অভিমত শাস্তি না হওয়ায় বেপরোয়া লুণ্ঠন

সংগৃহীত ছবি

 

ড. ফাহমিদা খাতুন  :ব্যাংকিং খাত সামগ্রিক লুটপাটেরই একটা অংশ। বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন খাতে যে যেভাবে আধিপত্য বিস্তার করতে পেরেছেন, ব্যাংকিং খাতেও সে রকমই হয়েছে। দেখতে হবে, লাইসেন্সগুলো কারা পেয়েছেন। সবাই তাঁরা কি না? এর মধ্যে ভালো উদ্যোক্তাও ছিলেন।

 

চাহিদার বাইরেও অনেক নতুন প্রজন্মের ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল। এর মানে হলো—তাঁরা ব্যাংক খাতটিকে অর্থ আত্মসাৎ বা অর্থ তুলে নেওয়ার একটা জায়গা হিসেবে ব্যবহার করেছেন। ওই পরিচালকরা কারা? তাঁদের সঙ্গে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী মন্ত্রী, এমপিদের যোগসূত্র ছিল। সে জন্য তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি।

সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্য থেকেই তাঁরা যোগসাজশ করে এসব করেছেন। নিজেরা যেমন নামমাত্র টাকা দিয়ে ব্যাংকের পরিচালক হয়েছিলেন, আবার অন্য ব্যাংক থেকেও ঋণের নামে টাকা তুলেছেন। যেহেতু শাস্তি হয়নি, তাই তাঁরা বেপরোয়াভাবেই লুটপাট করেছেন। যেখানে কোনো সুশাসন নেই এবং উদ্দেশ্যমূলকভাবেই জনগণের টাকা তুলে নেওয়ার একটা পরিকল্পনা করেছিল, সুতরাং এই কুচক্রকে কোনোভাবেই ধরা যাবে না। যে কারণে হয়নি, হওয়ার কথাও নয়। তবে এখন কিছু উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

 

আমরা আগেও বলেছি, রাজনৈতিক বিবেচনায় কোনো ধরনের লাইসেন্স যাবে না। এ ছাড়া তাঁরা নিজেরা কত বিনিয়োগ করছেন এটাও দেখার বিষয়। শুধু পাবলিক মানি তুলে নিজেরা সামান্য কিছু দিয়ে একটা ব্যাংক শুরু করে দিলাম এটা হতে পারে না।

 

সামগ্রিকভাবে ব্যাংক খাতে প্রশাসনিক, আইনগত, প্রাতিষ্ঠানিক ইনস্টিটিউশনের যে দুর্বলতা—এগুলো কাটাতে হবে। লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক যোগসূত্র নয়; অন্য যোগ্যতাকে গুরুত্ব দিতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেহেতু সব ব্যাংকের ব্যাংক, তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংককেও শক্তিশালী করা প্রয়োজন। এটা যেন অর্থ মন্ত্রণালয় কিংবা মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাবমুক্ত থাকতে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষমতা দিতে হবে, যাতে নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারে। আইন আছে, এর বাস্তবায়ন হয় না। তখনই সামগ্রিক সুশাসনের ঘাটতির বিষয়টি সামনে আসে। তার মধ্যেও যতখানি করা যায় সেই চেষ্টা করা। এখন যেমন বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ব্যাংক খাত ও দুর্বল ব্যাংক শক্তিশালীকরণ এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ক্ষমতায়ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়ন না করা গেলে, কাজ হবে না। মোট কথা প্রাতিষ্ঠানিক, প্রশাসনিক ও আইনগত—এই তিনটি জায়গায় সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

লেখক: নির্বাহী পরিচালক, সিপিডি । সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» আ.লীগের ব্যবসাগুলো কারা চালায় আমরা জানি: হাসনাত আবদুল্লাহ

» এনসিপি ১০ জনের একটা দল, সেখানেও যৌন হয়রানি: রুমিন ফারহানা

» ‘দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিন’: গয়েশ্বর

» ভারতের মোদিকে কসাই আখ্যা দিলেন হাসনাত আবদুল্লাহ

» রংপুর বিভাগের ৩৩ আসনে জামায়াতের প্রার্থীর চুড়ান্ত তালিকা প্রকাশ

» সংস্কারের নামে নির্বাচন বিলম্বিত করে ক্ষমতায় থাকতে চাওয়া হবে দুঃস্বপ্ন

» আওয়ামী লীগ সারাদেশকেই কারবালার প্রান্তরে পরিণত করেছিল : মির্জা ফখরুল

» পবিত্র আশুরা শোক, শ্রদ্ধা ও আত্মত্যাগের দিন: তারেক রহমান

» পবিত্র আশুরা অবিচারের বিরুদ্ধে সত্য প্রতিষ্ঠায় সাহস জোগাবে : প্রধান উপদেষ্টা

» করোনায় আরও একজনের মৃত্যু, শনাক্ত ৬

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

অভিমত শাস্তি না হওয়ায় বেপরোয়া লুণ্ঠন

সংগৃহীত ছবি

 

ড. ফাহমিদা খাতুন  :ব্যাংকিং খাত সামগ্রিক লুটপাটেরই একটা অংশ। বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন খাতে যে যেভাবে আধিপত্য বিস্তার করতে পেরেছেন, ব্যাংকিং খাতেও সে রকমই হয়েছে। দেখতে হবে, লাইসেন্সগুলো কারা পেয়েছেন। সবাই তাঁরা কি না? এর মধ্যে ভালো উদ্যোক্তাও ছিলেন।

 

চাহিদার বাইরেও অনেক নতুন প্রজন্মের ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল। এর মানে হলো—তাঁরা ব্যাংক খাতটিকে অর্থ আত্মসাৎ বা অর্থ তুলে নেওয়ার একটা জায়গা হিসেবে ব্যবহার করেছেন। ওই পরিচালকরা কারা? তাঁদের সঙ্গে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী মন্ত্রী, এমপিদের যোগসূত্র ছিল। সে জন্য তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি।

সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্য থেকেই তাঁরা যোগসাজশ করে এসব করেছেন। নিজেরা যেমন নামমাত্র টাকা দিয়ে ব্যাংকের পরিচালক হয়েছিলেন, আবার অন্য ব্যাংক থেকেও ঋণের নামে টাকা তুলেছেন। যেহেতু শাস্তি হয়নি, তাই তাঁরা বেপরোয়াভাবেই লুটপাট করেছেন। যেখানে কোনো সুশাসন নেই এবং উদ্দেশ্যমূলকভাবেই জনগণের টাকা তুলে নেওয়ার একটা পরিকল্পনা করেছিল, সুতরাং এই কুচক্রকে কোনোভাবেই ধরা যাবে না। যে কারণে হয়নি, হওয়ার কথাও নয়। তবে এখন কিছু উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

 

আমরা আগেও বলেছি, রাজনৈতিক বিবেচনায় কোনো ধরনের লাইসেন্স যাবে না। এ ছাড়া তাঁরা নিজেরা কত বিনিয়োগ করছেন এটাও দেখার বিষয়। শুধু পাবলিক মানি তুলে নিজেরা সামান্য কিছু দিয়ে একটা ব্যাংক শুরু করে দিলাম এটা হতে পারে না।

 

সামগ্রিকভাবে ব্যাংক খাতে প্রশাসনিক, আইনগত, প্রাতিষ্ঠানিক ইনস্টিটিউশনের যে দুর্বলতা—এগুলো কাটাতে হবে। লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক যোগসূত্র নয়; অন্য যোগ্যতাকে গুরুত্ব দিতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেহেতু সব ব্যাংকের ব্যাংক, তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংককেও শক্তিশালী করা প্রয়োজন। এটা যেন অর্থ মন্ত্রণালয় কিংবা মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাবমুক্ত থাকতে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষমতা দিতে হবে, যাতে নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারে। আইন আছে, এর বাস্তবায়ন হয় না। তখনই সামগ্রিক সুশাসনের ঘাটতির বিষয়টি সামনে আসে। তার মধ্যেও যতখানি করা যায় সেই চেষ্টা করা। এখন যেমন বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ব্যাংক খাত ও দুর্বল ব্যাংক শক্তিশালীকরণ এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ক্ষমতায়ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়ন না করা গেলে, কাজ হবে না। মোট কথা প্রাতিষ্ঠানিক, প্রশাসনিক ও আইনগত—এই তিনটি জায়গায় সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

লেখক: নির্বাহী পরিচালক, সিপিডি । সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com