অপূর্ব লাল সরকার, আগৈলঝাড়া (বরিশাল) থেকে : বরিশালের আগৈলঝাড়ায় বর্ষা মৌসুমে বিলাঞ্চলসহ সবখানে চলাচল, জীবিকা ও পণ্য পরিবহনের অন্যতম বাহন হচ্ছে নৌকা। পানি হওয়ার আশংকায় নৌকা কেনার ধুম পরেছে নি¤œাঞ্চল এলাকার লোকজনের মধ্যে। দরিদ্র জনগোষ্ঠি অধ্যুষিত যেসব অঞ্চলের মানুষ জীবন জীবিকার প্রয়োজনে নিবিরভাবে নিজেদের জড়িত রেখেছেন মৎস্য শিকার করে তারা বাজারে মাছ বিক্রির মাধ্যমে অর্জিত অর্থে সংসার চালানোর কাজে। তাই বর্ষা মৌসুমে তাদের প্রধান চালিকা শক্তি হচ্ছে নৌকা। জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এলাকার মৎস্য শিকারীরা তাদের জীবন ধারণ ও যাতায়াতের জন্য নৌকার উপর নির্ভরশীল থাকেন।
এসময় তারা নৌকায় জাল পেতে, চাই (মাছ ধরার ফাঁদ) অথবা বড়শি নিয়ে মৎস্য শিকার করেন। তাই বর্ষা মৌসুম এলেই বেড়ে যায় নৌকার কদর। এদিকে বর্ষার কারণে কাঠমিস্ত্রীদের বাড়ি-ঘর নির্মাণের তেমন কোন কাজ না থাকায় এ সময় বিভিন্ন ধরনের কাঠ দিয়ে মিস্ত্রীরা তাদের নিজেদের বাড়িতে বসেই তৈরি করছেন বিভিন্ন সাইজ ও ডিজাইনের নৌকা। গ্রাম ঘুরে কাঠমিস্ত্রীরা গাছ কিনে স-মিলে চেরাই করে বাড়িতে বসেই নৌকা তৈরি করে তা বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রির মাধ্যমে সংসারের বাড়তি আয় করে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার সহ¯্রাধিক পরিবার। বাড়তি আয়ের মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্য বদল করেছেন তারা। মিস্ত্রীদের কাজে সহায়তা করেন তাদের স্ত্রী ও সন্তানেরা। আগৈলঝাড়া উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় নৌকা বিক্রির হাট সাহেবেরহাট ও বাহাদুরপুর। সপ্তাহে দুইদিন নৌকা বিক্রির হাট বসে।
প্রতি সপ্তাহে দুই হাটে বিক্রি হয় প্রায় ৪-৫শ’ নৌকা। গ্রামগুলো ঘুরে জানা গেছে, এসব এলাকার অসংখ্য পরিবার কাঠমিস্ত্রী পেশায় জড়িত। তারা গ্রামাঞ্চল থেকে অপেক্ষাকৃত কম দামে গাছ কিনে নৌকা তৈরি করে থাকেন। এর মধ্যে জারুল, রেইনট্রি, চাম্বল, মেহেগনি, কদম, রয়না, উরিয়া আম গাছের কাঠ দিয়ে ডিঙ্গি ও ছোট-বড় আকারের নৌকা তৈরি করেন। নৌকার আকার ও কাঠের উপর নির্ভর করে মূল্য নির্ধারণ করা হয়। এসব হাটে তিন হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত নৌকা বিক্রি হয়ে থাকে। একটি মাধারি আকারের নৌকার মূল্য ৭-৮ হাজার টাকা। পানি হওয়ার আতঙ্কে নৌকা কেনার ধুম পরেছে নি¤œ এলাকার লোকজনের মধ্যে। স্থানীয়রা ছাড়াও স্বরূপকাঠি, বানারীপাড়া, উজিরপুর, কোটালীপাড়া, মাদারীপুর থেকে পাইকাররা এসে নৌকা কিনে নিয়ে যায় তাদের এলাকায় বিক্রির জন্য। সরেজমিনে (সোমবার) গিয়ে সাহেবেরহাটে কথা হয় নৌকা ক্রেতা গৌরনদী উপজেলা বাটাজোর ইউনিয়নের বাসুদেবপাড়া গ্রামের মো. শাহজাহান হাওলাদারের সাথে। তিনি জানান, আমি পানের বরজ ও গরুর খাবার সংগ্রহের জন্য ৮ হাজার ৪শ’ টাকা দিয়ে দুটি নৌকা কিনেছি।
গৈলা গ্রামের শওকত ফড়িয়া বলেন, মাছের ঘেরের জন্য একটি নৌকা ক্রয় করতে এসেছি। উজিরপুর উপজেলার হারতা ইউনিয়নের কালবিলা গ্রামের নির্মল হালদার ও স্বপন মৌলি জানান, বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ২৪টি নৌকা ক্রয় করে এই হাটে বিক্রি জন্য এনেছি। আজকের হাটে এখন পর্যন্ত ৮টি নৌকা বিক্রি করেছি। কাঠ ও লোহার মুল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি বছর নৌকার মুল্য একটু বেশী।
সাবেহেরহাট কমিটির সভাপতি মতিউর রহমান শিকদার বলেন, শতবর্ষের এই হাটে প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার নৌকার হাট বসে। উপজেলাসহ বাহিরের বিভিন্ন এলাকার খুচরা ও পাইকারী ক্রেতা ও বিক্রেতাদের পদচারণায় নৌকার হাট জমজমাট থাকে।