সংগৃহীত ছবি
অনলাইন ডেস্ক : ইরানের সাথে লাগতে গিয়ে নিজেদের ভয়াবহ ক্ষতিই ডেকে এনেছে ইসরায়েল। সময় যতো যাচ্ছে, সেই ক্ষতির খতিয়ানও তেমন দীর্ঘ হচ্ছে। হিসেব নিকেশ করে ইসরায়েলের চক্ষুও চড়ক গাছ। অনেকটা ইট মেরে পাটকেল খাওয়ার মতো ঘটনাই ঘটিয়েছে ইসরায়েল।
১২ দিনের ভয়াবহ যুদ্ধ শেষে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় গত ২৪ জুন যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু একে ‘ঐতিহাসিক বিজয়’ বলে ঘোষণা দেন। তবে এই বিজয়ের পেছনে যে বিপুল মানবিক, সামরিক ও আর্থিক ক্ষতি হয়েছে, তা এখন সামনে আসছে ধাপে ধাপে।
যুদ্ধের প্রথম দিকেই ইসরায়েল কয়েকটি ইরানের কয়েকটি কৌশলগত স্থাপনায় হামলা চালায়। নেতানিয়াহু এই অভিযানের প্রশংসা করে বলেন, ইসরায়েল হুমকি মোকাবেলায় কখনো নিষ্ক্রিয় থাকবে না। তবে তিনি একইসঙ্গে স্বীকার করেছেন যে ইসরায়েলও প্রচণ্ড ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে।
ইসরায়েলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইরানের হামলায় ২৯ জন নিহত ও ৩ হাজার২৩৮ জন আহত হয়েছেন, যাদের অনেকেই আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আছেন। ক্ষয়ক্ষতির এই পরিসংখ্যান শুধু ব্যক্তিগত জীবনে নয় জাতীয় অর্থনীতিতেও বিশাল এক চাপ সৃষ্টি করেছে।
ইসরায়েলের অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, যুদ্ধের সরাসরি ও পরোক্ষ খরচ মিলে মোট ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১০ বিলিয়ন শেকেল (৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)। এর মধ্যে কেবল ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় সরাসরি ক্ষতি ধরা হচ্ছে ৩ থেকে ৫ বিলিয়ন শেকেল (৯০০ মিলিয়ন থেকে ১.৫ বিলিয়ন ডলার)। পরোক্ষ ক্ষতিও একই মাত্রার বলে জানিয়েছে অর্থ-বিষয়ক দৈনিক দ্য মার্কার।
ইসরায়েলি পত্রিকা মাআরিভ-এ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, দেশজুড়ে হাজারের বেশি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে। মূলত ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলের রামাত গন, তেল আভিভ, নেস জিওনা ও বাত ইয়ামের শহরগুলিই সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে। দক্ষিণের বীরশেবা ও উত্তরের হাইফাতেও ব্যাপক ধ্বংসের খবর পাওয়া গেছে।
ইসরায়েলি ট্যাক্স অথরিটির তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত ৪৬ হাজারের বেশি ক্ষতিপূরণের আবেদন জমা পড়েছে। এসব আবেদনের মধ্যে রয়েছে বাসাবাড়ি, গাড়ি, ব্যবসায়িক মালামাল ও যন্ত্রপাতির ক্ষতির জন্য আবেদন। তাছাড়া প্রায় ১৮ হাজার বাসিন্দা যুদ্ধের সময় নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে যেতে বাধ্য হন, যাদের অধিকাংশকেই সরকারের ব্যবস্থাপনায় হোটেলে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ জরুরি অবস্থা জারি করায় যুদ্ধ চলাকালীন জরুরি পরিষেবার কর্মীদেরই কাজে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। ইসরায়েলি শিল্প মালিকদের সংগঠন ‘ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন’ জানিয়েছে, এই লকডাউনের ফলে প্রতিদিন অর্থনীতিতে প্রায় ১.৫ বিলিয়ন শেকেল (৪৫০ মিলিয়ন ডলার) ক্ষতি হয়েছে।
ইরানি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনাগুলোর মধ্যে রয়েছে রেহোভোটের বিখ্যাত ওয়েইজম্যান ইনস্টিটিউট, হাইফার বাজান তেল পরিশোধনাগার ও বীরশেবা’র সোরোকা হাসপাতাল। শুধু এই তিন স্থাপনায় ক্ষতির পরিমাণ ৩ বিলিয়ন শেকেলেরও বেশি (৯০০ মিলিয়ন ডলার) বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ওয়েইজম্যান ইনস্টিটিউটে বিজ্ঞান গবেষণার সরঞ্জাম ও ভবনে যেভাবে আঘাত লেগেছে, তা দীর্ঘমেয়াদে বিজ্ঞানচর্চার ওপর গভীর প্রভাব ফেলবে। দ্য মার্কার-এর প্রতিবেদন বলছে, এখানে সরাসরি ক্ষতির পরিমাণ ১.৫ থেকে ২ বিলিয়ন শেকেল হলেও পরোক্ষ বৈজ্ঞানিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতি অনির্ণেয়।
ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় যে কয়েকটি সামরিক স্থাপনায় সরাসরি আঘাত লেগেছে, তা সেন্সর করে রাখা হয়েছে। ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র অন্তত পাঁচটি সামরিক ঘাঁটিতে আঘাত হেনেছে। যার মধ্যে রয়েছে ইসরায়েলের কেন্দ্রীয় সামরিক সদর দফতর ‘কিরিয়া’। ওয়াল্লা পত্রিকা জানায়, এই হামলায় নেতানিয়াহুর অফিসে এতটাই ক্ষতি হয়েছে যে আগামী চার মাস এটি ব্যবহারযোগ্য হবে না।
বামপন্থী সাংবাদিক রাভিভ ড্রুকার সেন্সরশিপের সমালোচনা করে বলেন, এত হামলা সেন্সরের আড়ালে রাখা হচ্ছে যেন মানুষ সত্য জানতে না পারে। আসল উদ্দেশ্য সম্ভবত জনমনে আতঙ্ক এড়ানো, তবে এতে আমাদের প্রতিরোধ ক্ষমতাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়।
ইসরায়েলের এক সরকারি সূত্র টাইমস অব ইসরায়েল-কে জানিয়েছেন, সামরিক ব্যয় ২০ বিলিয়ন শেকেল (৫.৬ বিলিয়ন ডলার) ছাড়িয়েছে। এই ব্যয়ের মধ্যে রয়েছে গোলাবারুদের ব্যবহার, বিমান জ্বালানি, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা চালনা ও রিজার্ভ সেনাদের মোতায়েনের খরচ।
এছাড়া দ্য টেলিগ্রাফ জানায়, যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধের সময় ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষায় ৩৬টি থাড ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে, যার প্রতিটির মূল্য ১২ মিলিয়ন ডলার।
সূত্র: মিডল ইস্ট আই