ইসলামপুরে টুংটাং শব্দে মূখরিত কামারপল্লী

লিয়াকত হোসাইন লায়ন,জামালপুর প্রতিনিধি :  মুসলিম উম্মাহর দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে জামালপুরের ইসলামপুরে টুংটাং শব্দে মূখরিত হয়ে উঠেছে কামারপল্লী। ঈদকে ঘিরে চারিদিকে আনন্দ উৎসব ও চলছে কোরবানির পশু কেনার ধুম। মানুষ ছোটছেন বিভিন্ন সরঞ্জামাদী বানাতে কামারশালায়। কোরবানির পশু কাটাকুটিতে চাই ধারালো দা, বটি, চাপাতি ও ছুরি। তাই কয়লার চুলায় দগদগে আগুনে গরম লোহার পিটাপিটিতে টুং টাং শব্দে মুখর হয়ে উঠেছে উপজেলার কামারশালাগুলো।

আর সামনে আগুনের শিখায় তাপ দেওয়া, হাতুড়ি পেটানোর টুং টাং শব্দে তৈরি হচ্ছে দা-বটি, চাপাতি ও ছুরি। পশু কোরবানিতে এ সব অতিব প্রয়োজনীয়। তাই যেন দম ফেলারও সময় নেই কামারদের।নাওয়া-খাওয়া ভুলে কাজ করছেন কামাররা। কাক ডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করে যাচ্ছেন তারা। সারা বছর তেমন কাজ না থাকলেও কুরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে কয়েকগুণ ব্যস্ততা বেড়ে যায় কামারদের।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, জামালপুরের ইসলামপুর পৌর শহরের চাড়িয়া পাড়া,ফকির পাড়ার কামারপাড়ায়, রেলগেইট, মধ্যে দরিয়াবাদ, দিঘলকান্দি,গুঠাইল বাজার, গংগাপাড়া, মহলগিরি বাজার, নাপিতের চর বাজারে দা, বটি, চাপাতি, ছুরি বানাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কর্মকাররা। কয়লার দগদগে আগুনে পুড়িয়ে পিটিয়ে তৈরি করছেন, দা, বটি, ছুরি, কুরাল, চাকুসহ ধারালো হাতিয়ার। অনেকেই আবার পুরাতন দা, ছুরিগুলো মেরামতের জন্য কামারের দোকানে দাড়িয়ে আছেন। ঈদের আরো কয়েকদিন বাকি থাকলেও জমে উঠেয়ে কামারীর দোকান।

কয়েকজন কামারের সাথে কথা বলে জানা যায়, পশুর চামড়া ছাড়ানো ছুরি ৬শ থেকে ১হাজার, দা ৭শত থেকে ১হাজার টাকা, বটি ৬শ থেকে ৮শত,চাপাতি ১হাজার থেকে ১৫শত টাকায় বিক্রি করছে।
ঈদের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, টুং টাং শব্দ ততই বেড়ে চলেছে। দিনরাত পরিশ্রম করে তৈরি করছে হরেক রকমের দা, ছুরিসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি। ক্রেতা সাধারণদের ভীড়ে মুখরিত হয়ে উঠেছে কামারদের দোকানগুলো। কামারশিল্পীদের দম ফেলার ফুসরত নেই। পৌর শহরের ফকিরপাড়া কামারপাড়া ও চাড়িয়াপাড়া কামারপাড়া এলাকায় কামার শিল্পীরা সকলেই হিন্দু সম্প্রাদায়ের। তাদের সকলেরই পত্তিক সুত্রে পাওয়া এ পেশা।

ফকির পাড়া কামার শিল্পী রঞ্জিত কর্মকার বলেন, আগের মত আর তেমন কাজ নেই। এখন আমাদের এ পেশায় নুন আনতে পান্তা ফুরায়। সারা বছর কাজ না থাকায় মুসলমানদের ধর্মীয় এ উৎসবে অপেক্ষায় থাকি। তাতে কিছুটা হলেও পুষিয়ে উঠা যায়। বাপদাদার পেশা এ পেশাই জীবন বাচাঁই, ছাড়তেও পারিনা। তার পরেও কয়লা দাম একটু বেশি হওয়ায় দামে আমাদের হিমশিম খেতে হয়।

চাড়িয়া পাড়া বিপ্লব কর্মকার বলেন, ঈদে কিছুটা ব্যস্ততা থাকে। সারা বছর কাজ তেমন হয়না। ছেলে মেয়ে নিয়ে খবই কষ্টে দিন কাটাতে হয়। প্রদীপ কর্মকার বলেন, আগের তুলনায় এখন কয়লা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। কয়লা পাওয়া গেলেও দাম অনেক চড়া। আমরা আমাদের ব্যবসায় কোনো ঋণ পাইনা। কয়লা পরিবর্তে গ্যাস দিয়ে কাজ করলে ভাল হইতো। এই সামর্থ আমাদের নাই।

ক্রেতা লিপন মিয়া বললেন, গরু কোরবানির জন্য একটা ছুরি অর্ডার দিয়েছি। ঈদ ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে কামাররা তাদের মজুরি, ছুরি, দা, চাপাতির দামও বাড়িয়ে দিয়েছে। কোরবানির পশু কেনার যে সময় লাগে এখন তার চেয়ে বেশি সময় সরঞ্জামাদী বানাতে ব্যয় হয়। টুং টাং শব্দে আমরা অস্থির আর উপার্জনে ব্যস্ত কামাররা ।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রহুল আমীন বলেন, কামার শিল্পীরা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীভুক্ত। ইতিমধ্য প্রন্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কামার শিল্পীদের প্রশিক্ষণ ও সুদমুক্ত ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান করা হয়েছে।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» এবার নিরাপত্তা নিয়ে শতভাগ কনফিডেন্ট আছি : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

» আজ জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে পারেন প্রধান উপদেষ্টা

» বিপুল পরিমাণ মাদকসহ পাঁচজন গ্রেপ্তার

» ঢাকার একটি ঈদ জামাতও নিরাপত্তার বাইরে থাকবে না: ডিএমপি কমিশনার

» তারুণ্যনির্ভর আর্জেন্টিনার দুর্দান্ত জয়

» ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সরকার সচেষ্ট রয়েছে: উপদেষ্টা আসিফ

» রাজধানীতে কোরবানির বর্জ্য অপসারণে প্রস্তুত ২০ হাজার ২৬৭ পরিচ্ছন্ন কর্মী

» ছাত্রলীগ নেতা সাদ্দাম গ্রেফতার

» রাজশাহীতে পাঁচ পরিবারের ঈদুল আজহা উদযাপন

» ছুটিতে পর্যটকরা ছুটবে কক্সবাজার

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

ইসলামপুরে টুংটাং শব্দে মূখরিত কামারপল্লী

লিয়াকত হোসাইন লায়ন,জামালপুর প্রতিনিধি :  মুসলিম উম্মাহর দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে জামালপুরের ইসলামপুরে টুংটাং শব্দে মূখরিত হয়ে উঠেছে কামারপল্লী। ঈদকে ঘিরে চারিদিকে আনন্দ উৎসব ও চলছে কোরবানির পশু কেনার ধুম। মানুষ ছোটছেন বিভিন্ন সরঞ্জামাদী বানাতে কামারশালায়। কোরবানির পশু কাটাকুটিতে চাই ধারালো দা, বটি, চাপাতি ও ছুরি। তাই কয়লার চুলায় দগদগে আগুনে গরম লোহার পিটাপিটিতে টুং টাং শব্দে মুখর হয়ে উঠেছে উপজেলার কামারশালাগুলো।

আর সামনে আগুনের শিখায় তাপ দেওয়া, হাতুড়ি পেটানোর টুং টাং শব্দে তৈরি হচ্ছে দা-বটি, চাপাতি ও ছুরি। পশু কোরবানিতে এ সব অতিব প্রয়োজনীয়। তাই যেন দম ফেলারও সময় নেই কামারদের।নাওয়া-খাওয়া ভুলে কাজ করছেন কামাররা। কাক ডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করে যাচ্ছেন তারা। সারা বছর তেমন কাজ না থাকলেও কুরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে কয়েকগুণ ব্যস্ততা বেড়ে যায় কামারদের।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, জামালপুরের ইসলামপুর পৌর শহরের চাড়িয়া পাড়া,ফকির পাড়ার কামারপাড়ায়, রেলগেইট, মধ্যে দরিয়াবাদ, দিঘলকান্দি,গুঠাইল বাজার, গংগাপাড়া, মহলগিরি বাজার, নাপিতের চর বাজারে দা, বটি, চাপাতি, ছুরি বানাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কর্মকাররা। কয়লার দগদগে আগুনে পুড়িয়ে পিটিয়ে তৈরি করছেন, দা, বটি, ছুরি, কুরাল, চাকুসহ ধারালো হাতিয়ার। অনেকেই আবার পুরাতন দা, ছুরিগুলো মেরামতের জন্য কামারের দোকানে দাড়িয়ে আছেন। ঈদের আরো কয়েকদিন বাকি থাকলেও জমে উঠেয়ে কামারীর দোকান।

কয়েকজন কামারের সাথে কথা বলে জানা যায়, পশুর চামড়া ছাড়ানো ছুরি ৬শ থেকে ১হাজার, দা ৭শত থেকে ১হাজার টাকা, বটি ৬শ থেকে ৮শত,চাপাতি ১হাজার থেকে ১৫শত টাকায় বিক্রি করছে।
ঈদের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, টুং টাং শব্দ ততই বেড়ে চলেছে। দিনরাত পরিশ্রম করে তৈরি করছে হরেক রকমের দা, ছুরিসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি। ক্রেতা সাধারণদের ভীড়ে মুখরিত হয়ে উঠেছে কামারদের দোকানগুলো। কামারশিল্পীদের দম ফেলার ফুসরত নেই। পৌর শহরের ফকিরপাড়া কামারপাড়া ও চাড়িয়াপাড়া কামারপাড়া এলাকায় কামার শিল্পীরা সকলেই হিন্দু সম্প্রাদায়ের। তাদের সকলেরই পত্তিক সুত্রে পাওয়া এ পেশা।

ফকির পাড়া কামার শিল্পী রঞ্জিত কর্মকার বলেন, আগের মত আর তেমন কাজ নেই। এখন আমাদের এ পেশায় নুন আনতে পান্তা ফুরায়। সারা বছর কাজ না থাকায় মুসলমানদের ধর্মীয় এ উৎসবে অপেক্ষায় থাকি। তাতে কিছুটা হলেও পুষিয়ে উঠা যায়। বাপদাদার পেশা এ পেশাই জীবন বাচাঁই, ছাড়তেও পারিনা। তার পরেও কয়লা দাম একটু বেশি হওয়ায় দামে আমাদের হিমশিম খেতে হয়।

চাড়িয়া পাড়া বিপ্লব কর্মকার বলেন, ঈদে কিছুটা ব্যস্ততা থাকে। সারা বছর কাজ তেমন হয়না। ছেলে মেয়ে নিয়ে খবই কষ্টে দিন কাটাতে হয়। প্রদীপ কর্মকার বলেন, আগের তুলনায় এখন কয়লা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। কয়লা পাওয়া গেলেও দাম অনেক চড়া। আমরা আমাদের ব্যবসায় কোনো ঋণ পাইনা। কয়লা পরিবর্তে গ্যাস দিয়ে কাজ করলে ভাল হইতো। এই সামর্থ আমাদের নাই।

ক্রেতা লিপন মিয়া বললেন, গরু কোরবানির জন্য একটা ছুরি অর্ডার দিয়েছি। ঈদ ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে কামাররা তাদের মজুরি, ছুরি, দা, চাপাতির দামও বাড়িয়ে দিয়েছে। কোরবানির পশু কেনার যে সময় লাগে এখন তার চেয়ে বেশি সময় সরঞ্জামাদী বানাতে ব্যয় হয়। টুং টাং শব্দে আমরা অস্থির আর উপার্জনে ব্যস্ত কামাররা ।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রহুল আমীন বলেন, কামার শিল্পীরা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীভুক্ত। ইতিমধ্য প্রন্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কামার শিল্পীদের প্রশিক্ষণ ও সুদমুক্ত ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান করা হয়েছে।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com