মো. সাঈদ মাহাদী সেকেন্দার , লেখক : মধ্যরাতে মোবাইলে কথা বলে ঘুমাতে যাওয়া নিয়মিত কাজে পরিণত হয়েছে আমার। যদিও মাস দুই হলো আমি নিয়মিত কথা বলি তানিয়ার সঙ্গে। তানিয়ার ফোন কল আমার অ্যালার্ম ঘড়ির দায়িত্ব নিয়েছে। এ দায়িত্ব তানিয়া যেমন উপভোগ করছে, একইসঙ্গে আমি তা অনুভব করে তৃপ্তি পাই। সম্পর্কের মায়াজাল এক স্নিগ্ধ মমতায় পূর্ণ করছে বন্ধনের আবহে।
আমার নতুন চাকরি হয়েছে একটি বেসরকারি ব্যাংকের কল সেন্টারে। বেতন যা পাই, তাতে নিজের থাকা-খাওয়া চলে যায়। রাজধানীতে জীবন নির্বাহের ব্যয় যেমন বেড়েছে; তাতে সঞ্চয় করার সুযোগ নেই। আপাতত বেতন বৃদ্ধি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। সে অপেক্ষায় যুক্ত আছে তানিয়া। তার সঙ্গে আমার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে বেতন বৃদ্ধি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। একথা ভাবতেই আমি চমকে উঠি। অপেক্ষা করা কঠিন, প্রিয়তমার স্পর্শ পাওয়ার ব্যকুলতার অপেক্ষা নিশ্চয়ই যন্ত্রণাদায়ক।
আজ শীতের তীব্রতা বেশি। কুয়াশাও পড়েছে বেশ। অফিস থেকে ফিরতে পাবলিক বাস শেষ ভরসা। রাস্তায় অপেক্ষা করছি, পাশে দাঁড়ানো লোকটি হাতে সিগারেট জ্বালিয়ে কাছে এগিয়ে এলেন। উভয়ের গন্তব্য এক হওয়ায় মাঝে আলাপ হলো। শীতের কুয়াশার চাদর ভেদ করে আসা বাসটিতে চড়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।
তানিয়ার আজ ভীষণ মন খারাপ। বিয়ের জন্য বাড়ি থেকে চাপ দেওয়া হচ্ছে। তানিয়া নাছোড়বান্দা, আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করবে না। আমাকে কান্নাজড়িত কণ্ঠে আক্ষেপ নিয়ে অসহায় চিত্র তুলে ধরায় আমিও বিচলিত হয়ে পড়লাম। কথা প্রসঙ্গে তার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার পরিকল্পনা বলতে সে কিছুটা আস্বস্ত হলো। আমার বুকে মাথা রেখে শত গল্পের রং ছড়ানোর স্বপ্ন পূরণের প্রতীক্ষায় সে প্রহর গুনছে। সে প্রহর আমিও গুনছি তার সহযাত্রী হয়ে।
বাড়িতে আমার মা আর ছোট বোন রয়েছে। তিনজনের সংসারে আমি একমাত্র অবলম্বন। বাবার মৃত্যুর পর মা অনেক কষ্ট করে আমাদের পড়ালেখার খরচ জুগিয়ে আজ এ পর্যন্ত নিয়ে এলেন। আমি কর্মজীবনে প্রবেশ করায় মা অনেকটা আশ্বস্ত হয়ে নির্ভার রয়েছেন। আমার বোনের বিয়ের জন্য ইতোমধ্যে যোগ্য পাত্রের সন্ধান করছি। এমন অবস্থায় নিজের বিয়ের আলাপ করা আমার জন্য একটু কঠিন বলা যায়।
তানিয়ার সঙ্গে পরিচয় ফেসবুকে। অপরিচিত মেয়েটির সঙ্গে প্রথমে বন্ধুত্ব, অতঃপর প্রেম নিবেদন। আমাদের সাক্ষাৎ হয়েছে দু-চার বার। প্রথম যেদিন তার সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়েছিল; সেদিন আমি চমকে উঠেছিলাম! আসলে এতটা সৌন্দর্য ছড়াবে তানিয়া, তা নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। গলায় স্বর্ণের চেইনে পড়া সূর্যের রশ্মি মুখমণ্ডলে পড়ে তার স্নিগ্ধ হাসিতে যে মুগ্ধতা, তা আমার চেয়ে ভালো কেউ বলতে পারবে না। উজ্জ্বল শ্যামলা রঙের মেয়েটির মোহনীয় অবয়বে আমি প্রেমের অতল সমুদ্রে সেদিন স্নান করেছি। আমি আজও সেদিনের অনুভব ভুলতে পারিনি।
বাড়িতে দুইবার মায়ের ফোনে কথা হয়েছে। দ্বিতীয়বার সাহস করে আমার বিয়ের বিষয়ে বলতেই মা সানন্দে সেটি গ্রহণ করেছেন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আমাদের তানিয়ার বাড়িতে যাত্রা করার পালা।
পাত্রী হিসেবে মেয়েটি উপযুক্ত। ফলে মা নিশ্চয়ই তাকে পছন্দ করবেন। এবার মায়ের সম্মতি জানানোর পালা তাকে। আমি খুব আনন্দ নিয়ে রাতে কয়েকবার তার মুঠোফোনে ফোন দেওয়ার চেষ্টা করলাম। আমি যথেষ্ট অবাক হলাম, তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। আমি সকাল থেকে চেষ্টা করছি কিন্তু তার নম্বরে সংযোগ প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। আমি বিচলিত হয়ে তানিয়ার ভাবির নম্বরে ফোন দিলে তিনি যা শোনালেন, তাতে আমি আকাশ থেকে পড়লাম।
আজ তার বিয়ে। কিন্তু সে তো আমাকে আশ্বস্ত করেছিল। তারপর এমন সিদ্ধান্ত কেন! এর উত্তর না পেতেই ফোনের লাইনটি তিনি কেটে দিলেন। জীবনের প্রথম প্রেমের পরিণয় না হওয়ার আক্ষেপ নিয়ে কিছুটা স্তব্ধ হয়ে রাতের দুঃস্বপ্ন ভেবে ভোরের নতুন সূর্যের সোনালি আলোয় অফিসে রওনা হলাম।
তানিয়া রহমান নামে মিষ্টি কণ্ঠের একজন গ্রাহক তার ব্যাংক হিসাব নিয়ে কথা বলতে চাইলেন। সূএ:জাগোনিউজ২৪.কম