ছবি সংগৃহীত
ডেস্ক রিপোর্ট : ইসরায়েল ও আমেরিকার পণ্যগুলো বয়কট করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি নূরুল ইসলাম সাদ্দাম। মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) বিকেলে গাজায় ইসরায়েলি হত্যা বন্ধ ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগরের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল শেষে তিনি এ কথা বলেন।
বিক্ষোভ মিছিলটি শাহবাগ থেকে শুরু হয় বিকেলে ৩টার দিকে। পরে মিছিলটি বায়তুল মোকাররম উত্তর গেইট এসে শেষ হয়।
নূরুল ইসলাম সাদ্দাম বলেন, সারা পৃথিবীর মুসলিম আজ গর্জে উঠেছে। পৃথিবীর প্রতিটি আনাচে-কানাচে মুসলমানরা প্রতিবাদ জানাচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির জায়নিজমের বিরুদ্ধে সপ্তাহব্যাপী এই কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। তারই অংশ হিসেবে বাংলাদেশের প্রতিটি মহানগর শাখায় এই বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে আমরা ওই জায়নিজমকে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশ থেকে লাখ কোটি তৌহিদী জনতা তোমাদের জানিয়ে দিতে চায় ওই ফিলিস্তিনে যদি তোমরা আরও বোমা নিক্ষেপ করো নিঃসন্দেহে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তোমাদের সমূলে নিশ্ব করে দেবেন।
তিনি আরও বলেন, আল-আকসা জেরুজালেম মুসলমানদের পিতৃ-পুরুষের সম্পত্তি। যারা মুসলমানদের ভূমি থেকে তাদের বিতাড়িত করার চক্রান্ত করছে তোমরা জেনে রেখো আমাদের গায়ে এক বিন্দু রক্ত থাকা পর্যন্ত আমরা এটা মেনে নেব না ইনশাল্লাহ। আজ পর্যন্ত গত দুই বছর ধরে অনেক বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পুরো ইউরোপে যে পরিমাণ বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছিল তার থেকে বেশি বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে ছোট এই গাজায়। ধ্বংসের স্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা। প্রায় ৫০ হাজারের উপরে শিশু নারীসহ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ইসরাইলকে বলতে চাই আমাদের যে মা বোনেরা শাহাদাত বরণ করেছে তাদের বক্তব্য হলো আমরা জন্ম নিয়েছি মৃত্যুবরণ করার জন্য বাঁচার জন্য নয়। হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে মুসলমানদের তাদের ভূমি থেকে বিতাড়িত করা সম্ভব নয়। অচিরেই তোমাদের এই ভূমি ছাড়তে হবে। আমরা দেখেছি কী নিকৃষ্টভাবে ঈদের দিন বোমা হামলা করে শত শত মানুষকে শহীদ করেছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। ইসরাইল কোন রাষ্ট্র নয় এটি একটি জঙ্গিগোষ্ঠী। তারা গাজায় গণহত্যা পরিচালনা করছে।
ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ইসরায়েলকে যারা সহযোগিতা করছে আমরা তা দেখতে পাচ্ছি। ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন ক্ষমতায় বসেছে তখন এই নিরীহ মানুষদের ওপর আরও বেশি করে চুক্তি লঙ্ঘন করে জায়নিজমরা হামলা করে চলছে। তারা গণতন্ত্রের কথা বলে পৃথিবীর মুসলিম উম্মাকে আনরেস্ট করার চেষ্টা করছে। আমরা বলছি তোমরা এই কর্মকাণ্ড থেকে যদি বিরত না হও তাহলে সারা পৃথিবীর প্রায় ২০০ কোটি মুসলিম এর সমুচিত জবাব দেবে।
নূরুল ইসলাম সাদ্দাম বলেন, ইসরাইল ও আমেরিকার পণ্যগুলো আমাদের বয়কট করতে হবে। তাদের প্যারালাল পণ্যগুলোকে আমাদের ব্যবহার করতে হবে। আমেরিকা অথবা এই জায়নিজমের সহযোগী কিংবা সহযোদ্ধা বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো এবং ওআইসির সদস্য ও মুসলিম উম্মার প্রতিনিধিত্ব যেসব দেশ করে তারা আজ নিশ্চুপ হয়ে আছে। জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা বলেছিলেন- আমরা ছোটবেলায় জানতাম পৃথিবীর মধ্যে শুধু গাজা দখল হয়ে আছে, বড় হয়ে জানলাম পৃথিবীতে একমাত্র গাজা স্বাধীন রয়েছে, আর বাকি সবাই এই জায়নিজমের কবলে লিপ্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে বাংলাদেশ থেকে আমাদের প্রতিবাদ জানাই। যারা ইহুদি রাষ্ট্রের আশেপাশের যেসব রাষ্ট্র আছে সেসব রাষ্ট্রের প্রধানদের আহ্বান জানায় ইসরায়েলকে আপনারা বয়কট করুন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আপনাদের পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদের ৬০ শতাংশ দান করেছেন। এই সম্পদগুলো আপনারা মুসলিম উম্মার দুর্দিনে কাজে লাগাবেন আমাদের এই আশা।
আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি আমরা যখন এই কর্মসূচিগুলো পালন করে পৃথিবীতে যখন বিভিন্নভাবে প্রেশার ক্রিয়েট করার জন্য চেষ্টা করছি তখন বাংলাদেশের কিছু জায়গায় তখন আমরা কিছু ভাইদের দেখেছি দোকানপাটে হামলা করে লুটপাট করছে। এগুলো আমরা কখনোই কামনা করি না। এ সব হীন কাজ থেকে সবাইকে আমরা বিরত থাকার আহ্বান জানাই।
বিক্ষোভ সমাবেশে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি আবু সাদিক কায়েম বলেন, ১৯৪৮ সালের পর থেকে ইসরায়েলি আগ্রাসীরা, ইসরায়েলি জায়নিস্টরা আমাদের ফিলিস্তিনি মুসলমানদের ওপর দখলদারিত্ব করে গণহত্যা চালিয়ে আসছে। আজ আমরা বিশ্ববাসী যাদের সুশীল হিসেবে জানি আজকে তারা ওই অবৈধ আগ্রাসন ও গণহত্যাকে বৈধতা দিয়েছে। তোমরা যে মানবাধিকারের সনদ তৈরি করেছ আজকে সেই মানবাধিকারের সনদ কোথায়। আমরা সারা বিশ্বের মুসলমানরা ফিলিস্তিনের বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ আছি। বাংলাদেশের যেভাবে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে হটিয়েছি সেভাবে সারা বিশ্বের মুসলমানরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাইতুল আকসাকে স্বাধীন করবো ইনশাল্লাহ।
নূরুল ইসলাম সাদ্দাম বলেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অনুরোধ করবো বিগত ফ্যাসিবাদী হাসিনা এবং তার দোসররা ইসরায়েলের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের চুক্তি করেছিল। তারা বিভিন্ন ধরনের আড়িপাতা কিনেছিল। অতিসত্বর সব চুক্তিকে বাতিল করতে হবে। আমাদের পাসপোর্টে একসেপ্ট ইসরাইল যে উল্লেখ ছিল তা আবার উল্লেখ করতে হবে। প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে ফিলিস্তিনের মজলুমদের পক্ষে প্রেস রিলিজ দিতে হবে।
এর আগে বিক্ষোভ সমাবেশে ছাত্রশিবিরের বিভিন্ন পর্যায়ের কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দেন।