অমানুষের রাজনীতিতে কোনো স্থান নেই

সংগৃহীত ছবি

 

সাঈদ খান  :বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট আজ এমন এক জটিল অবস্থায়, যেখানে নৈতিকতা ও মানুষের জন্য রাজনীতির জায়গা ক্রমেই সংকীর্ণ হচ্ছে। খুনি, ধর্ষক, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ আর দুর্নীতিবাজরা শুধু আইন-শৃঙ্খলা নয়, দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকেও ধ্বংস করছে। নারীর প্রতি সহিংসতা, শিশু নির্যাতন, খুন, গুম, চাঁদাবাজি এবং নিরীহ মানুষের ওপর সন্ত্রাস—এসব শুধু বিচ্ছিন্ন অপরাধ নয়, এগুলো আমাদের সমাজকাঠামোকে ভেঙে দিচ্ছে ভেতর থেকে।

 

অন্যদিকে বিচারবহির্ভূত শাস্তির নামে ‘মব ভায়োলেন্স’ বা গণপিটুনির ঘটনা বেড়ে চলেছে, যা ন্যায়বিচারের বদলে প্রতিশোধের সংস্কৃতি তৈরি করছে। একটি সভ্য, মানবিক ও নিরাপদ সমাজ নির্মাণে এসব অপরাধ ও সহিংসতার বিরুদ্ধে আমাদের সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। আইন হাতে তুলে নেওয়া নয়, বরং আইনের শাসন, ন্যায়বিচার ও সামাজিক সচেতনতাই হতে পারে টেকসই সমাধান। যে সমাজে দুর্বলরা নিরাপদ নয়, সেই সমাজ টিকে থাকতে পারে না।

রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের ভেতরে শুদ্ধি, জবাবদিহি ও নৈতিক নেতৃত্ব তৈরির প্রয়োজনীয়তা অবহেলা করলে এ দেশের রাজনীতি আরো নষ্ট হবে। এই যে রাজনীতির ময়দানে অমানুষরা রাজত্ব করছে, সেটি রোধ করার জন্য আমাদের সতর্ক হতে হবে। খুনি কখনো কোনো দলের হতে পারে না। তার একমাত্র পরিচয় সে খুনি। রাজনীতির নামে যদি খুনকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়, তবে সেটি গণতন্ত্র নয়, ত্রাসের রাজত্ব।

 

আমরা অনেক সময় দেখি, অপরাধীদের ‘আমাদের’ বা ‘আপনাদের’ বলে ভাগ করে নেওয়া হয়। এতে নিরীহ মানুষ বিচার থেকে বঞ্চিত হয়, অপরাধীরা পায় প্রশ্রয়। রাজনীতি কখনো পক্ষপাতের জায়গা হতে পারে না। অপরাধ ও অপরাধীকে দল-মতের ঊর্ধ্বে রেখে বিচার করতে না পারলে আমরা একটি বিভাজিত সমাজের দিকে ধেয়ে যাব। রাজনৈতিক দলগুলো যদি অপরাধী ও দুর্নীতিবাজদের দল থেকে চিরতরে বহিষ্কারে ব্যর্থ হয়, তবে তারা জনগণের আস্থা হারাবে।

 

রাজনীতির দূষণ রোধ করা যাবে না। দলগুলো যদি নিজেদের ভেতর থেকে শুদ্ধ না হয়, তাহলে তারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে না—অর্থাৎ গণতন্ত্রের ভিত্তিই দুর্বল হবে।
দুর্নীতিবাজ, চাঁদাবাজ, ডাকাত, কালোবাজারি ও মুনাফাখোরদের আর কোনোভাবে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। যারা দলের নাম ব্যবহার করে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছে, জনস্বার্থ ত্যাগ করে নিজের আখের গুছিয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে অতি দ্রুত দল থেকে চিরতরে বহিষ্কার করতে হবে। কারণ এসব চরিত্রই জনগণের আস্থা নষ্ট করে, রাজনীতিকে কলুষিত করে এবং রাষ্ট্রের ভিত্তিকে দুর্বল করে। শুদ্ধি অভিযান হতে হবে সাহসিকতা ও নৈতিকতার সঙ্গে। কারণ রাজনৈতিক শুদ্ধি ছাড়া সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। আমাদের উচ্চকণ্ঠে ঘোষণা করতে হবে, অমানুষের রাজনীতিতে কোনো স্থান নেই। যারা মানবিক মূল্যবোধ, ন্যায়বিচার, সহমর্মিতা ও গণতান্ত্রিক চেতনায় বিশ্বাস করে না, তারা রাজনীতির নামে শুধু ক্ষমতা ও সন্ত্রাসের ব্যবসা করে।

 

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বারবার বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগের মতো আচরণ করলে বিএনপিরও একই পরিণতি হবে।’ এটি কেবল বিরোধী দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ নয়, এটি নিজের দলের প্রতি কঠোর আত্মসমালোচনা এবং নৈতিক শুদ্ধির আহবান। আওয়ামী লীগ আমলে ক্ষমতা যে দমন-পীড়ন, দুর্নীতি, দলীয়করণ আর অরাজকতা তৈরির ইতিহাস বিএনপি দেখেছে, সেটির পুনরাবৃত্তি হলে ফলাফল হবে একই—জনগণের আস্থা ক্ষুণ্ন, রাজনৈতিক সংকট গভীরতর। এই সতর্কতা অপরিহার্য। কারণ রাজনৈতিক শুদ্ধি ছাড়া একটি দল টিকে থাকতে পারে না।

 

রাজনীতিতে ভুল করেননি এমন কোনো রাজনৈতিক নেতা পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া যাবে না। তবে যাঁর ভুলের পরিমাণ যত কম, তিনি তত বেশি সফল। তাঁকে জনগণ তত বেশি ভালোবেসে মনে রেখেছে। আবার যে নেতা যত বেশি ভুল করেছেন, তিনি তত বেশি নিন্দিত হয়েছেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনা সবচেয়ে বেশি নিন্দিত ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত। তারেক রহমান পরিষ্কার করে বলেছেন, ‘এখন কিন্তু মানুষ অনেক সচেতন। মানুষ আমাদের ওপর আস্থা রাখতে চাইছে, আমাদের ওপর অর্থাৎ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ওপর। এই আস্থা যদি নষ্ট করার জন্য কেউ কোনো কাজ করে, তাহলে ভাই তাকে তো আমার পক্ষে টানা সম্ভব না। তাকে আমি টানব না। তাকে শেলটার আমি দেব না।’

 

বিএনপির অর্জন ও অবদান ধুলায় মেশানোর অধিকার কারো নেই—এ কথা স্পষ্ট। বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায়, অর্থনৈতিক সংস্কারে, নারীর ক্ষমতায়নে, মত প্রকাশের স্বাধীনতায়, গ্রামীণ উন্নয়নে বিএনপির অবদান অনস্বীকার্য। এই ইতিহাসকে ভুলে গেলে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ রাজনীতির ভিত্তি দুর্বল হবে। সৎ ও যোগ্য নেতৃত্বকে দায়িত্ব নিতে হবে, যাতে শুদ্ধি ও জবাবদিহির সংস্কৃতি প্র্রতিষ্ঠিত হয়।

 

শিক্ষাব্যবস্থা যখন মূল্যবোধহীন, সংস্কৃতি যখন ভোগবাদী আর সমাজ যখন লোভের পূজারি, তখন অপরাধীরা শুধু অপরাধ করে না—নিয়ন্ত্রকও হয়ে ওঠে। তারা হয়ে ওঠে নেতা, ঠিকাদার, মালিক আর সাধারণ গরিব মানুষ হয় নির্যাতিত ও বঞ্চিত। বর্তমানে বাংলাদেশে অপরাধ বেড়েই চলেছে : ধর্ষণ, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, কিশোর গ্যাং, সিন্ডিকেট, মাদক—সবই চলে রাষ্ট্রের ছায়ায়। সরকার নীরব, আইনি ব্যবস্থা ঘুমন্ত, জনগণ আতঙ্কে। এসব সংকটের প্রতিকার শুধু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর তৎপরতায় সম্ভব নয়, প্রয়োজন ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র কাঠামোর গভীর সংস্কার।

 

সমাধান একটাই—অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতি। ধনী-গরিবের ব্যবধান কমানো, সবার জন্য শিক্ষা, কাজ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই হলো মূল চাবিকাঠি। রাজনৈতিক অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও প্রশাসনিক জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। সাংস্কৃতিক অন্তর্ভুক্তি আনতে হবে, যাতে মানবিকতা, নারীর মর্যাদা ও যুবসমাজের নৈতিকতা গড়ে ওঠে। উন্নত রাষ্ট্রগুলো দেখিয়েছে—সুশাসন থাকলে অপরাধ থাকে না। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও তা-ই প্রযোজ্য। তবে এর জন্য সবার আগে দরকার একটি নির্বাচিত সরকার।

 

বাংলাদেশে এক সুন্দর, ন্যায়ভিত্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি গড়ে তোলার দায়িত্ব আমাদের সবার, বিশেষ করে রাজনৈতিক নেতাদের। আমাদের একান্ত প্রত্যাশা হলো বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দল অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে ভেতর থেকে শুদ্ধ হবে, অপরাধীদের নির্মূল করবে এবং দেশের গণতন্ত্র ও মানুষের কল্যাণে নিবেদিত নেতৃত্ব গড়ে তুলবে। অন্যথায় ইতিহাস তাদের কঠোর বিচার করবে।

 

রাজনীতি মানুষের জন্য মানবিকতা, ন্যায়বিচার, সম্মান ও অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যম। এখানে খুনি, ধর্ষক, দুর্নীতিবাজ, লুটেরা, সন্ত্রাসী, অপরাধীদের ঠাঁই নেই। সময় এসেছে স্পষ্টভাবে উচ্চারণ করার—অমানুষের রাজনীতিতে কোনো স্থান নেই।

লেখক : সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক সাংগঠনিক সম্পাদক, ডিইউজে

সূএ : বাংলাদেশ  প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» মিটফোর্ডের ঘটনায় তাঁবেদার শক্তির ধারকবাহক জড়িত : রিজভী

» মিটফোর্ডে সোহাগ হত্যা : দুই ভাই রিমান্ডে

» সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে নিজস্ব ওয়েবসাইট তৈরির নির্দেশ

» অভিযান চালিয়ে এক হাজার ৪৯৬ জন অপরাধী গ্রেফতার

» রাকিব হত্যা মামলায় কামরুল-মানিক নতুন মামলায় গ্রেফতার

» নারীকে যথাযথ সম্মান না দিয়ে দমিয়ে রাখলে রাষ্ট্র পিছিয়ে যাবে: আলী রীয়াজ

» তারেক রহমানকে নিয়ে কটূক্তি বরদাস্ত করা হবে না : ফারুক

» মাদকের সঙ্গে জড়িত গডফাদারদের ধরতে হবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

» অপরাধ বাড়ার দাবি পুরোপুরি সত্য নয়: অন্তর্বর্তী সরকার

» প্রবাসীদের সেবা নিশ্চিতে জোহর বাহরুতে চালু হচ্ছে কনস্যুলেট

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

অমানুষের রাজনীতিতে কোনো স্থান নেই

সংগৃহীত ছবি

 

সাঈদ খান  :বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট আজ এমন এক জটিল অবস্থায়, যেখানে নৈতিকতা ও মানুষের জন্য রাজনীতির জায়গা ক্রমেই সংকীর্ণ হচ্ছে। খুনি, ধর্ষক, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ আর দুর্নীতিবাজরা শুধু আইন-শৃঙ্খলা নয়, দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকেও ধ্বংস করছে। নারীর প্রতি সহিংসতা, শিশু নির্যাতন, খুন, গুম, চাঁদাবাজি এবং নিরীহ মানুষের ওপর সন্ত্রাস—এসব শুধু বিচ্ছিন্ন অপরাধ নয়, এগুলো আমাদের সমাজকাঠামোকে ভেঙে দিচ্ছে ভেতর থেকে।

 

অন্যদিকে বিচারবহির্ভূত শাস্তির নামে ‘মব ভায়োলেন্স’ বা গণপিটুনির ঘটনা বেড়ে চলেছে, যা ন্যায়বিচারের বদলে প্রতিশোধের সংস্কৃতি তৈরি করছে। একটি সভ্য, মানবিক ও নিরাপদ সমাজ নির্মাণে এসব অপরাধ ও সহিংসতার বিরুদ্ধে আমাদের সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। আইন হাতে তুলে নেওয়া নয়, বরং আইনের শাসন, ন্যায়বিচার ও সামাজিক সচেতনতাই হতে পারে টেকসই সমাধান। যে সমাজে দুর্বলরা নিরাপদ নয়, সেই সমাজ টিকে থাকতে পারে না।

রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের ভেতরে শুদ্ধি, জবাবদিহি ও নৈতিক নেতৃত্ব তৈরির প্রয়োজনীয়তা অবহেলা করলে এ দেশের রাজনীতি আরো নষ্ট হবে। এই যে রাজনীতির ময়দানে অমানুষরা রাজত্ব করছে, সেটি রোধ করার জন্য আমাদের সতর্ক হতে হবে। খুনি কখনো কোনো দলের হতে পারে না। তার একমাত্র পরিচয় সে খুনি। রাজনীতির নামে যদি খুনকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়, তবে সেটি গণতন্ত্র নয়, ত্রাসের রাজত্ব।

 

আমরা অনেক সময় দেখি, অপরাধীদের ‘আমাদের’ বা ‘আপনাদের’ বলে ভাগ করে নেওয়া হয়। এতে নিরীহ মানুষ বিচার থেকে বঞ্চিত হয়, অপরাধীরা পায় প্রশ্রয়। রাজনীতি কখনো পক্ষপাতের জায়গা হতে পারে না। অপরাধ ও অপরাধীকে দল-মতের ঊর্ধ্বে রেখে বিচার করতে না পারলে আমরা একটি বিভাজিত সমাজের দিকে ধেয়ে যাব। রাজনৈতিক দলগুলো যদি অপরাধী ও দুর্নীতিবাজদের দল থেকে চিরতরে বহিষ্কারে ব্যর্থ হয়, তবে তারা জনগণের আস্থা হারাবে।

 

রাজনীতির দূষণ রোধ করা যাবে না। দলগুলো যদি নিজেদের ভেতর থেকে শুদ্ধ না হয়, তাহলে তারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে না—অর্থাৎ গণতন্ত্রের ভিত্তিই দুর্বল হবে।
দুর্নীতিবাজ, চাঁদাবাজ, ডাকাত, কালোবাজারি ও মুনাফাখোরদের আর কোনোভাবে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। যারা দলের নাম ব্যবহার করে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছে, জনস্বার্থ ত্যাগ করে নিজের আখের গুছিয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে অতি দ্রুত দল থেকে চিরতরে বহিষ্কার করতে হবে। কারণ এসব চরিত্রই জনগণের আস্থা নষ্ট করে, রাজনীতিকে কলুষিত করে এবং রাষ্ট্রের ভিত্তিকে দুর্বল করে। শুদ্ধি অভিযান হতে হবে সাহসিকতা ও নৈতিকতার সঙ্গে। কারণ রাজনৈতিক শুদ্ধি ছাড়া সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। আমাদের উচ্চকণ্ঠে ঘোষণা করতে হবে, অমানুষের রাজনীতিতে কোনো স্থান নেই। যারা মানবিক মূল্যবোধ, ন্যায়বিচার, সহমর্মিতা ও গণতান্ত্রিক চেতনায় বিশ্বাস করে না, তারা রাজনীতির নামে শুধু ক্ষমতা ও সন্ত্রাসের ব্যবসা করে।

 

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বারবার বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগের মতো আচরণ করলে বিএনপিরও একই পরিণতি হবে।’ এটি কেবল বিরোধী দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ নয়, এটি নিজের দলের প্রতি কঠোর আত্মসমালোচনা এবং নৈতিক শুদ্ধির আহবান। আওয়ামী লীগ আমলে ক্ষমতা যে দমন-পীড়ন, দুর্নীতি, দলীয়করণ আর অরাজকতা তৈরির ইতিহাস বিএনপি দেখেছে, সেটির পুনরাবৃত্তি হলে ফলাফল হবে একই—জনগণের আস্থা ক্ষুণ্ন, রাজনৈতিক সংকট গভীরতর। এই সতর্কতা অপরিহার্য। কারণ রাজনৈতিক শুদ্ধি ছাড়া একটি দল টিকে থাকতে পারে না।

 

রাজনীতিতে ভুল করেননি এমন কোনো রাজনৈতিক নেতা পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া যাবে না। তবে যাঁর ভুলের পরিমাণ যত কম, তিনি তত বেশি সফল। তাঁকে জনগণ তত বেশি ভালোবেসে মনে রেখেছে। আবার যে নেতা যত বেশি ভুল করেছেন, তিনি তত বেশি নিন্দিত হয়েছেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনা সবচেয়ে বেশি নিন্দিত ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত। তারেক রহমান পরিষ্কার করে বলেছেন, ‘এখন কিন্তু মানুষ অনেক সচেতন। মানুষ আমাদের ওপর আস্থা রাখতে চাইছে, আমাদের ওপর অর্থাৎ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ওপর। এই আস্থা যদি নষ্ট করার জন্য কেউ কোনো কাজ করে, তাহলে ভাই তাকে তো আমার পক্ষে টানা সম্ভব না। তাকে আমি টানব না। তাকে শেলটার আমি দেব না।’

 

বিএনপির অর্জন ও অবদান ধুলায় মেশানোর অধিকার কারো নেই—এ কথা স্পষ্ট। বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায়, অর্থনৈতিক সংস্কারে, নারীর ক্ষমতায়নে, মত প্রকাশের স্বাধীনতায়, গ্রামীণ উন্নয়নে বিএনপির অবদান অনস্বীকার্য। এই ইতিহাসকে ভুলে গেলে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ রাজনীতির ভিত্তি দুর্বল হবে। সৎ ও যোগ্য নেতৃত্বকে দায়িত্ব নিতে হবে, যাতে শুদ্ধি ও জবাবদিহির সংস্কৃতি প্র্রতিষ্ঠিত হয়।

 

শিক্ষাব্যবস্থা যখন মূল্যবোধহীন, সংস্কৃতি যখন ভোগবাদী আর সমাজ যখন লোভের পূজারি, তখন অপরাধীরা শুধু অপরাধ করে না—নিয়ন্ত্রকও হয়ে ওঠে। তারা হয়ে ওঠে নেতা, ঠিকাদার, মালিক আর সাধারণ গরিব মানুষ হয় নির্যাতিত ও বঞ্চিত। বর্তমানে বাংলাদেশে অপরাধ বেড়েই চলেছে : ধর্ষণ, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, কিশোর গ্যাং, সিন্ডিকেট, মাদক—সবই চলে রাষ্ট্রের ছায়ায়। সরকার নীরব, আইনি ব্যবস্থা ঘুমন্ত, জনগণ আতঙ্কে। এসব সংকটের প্রতিকার শুধু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর তৎপরতায় সম্ভব নয়, প্রয়োজন ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র কাঠামোর গভীর সংস্কার।

 

সমাধান একটাই—অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতি। ধনী-গরিবের ব্যবধান কমানো, সবার জন্য শিক্ষা, কাজ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই হলো মূল চাবিকাঠি। রাজনৈতিক অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও প্রশাসনিক জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। সাংস্কৃতিক অন্তর্ভুক্তি আনতে হবে, যাতে মানবিকতা, নারীর মর্যাদা ও যুবসমাজের নৈতিকতা গড়ে ওঠে। উন্নত রাষ্ট্রগুলো দেখিয়েছে—সুশাসন থাকলে অপরাধ থাকে না। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও তা-ই প্রযোজ্য। তবে এর জন্য সবার আগে দরকার একটি নির্বাচিত সরকার।

 

বাংলাদেশে এক সুন্দর, ন্যায়ভিত্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি গড়ে তোলার দায়িত্ব আমাদের সবার, বিশেষ করে রাজনৈতিক নেতাদের। আমাদের একান্ত প্রত্যাশা হলো বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দল অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে ভেতর থেকে শুদ্ধ হবে, অপরাধীদের নির্মূল করবে এবং দেশের গণতন্ত্র ও মানুষের কল্যাণে নিবেদিত নেতৃত্ব গড়ে তুলবে। অন্যথায় ইতিহাস তাদের কঠোর বিচার করবে।

 

রাজনীতি মানুষের জন্য মানবিকতা, ন্যায়বিচার, সম্মান ও অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যম। এখানে খুনি, ধর্ষক, দুর্নীতিবাজ, লুটেরা, সন্ত্রাসী, অপরাধীদের ঠাঁই নেই। সময় এসেছে স্পষ্টভাবে উচ্চারণ করার—অমানুষের রাজনীতিতে কোনো স্থান নেই।

লেখক : সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক সাংগঠনিক সম্পাদক, ডিইউজে

সূএ : বাংলাদেশ  প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com