ছবি সংগৃহীত
ড. মো. সফিউল্যাহ প্রধান : আথ্রাইটিস একটি গ্রিক শব্দ। আর্থো মানে জোড়া। আইটিস মানে প্রদাহ। তাহলে আর্থ্রাইটিস রোগ হলো জোড়ার রোগ যেখানে শরীরের যে কোনো জোড়ায় প্রদাহ হওয়াকে বুঝায়। মানব শরীর নিখুঁত কারুকাজে সৃষ্টি, তার অন্যতম জোড়া। আবার এই জোড়াও বিভিন্ন প্রকার। তা নিয়ে আমি পরবর্তীতে লিখব। আর এই আর্থ্রাইটিস রোগ যে কোনো একটি জোড়া বা একাধিক জোড়ায় হতে পারে।
আর্থ্রাইটিস প্রায় শতাধিক প্রকারভেদে হয়ে থাকে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ও বাংলাদেশে যে সকল রোগী আমরা বেশি পেয়ে থাকি অস্টিও-আর্থ্রাইটিস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, সেরিয়াটিক আর্থ্রাইটিস, লুপাস, এনকাইলজিং স্পন্ডালাইটিস, জুভেনাইল আর্থ্রাইটিস, মেটাবলিক আর্থ্রাইটিস, ক্লোরোডারমা, রিএকটিভ আর্থ্রাইটিস, সেপটিক আর্থ্রাইটিস, গাউট, ফাইব্রোমায়ালজিয়া, কানেকটিভ টিসু ডিজিজ, ডিজেনারেটিভ বা মেকানিকেল আর্থ্রাইটিস, পার্থেস ডিজিজ, এনথেসাইটিস, এনটেরোপেথিক আর্থ্রাইটিস, পলিমায়লজিয়া রিউমাটিকা, সেকেন্ডারি আর্থ্রাইটিস, ইনফেকটিভ আর্থ্রাইটিস, জাজেন সিনড্রোম ইত্যাদি। সাদা-কালো নির্বিশেষে যে কোনো বর্ণের, বাচ্চা-বুড়ো নির্বিশেষে যে কোনো বয়সে, মহিলা-পুরুষ ভেদে যে কোনো সংস্কৃতির, যে কোনো অঞ্চলের, যে কোনো ধর্মের মানুষের আর্থ্রাইটিস হতে পারে। তবে সাধারণত বয়স্ক ও মহিলাদের বেশি হয়ে থাকে। আর্থ্রাইটিসের কমন উপসর্গের মধ্যে ব্যথা, জোড়া নড়াচড়ায় ব্যথা তীব্র থেকে তীব্রতর হওয়া, জোড়া ফুলে যাওয়া, জোড়া গরম হওয় যাওয়া, কাজকর্ম করতে-চলাফেরায় অসুবিধা, জোড়া শক্ত হয়ে যাওয়া, চামড়ার রঙের পরিবর্তন, জ্বর আসা, জোড়ায় নড়াচড়ার মাত্রা কমে যাওয়া, শরীর ক্লান্তবোধ, অবসাদ, হতাশা, অনিদ্রা ইত্যাদি ছাড়াও নানাবিধ শরীরিক ও মানষিক অসুস্থতা। এভাবে চলতে থাকলে যতদিন যাবে ততই আস্তে আস্তে রোগী তার দেহের জোড়ার কর্ম ক্ষমতা বা নাড়াচড়ার ক্ষমতা হারায় এবং জোড়া সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে রোগী পুঙ্গুত্ব বা ডিজএবল হয়ে পড়ে।
জোড়া ও আক্রান্ত অঙ্গ বেঁকে যেতে পারে। শরীরের মাংস পেশিগুলো শুকিয়ে যেতে পারে। জোড়া এনকাইলোসড হয়ে গিয়ে শক্ত হয়ে যায়। ক্রমান্বয়ে রোগী ইপেয়ারমেন্ট, ডিজএবলড এবং হেনডিক্যাপ হয়ে পরে। রোগী একদিকে অসহনীয় ব্যথায় আক্রান্ত থাকে অন্যদিকে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, আর্থিক, মানসিক নানাবিধ সমস্যায় পড়ে।
রিহেবিলেটেশনের মূলনীতি হচ্ছে যতদ্রুত রোগ নির্ণয় করে রোগীর শারীরিক কষ্ট লাগবের পাশাপাশি পঙ্গুত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত রাখা। আর্থ্রাইটিস জোড়ার রোগ ও বিভিন্ন প্রকার আর্থ্রাইটিস রয়েছে। যদি কারও এ জাতীয় সমস্যা হয় তাহলে একজন রিহেব-ফিজিও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে ভালো। চিকিৎসক এ ক্ষেত্রে কিছু পরীক্ষা করাতে পারেন। যেমন- রক্ত পরীক্ষা, সেরোলজী পরীক্ষা, এক্সরে তাছাড়া রোগের লক্ষণ দেখেও বুঝা যায় যে কি জাতীয় আর্থ্রাইটিস হয়েছে। আর্থ্রাইটিসের প্রকারভেদ কিছু ঔষধ খেয়ে যেতে হয়। যেমন- ব্যথা নাসক এনএসএআইডিএস ডিজিজ মডিফাই ঔষধ, ভিটামিন ডি, ক্যালসিয়াম। আর্থ্রাইটিসে ফিজিওথেরাপি ও পুনর্বাসন অত্যন্ত কার্যকরী চিকিৎসা। এতে অনেকাংশে রোগীর সমস্যা। ব্যথা বেদনা দূর হয় এবং রোগী স্বাভাবিক চলাফেরা কাজকর্ম করতে পারে। চিকিৎসক প্রয়োজন বোধে ইলেকট্রোমেগনেটিক রেডিয়েশনে, হাইফিকোয়েন্সি সাউন্ড ইন্টারফেরেন সিয়াল থেরাপি। বিভিন্ন নিয়মমাফিক কৌশলগত ব্যায়াম, মেনুয়াল থেরাপি প্রয়োগের মাধ্যমে রোগীর সমস্যা বহুলাংশে লাঘব হয় ও অস্থি সন্ধি স্বাভাবিক তার কর্মক্ষমতা ফিরে পায়, ফলে রোগী আবার সাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। অনেক সময় ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার পাশাপাশি বিভিন্ন অর্থোসিস এর প্রয়োজন হতে পারে। ঠান্ডায় আর্থ্রাইটিসের ব্যথা ও সমস্যা বেড়ে যায়, তাই ঠান্ডা থেকে দূরে থাকতে হবে। কুসুম গরম পানি সেক ব্যথা নিরাময়ে কার্যকরী চিকিৎসা, কুসুম গরম পানিতে গোসল করা যেতে পারে। রিহেব-ফিজিও চিকিৎসকের নির্দেশমত ব্যায়াম নিয়মিত করতে হবে। নিয়মিত হাঁটা চলাফেরা করতে হবে, অত্যাধিক পরিশ্রম করা যাবে না। শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, ওজন বেড়ে গেলে ওজন কমিয়ে ফেলতে হবে, খাদ্য তালিকায় শর্করা জাতীয় খাবার পরিমাণে কমাতে হবে, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি আর্থ্রাইটিস রোধে ভালো ভূমিকা পালন করে তাই ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি খাওয়া যেতে পারে (চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে। দুধ, ডিম, মাছের কাটা, হাড়গোড় বিভিন্ন ফলমূল মাখন, পনির শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম রয়েছে তা খেতে হবে। নিচু জিনিস যেমন পিড়ি বা ফ্লোরে অনেকক্ষণ বসে থাকা যাবে না, অত্যাধিক ভারী বোঝা বহন করা যাবে না।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক ও কনসালট্যান্ট ডিপিআরসি, শ্যামলী, ঢাকা। সূএ:বাংলাাদেশ প্রতিদিন