টেজে অন্যরা উঠতে পারবে না। তারা নামের আগে ইঞ্জিনিয়ার ব্যবহার করতে পারবে না। এর বাইরে প্রাইভেট পাব্লিক ক্যাচাল তো আছেই। এইরকম দাবি শুনলে বিব্রতবোধ করি আমি। যদিও নামের আগে ইঞ্জিনিয়ার তকমাটা লাগানোকে আমি ভাল পাই না। পেশা জিনিসটা মা বাবার দেয়া নাম না। তবে কেউ পিএইচডি করলে সেটা অ্যাকাডেমিক এক্সিলেন্স হিসেবে ভিন্ন বিষয়।

 

তিন দফা দাবির প্রশ্নে আমার ব্যক্তিগত অবস্থান মোটামুটি এরকম-
১. ৯ম গ্রেড বন্ধ বা পদ কমানো যাবে না। ৯ম গ্রেড বিভিন্ন অপকৌশলে পদ সংখ্যা কমানো আছে বলে অভিযোগ এসেছে। বিএসসি পাস ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য পদ সংখ্যার ভিত্তিতে গ্রেডটি উন্মুক্ত করে দিতে হবে। পাশাপাশি বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার বিসিএসও দিবেন। এবং নিয়োগদাতা, প্রার্থীর পারফর্মেন্স সাপেক্ষে প্রমোশন দিবেন। কোটার ভিত্তিতে না।

 

২. ১০ম গ্রেড ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য থাকবে এবং নিয়োগদাতা প্রার্থীর পারফর্মেন্স সাপেক্ষে প্রমোশন দেবে। কোটার ভিত্তিতে না। ৩৩% কোটা থেকে থাকলে সেটা যৌক্তিক নয়, এটা বন্ধ করা দরকার।

 

৩. একই পেশার অন্যকে অপমান করার কথা।

আপনি কাউকে নিয়োগ দিলে, তাকে ভালো পারফরমেন্সের সাপেক্ষে প্রমোশনও দিবেন। তবে সেটা কোটার ভিত্তিতে হতে পারবে না, হবে ডিফাইন্ড পারফর্মেন্স কেপিআই এর ভিত্তিতে। বাংলাদেশে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন এবং ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন নামে দুটি ‘নামমাত্র’ প্রতিষ্ঠান আছে। এরা কেউই ইন্সটিটিউশন নয়। এরা আসলে ক্লাব। এখানে প্রকৃত প্রকৌশলীর কোন কাজ নেই- এখানে কাজ সিন্ডিকেট করা।

 

বিষয়টি অংশীজনের সাথে কথা বলে তাদেরই বিষয়টি সমাধান করার কথা ছিল। এখানে মূলত দলাদলি হয়, ভাগাভাগি হয়, রাজনীতি হয়, সবচেয়ে কম হয় ইন্সটিটিউশন সংক্রান্ত কাজ। আমি এসবে মেম্বার হয়নি, হওয়ার ইচ্ছাও আপাতত নাই। এর বাইরে আরেকটা কথা।

 

আমি মনে করি, প্রশাসনে ডেটা সায়েন্স, টেলিকম, আইসিটি, এআই, জেন-এআই মিলিয়ে দ্রুত একটি ক্যাডার সৃজন করা দরকার। এটা স্থগিত হয়ে পড়া টেলিকম ক্যাডারের নাম পরিবর্তন করে করা যেতে পারে। যেহেতু দেশের প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে ডিজিটাল ট্রান্সফর্মেশনের কাজ আছে এবং লাগবে, তাই এটা এডহক নিয়োগ এবং কনসালটেন্ট নির্ভর হওয়া উচিত না। বিষয়টি নিয়ে কিছু কাজ করবো বলে মনস্থির করেছি।

 

সবশেষে, এই যে মারামারি, কেন জানেন? ৫% চাকরি, যা সরকার দেয়। বাকি ৯৫% এর কথা কেউ বলে না। উনাদের চাকরি, ভাতা, কাজের পরিবেশ কিংবা স্বাস্থ্য বীমা, পরিবহণ খরচ কিংবা পেনশন নিয়ে কোন আলাপ নাই, নেই কোনো আন্দোলন। চলুন বাকি ৯৫% বিএসসি এবং ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারের কথাও ভাবি, তবেই দেশের টেকসই উন্নয়নের একটা ভিত্তি তৈরি হবে। দেশের উন্নয়নে প্রকৌশলীদের ভূমিকা অতি গুরুত্বপূর্ণ।

 

(এই লেখার মতামত ব্যক্তিগত। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মনোভাব নয় লেখাটি)

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ড. ইউনূস এ দেশের মানুষকে চেনেন না: মাসুদ কামাল

» বুয়েট শিক্ষার্থীদের রক্তাক্ত করার সাহস কোথায় পায় প্রশাসন- প্রশ্ন সারজিসের

» শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলনে বলপ্রয়োগে ক্ষুব্ধ হাসনাত

» মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে মুক্তিযুদ্ধের সত্য কথাগুলো বলতে শুরু করলাম: ফজলুর রহমান

» ‘জুলাই সনদ ও সংস্কার হলে ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত এনসিপি’: নাহিদ ইসলাম

» বনজ কুমারের মামলা থেকে খালাস পেলেন সাংবাদিক ইলিয়াস

» আমাদের সময় বেশি দিন নাই: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

» ফ্যাসিস্ট হাসিনার নিপীড়ন ও নৃশংসতার প্রতিবাদে জেগে উঠেছিল শিক্ষার্থী-জনতা: মাহফুজ আলম

» ডিএমপির ডিবিপ্রধান হলেন শফিকুল ইসলাম

» আন্দোলনকারীদের কাছে ‘হেক্সা চাকু’ টাইপ কিছু ছিল: রমনা ডিসি

  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

‘একক ডিগ্রি দিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিংকে বিবেচনা করার সুযোগ নেই’: ফয়েজ আহমদ

ছবি সংগৃহীত

 

অনলাইন ডেস্ক :  প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেছেন, ‘একটি দেশের প্রকৌশল সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি কোন একক প্রতিষ্ঠান কিংবা একক ডিগ্রি কিংবা একটি মাত্র ডোমেইন দিয়ে বিবেচনা করার সুযোগ নেই।’ বুধবার (২৭ আগস্ট) নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে এ কথা বলেন তিনি।

 

পাঠকদের জন্য তার ওই পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো

বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার এবং ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের রেষারেষি অত্যন্ত লজ্জাজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে, এখানে মারামারি, হুমকি, হিংসাত্মক আক্রমণ দেখা যাচ্ছে। উভয় পক্ষ রাস্তার আন্দোলনে নেমেছে। দুই গ্রুপ প্রকৌশলীর মুখোমুখি হওয়ার বিষয়টি নতুন নয়, তবে হানাহানি ও হিংসাত্মক উসকানি নতুন। এসব পেশাগত দক্ষতা কিংবা উৎকর্ষকে নির্দেশ করে না।

 

একটি দেশের প্রকৌশল সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি কোন একক প্রতিষ্ঠান কিংবা একক ডিগ্রি কিংবা একটি মাত্র ডোমেইন দিয়ে বিবেচনা করার সুযোগ নেই। উপরন্তু ইঞ্জিনিয়ারিং এর সংজ্ঞা শুধু বাংলাদেশের মানহীন, মধ্যমান কিংবা সীমিত পরিসরের উচ্চমান বিএসসি ডিগ্রি বা বিএসসি কারিকুলাম দিয়েই নির্ধারণ হবে এটা কেমন হয়ে গেল না?

 

ইউরোপীয় স্ট্যান্ডার্ডস মতে দেশের প্রকৌশল শিক্ষা ৩ রকমের হতে পারে-
১. মূলত থিউরিটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এডুকেশন যেমন বাংলাদেশের বুয়েট কুয়েট রুয়েট চুয়েট এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্স ওয়ার্ক গুলো মূলত থিউরিটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং তার সাথে যুক্ত থিউরিটিক্যাল সায়েন্স। এখানে হাতেকলমে শিক্ষা কম, ম্যাথ ফরমুলা থিওরি বেশি। অর্থাৎ যাকে আমরা সেশনাল কোর্স বলি তা মোট কোর্স ওয়ার্কের ১৫ থেকে অনূর্ধ্ব ২০%।

 

এই ধারার উচ্চতর ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি কোর্সের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত দেশের ইঞ্জিনিয়ারিং সমস্যার সমাধান, উচ্চতর ইঞ্জিনিয়ারিং গবেষণা, ইঞ্জিনিয়ার ইনোভেশন, রিসার্চ ও ডেভেলপমেন্ট, উচ্চতর ইঞ্জিনিয়ারিং অপারেশনস, মেইন্টেনেন্স এবং ডিজাইন প্ল্যানিং ইত্যাদি। বিশেষকরে ট্রেনিং, ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল কলেজের শিক্ষকতা, অধ্যাপনা।

 

২. ফিফটি-ফিফটি মিক্স
থিউরিটিক্যাল এবং অ্যাপ্লায়েড ইঞ্জিনিয়ারিং এডুকেশন ৫০-৫০ থিউরিটিক্যাল এবং অ্যাপ্লায়েড কোর্স ওয়ার্ক। বাংলাদেশে এ জাতীয় ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা নাই বললেই চলে।
আমি একটা করার চেষ্টা করছি। ইন্ডাস্ট্রির দক্ষতা তৈরির জন্য আমি এমন একটা ইন্সটিটিউট করার চেষ্টা করছি যেখানে শ্রমবাজারের দক্ষতার ভিত্তিতে কোর্স ওয়ার্ক তৈরি হবে।

 

৩. ২৫-৭৫ মিক্স
২৫% থিউরিটিক্যাল এবং ৭৫% অ্যাপ্লায়েড ইঞ্জিনিয়ারিং এডুকেশন এর উদ্দেশ্য ইঞ্জিনিয়ারিং এবং শিল্পের সাধারণ অপারেশন, মেইন্টেনেন্স, ডিজাইন, প্ল্যানিং। বাংলাদেশে এই জনবল সরবরাহ করে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ গুলো। পাশাপাশি সব ডোমেইনেই গবেষণা, ইঞ্জিনিয়ারিং ইনোভেশন, ডেভেলপমেন্ট একটা ন্যাচারাল বিষয়।

 

বাংলাদেশের মূল সমস্যা ৩টা –
১. এই কোর্স ওয়ার্কের মধ্যে কোনো অ্যাকাডেমিক সংযোগ নাই। আপার কিংবা লোয়ার অ্যাকাডেমিক ফ্লো কোনোটাই নাই- কেই একটায় খুব ভাল করলে অন্যটাতে যেতে পারেন না, বা একটা কারো কাছে কঠিন লাগলে অন্যটায় যেতে পারেন না। ইউরোপে এটা আছে।
২. দেশ চলতে সবার দরকার। দেশে কেউ নিজ পেশার বাইরে অন্যকে পেশাগত সম্মান দিতে চায় না।
৩. চাকরির হাহাকার।

 

মূলত ইঞ্জিনিয়ারিং চাকরি কম থাকায় ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারদের ১০ম গ্রেডে বিএসসি ইঞ্জিনিয়াররা আবেদন করতে চান। আবার পদ স্বল্পতা থাকা ৯ম গ্রেডে বিএসসি ইঞ্জিনিয়াররা চাকরির পর্যাপ্ত সুযোগ পাচ্ছেন না। এখানে ১১তম গ্রেডের বিষয়টি এনে একটা সেটেলমেন্ট দরকার যা প্রকৌশলীদের লিডারশিপকে সল্ভ করতে হবে। আবার অপরাপর কারণের পাশাপাশি এই চাকরি কম থাকার কারণেই বিএসসি ইঞ্জিনিয়াররা বিসিএস-এ ঝুঁকছে।

 

নরমালি একটা দেশে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার সংখ্যায় বেশি থাকে, বাংলাদেশে বেশি হয়ে গেছে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার। আমাদের এখন দরকার প্রদত্ত শিক্ষা কোর্স ও সার্টিফিকেট সংখ্যার আলোকে ১১, ১০, ৯ এই তিন গ্রেডের আসন সংখ্যার বিন্যাসকে রিভিউ করা। কোটার ভিত্তিতে এক গ্রেডের প্রমোশন করিয়ে অন্য গ্রেডের চাকরি কমানো কাম্য হতে পারে না।

 

সমস্যার ফাঁকে ভাল প্রকৌশলীরা দেশ ছেড়ে বিদেশ যাচ্ছেন। একটি সমীক্ষায় দেখেছি বুয়েটের চারভাগের তিন ভাগ শিক্ষার্থী বিদেশ যাতে চান এবং অন্তত অর্ধেক তাতে সফল। দেখা যাচ্ছে বুয়েটের ছেলেমেয়েরা হয় বিদেশ যাচ্ছে না হয় বিসিএস-এ। প্রশ্ন হচ্ছে, দেশের ইঞ্জিনিয়ারিং সমস্যার সমাধান কে করবে?

 

এই যখন বাস্তবতা, তখন কিছুটা বেশি পড়া (কিন্তু একই বা প্রায় একই কাজ করা) একদল অভিজাত ভাবা ইঞ্জিনিয়ার বলছে ‘ইঞ্জিনিয়ার’ নামের এই এলিট স্টেজে অন্যরা উঠতে পারবে না। তারা নামের আগে ইঞ্জিনিয়ার ব্যবহার করতে পারবে না। এর বাইরে প্রাইভেট পাব্লিক ক্যাচাল তো আছেই। এইরকম দাবি শুনলে বিব্রতবোধ করি আমি। যদিও নামের আগে ইঞ্জিনিয়ার তকমাটা লাগানোকে আমি ভাল পাই না। পেশা জিনিসটা মা বাবার দেয়া নাম না। তবে কেউ পিএইচডি করলে সেটা অ্যাকাডেমিক এক্সিলেন্স হিসেবে ভিন্ন বিষয়।

 

তিন দফা দাবির প্রশ্নে আমার ব্যক্তিগত অবস্থান মোটামুটি এরকম-
১. ৯ম গ্রেড বন্ধ বা পদ কমানো যাবে না। ৯ম গ্রেড বিভিন্ন অপকৌশলে পদ সংখ্যা কমানো আছে বলে অভিযোগ এসেছে। বিএসসি পাস ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য পদ সংখ্যার ভিত্তিতে গ্রেডটি উন্মুক্ত করে দিতে হবে। পাশাপাশি বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার বিসিএসও দিবেন। এবং নিয়োগদাতা, প্রার্থীর পারফর্মেন্স সাপেক্ষে প্রমোশন দিবেন। কোটার ভিত্তিতে না।

 

২. ১০ম গ্রেড ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য থাকবে এবং নিয়োগদাতা প্রার্থীর পারফর্মেন্স সাপেক্ষে প্রমোশন দেবে। কোটার ভিত্তিতে না। ৩৩% কোটা থেকে থাকলে সেটা যৌক্তিক নয়, এটা বন্ধ করা দরকার।

 

৩. একই পেশার অন্যকে অপমান করার কথা।

আপনি কাউকে নিয়োগ দিলে, তাকে ভালো পারফরমেন্সের সাপেক্ষে প্রমোশনও দিবেন। তবে সেটা কোটার ভিত্তিতে হতে পারবে না, হবে ডিফাইন্ড পারফর্মেন্স কেপিআই এর ভিত্তিতে। বাংলাদেশে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন এবং ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন নামে দুটি ‘নামমাত্র’ প্রতিষ্ঠান আছে। এরা কেউই ইন্সটিটিউশন নয়। এরা আসলে ক্লাব। এখানে প্রকৃত প্রকৌশলীর কোন কাজ নেই- এখানে কাজ সিন্ডিকেট করা।

 

বিষয়টি অংশীজনের সাথে কথা বলে তাদেরই বিষয়টি সমাধান করার কথা ছিল। এখানে মূলত দলাদলি হয়, ভাগাভাগি হয়, রাজনীতি হয়, সবচেয়ে কম হয় ইন্সটিটিউশন সংক্রান্ত কাজ। আমি এসবে মেম্বার হয়নি, হওয়ার ইচ্ছাও আপাতত নাই। এর বাইরে আরেকটা কথা।

 

আমি মনে করি, প্রশাসনে ডেটা সায়েন্স, টেলিকম, আইসিটি, এআই, জেন-এআই মিলিয়ে দ্রুত একটি ক্যাডার সৃজন করা দরকার। এটা স্থগিত হয়ে পড়া টেলিকম ক্যাডারের নাম পরিবর্তন করে করা যেতে পারে। যেহেতু দেশের প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে ডিজিটাল ট্রান্সফর্মেশনের কাজ আছে এবং লাগবে, তাই এটা এডহক নিয়োগ এবং কনসালটেন্ট নির্ভর হওয়া উচিত না। বিষয়টি নিয়ে কিছু কাজ করবো বলে মনস্থির করেছি।

 

সবশেষে, এই যে মারামারি, কেন জানেন? ৫% চাকরি, যা সরকার দেয়। বাকি ৯৫% এর কথা কেউ বলে না। উনাদের চাকরি, ভাতা, কাজের পরিবেশ কিংবা স্বাস্থ্য বীমা, পরিবহণ খরচ কিংবা পেনশন নিয়ে কোন আলাপ নাই, নেই কোনো আন্দোলন। চলুন বাকি ৯৫% বিএসসি এবং ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারের কথাও ভাবি, তবেই দেশের টেকসই উন্নয়নের একটা ভিত্তি তৈরি হবে। দেশের উন্নয়নে প্রকৌশলীদের ভূমিকা অতি গুরুত্বপূর্ণ।

 

(এই লেখার মতামত ব্যক্তিগত। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মনোভাব নয় লেখাটি)

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Design & Developed BY ThemesBazar.Com