ছবি সংগৃহীত
অনলাইন ডেস্ক : আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেছেন, নাইন-ইলেভেনের পর সারা বিশ্বে ইসলাম ফোবিকের যে ব্যাপক প্রসার হয়েছিল এরই সুযোগ নেয় প্রতিবেশী ভারত। তারা তাদের দালাল সরকার বাংলাদেশের মসনদে বসিয়ে আলেমসমাজ ও দেশপ্রেমিকদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছিল। বর্তমানেও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলছে জানিয়ে আলেমদের সতর্ক থাকতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সোমবার আমার দেশ-এর সাংবাদিক রকীবুল হকের লেখা ‘আওয়ামী শাসনে আলেম নিপীড়ন’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাহমুদুর রহমান এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে আমার দেশ সম্পাদক বলেন, ফ্যাসিবাদ আমলে দেশের আলেম সমাজকে বিভিন্ন ট্যাগ দিয়ে নির্যাতনের ঘটনা অনেক আগেই শুরু হয়েছিল। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের শেষ সময়ে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থান হওয়ার বিষয়টি ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালানো হয় এবং আলেমদের ট্যাগ দেওয়া শুরু করে। ভারত তার দালাল হাসিনা সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়ে আলেম সমাজের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ নিয়ে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র এখনো চলছে। এই ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে দেশের ভেতর ও বাইরে থেকে। বিগত ১৫ বছরে যারা ফ্যাসিবাদ শাসনে আলেম সমাজের ওপর জুলুম-নির্যাতন করেছিল তাদের প্রতিবেশী দেশে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে সবসময় ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
দেশে চরমপন্থার উত্থান হয়েছে বলে অপপ্রচারের যে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে এরই অংশ হিসেবে বিভিন্ন ঘটনা ঘটানো হচ্ছে মন্তব্য করে মাহমুদুর রহমান বলেন, দাড়ি-টুপিওয়ালাদের মধ্যেও তো ফ্যাসিবাদের দোসর লুকিয়ে আছে। সরকারের ভেতরে ফ্যাসিবাদের দোসররা নেইÑ সেটাও বলা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে আলেম সমাজকে সতর্ক থাকতে হবে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তবে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ও ইসলামের বিষয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমরা যদি সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকি তাহলে যতই ষড়যন্ত্রই করা হোক না কেন ফ্যাসিবাদ ফিরে আসা সম্ভব নয়।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রকাশিত বইকে প্রামাণ্য ঐতিহাসিক দলিল উল্লেখ করে আমার দেশ-এর নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের পতনের পর আমার দেশ পুনঃপ্রকাশের শুরুতেই সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের পরিকল্পনায় সহকর্মী রকীবুল হক মাঠপর্যায় থেকে আলেম নির্যাতনের ঘটনা ধারাবাহিকভাবে পত্রিকায় তুলে ধরেন। ফ্যাসিবাদ আমলে অনেক আলেম জুলুম-নির্যাতনের শিকার হলেও এখানে ৪৩ জনের কথা তুলে ধরা হয়েছে। ভবিষ্যতে নির্যাতনের আরও কাহিনী তুলে ধরা হবে। তিনি সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও বইয়ের লেখক রকীবুল হককে ধন্যবাদ জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নির্যাতিত আলেমদের মধ্য থেকে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, বিগত ফ্যাসিবাদ আমলে নির্যাতনের মাত্রা এতই বিস্তৃত ছিল যে, হয়তো অনেক ঘটনাই এখনো আমাদের অজানা। ফলে ঘটনা ধারাবাহিকভাবে আরও প্রকাশের অনুরোধ জানান তিনি। ফ্যাসিবাদ আমলে আলেমদের ডান্ডাবেরি পরিয়ে আদালতে হাজিরের বিষয়টি তুলে ধরে রফিকুল ইসলাম খান বলেন, হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনের অন্যতম টার্গেট ছিল ইসলাম ও আলেমসমাজ। দেশে এখনো ফ্যাসিবাদের দোসররা নানাভাবে তৎপরতা চালাচ্ছে। সরকারের অভ্যন্তরেও ফ্যাসিবাদের দোসররা নেই সেটা বলা মুসকিল। ফলে আর যাতে এ ধরনের ফ্যাসিবাদ ফিরে না আসতে পারে সে ব্যাপারে দলমত নির্বিশেষে সবার ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
প্রকাশিত বইকে ঐতিহাসিক ও জাতীয় সচেতনা, দেশাত্মবোদ ও ঈমানি চেতনার সুন্দর দলিল বলে আখ্যায়িত করে মুফতি কাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম বলেন, ‘আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকব এবং আর কখনো এ ধরনের আলেম নির্যাতনের সুযোগ দেব না।’
বিশিষ্ট আলেম মুফতি জসীম উদ্দিন রাহমানী বলেন, শেখ হাসিনাকে লেডি আবু জাহেল, ফেরাউন-বিভিন্ন উপাধিতে ভূষিত করা যায়। তার অন্যতম কৌশল ছিল অপপ্রচারের মাধ্যমে আলেমদের বিতর্কিত করা। তার সময়ে দেশ ও ইসলামের পক্ষে যারাই ছিলেন তাদের গ্রেপ্তার-নির্যাত করা হয়।
ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজী বলেন, রাষ্ট্র এখনো ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়নি। আজও আতঙ্কে রাত কাটে আমাদের। এখনো ফ্যাসিবাদের দোসররা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এবং মাথাচাড়া দিচ্ছে। তাদের শেকড় প্রতিবেশী দেশ ভারতে। ফলে রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে ফ্যাসিবাদ রুখতে হবে।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, আর যাতে কখনো ফ্যাসিবাদ ফিরতে না পারে সে জন্য সবাইকে ঐক্যবব্ধ থাকতে হবে।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বইয়ের লেখক রকীবুল হক, প্রকাশক ও তাজদিদ পাবলিকেশনের স্বত্বাধিকারী আহমেদ রিফআত। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন আমার দেশ-এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক জাহেদ চৌধুরী, বার্তা সম্পাদক ইলিয়াস হোসেন, ডেপুটি চিফ রিপোর্টার বাছির জামালসহ অন্য অতিথিরা।
প্রসঙ্গত, ফ্যাসিবাদ পতন-পরবর্তী আমার দেশ পুনঃপ্রকাশের শুরু থেকেই ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হয় নির্যাতিত আলেমদের কথা। সেই প্রতিবেদনগুলো নিয়ে বই প্রকাশ করেছে তাজদিদ পাবলিকেশন। বইটি রকমারিসহ বিভিন্ন লাইব্রেরিতে পাওয়া যাচ্ছে।