ছবি সংগৃহীত
ধর্ম ডেস্ক :ফজরের আজান চলা অবস্থায় সেহেরি খাওয়া বন্ধ করেন না অনেকে। এমনকি আজান শেষ হওয়া পর্যন্ত খান। এ বিষয়ে ইসলামে শিথিলতা থাকবে মনে করেই হয়ত এমনটি করা হয়। আবার কেউ কেউ হয় এটাও ধারণা করেতে পারেন যে, সেহেরি যেহেতু শেষ সময়ে খাওয়া মোস্তাহাব, তাই আজান শেষ হওয়া নাগাদ সেহেরি খাওয়া উত্তম।
আসলে সবগুলো ধারণাতেই অস্পষ্টতা রয়েছে। সেহেরির শেষ সময় নিয়ে যেহেতু স্পষ্ট মাসয়ালা আছে, তাই রোজার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ধারণার বশবর্তী হয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া নয়; বরং ইসলামি বিধান কী—সেটা জেনে নেওয়াই জরুরি।
মূলত আজান সেহেরির সময় নির্ধারক নয়। সেহেরিরর সময়ের মানদণ্ড হচ্ছে সুবহে সাদিক। সুবহে সাদিককে জ্যোতির্বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল টোয়াইলাইট। এটি ওই আলো, যা সূর্য দিগন্তের ১৮° নিচে থাকা অবস্থায় দেখা যায়। তবে মনে রাখতে হবে, শরিয়ত ইবাদতের সময়কে কোনো ডিগ্রির সাথে যুক্ত করেনি; যুক্ত করেছে দৃশ্যমান আলামত বা পর্যবেক্ষণের সাথে। যদি জ্যোতির্বিজ্ঞানের হিসাবের শুদ্ধতার ব্যাপারে পরিপূর্ণ আস্থাশীল হওয়া যায়, তাহলে তা গ্রহণ করতে এবং তার আলোকে নিজে সময়সূচি তৈরি করতে কোনো সমস্যা নেই।
কিন্তু সুবহে সাদিক নির্ণয় করা আপনার জন্য কঠিন হতে পারে, তাই আপনাকে যেটা করতে হবে, সেটা হলো আপনার এলাকার সেহেরি-ইফতারের ক্যালেন্ডারের সময়সূচী দেখা।
ওখানে দেখবেন, সেহেরির শেষ সময় কখন। ওই অনুযায়ী আপনি সেহেরি করলে আপনার রোজা শুদ্ধ হবে। কারণ ওই সময়সূচির নির্দেশনা মূলত ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকেই নির্ধারণ করা হয়। আর সময়সূচি নির্ধারণের প্রক্রিয়ায় সন্দেহপূর্ণ কয়েক মিনিট সময়ও যোগ করা হয়। যার কারণে আজান হওয়ার পরে সেহেরি খাওয়ার সুযোগ নেই।
রোজাদার যেন সেহেরির মোস্তাহাব সময়ের সুবিধা নিতে পারেন, সেজন্যই আজান ও সেহেরির মাঝে কয়েক মিনিট গ্যাপ রাখা হয়। তবে, ওই এক দুই মিনিট যেহেতু সন্দেহযুক্ত সময়, তখন না খাওয়াই উত্তম হবে। কারণ সংশয়যুক্ত সময়ে পানাহার করা মাকরুহ। তারপরও ওই সময়ে খাওয়ার মাধ্যমে রোজা সহিহ হয়ে যাবে। (আহসানুল ফতোয়া, খণ্ড: ০৪, পৃষ্ঠা: ৪৩২; আল-ফিকহুল হানাফি ফি সাওবিহিল জাদিদ, খণ্ড: ০১, পৃষ্ঠা- ৪৩৩)
কিন্তু যদি কোনো মসজিদে ফজরের আজান ৫ মিনিট আগে দেওয়া হয়, তখন আপনাকে আজান হওয়ার কারণে খাওয়া শেষ করতে হবে না। বরং আপনি আজান হওয়ার পরও ৫ মিনিট খেতে পারবেন, যেহেতু ৫ মিনিট আগে আজান দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ এখানে মূল বিষয় হলো- সুবহে সাদিক। আজান নয়।
মোটকথা, আজান যদি ক্যালেন্ডারের সঙ্গে মিল থাকে, সেক্ষেত্রে আজানের পরে সেহেরি খেলে রোজা হবে না। ধরেন, আপনার এলাকার মসজিদে সুবহে সাদিকের পরে আজান দিলো। এখন আপনি যদি নিশ্চিত হন যে, সুবহে সাদিক হওয়ার পরেই আজান দেওয়া হচ্ছে, তাহলে আজান পর্যন্ত খাওয়ার কারণে আপনার রোজা হবে না। এজন্য আপনাকে টাইম-টেবিল লক্ষ্য করতে হবে, মসজিদের আজান নয়। (সূত্র: রদ্দুল মুখতার: ২/৩৭১; ফতোয়া হিন্দিয়া: ১/১৯৪)
সময় আছে মনে করে যদি কেউ সেহেরি খায়, অতঃপর জানা যায় যে, তখন সেহেরির সময় শেষ হয়ে গিয়েছিলো। তাহলে সে রোজার শুধু কাজা আদায় করতে হবে; কাফফারা আদায় করতে হবে না। (রদ্দুল মুখতার, খণ্ড-৩য়, পৃষ্ঠা-৪৩৬)।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সেহেরির সময়ের ব্যাপারে সচেতনতা দান করুন। রমজানের যাবতীয় মাসায়েল জানার, বোঝার ও যথাযথ মেনে চলার তাওফিক দান করু। আমিন।