অনুভূতি

সুলেখা আক্তার শান্তা :
নাইজা মীনার ফুপু হলে কি হবে দু’জনের সম্পর্ক বন্ধুর মতো। একেবারে হরিহর আত্মা। একে অপরকে ছাড়া এক মুহূর্ত চলতে পারেনা। বয়সে নাইজা মীনার চেয়ে দুই বছরের বড়। মীনা ক্লাস থ্রিতে আর নাইজা পড়ে ক্লাস ফোরে। স্কুলে একসাথে যাওয়া আসা করে। খাওয়া দাওয়া, ঘোরা ফিরা, খেলাধুলা সবকিছু একসঙ্গে করা চাই তাদের। মীনা একটু সহজ সরল, নাইজা বেশ বুদ্ধিমান। মীনা কিছু খেলে নাইজাকে ছাড়া খাবে না খেলেও কিছুটা তুলে রাখবে। নাইজাকে খাওয়াতে পারলে তার মন শান্তি পায়। নাইজা একটু ব্যতিক্রম সে খেয়ে নেয়, এতে অবশ্য মীনার কোন অভিযোগ নাই। মীনা আর নাইজা প্রচুর কথা বলে। দু’জনে একে অপরের রাজ্যের কথা বলে আবার বুঝে বুঝে উত্তর ও দেয়। মীনা আর নাইজার এত মিল দেখে সঙ্গীরা অনেকে দুষ্টামি করে বলে, তোদের দু’জনকে আমরা আলাদা করে দিব। দু’জনে একসঙ্গে বলে উঠে কেন তা করবে? সবাই বলে, আরে না দুষ্টামি করলাম!
নাইজা যখন ক্লাস সিক্সে পড়ে সেই সময় তাদের আর্থিক অবস্থা খারাপের দিকে যায়। তখন নাইজার ছোট খালা লতা ঠিক করেন নাইজাকে তাঁর কাছে রেখে পড়ালেখা করাবেন। এ কথা শুনে মীনা খুব কান্নাকাটি করে। প্রাণের বন্ধু নাইজাকে ছাড়া কেমন করে থাকবে! সে কেঁদে কেটে অস্থির। মীনা নাইজাকে বলে, ফুপু তুমি কোথাও যাবে না। তুমি এখানেই থাকবে। নাইজা খালার ওখানে থাকবে জেনে তার ভালোই লাগে কিন্তু খারাপ লাগে মীনার কান্না দেখে। নাইজা খুবই চিন্তিত হয় মীনাকে রেখে কিভাবে যাবে! নাইজা খালাকে বলে, খালা আমি তোমার ওখানে যাবো না। খালা লতা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেন, কেন মা কেন যাবে না আমার ওখানে? তুমি তো আমার ওখানে যাওয়ার জন্য পাগল ছিলে। এখন কেন যেতে চাচ্ছো না? মীনাকে রেখে আমার যেতে ইচ্ছা করছে না। লতা মীনাকে বুঝাতে চেষ্টা করেন। নাইজার জন্য তুমি মন খারাপ করছো? ওতো আমার ওখানে এখন যেতে চাচ্ছে না। তুমি মন খারাপ করো না। নাইজা তো মাঝে মধ্যে আসবে এখানে। স্কুল বন্ধের সময় আসবে, তোমার সাথে দেখা হবে, খেলবে, ঘুরবে। মন খারাপ করো না কেমন? মীনা বলে, ঠিক আছে আমি আর মন খারাপ করবো না। নাইজা তার খালার সঙ্গে চলে যায়। মীনা প্রিয় মানুষের বিচ্ছেদের কষ্ট সইতে আড়ালে চলে যায়, খুব খারাপ লাগে তার। জীবন ব্যাপী বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ঘটনায় সৃষ্ট অনুভূতি ও অভিজ্ঞতায় ক্রিয়াশীল হয় মন মানসিকতা। মানুষ তা প্রকাশ করতে চায় বিশ্বস্ত কারো কাছে। অনুভূতি প্রকাশের জন্য মানুষের যত সম্পর্ক আছে বন্ধুত্ব তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ। মীনা আড়াল থেকে অশ্রুসিক্ত নয়নে বিচ্ছেদের বেদনা নিয়ে প্রিয় বন্ধু নাইজার চলে যাওয়া দেখে।
Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» বেসরকারি ২৪ ট্রেনের ইজারা বাতিল

» সোনার দাম ভরিতে কমলো আড়াই হাজার টাকা

» শেখ মুজিবের ছবি নামানো ইস্যুতে সেই বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ রিজভীর

» লটারির বাইরে থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি যেভাবে

» ফেব্রুয়ারিতে জার্মানিতে আগাম নির্বাচন

» জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য পর্যাপ্ত সহায়তা প্রয়োজন : ড. ইউনূস

» ঢালাও মামলা নিয়ে সরকার বিব্রত: উপদেষ্টা আসিফ নজরুল

» শক্তিশালী ব্যালেন্স শিট প্রবৃদ্ধির সাথে ২০২৪ সালের প্রথম নয় মাসে ব্র্যাক ব্যাংকের ১,০১১ কোটি টাকা কর-পরবর্তী নিট মুনাফা

» তিনটি আকর্ষণীয় ফিচারে ভিভো ভি৪০ লাইট, সাথে উপহার

» ভালবাসা, স্মৃতি ও দৈনন্দিন সৌন্দর্যের গল্প

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

অনুভূতি

সুলেখা আক্তার শান্তা :
নাইজা মীনার ফুপু হলে কি হবে দু’জনের সম্পর্ক বন্ধুর মতো। একেবারে হরিহর আত্মা। একে অপরকে ছাড়া এক মুহূর্ত চলতে পারেনা। বয়সে নাইজা মীনার চেয়ে দুই বছরের বড়। মীনা ক্লাস থ্রিতে আর নাইজা পড়ে ক্লাস ফোরে। স্কুলে একসাথে যাওয়া আসা করে। খাওয়া দাওয়া, ঘোরা ফিরা, খেলাধুলা সবকিছু একসঙ্গে করা চাই তাদের। মীনা একটু সহজ সরল, নাইজা বেশ বুদ্ধিমান। মীনা কিছু খেলে নাইজাকে ছাড়া খাবে না খেলেও কিছুটা তুলে রাখবে। নাইজাকে খাওয়াতে পারলে তার মন শান্তি পায়। নাইজা একটু ব্যতিক্রম সে খেয়ে নেয়, এতে অবশ্য মীনার কোন অভিযোগ নাই। মীনা আর নাইজা প্রচুর কথা বলে। দু’জনে একে অপরের রাজ্যের কথা বলে আবার বুঝে বুঝে উত্তর ও দেয়। মীনা আর নাইজার এত মিল দেখে সঙ্গীরা অনেকে দুষ্টামি করে বলে, তোদের দু’জনকে আমরা আলাদা করে দিব। দু’জনে একসঙ্গে বলে উঠে কেন তা করবে? সবাই বলে, আরে না দুষ্টামি করলাম!
নাইজা যখন ক্লাস সিক্সে পড়ে সেই সময় তাদের আর্থিক অবস্থা খারাপের দিকে যায়। তখন নাইজার ছোট খালা লতা ঠিক করেন নাইজাকে তাঁর কাছে রেখে পড়ালেখা করাবেন। এ কথা শুনে মীনা খুব কান্নাকাটি করে। প্রাণের বন্ধু নাইজাকে ছাড়া কেমন করে থাকবে! সে কেঁদে কেটে অস্থির। মীনা নাইজাকে বলে, ফুপু তুমি কোথাও যাবে না। তুমি এখানেই থাকবে। নাইজা খালার ওখানে থাকবে জেনে তার ভালোই লাগে কিন্তু খারাপ লাগে মীনার কান্না দেখে। নাইজা খুবই চিন্তিত হয় মীনাকে রেখে কিভাবে যাবে! নাইজা খালাকে বলে, খালা আমি তোমার ওখানে যাবো না। খালা লতা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেন, কেন মা কেন যাবে না আমার ওখানে? তুমি তো আমার ওখানে যাওয়ার জন্য পাগল ছিলে। এখন কেন যেতে চাচ্ছো না? মীনাকে রেখে আমার যেতে ইচ্ছা করছে না। লতা মীনাকে বুঝাতে চেষ্টা করেন। নাইজার জন্য তুমি মন খারাপ করছো? ওতো আমার ওখানে এখন যেতে চাচ্ছে না। তুমি মন খারাপ করো না। নাইজা তো মাঝে মধ্যে আসবে এখানে। স্কুল বন্ধের সময় আসবে, তোমার সাথে দেখা হবে, খেলবে, ঘুরবে। মন খারাপ করো না কেমন? মীনা বলে, ঠিক আছে আমি আর মন খারাপ করবো না। নাইজা তার খালার সঙ্গে চলে যায়। মীনা প্রিয় মানুষের বিচ্ছেদের কষ্ট সইতে আড়ালে চলে যায়, খুব খারাপ লাগে তার। জীবন ব্যাপী বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ঘটনায় সৃষ্ট অনুভূতি ও অভিজ্ঞতায় ক্রিয়াশীল হয় মন মানসিকতা। মানুষ তা প্রকাশ করতে চায় বিশ্বস্ত কারো কাছে। অনুভূতি প্রকাশের জন্য মানুষের যত সম্পর্ক আছে বন্ধুত্ব তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ। মীনা আড়াল থেকে অশ্রুসিক্ত নয়নে বিচ্ছেদের বেদনা নিয়ে প্রিয় বন্ধু নাইজার চলে যাওয়া দেখে।
Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com