নঈম নিজাম: দিন থাকিতে তিনের সাধন কেন করলে না
সময় গেলে সাধন হবে না
-ফকির লালন শাহ
চিরতরে চলে যাওয়ার আগে অনেক নিকটজনকে দিন-দুনিয়া নিয়ে কমবেশি আফসোস করতে দেখেছি। জেনেছি বেঁচে থাকার আকুতির কথা। জীবিতকালে অনেক কাজই শেষ করে যেতে পারেননি। ভয়ংকর অসুখে পড়ে জীবনের অপূর্ণতাগুলো নিয়ে যত আফসোস। অনেকে হাউমাউ করে কাঁদেন। চেষ্টা করেন শেষ সময়টাকে গোছাতে। কিন্তু সময়ের অভাবে আর পারেন না। সময় থাকতে অনেক কিছু মনে থাকে না। অনুধাবন করা যায় না। সমাজ সংসারের কাঠিন্য মানুষকে অনেক বাস্তবতা থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। বোঝা যায় না এ জীবন অনেক বেশি ছোট। এখানে একদা আমাদের পূর্বপুরুষরা ছিলেন। আমাদের অনেক প্রিয় বন্ধু ছিল। এখন তাঁরা কেউ নেই। একদিন আমরাও চলে যাব। মৃত্যুর চেয়ে কঠিন বাস্তবতা আর কিছু নেই। অথচ এ সত্যটা মেনে নিতে কষ্ট হয়। টগবগে মানুষ ছিলেন আধুনিক চিন্তার রাজনীতিবিদ জাহাঙ্গীর সাত্তার টিংকু। ক্যান্সারে পড়লেন। পীর হাবিবুর রহমান আর আমি দেখতে গেলাম তাঁর মগবাজারের বাড়িতে। দুপুরে একসঙ্গে খেলাম। হাজারো বিষয় নিয়ে গল্পগুজব-আড্ডা হলো। নিজের এলাকার রাজনীতি নিয়েও কথা বললেন। টিংকু ভাইয়ের দিকে তাকালাম। তাঁর চোখে-মুখে মৃত্যুর কোনো চিহ্ন নেই। কঠিন ক্যান্সার মোকাবিলা করছেন বোঝার উপায় নেই। ডাক্তার তাঁকে সময় বেঁধে দিয়েছেন। তিনি সব জানতেন। চিকিৎসক হিসেবে সব বুঝতেন। কিন্তু কাউকে বুঝতে দিচ্ছেন না তাঁর ভিতরের ক্ষরণ। পীর হাবিব আর আমি ফিরতে ফিরতে আফসোস করছিলাম। বলছিলাম, এই প্রাণবন্ত মানুষটিকে চলে যেতে হবে! মানতে পারছিলাম না। অনেক বছর পর সেই একই অসুখে পড়লেন পীর হাবিব। ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করলেন। মুম্বাই থেকে ফোনে জানান, সব ঠিক হয়ে গেছে। অপারেশন সফল। হাসিমুখে দেশে ফিরলেন। অফিস শুরু করলেন। একদিন দুপুরে খেতে গেলাম আমরা। বললেন, আরও ১৫ বছর বেঁচে থাকার সুযোগ তৈরি হয়েছে ক্যান্সারকে জয় করার কারণে। বলা নেই, কথা নেই হুট করে পীর হাবিব করোনায় আক্রান্ত হলেন। হাসপাতালে ভর্তি হলেন। লড়লেন মৃত্যুর সঙ্গে। সেই লড়াইয়ে জয়ী হতে পারেননি। সবাইকে কাঁদিয়ে বন্ধু পীর হাবিবুর রহমান চলে গেলেন।
মানুষের জীবন এত ছোট হয় কেন? নিজের কাছে প্রশ্ন করে উত্তর পাই না। আমার তিন বোনের স্বামীরা ছিলেন সাদামাটা মানুষ। বড় জন ছিলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক। তখন এটিএন বাংলায় কাজ করি। অসুস্থ হয়ে ঢাকায় এলেন। উঠলেন আমার বাসায়। বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ধরা পড়ল ক্যান্সার লাস্ট স্টেজ। এক রাতে তিনি আমাকে বললেন, আমি কি আর সুস্থ হয়ে উঠতে পারব না? তাঁকে বাসায় রেখে গিয়েছিলাম আমেরিকায়। ফিরে এসে আর পেলাম না। তিনি চলে গেলেন চিরতরে। চিকিৎসাধীন থাকার সময় তাঁর চোখে বেঁচে থাকার আকুতি দেখেছিলাম। তিনি থাকলেন না। মেজো বোনের স্বামী সেনাবাহিনীর হিসাব বিভাগের অডিটর ছিলেন। ভালো মানুষ। গ্রামের বাড়িতে গেলেন এক শুক্রবার। রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হলেন। চিকিৎসার সুযোগ পেলেন না। সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু। তৃতীয় বোনটি আমার পিঠাপিঠি। তাঁর স্বামী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র ছিলেন। ছাত্রজীবন শেষ করে যোগ দিয়েছিলেন সার কারখানার রসায়নবিদ হিসেবে। চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার বছর ঘোরার আগেই এক সকালে চলে গেলেন। খুব ভোরে বোনের ফোন পেয়েছিলাম। বললেন, ভোররাতে হঠাৎ অসুস্থ হওয়ার কারণে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে ভর্তি করেছেন। দ্রুত হাসপাতালে ছুটে গেলাম। সেই ভোরে ঘুম ভাঙালাম বন্ধু সৈয়দ বোরহান কবীরের। চিকিৎসককে বোরহান ফোন করে রেখেছেন। গিয়ে দেখলাম তিনি শুয়ে আছেন। মনে হলো ঘুমাচ্ছেন। বোন জানাল, বুকে খুব ব্যথা অনুভব করছিলেন। হাসপাতালে আনার পর চিকিৎসক ইনজেকশন দিয়েছেন। এরপর ঘুমিয়ে পড়েছেন। এ ঘুমই ছিল শেষ ঘুম। আর জাগলেন না। কিছুক্ষণ পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করলেন। চোখের সামনে প্রিয়জনদের মৃত্যু মেনে নিতে কষ্ট হয়। তবু মানতে হয় কঠিন বাস্তবতায়।
কর্মব্যস্ত এই জীবনে মৃত্যুই সত্য। অনেক সময় এ সত্য জেনেশুনে আমরা অনুধাবন করতে পারি না। বুঝতে চাই না চলে গেলেই সব শেষ। আর কিছু থাকে না। কিছু থাকবে না। সাময়িক কেউ কেউ আফসোস করবে। তারপর কেউ মনেও রাখবে না। মৃত্যুর আগে কঠিন বাস্তবতা বুঝেই হয়তো হাসপাতালে শেষ মুহূর্তের সন্ধিক্ষণে থাকা মানুষটি আকুতি জানায় আরেকটু বেঁচে থাকার। আবার অনেকে বুঝতেও পারেন না চলে যাচ্ছেন। ঘুমের মতো চোখ বোজেন। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়। তারপর সব শেষ। সারা জীবন হৃদরোগের চিকিৎসক ছিলেন বন্ধু অধ্যাপক ডা. রাকিবুল ইসলাম লিটু। একবারও কি ভেবেছিলেন হৃদরোগেই তাঁর মৃত্যু হবে? হাসতে হাসতে হৃদরোগীদের রিং বসাতেন। অথচ তাঁর বুকে রিং বসানোর সুযোগ কেউ পেলেন না। লিটু মারা গেলেন হৃদরোগে। একবারও বুঝতে পারেননি, যে রোগের তিনি চিকিৎসক সে রোগেই তিনি চলে যাবেন। মৃত্যু আপন-পর, চিকিৎসক চেনে না। যখন যার ডাক আসবে তাকে চলে যেতে হবে। মৃত্যুর কাছে ক্ষমতা, জনতার ফারাক নেই। করোনাকালে দেশের একজন বড় শিল্পপতির মৃত্যু হয় হাসপাতালে। মৃত্যুর আগে তিনি চিকিৎসকদের বলেছিলেন, ‘সব সম্পদ নিয়ে যান। শুধু বাঁচিয়ে রাখেন আমাকে’। চিকিৎসকরা পারলেন না সেই শিল্পপতিকে বাঁচাতে। সব চেষ্টাই করেছিলেন। কোনো চেষ্টাই কাজে লাগেনি। মৃত্যু নিয়ে হুমায়ূন আহমেদ আক্ষেপ করেছিলেন। তিনি জানতেন চলে যাবেন। এ কারণে হয়তো হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন, ‘মৃত্যু নিয়ে আমার কোনো আফসোস নেই। মরে গেলাম ফুরায় গেল। তবে এটা আমার কাছে খুব পেইনফুল। একটা মানুষ এত ক্ষমতা নিয়ে পৃথিবীতে আসে, ৭০ বা ৮০ বছর বাঁচে। এরপর শেষ। আর একটা কচ্ছপ সাড়ে তিন শ বছর বাঁচে। হোয়াই? কচ্ছপের মতো একটা প্রাণীর এত বছর বাঁচার প্রয়োজন কী?’ মৃত্যু নিয়ে কি হুমায়ূনের আসলে কোনো আফসোস ছিল না? তাহলে কচ্ছপের অধিক বাঁচা নিয়ে আফসোস করলেন কেন?
করোনাকাল জানিয়ে দিয়েছে মৃত্যুর কোনো বয়সসীমা নেই। মৃত্যুর সময় আপনজনরা না-ও থাকতে পারে। অধ্যাপক তারেক শামসুর রেহমানের জন্য কষ্ট হয়। এই ভদ্রলোক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। ২০০১ সালের নির্বাচনের সময় এটিএন বাংলায় নিয়মিত দুটি টকশো হতো। একটির উপস্থাপক ছিলাম আমি। আরেকটি তারেক শামসুর রেহমান। ব্যক্তিগত সম্পর্কটা দারুণ ছিল। সেই মানুষটি হঠাৎ মারা গেলেন। তাঁর মৃত্যু ছিল বড় কষ্টের। একমাত্র মেয়ে ও স্ত্রী থাকতেন আমেরিকা। তারেক শামসুর রেহমান উত্তরার একটি অ্যাপার্টমেন্টে একা থাকতেন। নিঃসঙ্গ জীবনে এক রাতে হঠাৎ মারা গেলেন। বাসায় কেউ ছিল না। পুলিশ তিন দিন পর তাঁর লাশ উদ্ধার করে। তারপর দাফনের ব্যবস্থা করা হয়। জগৎ-সংসারে একদা এই অধ্যাপকের নাম ছিল। খ্যাতি ছিল। আপনজনের অভাব ছিল না। মৃত্যুর সময় কেউ পাশে ছিল না। হঠাৎ অসুস্থ হলেন। কাউকে ডাকতেও পারলেন না। আপনজনদের সান্নিধ্য পেলেন না। মারা গেলেন একাকী। সেই লাশ বের করে আনতে হলো পুলিশকে। এই তো মানুষের জীবন! মৃত্যুর আগে আমার এক বন্ধু আক্ষেপ করতেন। বলতেন, রুটি -রুজির লড়াই করতে করতে জীবনের পুরো অংশই চলে গেল। যখন বুঝলাম তখন সব শেষ হয়ে অসুখ-বিসুখ ভর করল শরীরে। এখন দৌড়াতে হচ্ছে হাসপাতালে আর ডাক্তারের কাছে। পৃথিবীটাকে বোঝার আগেই চলে যেতে হচ্ছে। সারাটা জীবন কেন এত মরীচিকার পেছনে দৌড়ালাম! এখন শেষ মুহূর্তে বুঝতে পারলাম এ দুনিয়া আসলে কিছুই না। আমার ঘনিষ্ঠ আরেক ভদ্রলোকের কথা বলছি। ঢাকার বনানীতে বিশাল বাড়ি ছিল। এরশাদ জমানায় দাপুটে ছিলেন। সেনা কর্মকর্তা থেকে চাকরি ছেড়ে ভালো ব্যবসায়ী হলেন। সারা জীবন লড়লেন আপনজনদের জন্য ভালো কিছু করতে। একসময় অর্থবিত্তের অভাব ছিল না। অথচ মৃত্যুর আগে ঠিকভাবে চিকিৎসাটা হলো না। এ শহরে, এ দেশে অনেক কিছু গড়েছেন। ব্যবসার পেছনে ছুটেছেন সারাক্ষণ। ব্যবসা রক্ষা করতে লড়েছেন পার্টনারদের সঙ্গেও। নিজের দিকে তাকানোর সময়ও পাননি। থমকে দাঁড়ানোর কথা ভাবেননি। সবাইকে সময় দিয়েছেন। নিজের জন্য তাঁর কোনো সময় ছিল না। হঠাৎ শুনলাম ব্রেন টিউমারের মতো ভয়াবহ অসুখে পড়েছেন তিনি। কথা বলতে পারতেন না। তাঁকে ব্যাংকক নেওয়া হয়, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা না করিয়ে ফেরত আনা হয়। এরপর নেওয়া হয় ভারতেও। চিকিৎসা হয়নি। ডাক্তারের মত শুনল না পরিবার-পরিজন। মারা যাওয়ার আগে দেখতে গিয়েছিলাম ভদ্রলোককে। চিকিৎসার কথা শুনলাম। বললাম, ব্রেন টিউমারের চিকিৎসা এখন আছে। আপনারা সিঙ্গাপুর নিয়ে যান। টানা চিকিৎসা করান। তিনি ঠিক হয়ে যাবেন। ভদ্রলোকের স্ত্রী জানালেন, অর্থ সংকট চলছে। কী করবেন বুঝতে পারছেন না। ব্যাংককে ডাক্তার যে অর্থের কথা বলেছেন, এত নগদ অর্থ তাঁদের কাছে নেই। অবাক ও বিস্মিত হলাম। ভদ্রলোকের ধনসম্পদের অভাব নেই তখনো। নগদ অর্থ না থাকতে পারে, স্থাবর সম্পদ তো আছে। তাই বললাম, ব্যাংকে নগদ সংকট থাকতে পারে। কিন্তু আপনাদের তো অনেক সম্পদ আছে। যে কোনো একটা দ্রুত বিক্রি করে দিন। কোনো কিছু না পারলে গুলশান ক্লাবের সদস্যপদ ছেড়ে দিন। সে টাকায় সিঙ্গাপুর নিয়ে যান। অথবা ব্যাংককে চিকিৎসা করান। হায়াত-মউত আল্লাহর হাতে। আমার কথা শুনে ভদ্রলোকও মাথা নাড়লেন। ইশারায় বললেন তিনি সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নিতে চান। ভদ্রলোকের বাড়িতে সেদিন আমার সঙ্গে আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম ভাই ছিলেন। আমরা দুজন কোথায় যেন যাওয়ার পথে সে বাড়িতে গিয়েছিলাম। একটু পর আমি ওয়াশরুমে যেতে ভদ্রলোক নাসিম ভাইয়ের সঙ্গে কথা বললেন। পরিষ্কারভাবে জানালেন, আমরা যেন তাঁর পরিবারকে বলে যাই সিঙ্গাপুরে নেওয়ার কথা। আমরা বলে এসেছিলাম। কিন্তু তাঁর আর সিঙ্গাপুরে যাওয়া হয়নি। অথচ একদা তিনি সিঙ্গাপুরে চেকআপ করাতেন। নিয়মিত যেতেন। মৃত্যুর সময় শেষ ইচ্ছা পূরণ হলো না!
এই ভদ্রলোকের মৃত্যুর পর গুলশান আজাদ মসজিদে জানাজায় গিয়েছিলাম। আমার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁর সাবেক ব্যবসায়িক পার্টনার। ব্যবসা করতে গিয়ে দুজন অনেক লড়াই করেছেন। মামলা-মোকদ্দমা, মারামারি সব হয়েছিল। এখন ভদ্রলোকের চোখে পানি। জানতে চাইলাম, জীবিতকালে দুজন লড়াই করেছেন। মৃত্যুর পর চোখে পানি কেন? জবাবে বললেন, ‘সবই সত্য ভাই। কিন্তু এই মানুষটা এত লড়াই করে সম্পদ গড়েছিলেন। মৃত্যুর সময় কোনো কাজে লাগল না। সবই তাঁর ছিল, কিন্তু ঠিকভাবে চিকিৎসাটা পেলেন না চলে যাওয়ার সময়! কী হবে এই জীবনে এত অর্থসম্পদ রেখে গিয়ে? দুই দিনের দুনিয়ায় আমরা কেউই থাকব না।’ ভদ্রলোকের ব্যবসায়িক পার্টনারের শেষ কথাগুলো ভাবতে ভাবতে সেদিন অফিসে ফিরছিলাম। বিশাল এই পৃথিবীর ক্ষমতা, সম্পদ কোনোটাই চিরস্থায়ী নয়। আজ আছে কাল থাকবে- কোনো গ্যারান্টি নেই। ভদ্রলোকের সন্তান ও জামাতারা এখন সেই সম্পদ ভোগ করছে। তাঁর বনানীর সেই স্বপ্নের বাড়িটি আজ আর নেই। সন্তানরা বাড়িটি দিয়ে দিয়েছে ডেভেলপার কোম্পানিকে। অন্য সম্পদগুলোও করছে বিক্রি। এই তো জীবন! কোথায় শুরু কোথায় শেষ, কেউ জানি না।
মানুষ জানে এ জীবন চিরস্থায়ী নয়। তবু লড়াই থামায় না। জীবিতকালে মানুষ শত রকমের লড়াইয়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখে। যুদ্ধ-বিগ্রহ, হানাহানিতে কাটিয়ে দেয় বেশি সময়। নিজের খেয়ে অন্যের অশান্তি কামনা করে চব্বিশ ঘণ্টা। নিজের স্বস্তির জন্য মানুষ এত সময় ব্যয় করে না অন্যের ক্ষতি কামনায় যতটা ব্যস্ত থাকে। হিংসা-বিদ্বেষ মানুষের জন্মগতভাবে পাওয়া। হজরত আদম (আ.)-এর দুই সন্তান হাবিল ও কাবিল। কাবিল হাবিলকে খুন করে। ক্ষমতা আর অর্থবিত্তের লোভ মানব জীবনকে ভয়াবহভাবে বিষিয়ে তোলে। করোনার পর ভেবেছিলাম দুনিয়ায় শান্তি ফিরে আসবে। হানাহানি থেকে মুক্ত হবে পৃথিবী। বাস্তবে হয়েছে বিপরীত। আরও বেশি অশান্তির অনল ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে। আমাদের জমানায় মহামারি দেখেছি। আমাদের জমানায় তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধও দেখে যেতে হতে পারে। সেই যুদ্ধ পৃথিবীকে শেষ করে দিতেও পারে। মানুষ আর উঠে দাঁড়াতে পারবে না।
পুনশ্চ : এ লেখা প্রকাশ হচ্ছে ঈদের আগে। অনেকে ভাবছেন ঈদের সময় মৃত্যুভাবনা কেন। আনন্দের সময় বেদনাকে মনে রাখতে হয়। তাহলে দিন-দুনিয়ার অনেক জটিলতা কেটে যায়। দুনিয়াতে কাঠিন্য আছে, থাকবে। মৃত্যু সারাক্ষণ কড়া নাড়বে। তার মধ্যেও বেঁচে থাকতে হবে। মৃত্যুর কথা ভাবলে বেঁচে থাকার আনন্দটা বেড়ে যায়। মনে হয়, আমাদের অনেক প্রিয়জন চলে গেছেন। কিন্তু আমরা আছি। এর চেয়ে আনন্দের আর কিছু নেই।
সবাই ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন। ঈদ মুবারক।
লেখক : সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন। সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন