আশিষ চৌধুরীর বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ মদ-সিসা উদ্ধার

দীর্ঘ ২৪ বছর আগে চাঞ্চল্যকর ও বহুল আলোচিত চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার পলাতক ও অভিযোগপত্রের এক নম্বর আসামি আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) রাত সাড়ে দশটার দিকে রাজধানীর গুলশানের পিংক সিটি সংলগ্ন ১০৭ রোডের ২৫/বি ‘ফিরোজা গার্ডেন’ থেকে তাকে গ্রেফতার করে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখার একটি দল। 

 

এর আগে রাত দশটার দিকে গুলশানের ওই বাড়িটি র‌্যাব সদস্যরা র‌্যাব সদস্যরা ঘিরে রাখেন। গ্রেফতারের সময় তার বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ, বিয়ার ও সিসা জব্দ করা হয়। আশিষ রায় চৌধুরীকে গ্রেফতার ও তার বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, ৯ তলা ওই ভবনের দ্বিতীয় তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে আশিষ রায় চৌধুরীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি রিজেন্ট এয়াওয়েজের চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও)। তার বাসায় এতো বিপুল পরিমাণ মদ কিভাবে আসলো তা তদন্তপূর্বক বিস্তারিত বলা যাবে।

 

র‍্যাব সূত্রে জানা গেছে, আশিষের বাসায় বিপুল পরিমাণ দেশি-বিদেশি মদের বোতল পাওয়া গেছে। দামি এসব মদ বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করে বাসায় মিনি বার গড়ে তুলেছেন। তার এই মিনি বার থেকে প্রায় দেশি-বিদেশি নানা ব্র্যান্ডের মদের বোতল জব্দ করা হয়েছে। নিজের মিনি বারে বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে নিয়মিত মদের আসর বসাতেন। এছাড়াও তার এই বারে সিসা সেবনের উপকরণ পাওয়া গেছে। যা থেকে ধারণা করা হচ্ছে যে এখানে রমরমা মাদকের বাণিজ্য হতো।

 

নায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলায় গত ২০ মার্চ ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আব্দুল আজিজসহ তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ঢাকার দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনাল-২। পরোয়ানাভুক্ত অন্য দুই আসামি হলেন- ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম ও সেলিম খান।

 

প্রসঙ্গত, বনানীর ১৭ নম্বর রোডের আবেদীন টাওয়ারে ট্রাম্পস ক্লাবের নিচে ১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর সন্ত্রাসীদের গুলিতে মারা যান সোহেল চৌধুরী। ওই ঘটনায় সোহেল চৌধুরীর ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী বাদী হয়ে রাজধানীর গুলশান থানায় হত্যা মামলাটি দায়ের করেন। তদন্ত শেষে ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার আবুল কাশেম ব্যাপারী এ মামলায় ৯ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন। চার্জশিটে আছে আসামি আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরীর নাম।

 

২০০১ সালের ৩০ অক্টোবর ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের আদেশ দেন। দুই বছর পর মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য এই ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। ওই সময় এক আসামি হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। হাইকোর্ট বিভাগের তৎকালীন বিচারপতি এমএ মতিন ও সৈয়দ রিফাত আহমদের বেঞ্চ ২০০৩ সালের ১৯ নভেম্বর ওই রিট আবেদনে প্রথমে তিন মাসের জন্য নিম্ন আদালতে মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত করেন।

 

এরপর ২০০৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি রিটের রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মামলাটির নিম্ন আদালতের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। এরপর গত ২০ মার্চ ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক জাকির হোসেন ওই মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ২০ মার্চ দিন ধার্য করেন। ওই দিন শুনানি শেষে আদালত তিনজনের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেন।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» সাংবাদিক হত্যার প্রতিবাদ ও সাংবাদিকদের পেশাগত রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে নওগাঁয় মানববন্ধন

» সাংবাদিক হত্যার প্রতিবাদে মাদারীপুরে মানববন্ধন

» রাজধানীতে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনে ৩৫৫৯ মামলা

» আওয়ামী লীগকে প্রত্যাখ্যান করে শান্তির রাজনীতি প্রতিষ্ঠার আহ্বান মঈন খানের

» বড় কিছু নিয়ে ফিরছেন শাকিব খান, দিলেন বার্তা

» ৭১-এর পক্ষে-বিপক্ষের রাজনীতি নতুন প্রজন্ম গ্রহণ করতে রাজি নয়: নাহিদ

» ক্রীড়া বিকেন্দ্রীকরণে যথাযথ অবকাঠামো প্রয়োজন : আসিফ মাহমুদ

» নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাইলেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব

» আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দল ছিল না: সালাহউদ্দিন

» ‘৫ আগস্টের পর নিরপেক্ষ মানুষও বিএনপির কাছে ভালো কিছু প্রত্যাশা করে’: তারেক রহমান

  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

আশিষ চৌধুরীর বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ মদ-সিসা উদ্ধার

দীর্ঘ ২৪ বছর আগে চাঞ্চল্যকর ও বহুল আলোচিত চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার পলাতক ও অভিযোগপত্রের এক নম্বর আসামি আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) রাত সাড়ে দশটার দিকে রাজধানীর গুলশানের পিংক সিটি সংলগ্ন ১০৭ রোডের ২৫/বি ‘ফিরোজা গার্ডেন’ থেকে তাকে গ্রেফতার করে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখার একটি দল। 

 

এর আগে রাত দশটার দিকে গুলশানের ওই বাড়িটি র‌্যাব সদস্যরা র‌্যাব সদস্যরা ঘিরে রাখেন। গ্রেফতারের সময় তার বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ, বিয়ার ও সিসা জব্দ করা হয়। আশিষ রায় চৌধুরীকে গ্রেফতার ও তার বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, ৯ তলা ওই ভবনের দ্বিতীয় তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে আশিষ রায় চৌধুরীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি রিজেন্ট এয়াওয়েজের চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও)। তার বাসায় এতো বিপুল পরিমাণ মদ কিভাবে আসলো তা তদন্তপূর্বক বিস্তারিত বলা যাবে।

 

র‍্যাব সূত্রে জানা গেছে, আশিষের বাসায় বিপুল পরিমাণ দেশি-বিদেশি মদের বোতল পাওয়া গেছে। দামি এসব মদ বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করে বাসায় মিনি বার গড়ে তুলেছেন। তার এই মিনি বার থেকে প্রায় দেশি-বিদেশি নানা ব্র্যান্ডের মদের বোতল জব্দ করা হয়েছে। নিজের মিনি বারে বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে নিয়মিত মদের আসর বসাতেন। এছাড়াও তার এই বারে সিসা সেবনের উপকরণ পাওয়া গেছে। যা থেকে ধারণা করা হচ্ছে যে এখানে রমরমা মাদকের বাণিজ্য হতো।

 

নায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলায় গত ২০ মার্চ ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আব্দুল আজিজসহ তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ঢাকার দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনাল-২। পরোয়ানাভুক্ত অন্য দুই আসামি হলেন- ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম ও সেলিম খান।

 

প্রসঙ্গত, বনানীর ১৭ নম্বর রোডের আবেদীন টাওয়ারে ট্রাম্পস ক্লাবের নিচে ১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর সন্ত্রাসীদের গুলিতে মারা যান সোহেল চৌধুরী। ওই ঘটনায় সোহেল চৌধুরীর ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী বাদী হয়ে রাজধানীর গুলশান থানায় হত্যা মামলাটি দায়ের করেন। তদন্ত শেষে ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার আবুল কাশেম ব্যাপারী এ মামলায় ৯ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন। চার্জশিটে আছে আসামি আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরীর নাম।

 

২০০১ সালের ৩০ অক্টোবর ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের আদেশ দেন। দুই বছর পর মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য এই ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। ওই সময় এক আসামি হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। হাইকোর্ট বিভাগের তৎকালীন বিচারপতি এমএ মতিন ও সৈয়দ রিফাত আহমদের বেঞ্চ ২০০৩ সালের ১৯ নভেম্বর ওই রিট আবেদনে প্রথমে তিন মাসের জন্য নিম্ন আদালতে মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত করেন।

 

এরপর ২০০৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি রিটের রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মামলাটির নিম্ন আদালতের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। এরপর গত ২০ মার্চ ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক জাকির হোসেন ওই মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ২০ মার্চ দিন ধার্য করেন। ওই দিন শুনানি শেষে আদালত তিনজনের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেন।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Design & Developed BY ThemesBazar.Com