অনলাইন ডেস্ক : অদক্ষ চালক, বেপরোয়া গতিসহ নানা কারণে মারণফাঁদে পরিণত হয়েছে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ সহজতর করার জন্য ঢাকার কেরানীগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর, সিরাজদীখান, মাদারীপুরের শিবচর এবং ফরিদপুরের ভাঙ্গার ওপর দিয়ে নির্মিত হয় ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে।
মাদারীপুর প্রতিনিধি জানান, এই মহাসড়কটি পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যয়বহুল মহাসড়ক। যার প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় হয়েছে ২০০ কোটি ৮০ লাখ টাকা। গত এক বছরে মাদারীপুর অংশে কমপক্ষে ২০টি দুর্ঘটনা ঘটছে। তবে নিহতের প্রকৃত সংখ্যা নেই প্রশাসনের কাছে। গত এক বছরে এই সড়কের মাদারীপুর অংশে কমপক্ষে ২ হাজার ৩০০টি মামলা হয়েছে।
কুয়াশা, ঝড়-বৃষ্টি এবং বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণেই বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে। এক্সপ্রেসওয়েতে সাইন-সংকেত ব্যবস্থা আধুনিক নয়। নেই সিসিটিভি। ঘনকুয়াশার কারণে একটি যানবাহন দুর্ঘটনায় পড়লে পেছন থেকে একের পর এক যান এসে ধাক্কা দেয়।
মহাসড়কের শিবচরের পাচ্চর এলাকার বাসিন্দা রুবেল খান জানান, পাচ্চর, সূর্যনগর, বাখরেরকান্দি এক্সপ্রেসওয়েতে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে। পুলিশ এসব এলাকায় নামমাত্র টহল দেয়। কুয়াশাসহ বিভিন্ন দুর্যোগে পুলিশসহ সড়কের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের জোরালো আইন প্রয়োগ করা দরকার। গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশের নিরাপত্তা চৌকি বসানো দরকার। সড়ক আইন মানে না এমন চালক ও পরিবহন মালিকদের বিচারের আওতায় আনা দরকার।
মাদারীপুর সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সহসভাপতি শরীফ ফাইজুল ইসলাম বলেন, এসব দুর্ঘটনা ঘন কুয়াশায় ফগ লাইট না জ্বালানো, ট্রাফিক আইন না মেনে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, চালকদের গাফিলতি, ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে গাড়ি চালানো, আগে যাওয়ার প্রতিযোগিতা, যত্রতত্র গাড়ি থামানো, ত্রুটিযুক্ত গাড়ি রাস্তায় বের করার কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে। ট্রাফিক আইন মেনে গাড়ি চালানো, চালকদের বাস্তবসম্মত প্রশিক্ষণ দেওয়া ও যাত্রীরা সচেতন হলেই এই দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা সম্ভব।
শিবচর হাইওয়ে থানার ওসি জহুরুল ইসলাম জানান, পুলিশের সামনে ধীরগতিতে গাড়ি চালালেও পুলিশ চলে গেলে আবার চালকরা বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাচ্ছেন। ফলে এসব দুর্ঘটনা ঘটছে বলে মনে করেন তিনি।
মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি হাইওয়ে পুলিশের গাজীপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার ড. আ ক ম আকতারুজ্জামান বসুনিয়ার বরাতে জানান- ‘আগে যখন মহাসড়ক ভাঙা ছিল, তখন দুর্ঘটনা কম হতো। এখন ভালো সড়কে চালকরা দ্রুত গতিতে গাড়ি চালাচ্ছেন। গতি নিয়ন্ত্রণ করতে দিনে স্পিডগান ব্যবহার করছে হাইওয়ে পুলিশ। বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালালে মামলা দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন- দু-চারজন অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালালে মামলা দিয়ে থামানো যায়। এখানে সবাই দ্রুত গতিতে গাড়ি চালাচ্ছে। সচেতনতার বিকল্প নেই। এ ছাড়া সিস্টেমকেও অনেকে দায়ী করেছেন। ফগ লাইটের ব্যবহার, সড়কে পেভমেন্ট মার্কিং, স্পিড লিমিট প্রয়োজন অনুসারে বাড়ানো-কমানোর মাধ্যমে যান চলাচল নিরাপদ করা যেতে পারে বলে অনেকে মনে করেন। ফিটনেসবিহীন গাড়ি, হেলপার দিয়ে গাড়ি চালানো, যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা করানোও দুর্ঘটনার কারণ বলে জানান ওয়াকিবহাল মহল। ভাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি জানান, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। ডিসেম্বর মাসে কমপক্ষে দুটি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় জোড়ায় জোড়ায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। অধিকাংশ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে কিশোর ও তরুণ চালকেরা। হেলমেট ব্যবহার না করা, সড়ক নিয়ন্ত্রণকারীদের দায়িত্ব পালনে শৈথিল্য, মহাসড়কে অবৈধ যান চলাচল, বাস ও ট্রাক চালকদের বেপরোয়া আচরণ, ট্রাফিক আইন মেনে না চলাও দুর্ঘটনার কারণ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার পেছনে অভিভাবকদের তার কিশোর ও তরুণ সন্তানদের মোটরসাইকেল কিনে দেওয়াকেও দায়ী করেছেন অনেকে। ভাঙ্গা উপজেলা থেকে পদ্মা সেতু পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ে। এর মধ্যে ১৫ কিলোমিটার ভাঙ্গা উপজেলার মধ্যে পড়েছে। ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার উপপরিদর্শক আবদুল্লাহ হেল বাকী বলেন, ট্রাফিক আইন মানতে চায় না অনেকেই। সচেতনতা বাড়াতে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) : বেপরোয়া গতি আর ওভারটেকিংয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে। এ ছাড়া ফ্লাইওভার, আন্ডারপাস, ইন্টারচেঞ্জ, ওভার ব্রিজেও ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। হাসাড়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল কাদের জিলানী বলেন, এক্সপ্রেসওয়েতে বেপরোয়া গতির কারণে বাড়ছে দুর্ঘটনা। বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। চালকদের অসাবধানতায় গতি কমানো যাচ্ছে না।সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন