অদম্য বিনম্র সংস্কৃতিমান শেখ কামাল

তোফায়েল আহমেদ :জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামাল গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের ৫ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। আজ তাঁর ৭৪তম শুভ জন্মদিন। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে শেখ কামাল দ্বিতীয়। তিনি শাহীন স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ছাত্রলীগের একনিষ্ঠ কর্মী ও সংগঠক হিসেবে ৬ দফা ও ১১ দফা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান ও মহান মুক্তিযুদ্ধে শেখ কামাল সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। আমার স্মৃতির পাতায় ভেসে ওঠে ’৬৯-এর অগ্নিঝরা গণআন্দোলনের স্মৃতি। যে আন্দোলনে শেখ কামালের প্রতিদিনের উপস্থিতি ছিল সবার জন্য তুমুল উৎসাহব্যঞ্জক। এ আন্দোলনে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সংগঠিত করে মিছিলসহ বটতলায় সমবেত হতেন। আমার পরম স্নেহভাজন ছিলেন শেখ কামাল। মনে পড়ে, ’৬৯-এ পাকিস্তান সামরিক জান্তা সরকার ধর্মীয় উগ্রতার পরিচয় দিয়ে রবীন্দ্রসংগীত নিষিদ্ধ করে। শেখ কামাল তখন রবীন্দ্রসংগীত শিল্পীদের সংগঠিত করেন এবং রবীন্দ্রনাথের ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটি খ্যাতিমান শিল্পী জাহিদুর রহিমকে দিয়ে বিভিন্ন সভা ও অনুষ্ঠানে গাওয়ানোর উদ্যোগ নেন। বাঙালি জাতির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নেতার সন্তান তিনি। জন্ম থেকেই তাঁর ধমনিতে ছিল নেতৃত্বগুণ আর বাঙালি জাতীয়তাবোধের চেতনা। সংস্কৃতিমান শেখ কামালের প্রতিবাদের ভাষা ছিল রবীন্দ্রসংগীত। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে যখন যেখানে সুযোগ পেয়েছেন, সেখানেই বিশ্বকবির গান গেয়ে অহিংস প্রতিবাদের অসাধারণ উদাহরণ রেখেছেন।

 

মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হিসেবে ছাত্রসমাজকে সংগঠিত করে হাতিয়ার তুলে নিয়ে দেশমাতৃকার মুক্তির যুদ্ধে তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি জেনারেল ওসমানীর এডিসি ছিলেন শেখ কামাল। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলকে সংগঠিত করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তাঁর আশাবাদ ছিল দেশ স্বাধীন হলে বাংলাদেশের ক্রীড়া ক্ষেত্রের ছবিটাই পাল্টে দেবেন এবং দেশকে অনন্য উচ্চতায় আসীন করবেন। মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া দেশ পুনর্গঠনে নিজের অসামান্য মেধা ও অক্লান্ত কর্মক্ষমতা নিয়ে জাতির পিতার আদর্শ বুকে ধারণ করে ঝাঁপিয়ে পড়েন শেখ কামাল। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি সেনাবাহিনী ত্যাগ করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে যান। সেখান থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।

স্বাধীন বাংলাদেশের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে শেখ কামালের অবদান অনস্বীকার্য। তিনি ছায়ানট থেকে সেতার শিক্ষার তালিম নেন। পড়াশোনা, সংগীতচর্চা, অভিনয়, বিতর্ক, উপস্থিত বক্তৃতা থেকে শুরু করে বাংলা ও বাঙালির সংস্কৃতিকে বিশ্বদরবারে তুলে ধরার চেষ্টায় সদা-সর্বদা নিয়োজিত ছিলেন শেখ কামাল। অধ্যয়নের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক পরিমন্ডল তাঁর পদচারণে ছিল মুখর। স্বাধীনতার পর শেখ কামাল তাঁর বন্ধুদের সহযোগে প্রতিষ্ঠা করেন নাট্যদল ‘ঢাকা থিয়েটার’ এবং আধুনিক সংগীত সংগঠন ‘স্পন্দন শিল্পীগোষ্ঠী’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যাঙ্গনে তিনি ছিলেন সুপরিচিত সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সংগঠক এবং অভিনেতা। আবাহনী ক্রীড়া চক্র প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি দেশের ক্রীড়াজগতে স্মরণীয় হয়ে আছেন। ‘স্পন্দন শিল্পীগোষ্ঠী’র প্রতিষ্ঠাও তাঁকে অমরত্ব দান করেছে। প্রকৃতপক্ষে শেখ কামাল ছিলেন একজন ক্রীড়া ও সংস্কৃতিমনা সুকুমার মনোবৃত্তির মানুষ। তিনি কখনো ব্যবসায়িক কার্যকলাপে জড়িত হননি, অনর্থক ছোটেননি অর্থের পেছনে।

 

শাহীন স্কুলের ছাত্র থাকাকালে স্কুলের প্রতিটি খেলায় তিনি ছিলেন অপরিহার্য। এর মধ্যে ক্রিকেট ছিল তাঁর প্রিয়। তৎকালের অন্যতম উদীয়মান পেসার ছিলেন তিনি। ‘আজাদ বয়েজ ক্লাব’ তখন কামালদের মতো উঠতি প্রতিভাদের আশ্রয়স্থল। এখানেই শেখ কামাল প্রথম বিভাগ ক্রিকেট খেলেছেন দীর্ঘদিন। দেশ স্বাধীনের পর ’৭২-এ ‘আবাহনী সমাজকল্যাণ সংস্থা’ প্রতিষ্ঠা করেন। এ সংস্থার নামে সংগঠিত করেন ফুটবল দল ‘ইকবাল স্পোর্টিং’, আর ক্রিকেট, হকির দল ‘ইস্পাহানী স্পোর্টিং’। পরে এসব দলের সমবায়ে নবোদ্যমে যাত্রা করে ‘আবাহনী ক্রীড়া চক্র’। ফুটবল, ক্রিকেট, হকি এ খেলাগুলোয় বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন ছিল কামালের। তাঁর স্বপ্ন ছিল একদিন আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে বাংলাদেশ হবে অপরাজেয় অপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্রীড়াশক্তি। সত্যিই সে বেঁচে থাকলে সেটা সম্ভব ছিল। স্বপ্ন তাঁর দৃষ্টিসীমা ছাড়িয়ে বিস্তৃত হয়েছিল বহুদূর অবধি। ফুটবলের উন্নতির জন্য ’৭৩-এ আবাহনীতে বিদেশি কোচ বিল হার্টকে নিযুক্ত করেন। যোগ্যতা, দক্ষতা আর দেশপ্রেমের অসামান্য স্ফুরণে শেখ কামাল অল্প দিনেই বদলে দিয়েছিলেন সদ্য স্বাধীন একটা দেশের ক্রীড়া ক্ষেত্র। শুধু ক্রীড়াই নয়, শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির সব শাখাতেই ছিল তাঁর মুনশিয়ানা ও অসামান্য সংগঠকের ভূমিকা।

 

শেখ কামালের নবপরিণীতা বধূ সুলতানা খুকু ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। দেশজোড়া খ্যাতি ছিল তাঁর। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে তাঁর পরিচিতি ছিল এক প্রতিভাবান অ্যাথলেট হিসেবে। নিজে পছন্দ করে বিয়ে করেছিলেন। ’৭৫-এর ১৪ জুলাই যেদিন গণভবনে শেখ কামাল ও শেখ জামাল দুই ভাইয়ের বিয়ে হয়, সেদিন আমি সেই বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারিনি। কেননা ওই বছরের ১১ জুলাই আমার বড় ভাই পিজি হাসপাতালে (বর্তমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) মৃত্যুবরণ করেন। আমি তখন ভোলায়। বিয়ের দিন ভোলার পুলিশ স্টেশনে ফোন করে বঙ্গবন্ধু আমার খবর নিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘জামাল-কামালের বিয়ের আসরে সকলেই আছে, শুধু তুই নাই।’ কত বড় মহান নেতা, যিনি আমার মতো ক্ষুদ্র কর্মীর কথাও সেদিন ভোলেননি। বিয়ের অল্প কিছুদিন পর ১৫ আগস্ট, ১৯৭৫-এ সেনাবাহিনীর কতিপয় বিশ্বাসঘাতক উচ্ছৃঙ্খল সদস্যের হাতে পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মাতা বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব ও নববিবাহিতা দুই বধূ, দুই ভাই শেখ জামাল, শেখ রাসেলসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নির্মম মৃত্যুকে বরণ করতে হয় তাঁকে।

 

জাতির পিতা জীবনের যৌবনের ১২টি বছর কারান্তরালে কাটিয়েছেন। তাঁর অনুপস্থিতিতে শত দুঃখ-কষ্টের মধ্যে থেকেও বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যরা কখনই কোনো খেদোক্তি প্রকাশ করেননি। বরং পরিবারের সদস্যরা সেসব সগৌরবে মেনে নিয়ে বাঙালির জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের অংশে পরিণত হয়েছেন। দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, দেশ স্বাধীনের পর কুচক্রী মহল শেখ কামালের বিরুদ্ধে মিথ্যা-বানোয়াট অপপ্রচার চালাবার চেষ্টা করেছিল। যা ছিল সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং বাস্তবে টেকেনি।

 

শেখ কামালের আচার-আচরণ কেমন ছিল সে সম্পর্কে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আবুল ফজল রচিত ‘শেখ মুজিব : তাঁকে যেমন দেখেছি’ গ্রন্থ থেকে কিছু অংশ তুলে ধরছি। নাতিদীর্ঘ এ গ্রন্থটির ৪৭-৪৮ এ দুই পৃষ্ঠা জুড়ে আছে একটি স্মৃতিচারণামূলক লেখা। লেখাটির শিরোনাম ‘শেখ কামাল : স্মৃতিচারণ’।

 

তিনি লিখেছেন, ‘১৭ মার্চ শেখ সাহেবের জন্মদিন। স্বাধীনতার পর ছাত্রলীগ প্রতি বছর এ দিনটি পালন করে থাকে। ১৯৭৪-এর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হওয়ার জন্য ঢাকার ছাত্রলীগ আমাকে অনুরোধ জানায়। আমি রাজি হলাম, তবে দিনে দিনে ফিরে আসতে চাই এই শর্তে। তারা সেভাবে বিমানের টিকিট পাঠিয়ে দিয়েছিল।

 

১৭ তারিখ ঢাকা বিমানবন্দরে নেমে আমি চিন্তা করতে লাগলাম, ওরা আমাকে নিতে আসবে কি না, এলেও আমি চিনতে পারব কি না। ওদের কারও সঙ্গে তো আমার দেখা নেই। …একধারে দেখলাম একটা ছিপছিপে গোঁফওয়ালা ছেলে দাঁড়িয়ে রয়েছে। বেশ লম্বা বলে সহজে চোখে পড়ে। ছেলেটাকে আমি চিনতে পারলাম না। লাউঞ্জের প্রবেশপথে ছেলেটি এগিয়ে এসে বলে : “আপনাকে নিতে এসেছি।” বলেই আমার হাত থেকে ব্যাগটি আমার আপত্তি অগ্রাহ্য করে নিজের হাতে নিয়ে নিল। নিশ্চিন্ত হওয়ার জন্য জিজ্ঞাসা করলাম : তুমি ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে এসেছ? “জি হ্যাঁ।” নম্র কণ্ঠে জবাব দিল ছেলেটি।

 

ওর পেছনে পেছনে হেঁটে এসে একটা গাড়িতে উঠে বসলাম। ড্রাইভারের সিটে গিয়ে বসল ও নিজে এবং শুরু করল ড্রাইভ করতে। তার আগে ও জেনে নিয়েছে আমি কোথায় উঠব। গাড়িতে তৃতীয় ব্যক্তি নেই। কিছুদূর যাওয়ার পর আমার মনে হঠাৎ কৌতূহল হলো, জিজ্ঞাসা করলাম : তুমি কী কর? বললে : “অনার্স পরীক্ষা দিয়েছি সোশিয়োলজিতে।” ঢাকা থেকে? “জি হ্যাঁ।” শেখ সাহেবের সঙ্গে ছেলেটির দৈহিক সাদৃশ্য আমার মনে ধীরে ধীরে স্পষ্টতর হয়ে উঠেছিল। জিজ্ঞাসা করলাম : তোমার নাম। “শেখ কামাল।” ও তুমি আমাদের শেখ সাহেবের ছেলে।’ এই ছিলেন শেখ কামাল। জাতির পিতার সন্তান হওয়া সত্ত্বেও তাঁর মধ্যে কোনো অহমিকাবোধ ছিল না। তিনি ছিলেন বিনয়ী ও মার্জিত। দাম্ভিকতা ছিল তাঁর স্বভাববিরুদ্ধ। পরোপকারী, বন্ধুবৎসল ও মার্জিত শেখ কামালের বিনম্র আচরণে মুগ্ধ হতো সবাই।

 

পরিশেষে, কামালের শৈশবের একটি স্মৃতি উদ্ধৃত করছি। যে স্মৃতিকথাটি পাঠ করলে দুই চোখ পানিতে ভরে আসে, অশ্রু সংবরণ দুঃসাধ্য হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘শেখ মুজিব আমার পিতা’ শিরোনামের লেখায় এ স্মৃতিকথা লিপিবদ্ধ করেছেন। ‘১৯৪৯ সালে আমার আব্বা গ্রেফতার হন। আমি তখন খুবই ছোট্ট আর আমার ভাই কামাল কেবল জন্মগ্রহণ করেছে। আব্বা ওকে দেখারও সুযোগ পাননি। একটানা ১৯৫২ সাল পর্যন্ত তিনি বন্দি ছিলেন। সে সময় আমাদের দুই ভাইবোনকে নিয়ে আমার মা দাদা-দাদির কাছেই থাকতেন। একবার একটা মামলা উপলক্ষে আব্বাকে গোপালগঞ্জ নিয়ে যাওয়া হয়। কামাল তখন অল্প কথা বলা শিখেছে। কিন্তু আব্বাকে ও কখনো দেখেনি, চেনেও না। আমি যখন বারবার আব্বার কাছে ছুটে যাচ্ছি আব্বা-আব্বা বলে ডাকছি ও শুধু অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখছে। গোপালগঞ্জ থানায় একটা বড় পুকুর আছে, যার পাশে বড় খোলা মাঠ। ওই মাঠে আমরা দুই ভাইবোন খেলা করতাম ও ফড়িং ধরার জন্য ছুটে বেড়াতাম। আর মাঝে মাঝেই আব্বার কাছে ছুটে আসতাম। অনেক ফুল, পাতা কুড়িয়ে এনে থানার বারান্দায় কামালকে নিয়ে খেলতে বসেছি। ও হঠাৎ আমাকে জিজ্ঞাসা করল, “হাসু আপা, তোমার আব্বাকে আমি একটু আব্বা বলি।” কামালের সেই কথা আজ যখন মনে পড়ে আমি তখন চোখের পানি রাখতে পারি না।’

 

ঘাতকের বুলেট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করার মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্ব নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল। ঘাতকরা চেয়েছিল বাংলাদেশকে নেতৃত্বশূন্য করতে। তারা জানত জাতির পিতার সন্তানরা মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের ধারক-বাহক। সেজন্য তারা শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশু শেখ রাসেল কাউকেই রেহাই দেয়নি। সেদিন জাতির পিতার দুই কন্যা বিদেশে থাকায় ঘাতকের বুলেট তাঁদের স্পর্শ করতে পারেনি। ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকান্ডের পর ’৮১-তে আমরা দলীয় ও জাতীয় ঐক্যের প্রতীক জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনার হাতে শহীদের রক্তে ভেজা দলীয় পতাকা তুলে দিই। সেই পতাকা যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে হাতে তুলে নিয়ে জাতির পিতার আদর্শ সমুন্নত রেখে তিনি আজ দেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনকে বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে আসীন করার যে স্বপ্ন শেখ কামাল দেখতেন সেই অসমাপ্ত কাজটিও তাঁরই পৃষ্ঠপোষকতায় সাফল্যের সঙ্গে বাস্তবায়িত করে চলেছেন।

 

লেখক : আওয়ামী লীগ নেতা; সংসদ সদস্য; সভাপতি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।

[email protected]        সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ডিবির মশিউর সাময়িক বরখাস্ত

» মোটরসাইকেলে চালকসহ দুইজনের বেশি বহন না করার নির্দেশ

» ইসলামী শাসনব্যবস্থা ছাড়া বৈষম্য দূর হবে না : মামুনুল হক

» নির্বাচনের দিনক্ষণ জানতে বিদেশি অংশীজনরা অপেক্ষা করছে : খসরু

» বিস্ফোরক মামলায় খালাস পেলেন তারেক রহমান

» তুর্কি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি

» রাশিয়ার নতুন ওরেশনিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চলবে: পুতিন

» গুজব প্রতিরোধে সহায়তা চায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

» পুতুলের সূচনা ফাউন্ডেশনের ব্যাংক হিসাবে লেনদেন স্থগিত

» এআই নিয়ে কাজ করবে গ্রামীণফোন ও এরিকসন

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

অদম্য বিনম্র সংস্কৃতিমান শেখ কামাল

তোফায়েল আহমেদ :জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামাল গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের ৫ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। আজ তাঁর ৭৪তম শুভ জন্মদিন। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে শেখ কামাল দ্বিতীয়। তিনি শাহীন স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ছাত্রলীগের একনিষ্ঠ কর্মী ও সংগঠক হিসেবে ৬ দফা ও ১১ দফা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান ও মহান মুক্তিযুদ্ধে শেখ কামাল সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। আমার স্মৃতির পাতায় ভেসে ওঠে ’৬৯-এর অগ্নিঝরা গণআন্দোলনের স্মৃতি। যে আন্দোলনে শেখ কামালের প্রতিদিনের উপস্থিতি ছিল সবার জন্য তুমুল উৎসাহব্যঞ্জক। এ আন্দোলনে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সংগঠিত করে মিছিলসহ বটতলায় সমবেত হতেন। আমার পরম স্নেহভাজন ছিলেন শেখ কামাল। মনে পড়ে, ’৬৯-এ পাকিস্তান সামরিক জান্তা সরকার ধর্মীয় উগ্রতার পরিচয় দিয়ে রবীন্দ্রসংগীত নিষিদ্ধ করে। শেখ কামাল তখন রবীন্দ্রসংগীত শিল্পীদের সংগঠিত করেন এবং রবীন্দ্রনাথের ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটি খ্যাতিমান শিল্পী জাহিদুর রহিমকে দিয়ে বিভিন্ন সভা ও অনুষ্ঠানে গাওয়ানোর উদ্যোগ নেন। বাঙালি জাতির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নেতার সন্তান তিনি। জন্ম থেকেই তাঁর ধমনিতে ছিল নেতৃত্বগুণ আর বাঙালি জাতীয়তাবোধের চেতনা। সংস্কৃতিমান শেখ কামালের প্রতিবাদের ভাষা ছিল রবীন্দ্রসংগীত। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে যখন যেখানে সুযোগ পেয়েছেন, সেখানেই বিশ্বকবির গান গেয়ে অহিংস প্রতিবাদের অসাধারণ উদাহরণ রেখেছেন।

 

মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হিসেবে ছাত্রসমাজকে সংগঠিত করে হাতিয়ার তুলে নিয়ে দেশমাতৃকার মুক্তির যুদ্ধে তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি জেনারেল ওসমানীর এডিসি ছিলেন শেখ কামাল। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলকে সংগঠিত করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তাঁর আশাবাদ ছিল দেশ স্বাধীন হলে বাংলাদেশের ক্রীড়া ক্ষেত্রের ছবিটাই পাল্টে দেবেন এবং দেশকে অনন্য উচ্চতায় আসীন করবেন। মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া দেশ পুনর্গঠনে নিজের অসামান্য মেধা ও অক্লান্ত কর্মক্ষমতা নিয়ে জাতির পিতার আদর্শ বুকে ধারণ করে ঝাঁপিয়ে পড়েন শেখ কামাল। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি সেনাবাহিনী ত্যাগ করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে যান। সেখান থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।

স্বাধীন বাংলাদেশের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে শেখ কামালের অবদান অনস্বীকার্য। তিনি ছায়ানট থেকে সেতার শিক্ষার তালিম নেন। পড়াশোনা, সংগীতচর্চা, অভিনয়, বিতর্ক, উপস্থিত বক্তৃতা থেকে শুরু করে বাংলা ও বাঙালির সংস্কৃতিকে বিশ্বদরবারে তুলে ধরার চেষ্টায় সদা-সর্বদা নিয়োজিত ছিলেন শেখ কামাল। অধ্যয়নের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক পরিমন্ডল তাঁর পদচারণে ছিল মুখর। স্বাধীনতার পর শেখ কামাল তাঁর বন্ধুদের সহযোগে প্রতিষ্ঠা করেন নাট্যদল ‘ঢাকা থিয়েটার’ এবং আধুনিক সংগীত সংগঠন ‘স্পন্দন শিল্পীগোষ্ঠী’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যাঙ্গনে তিনি ছিলেন সুপরিচিত সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সংগঠক এবং অভিনেতা। আবাহনী ক্রীড়া চক্র প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি দেশের ক্রীড়াজগতে স্মরণীয় হয়ে আছেন। ‘স্পন্দন শিল্পীগোষ্ঠী’র প্রতিষ্ঠাও তাঁকে অমরত্ব দান করেছে। প্রকৃতপক্ষে শেখ কামাল ছিলেন একজন ক্রীড়া ও সংস্কৃতিমনা সুকুমার মনোবৃত্তির মানুষ। তিনি কখনো ব্যবসায়িক কার্যকলাপে জড়িত হননি, অনর্থক ছোটেননি অর্থের পেছনে।

 

শাহীন স্কুলের ছাত্র থাকাকালে স্কুলের প্রতিটি খেলায় তিনি ছিলেন অপরিহার্য। এর মধ্যে ক্রিকেট ছিল তাঁর প্রিয়। তৎকালের অন্যতম উদীয়মান পেসার ছিলেন তিনি। ‘আজাদ বয়েজ ক্লাব’ তখন কামালদের মতো উঠতি প্রতিভাদের আশ্রয়স্থল। এখানেই শেখ কামাল প্রথম বিভাগ ক্রিকেট খেলেছেন দীর্ঘদিন। দেশ স্বাধীনের পর ’৭২-এ ‘আবাহনী সমাজকল্যাণ সংস্থা’ প্রতিষ্ঠা করেন। এ সংস্থার নামে সংগঠিত করেন ফুটবল দল ‘ইকবাল স্পোর্টিং’, আর ক্রিকেট, হকির দল ‘ইস্পাহানী স্পোর্টিং’। পরে এসব দলের সমবায়ে নবোদ্যমে যাত্রা করে ‘আবাহনী ক্রীড়া চক্র’। ফুটবল, ক্রিকেট, হকি এ খেলাগুলোয় বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন ছিল কামালের। তাঁর স্বপ্ন ছিল একদিন আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে বাংলাদেশ হবে অপরাজেয় অপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্রীড়াশক্তি। সত্যিই সে বেঁচে থাকলে সেটা সম্ভব ছিল। স্বপ্ন তাঁর দৃষ্টিসীমা ছাড়িয়ে বিস্তৃত হয়েছিল বহুদূর অবধি। ফুটবলের উন্নতির জন্য ’৭৩-এ আবাহনীতে বিদেশি কোচ বিল হার্টকে নিযুক্ত করেন। যোগ্যতা, দক্ষতা আর দেশপ্রেমের অসামান্য স্ফুরণে শেখ কামাল অল্প দিনেই বদলে দিয়েছিলেন সদ্য স্বাধীন একটা দেশের ক্রীড়া ক্ষেত্র। শুধু ক্রীড়াই নয়, শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির সব শাখাতেই ছিল তাঁর মুনশিয়ানা ও অসামান্য সংগঠকের ভূমিকা।

 

শেখ কামালের নবপরিণীতা বধূ সুলতানা খুকু ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। দেশজোড়া খ্যাতি ছিল তাঁর। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে তাঁর পরিচিতি ছিল এক প্রতিভাবান অ্যাথলেট হিসেবে। নিজে পছন্দ করে বিয়ে করেছিলেন। ’৭৫-এর ১৪ জুলাই যেদিন গণভবনে শেখ কামাল ও শেখ জামাল দুই ভাইয়ের বিয়ে হয়, সেদিন আমি সেই বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারিনি। কেননা ওই বছরের ১১ জুলাই আমার বড় ভাই পিজি হাসপাতালে (বর্তমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) মৃত্যুবরণ করেন। আমি তখন ভোলায়। বিয়ের দিন ভোলার পুলিশ স্টেশনে ফোন করে বঙ্গবন্ধু আমার খবর নিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘জামাল-কামালের বিয়ের আসরে সকলেই আছে, শুধু তুই নাই।’ কত বড় মহান নেতা, যিনি আমার মতো ক্ষুদ্র কর্মীর কথাও সেদিন ভোলেননি। বিয়ের অল্প কিছুদিন পর ১৫ আগস্ট, ১৯৭৫-এ সেনাবাহিনীর কতিপয় বিশ্বাসঘাতক উচ্ছৃঙ্খল সদস্যের হাতে পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মাতা বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব ও নববিবাহিতা দুই বধূ, দুই ভাই শেখ জামাল, শেখ রাসেলসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নির্মম মৃত্যুকে বরণ করতে হয় তাঁকে।

 

জাতির পিতা জীবনের যৌবনের ১২টি বছর কারান্তরালে কাটিয়েছেন। তাঁর অনুপস্থিতিতে শত দুঃখ-কষ্টের মধ্যে থেকেও বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যরা কখনই কোনো খেদোক্তি প্রকাশ করেননি। বরং পরিবারের সদস্যরা সেসব সগৌরবে মেনে নিয়ে বাঙালির জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের অংশে পরিণত হয়েছেন। দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, দেশ স্বাধীনের পর কুচক্রী মহল শেখ কামালের বিরুদ্ধে মিথ্যা-বানোয়াট অপপ্রচার চালাবার চেষ্টা করেছিল। যা ছিল সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং বাস্তবে টেকেনি।

 

শেখ কামালের আচার-আচরণ কেমন ছিল সে সম্পর্কে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আবুল ফজল রচিত ‘শেখ মুজিব : তাঁকে যেমন দেখেছি’ গ্রন্থ থেকে কিছু অংশ তুলে ধরছি। নাতিদীর্ঘ এ গ্রন্থটির ৪৭-৪৮ এ দুই পৃষ্ঠা জুড়ে আছে একটি স্মৃতিচারণামূলক লেখা। লেখাটির শিরোনাম ‘শেখ কামাল : স্মৃতিচারণ’।

 

তিনি লিখেছেন, ‘১৭ মার্চ শেখ সাহেবের জন্মদিন। স্বাধীনতার পর ছাত্রলীগ প্রতি বছর এ দিনটি পালন করে থাকে। ১৯৭৪-এর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হওয়ার জন্য ঢাকার ছাত্রলীগ আমাকে অনুরোধ জানায়। আমি রাজি হলাম, তবে দিনে দিনে ফিরে আসতে চাই এই শর্তে। তারা সেভাবে বিমানের টিকিট পাঠিয়ে দিয়েছিল।

 

১৭ তারিখ ঢাকা বিমানবন্দরে নেমে আমি চিন্তা করতে লাগলাম, ওরা আমাকে নিতে আসবে কি না, এলেও আমি চিনতে পারব কি না। ওদের কারও সঙ্গে তো আমার দেখা নেই। …একধারে দেখলাম একটা ছিপছিপে গোঁফওয়ালা ছেলে দাঁড়িয়ে রয়েছে। বেশ লম্বা বলে সহজে চোখে পড়ে। ছেলেটাকে আমি চিনতে পারলাম না। লাউঞ্জের প্রবেশপথে ছেলেটি এগিয়ে এসে বলে : “আপনাকে নিতে এসেছি।” বলেই আমার হাত থেকে ব্যাগটি আমার আপত্তি অগ্রাহ্য করে নিজের হাতে নিয়ে নিল। নিশ্চিন্ত হওয়ার জন্য জিজ্ঞাসা করলাম : তুমি ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে এসেছ? “জি হ্যাঁ।” নম্র কণ্ঠে জবাব দিল ছেলেটি।

 

ওর পেছনে পেছনে হেঁটে এসে একটা গাড়িতে উঠে বসলাম। ড্রাইভারের সিটে গিয়ে বসল ও নিজে এবং শুরু করল ড্রাইভ করতে। তার আগে ও জেনে নিয়েছে আমি কোথায় উঠব। গাড়িতে তৃতীয় ব্যক্তি নেই। কিছুদূর যাওয়ার পর আমার মনে হঠাৎ কৌতূহল হলো, জিজ্ঞাসা করলাম : তুমি কী কর? বললে : “অনার্স পরীক্ষা দিয়েছি সোশিয়োলজিতে।” ঢাকা থেকে? “জি হ্যাঁ।” শেখ সাহেবের সঙ্গে ছেলেটির দৈহিক সাদৃশ্য আমার মনে ধীরে ধীরে স্পষ্টতর হয়ে উঠেছিল। জিজ্ঞাসা করলাম : তোমার নাম। “শেখ কামাল।” ও তুমি আমাদের শেখ সাহেবের ছেলে।’ এই ছিলেন শেখ কামাল। জাতির পিতার সন্তান হওয়া সত্ত্বেও তাঁর মধ্যে কোনো অহমিকাবোধ ছিল না। তিনি ছিলেন বিনয়ী ও মার্জিত। দাম্ভিকতা ছিল তাঁর স্বভাববিরুদ্ধ। পরোপকারী, বন্ধুবৎসল ও মার্জিত শেখ কামালের বিনম্র আচরণে মুগ্ধ হতো সবাই।

 

পরিশেষে, কামালের শৈশবের একটি স্মৃতি উদ্ধৃত করছি। যে স্মৃতিকথাটি পাঠ করলে দুই চোখ পানিতে ভরে আসে, অশ্রু সংবরণ দুঃসাধ্য হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘শেখ মুজিব আমার পিতা’ শিরোনামের লেখায় এ স্মৃতিকথা লিপিবদ্ধ করেছেন। ‘১৯৪৯ সালে আমার আব্বা গ্রেফতার হন। আমি তখন খুবই ছোট্ট আর আমার ভাই কামাল কেবল জন্মগ্রহণ করেছে। আব্বা ওকে দেখারও সুযোগ পাননি। একটানা ১৯৫২ সাল পর্যন্ত তিনি বন্দি ছিলেন। সে সময় আমাদের দুই ভাইবোনকে নিয়ে আমার মা দাদা-দাদির কাছেই থাকতেন। একবার একটা মামলা উপলক্ষে আব্বাকে গোপালগঞ্জ নিয়ে যাওয়া হয়। কামাল তখন অল্প কথা বলা শিখেছে। কিন্তু আব্বাকে ও কখনো দেখেনি, চেনেও না। আমি যখন বারবার আব্বার কাছে ছুটে যাচ্ছি আব্বা-আব্বা বলে ডাকছি ও শুধু অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখছে। গোপালগঞ্জ থানায় একটা বড় পুকুর আছে, যার পাশে বড় খোলা মাঠ। ওই মাঠে আমরা দুই ভাইবোন খেলা করতাম ও ফড়িং ধরার জন্য ছুটে বেড়াতাম। আর মাঝে মাঝেই আব্বার কাছে ছুটে আসতাম। অনেক ফুল, পাতা কুড়িয়ে এনে থানার বারান্দায় কামালকে নিয়ে খেলতে বসেছি। ও হঠাৎ আমাকে জিজ্ঞাসা করল, “হাসু আপা, তোমার আব্বাকে আমি একটু আব্বা বলি।” কামালের সেই কথা আজ যখন মনে পড়ে আমি তখন চোখের পানি রাখতে পারি না।’

 

ঘাতকের বুলেট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করার মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্ব নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল। ঘাতকরা চেয়েছিল বাংলাদেশকে নেতৃত্বশূন্য করতে। তারা জানত জাতির পিতার সন্তানরা মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের ধারক-বাহক। সেজন্য তারা শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশু শেখ রাসেল কাউকেই রেহাই দেয়নি। সেদিন জাতির পিতার দুই কন্যা বিদেশে থাকায় ঘাতকের বুলেট তাঁদের স্পর্শ করতে পারেনি। ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকান্ডের পর ’৮১-তে আমরা দলীয় ও জাতীয় ঐক্যের প্রতীক জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনার হাতে শহীদের রক্তে ভেজা দলীয় পতাকা তুলে দিই। সেই পতাকা যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে হাতে তুলে নিয়ে জাতির পিতার আদর্শ সমুন্নত রেখে তিনি আজ দেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনকে বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে আসীন করার যে স্বপ্ন শেখ কামাল দেখতেন সেই অসমাপ্ত কাজটিও তাঁরই পৃষ্ঠপোষকতায় সাফল্যের সঙ্গে বাস্তবায়িত করে চলেছেন।

 

লেখক : আওয়ামী লীগ নেতা; সংসদ সদস্য; সভাপতি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।

[email protected]        সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com