অগ্নিপথ বিতর্কে আজও উত্তাল ভারত, বিক্ষোভ ছড়িয়েছে ৭ রাজ্যে

ভারতের ক্ষমতাসীন নরেন্দ্র মোদির সরকারের অগ্নিপথ প্রকল্পের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। নতুন সামরিক নিয়োগ নীতির প্রতিবাদে আজও উত্তাল প্রতিবেশী এই দেশটি। শুক্রবার (১৭ জুন) তৃতীয় দিনে গড়ানো এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে দেশটির অন্তত ৭টি রাজ্যে।

এছাড়া রাজ্যে রাজ্যে ট্রেনে আগুন দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। প্রতিবাদ-বিক্ষোভের সঙ্গে চলছে রাস্তা অবরোধও। এমনকি বিহারের উপ-মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে ঘটেছে হামলার ঘটনাও। শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, অগ্নিপথ প্রকল্পের মাধ্যমে নতুন সামরিক নিয়োগ নীতির প্রতিবাদে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার পর বিহারের পশ্চিম চম্পারন জেলার বেত্তিয়ায় উপ-মুখ্যমন্ত্রী রেনু দেবীর বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে। অবশ্য তিনি এখন পাটনায় অবস্থান করছেন।

এনডিটিভিকে তিনি বলেছেন, ‘এই ধরনের সহিংসতা সমাজের জন্য খুবই বিপজ্জনক। প্রতিবাদকারীদের মনে রাখা উচিত যে এটি সমাজের জন্য ক্ষতিকারক।

 

ভারতের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় বিহারে অগ্নিপথ প্রকল্পের বিরুদ্ধে আন্দোলন ও সহিংসতার পরিমাণ বেশি। আন্দোলনের নামে রাজ্যটিতে ট্রেনে আগুন দেওয়া, বাসের জানালা ভেঙে দেওয়া এবং পথচারীদের ওপর পাথর হামলার ঘটনাও ঘটেছে।

 

এছাড়া বিহারের একটি জেলায় বিজেপির কার্যালয়ে হামলার ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার সকালে উত্তেজিত যুবকরা রেলপথে বসে রাজ্যজুড়ে অনেক জায়গায় রাস্তা ও রেলপথ অবরোধ করে।

একই রাজ্যের বেগুসরাই জেলায় একটি রেলস্টেশনে হামলা করে ছাত্ররা। এসময় তারা রেল স্টেশনে হট্টগোল সৃষ্টির পাশাপাশি অগ্নিসংযোগ ও পাথর নিক্ষেপ করে ভাঙচুর চালায়। এছাড়া সমস্তিপুর জেলায় জম্মু তাওয়াই এক্সপ্রেস ট্রেনের দু’টি বগিতে আগুন দেওয়া হয়েছে বলে কর্মকর্তারা এনডিটিভিকে জানিয়েছেন। তবে এই ঘটনায় কেউ আহত হয়নি। লক্ষীসরাই জেলায় বিজেপির একটি অফিসেও হামলা হয়েছে।

 

অন্যদিকে উত্তরপ্রদেশে বিপুল সংখ্যক বিক্ষোভকারী শুক্রবার সকালে বালিয়ায় একটি রেলস্টেশনে প্রবেশ করে এবং ট্রেনের কোচে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে বলপ্রয়োগ করে। অবশ্য এর আগেই রেলওয়ে স্টেশনটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

 

এছাড়া উত্তপ্রদেশের পূর্বাঞ্চলীয় আরেকটি জেলায় রেলস্টেশনের বাইরে রাস্তায় লাঠিসোঁটা নিয়ে পুলিশের মুখোমুখি অবস্থান নেয় বিক্ষোভকারীরা। বিহার এবং উত্তর প্রদেশের বেশ কয়েকটি অংশ নতুন সামরিক নিয়োগ নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের সাক্ষী হয়েছে। বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশ ও হরিয়ানা রাজ্যেও।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, নরেন্দ্র মোদি সরকারের অগ্নিপথ প্রকল্পের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য তেলেঙ্গনাতেও। শুক্রবার সকালে তেলেঙ্গানার সেকেন্দরাবাদে একটি যাত্রীবাহী ট্রেনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

 

পুলিশ বলছে, স্টেশন চত্বরে আন্দোলনকারীরা ঢুকে পড়ার পর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

 

ঘটনাচক্রে, দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলোর মধ্যে ভারতীয় সেনায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় রয়েছেন তেলুগুভাষীরাই। ব্রিটিশ আমলে গঠিত মাদ্রাজ রেজিমেন্টের অন্তর্গত ব্যাটেলিয়নগুলোর সেনাদের বড় অংশই তেলঙ্গানা এবং অন্ধ্রপ্রদেশের বাসিন্দা। ওই দুই রাজ্যের যুবকদের দীর্ঘ দিন ধরেই সেনাবাহিনীতে যোগদানের প্রবণতা রয়েছে। ফলে আগামী দিনে সেখানে অগ্নিপথ বিরোধী আন্দোলন আরও তীব্র হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

 

গত মঙ্গলবার অগ্নিপথ প্রকল্পের ঘোষণা করেন ভারতের কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। ওই প্রকল্পে সাড়ে ১৭ থেকে ২১ বছরের তরুণ-তরুণীরা চার বছরের জন্য মাসিক ৩০ হাজার ৪৫ হাজার রুপির চুক্তিতে সশস্ত্র বাহিনীর তিন বিভাগ (স্থল, নৌ এবং বিমান বাহিনী) যোগ দিতে পারবেন। তাদের বলা হবে ‘অগ্নিবীর’।

সেনাবাহিনীতে শূন্যপদ ও যোগ্যতার ভিত্তিতে চতুর্থ বছরের শেষে সেই ব্যাচের সর্বাধিক ২৫ শতাংশ অগ্নিবীরকে সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। বাকিদের ১১ লাখ থেকে ১২ লাখ রুপি হাতে দিয়ে পাঠানো হবে অবসরে। থাকবে না কোনো পেনশন।

 

তবে নতুন এই নিয়োগ নীতির বিরুদ্ধে রাজ্যে রাজ্যে আন্দোলন শুরুর পর বৃহস্পতিবার রাতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ‘অগ্নিবীর’ হিসেবে চাকরিতে যোগদানের বয়সসীমা এককালীন (শুধু প্রথম বার নিয়োগের ক্ষেত্রে) বাড়িয়ে ২৩ বছর নির্ধারণ করে।

 

তবে এরপরও উত্তেজনা প্রশমনের নামগন্ধ নেই। বরং তা সময়ের সাথে সাথে আরও বাড়ছে। শুক্রবারের সহিংসতাই এর প্রমাণ।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» যাত্রীবাহী বাসের চাপায় অটোচালকসহ দুজন নিহত

» আবারও রেকর্ড গড়েছে স্বর্ণের দাম

» পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি করার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার

» টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের ডাবল সেঞ্চুরি

» ছেলের বন্ধুরা আমাকে ‘দিদি’ বলে ডাকে: শ্রাবন্তী

» কিছু আসনের লোভে জাতীয় স্বার্থের বাইরে গিয়ে কেউ পিআর চাইছে: সালাহউদ্দিন

» গাজায় গণহত্যা চলছে, দায়ী ইসরায়েল: জাতিসংঘ তদন্ত কমিশন

» বিশেষ অভিযানে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত আরও ১১২৬ জন আসামি গ্রেফতার

» ফখরুল-আব্বাসসহ ৬৭ জনকে অব্যাহতি দিলো আদালত

» জামায়াতের আন্দোলন সরকারবিরোধী না : ব্যারিস্টার ফুয়াদ

  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

অগ্নিপথ বিতর্কে আজও উত্তাল ভারত, বিক্ষোভ ছড়িয়েছে ৭ রাজ্যে

ভারতের ক্ষমতাসীন নরেন্দ্র মোদির সরকারের অগ্নিপথ প্রকল্পের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। নতুন সামরিক নিয়োগ নীতির প্রতিবাদে আজও উত্তাল প্রতিবেশী এই দেশটি। শুক্রবার (১৭ জুন) তৃতীয় দিনে গড়ানো এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে দেশটির অন্তত ৭টি রাজ্যে।

এছাড়া রাজ্যে রাজ্যে ট্রেনে আগুন দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। প্রতিবাদ-বিক্ষোভের সঙ্গে চলছে রাস্তা অবরোধও। এমনকি বিহারের উপ-মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে ঘটেছে হামলার ঘটনাও। শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, অগ্নিপথ প্রকল্পের মাধ্যমে নতুন সামরিক নিয়োগ নীতির প্রতিবাদে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার পর বিহারের পশ্চিম চম্পারন জেলার বেত্তিয়ায় উপ-মুখ্যমন্ত্রী রেনু দেবীর বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে। অবশ্য তিনি এখন পাটনায় অবস্থান করছেন।

এনডিটিভিকে তিনি বলেছেন, ‘এই ধরনের সহিংসতা সমাজের জন্য খুবই বিপজ্জনক। প্রতিবাদকারীদের মনে রাখা উচিত যে এটি সমাজের জন্য ক্ষতিকারক।

 

ভারতের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় বিহারে অগ্নিপথ প্রকল্পের বিরুদ্ধে আন্দোলন ও সহিংসতার পরিমাণ বেশি। আন্দোলনের নামে রাজ্যটিতে ট্রেনে আগুন দেওয়া, বাসের জানালা ভেঙে দেওয়া এবং পথচারীদের ওপর পাথর হামলার ঘটনাও ঘটেছে।

 

এছাড়া বিহারের একটি জেলায় বিজেপির কার্যালয়ে হামলার ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার সকালে উত্তেজিত যুবকরা রেলপথে বসে রাজ্যজুড়ে অনেক জায়গায় রাস্তা ও রেলপথ অবরোধ করে।

একই রাজ্যের বেগুসরাই জেলায় একটি রেলস্টেশনে হামলা করে ছাত্ররা। এসময় তারা রেল স্টেশনে হট্টগোল সৃষ্টির পাশাপাশি অগ্নিসংযোগ ও পাথর নিক্ষেপ করে ভাঙচুর চালায়। এছাড়া সমস্তিপুর জেলায় জম্মু তাওয়াই এক্সপ্রেস ট্রেনের দু’টি বগিতে আগুন দেওয়া হয়েছে বলে কর্মকর্তারা এনডিটিভিকে জানিয়েছেন। তবে এই ঘটনায় কেউ আহত হয়নি। লক্ষীসরাই জেলায় বিজেপির একটি অফিসেও হামলা হয়েছে।

 

অন্যদিকে উত্তরপ্রদেশে বিপুল সংখ্যক বিক্ষোভকারী শুক্রবার সকালে বালিয়ায় একটি রেলস্টেশনে প্রবেশ করে এবং ট্রেনের কোচে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে বলপ্রয়োগ করে। অবশ্য এর আগেই রেলওয়ে স্টেশনটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

 

এছাড়া উত্তপ্রদেশের পূর্বাঞ্চলীয় আরেকটি জেলায় রেলস্টেশনের বাইরে রাস্তায় লাঠিসোঁটা নিয়ে পুলিশের মুখোমুখি অবস্থান নেয় বিক্ষোভকারীরা। বিহার এবং উত্তর প্রদেশের বেশ কয়েকটি অংশ নতুন সামরিক নিয়োগ নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের সাক্ষী হয়েছে। বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশ ও হরিয়ানা রাজ্যেও।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, নরেন্দ্র মোদি সরকারের অগ্নিপথ প্রকল্পের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য তেলেঙ্গনাতেও। শুক্রবার সকালে তেলেঙ্গানার সেকেন্দরাবাদে একটি যাত্রীবাহী ট্রেনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

 

পুলিশ বলছে, স্টেশন চত্বরে আন্দোলনকারীরা ঢুকে পড়ার পর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

 

ঘটনাচক্রে, দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলোর মধ্যে ভারতীয় সেনায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় রয়েছেন তেলুগুভাষীরাই। ব্রিটিশ আমলে গঠিত মাদ্রাজ রেজিমেন্টের অন্তর্গত ব্যাটেলিয়নগুলোর সেনাদের বড় অংশই তেলঙ্গানা এবং অন্ধ্রপ্রদেশের বাসিন্দা। ওই দুই রাজ্যের যুবকদের দীর্ঘ দিন ধরেই সেনাবাহিনীতে যোগদানের প্রবণতা রয়েছে। ফলে আগামী দিনে সেখানে অগ্নিপথ বিরোধী আন্দোলন আরও তীব্র হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

 

গত মঙ্গলবার অগ্নিপথ প্রকল্পের ঘোষণা করেন ভারতের কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। ওই প্রকল্পে সাড়ে ১৭ থেকে ২১ বছরের তরুণ-তরুণীরা চার বছরের জন্য মাসিক ৩০ হাজার ৪৫ হাজার রুপির চুক্তিতে সশস্ত্র বাহিনীর তিন বিভাগ (স্থল, নৌ এবং বিমান বাহিনী) যোগ দিতে পারবেন। তাদের বলা হবে ‘অগ্নিবীর’।

সেনাবাহিনীতে শূন্যপদ ও যোগ্যতার ভিত্তিতে চতুর্থ বছরের শেষে সেই ব্যাচের সর্বাধিক ২৫ শতাংশ অগ্নিবীরকে সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। বাকিদের ১১ লাখ থেকে ১২ লাখ রুপি হাতে দিয়ে পাঠানো হবে অবসরে। থাকবে না কোনো পেনশন।

 

তবে নতুন এই নিয়োগ নীতির বিরুদ্ধে রাজ্যে রাজ্যে আন্দোলন শুরুর পর বৃহস্পতিবার রাতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ‘অগ্নিবীর’ হিসেবে চাকরিতে যোগদানের বয়সসীমা এককালীন (শুধু প্রথম বার নিয়োগের ক্ষেত্রে) বাড়িয়ে ২৩ বছর নির্ধারণ করে।

 

তবে এরপরও উত্তেজনা প্রশমনের নামগন্ধ নেই। বরং তা সময়ের সাথে সাথে আরও বাড়ছে। শুক্রবারের সহিংসতাই এর প্রমাণ।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Design & Developed BY ThemesBazar.Com