অ্যালকোহলযুক্ত সুগন্ধি ব্যবহার কি বৈধ?

সংগৃহীত ছবি

 

অ্যালকোহলযুক্ত সুগন্ধি যেমন-সেন্ট, আতর, বডি স্প্রে ব্যবহার এবং তা ব্যবহার করা অবস্থায় নামাজ পড়া যাবে কি না জানতে চান অনেকে। এর জবাবে আলেমদের বক্তব্য হলো- অ্যালকোহলের উপাদান যদি আঙ্গুর, খেজুর ও কিসমিস হয়, তাহলে তা ব্যবহার জায়েজ নেই। অন্য উপাদান যেমন গম, যব, শস্য, আনারস মধু ইত্যাদি হলে জায়েজ।

 

মদ বা অ্যালকোহলের বিধান হলো- আঙ্গুরের কাচা রস থেকে তৈরি মদ বা অ্যালকোহল নাপাক। এর ক্রয়-বিক্রয়, ব্যবহার অল্প বা বেশি, নেশা হোক বা না হোক সবই হারাম। এ ব্যাপারে সবাই একমত।

মদ বা অ্যালকোহলের উপাদান খেজুর বা কিসমিসও হতে পারে। এটিও হারাম ও নাপাক। তবে এর নিষিদ্ধতা প্রথমটার মতো অকাট্য নয়। সেজন্যই এ ধরনের মদ্যপায়ীর ওপর ইসলামি হদ (শাস্তি) কার্যকর হয় না। তবে তা মেডিসিনের ব্যবহারসহ বৈধ উদ্দেশ্যে বিক্রয় জায়েজ।

 

আরেকপ্রকার অ্যালকোহল আছে, যার উপাদান উপরোক্ত বস্তু ছাড়া অন্যকিছু। যেমন গম, যব বা অন্যকোনো শস্য, মধু ইত্যাদি। এসব অ্যালকোহলের বিধান হলো- নেশা উদ্রেক করে না-এ পরিমাণ ব্যবহার করা বৈধ। নেশা উদ্রেক করা পরিমাণ ব্যবহার করা বৈধ নয়। এটি ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম আবু ইউসুফ (রহ.)-এর অভিমত।

 

বর্তমান বাজারে সাধারণত যেসব সুগন্ধি পাওয়া যায় তাতে নাজায়েজ হওয়ার উপাদান নেই। ‘ইনসাইক্লোপিডিয়া অব ব্রিটানিকা’য় বর্তমান বিশ্বে অ্যালকোহল কিসের থেকে তৈরি, তার একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে। সে তালিকায় আছে, মধু, শস্য, যব, আনারসের রস, গন্ধক ও সালফেট অন্যান্য রাসায়নিক উপাদান। তাতে কোথাও আঙ্গুর বা খেজুরের কথা নেই।

মুফতি তাকি উসমানি লিখেছেন, ‘বর্তমান বিশ্বে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে অ্যালকোহল ব্যবহার করা হচ্ছে। বিভিন্ন ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে। রাসায়নিক বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। বহু শিল্প কারখানা অ্যালকোহলের ব্যবহার করা ছাড়া চলা সম্ভব নয়। এককথায় বর্তমান সময়ে বহু মানুষ এর সঙ্গে জড়িত এবং এর প্রচণ্ড প্রয়োজনয়ীতা রয়েছে। এখন আমাদের দেখার বিষয়, যদি এসব অ্যালকোহল আঙ্গুরের কাচা রস থেকে তৈরি না হয়, তবে তা বৈধ কাজে ব্যবহার করা ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর মতে বৈধ।

 

সুতরাং বাজারে প্রচলিত অ্যালকোহল যদি খেজুর ও আঙ্গুর থেকে প্রস্তুত না হয়, তবে তা বৈধ কাজের উদ্দেশ্যে ব্যবহার বৈধ। নেশার উদ্রেক হয় না, এ পরিমাণ ব্যবহার করা যাবে। ওষুধ তৈরিতে বা চিকিৎসায়ও ব্যবহার করা যাবে। অন্যান্য কাজেও ব্যবহার করা যাবে। (দেখুন তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম ১/৩৪৮, ৩/৩৩৭; ফিকহুল বুয়ু: ১/২৯৮)

 

তবে, যদি কোনো অ্যালকোহলের ব্যাপারে প্রমাণিত হয় যে তা আঙ্গুর ও খেজুর থেকে তৈরি, তাহলে তা ব্যবহার করা যাবে না। আর যেহেতু বর্তমান সেন্ট বা বডি স্প্রেগুলোতে সামান্য পরিমাণ পরিশোধিত অ্যালকোহল ব্যবহার করা হয় এবং তা শরীরের অভ্যন্তরে কোনো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না, তাই এগুলো ব্যবহারে আপত্তি নেই। এরপরও এরূপ সেন্ট পরিত্যাগ করে আতর ব্যবহার করাই উত্তম। (জাদিদ ফিকহি মাসায়েল: ১/৩৮)  সূএ:ঢাকা মেইল ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার দিন ডিএমপির বিশেষ নির্দেশনা

» ‘শিখতে আসিনি, জিততে এসেছি’, নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে সোহান

» পাকিস্তানে জ্বালানি ট্যাংকার বিস্ফোরণে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৯

» দেশের পথে খালেদা জিয়া

» মাকে বিদায় জানালেন তারেক রহমান

» কেউ যেন হাসিনা হয়ে উঠতে না পারে সে জন্য বিচার আবশ্যক : সারজিস

» লন্ডনের বাসা থেকে বের হয়ে বিমানবন্দের উদ্দেশে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া

» বাংলাদেশে এখনো ফ্যাসিস্ট শক্তি আছে বলেই হাসনাতের উপর আক্রমণ: মাহমুদুর রহমান

» বাংলাদেশ থেকে আরও জনশক্তি নিতে আগ্রহী ইতালি

» হাসনাতের ওপর হামলার মতো ঘটনা ভবিষ্যতে যেন আর না ঘটে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

অ্যালকোহলযুক্ত সুগন্ধি ব্যবহার কি বৈধ?

সংগৃহীত ছবি

 

অ্যালকোহলযুক্ত সুগন্ধি যেমন-সেন্ট, আতর, বডি স্প্রে ব্যবহার এবং তা ব্যবহার করা অবস্থায় নামাজ পড়া যাবে কি না জানতে চান অনেকে। এর জবাবে আলেমদের বক্তব্য হলো- অ্যালকোহলের উপাদান যদি আঙ্গুর, খেজুর ও কিসমিস হয়, তাহলে তা ব্যবহার জায়েজ নেই। অন্য উপাদান যেমন গম, যব, শস্য, আনারস মধু ইত্যাদি হলে জায়েজ।

 

মদ বা অ্যালকোহলের বিধান হলো- আঙ্গুরের কাচা রস থেকে তৈরি মদ বা অ্যালকোহল নাপাক। এর ক্রয়-বিক্রয়, ব্যবহার অল্প বা বেশি, নেশা হোক বা না হোক সবই হারাম। এ ব্যাপারে সবাই একমত।

মদ বা অ্যালকোহলের উপাদান খেজুর বা কিসমিসও হতে পারে। এটিও হারাম ও নাপাক। তবে এর নিষিদ্ধতা প্রথমটার মতো অকাট্য নয়। সেজন্যই এ ধরনের মদ্যপায়ীর ওপর ইসলামি হদ (শাস্তি) কার্যকর হয় না। তবে তা মেডিসিনের ব্যবহারসহ বৈধ উদ্দেশ্যে বিক্রয় জায়েজ।

 

আরেকপ্রকার অ্যালকোহল আছে, যার উপাদান উপরোক্ত বস্তু ছাড়া অন্যকিছু। যেমন গম, যব বা অন্যকোনো শস্য, মধু ইত্যাদি। এসব অ্যালকোহলের বিধান হলো- নেশা উদ্রেক করে না-এ পরিমাণ ব্যবহার করা বৈধ। নেশা উদ্রেক করা পরিমাণ ব্যবহার করা বৈধ নয়। এটি ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম আবু ইউসুফ (রহ.)-এর অভিমত।

 

বর্তমান বাজারে সাধারণত যেসব সুগন্ধি পাওয়া যায় তাতে নাজায়েজ হওয়ার উপাদান নেই। ‘ইনসাইক্লোপিডিয়া অব ব্রিটানিকা’য় বর্তমান বিশ্বে অ্যালকোহল কিসের থেকে তৈরি, তার একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে। সে তালিকায় আছে, মধু, শস্য, যব, আনারসের রস, গন্ধক ও সালফেট অন্যান্য রাসায়নিক উপাদান। তাতে কোথাও আঙ্গুর বা খেজুরের কথা নেই।

মুফতি তাকি উসমানি লিখেছেন, ‘বর্তমান বিশ্বে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে অ্যালকোহল ব্যবহার করা হচ্ছে। বিভিন্ন ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে। রাসায়নিক বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। বহু শিল্প কারখানা অ্যালকোহলের ব্যবহার করা ছাড়া চলা সম্ভব নয়। এককথায় বর্তমান সময়ে বহু মানুষ এর সঙ্গে জড়িত এবং এর প্রচণ্ড প্রয়োজনয়ীতা রয়েছে। এখন আমাদের দেখার বিষয়, যদি এসব অ্যালকোহল আঙ্গুরের কাচা রস থেকে তৈরি না হয়, তবে তা বৈধ কাজে ব্যবহার করা ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর মতে বৈধ।

 

সুতরাং বাজারে প্রচলিত অ্যালকোহল যদি খেজুর ও আঙ্গুর থেকে প্রস্তুত না হয়, তবে তা বৈধ কাজের উদ্দেশ্যে ব্যবহার বৈধ। নেশার উদ্রেক হয় না, এ পরিমাণ ব্যবহার করা যাবে। ওষুধ তৈরিতে বা চিকিৎসায়ও ব্যবহার করা যাবে। অন্যান্য কাজেও ব্যবহার করা যাবে। (দেখুন তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম ১/৩৪৮, ৩/৩৩৭; ফিকহুল বুয়ু: ১/২৯৮)

 

তবে, যদি কোনো অ্যালকোহলের ব্যাপারে প্রমাণিত হয় যে তা আঙ্গুর ও খেজুর থেকে তৈরি, তাহলে তা ব্যবহার করা যাবে না। আর যেহেতু বর্তমান সেন্ট বা বডি স্প্রেগুলোতে সামান্য পরিমাণ পরিশোধিত অ্যালকোহল ব্যবহার করা হয় এবং তা শরীরের অভ্যন্তরে কোনো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না, তাই এগুলো ব্যবহারে আপত্তি নেই। এরপরও এরূপ সেন্ট পরিত্যাগ করে আতর ব্যবহার করাই উত্তম। (জাদিদ ফিকহি মাসায়েল: ১/৩৮)  সূএ:ঢাকা মেইল ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com