আজকের দিনে যদি আমাদের কাছে সাধারণ ঘড়ি না থাকতো তাহলে এই আধুনিক যুগে আমাদের জীবন অনেক মুশকিলে কাটতো। শুধু এই নয়! এই জেনারেশনের সব সিস্টেম এক এক সেকেন্ডের হিসেবে চলছে। যেমন- রেলগাড়ি, উড়োজাহাজ ইত্যাদি। যদি আমাদের কাছে ঘড়ি না থাকতো তাহলে এসব সিস্টেমের কি হতো? সব মিলিয়ে ঘড়ি ছাড়া আজকের আধুনিক জীবন অসম্পূর্ণ থাকতো। তবে আপনি কি জানেন এই গুরুত্বপূর্ণ ঘড়ি কে, কবে এবং কোথায় আবিষ্কার করেছিলেন? চলুন তবে জেনে নেয়া যাক ঘড়ির ইতিহাস সম্পর্কে-
বর্তমান সময়ে ব্যবহার করা ঘড়ি একদিনে আবিষ্কার হয়নি। কেউ প্রথমে ঘন্টার কাঁটা বানিয়েছিলো। আবার কেউ মিনিটের কাঁটা বানিয়েছিলো। এভাবে একটু একটু করে ঘড়ি আবিষ্কার হয়েছিলো। বর্তমান সময়ে আমরা ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেদের জীবন চালাচ্ছি। যেমন- অফিস যাওয়া, স্কুল যাওয়া, খাওয়া-দাওয়া করা ইত্যাদি।
এখন প্রশ্ন হলো যে সময় ঘড়ি ছিল না, তখন মানুষের জীবন কেমন ছিল? এখন আমরা ঘড়ি সাহায্যে সারাদিনের এক এক সেকেন্ডের হিসেব রাখতে পারি। তাই আমাদের কাছে সব থেকে বড় প্রশ্ন হলো ঘড়ি আবিষ্কারের আগে সময়ের হিসেব কীভাবে রাখা হতো? প্রাচীন যুগে মানুষ মাটিতে কোনো বস্তুর ছায়ার বিভিন্ন অবস্থান চিহ্নিত করতে লাগলো। মাটিতে দাগ কেটে কিংবা পাথর সাজিয়ে ছায়ার চিহ্ন রাখা হতো। সাধারণত এই পদ্ধতিটির উদ্ভাবন থেকেই মানব ইতিহাসে প্রথম ঘড়ির জন্ম হলো।
সূর্যঘড়ি
মানুষ যখন সময়ের হিসেবের অনুভব করতে পেরেছিলো তখন তারা সূর্য উদয় আর সূর্য অস্তের হিসেবে সময়ের অনুমান করতো। প্রাগৈতিহাসিক কালে মানুষ এভাবে তাদের কাজ চালাতো। প্রথমে সময়কে প্রহরে মাপা হতো। এরপরে যখন ধীরে ধীরে মানুষের বুদ্ধির বিকাশ ঘটে তখন সময়কে জানার আগ্রহ তাদের আরো বেড়ে যায়। তাই তারা সূর্যের আলোছায়া দেখে সময়ের অনুমান করতে শুরু করে। তখন তারা সূর্যঘড়ি আবিষ্কার করে।
যখন সূর্যের ছায়া এসে সেই ঘড়ির উপর পড়তো তখন এই ঘড়ির কাঁটার ছায়া সেই সময়ের উপর এসে পড়তো। এই ঘড়ির চারিদিকে ঘণ্টা আর মিনিটের কাঁটা এঁকে দেয়া হতো। আর মাঝখানে একটা লম্বা লাঠি লাগিয়ে দেয়া হতো। পৃথিবী যখন সূর্যের চারিদিকে ঘুরতো তখন ঠিক সময় সময় সূর্যের আলো ঐ লাঠির উপর এসে পড়ায় তার ছায়া ঠিক ঐ কাঁটার উপরে গিয়ে পড়তো এবং তাতে বোঝা যেতো এখন কয়টা বাজে।
তবে এই ঘড়ির একটি সমস্যা হচ্ছিল। যখন আকাশে মেঘ হতো তখন সূর্য না ওঠার কারণে মানুষ সময় জানতে পারতো না। কিন্তু সূর্যঘড়ি এই মানুষের আবিষ্কার করা প্রথম ঘড়ি ছিল। এরপরে এই অসুবিধার জন্য মানুষ জলঘড়ির আবিষ্কার করে। এই ঘড়ি চীনা আর ভারতীয়রা মিলে প্রায় তিন হাজার বছর আগে আবিষ্কার করেছিল। ভারতে তখন এই ঘড়িকে ঘটিকা যন্ত্র বলা হতো। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ঘড়ির ব্যবহার মিশর, রোমান আর গ্রিকরা শুরু করেন।
জলঘড়ি
প্রাচীনকালে সূর্যঘড়ির পাশাপাশি প্রচলন ছিল জলঘড়ির। জলঘড়িতে দুইটি পাত্রের ব্যবহার করা হতো। একটি পাত্রের নিচে একটি ছোট ফুটো করে দেয়া হতো। সেই পাত্রে পানি একটু একটু করে ফোঁটার আকারে অন্য পাত্রের উপর পড়তো। আর ঐ পাত্রে পানির পরিমাণ অনুমান করে সময়ের হিসেব করা হতো। পরে বেশ কিছু দেশে এই পানির জায়গায় ঘড়ির মধ্যে ব্যবহার শুরু হয়।
ইতালিতে বসবাসকারী আর্কিমিডিস বোয়ান্ট ফোর্সের আবিষ্কার করে ফেলেছিলেন। তিনি হাইড্রোলিক ঘড়ি আবিষ্কার করেন। আর্কিমিডিস পানির মধ্যে একটি ভাসমান ইন্ডিকেটর লাগিয়ে দিয়েছিলেন। আর পাত্রের সঙ্গে একটি মিটার লাগিয়ে দিয়েছিলেন। তারপর যখন পানি ফোঁটার আকারে পাত্রের মধ্যে পড়তো তখন মিটারের কাঁটা নির্দিষ্ট সময়ের উপরে চলে যেতো। এভাবে মিটারের সাহায্যে এখন কয়টা বেজেছে তা জানা যেতো।
এরপরের শতাব্দীতে তিসিবিওস নামের একজন বিজ্ঞানী পানির সাহায্যে আরেকটি ঘড়ি বানিয়ে ফেলেন। তিনি একটি চাবির ঘড়িকে ভাসমান ধাতুর উপর লাগিয়ে একটি পাত্রের মধ্যে ভরে দেন। তারপর ঐ চাবিটিকে একটি গোল চাকার সঙ্গে জুড়ে দেন। ঐ চাকাটির উপরে কিছু অংকের সংখ্যা লেখা ছিল। এরপর যখন পানিতে এক এক ফোঁটা পড়তে শুরু করে তখন ঐ চাকা ঘড়ির কাঁটাকে উপরের দিকে তুলতে শুরু করে। আর এইভাবে সঠিক সময় জানা যেতো।
এই সিস্টেমের ব্যবহার করে তখন বেশ কিছু জায়গায় বাটার ব্লকের বড় বড় টাওয়ার বানানো হয়েছিল। আর এতে জলভর্তি ঘন্টা ব্যবহার করা হতো। যার প্রমাণ আজ থেকে ২০০০ বছর আগে প্রাচীন গ্রিসে দেখা গিয়েছে। প্রাচীন গ্রিসে অ্যালার্ম ঘড়ি বানানো হয়েছিল। এটি সেই সময়ের একটি অনেক বড় আবিষ্কার ছিল।
বালিঘড়ি
বালিঘড়ি হলো আরেকটি প্রাচীন ঘড়ি। এই ঘড়ি কবে ও কোথায় আবিষ্কার হয়েছিলো তা অজানা। তবে ধারণা করা হয়, আট শতকে এক সন্ন্যাসী এই ঘড়ি আবিষ্কার করেন। বালিঘড়িতে দুইটি সমান আকৃতির ফানেলের মতো কাচের পাত্রকে একসঙ্গে জুড়ে দেওয়া হতো। একটি পাত্র অন্যটির উপরে থাকতো। উপরের পাত্রটি সূক্ষ্ম ও পরিষ্কার বালি দিয়ে ভর্তি থাকতো। উপরের পাত্র থেকে বালি ধীরে ধীরে নিচের পাত্রে পড়তো। উপরের পাত্রটি খালি হতে এক ঘণ্টা সময় লাগতো। এক ঘণ্টা পর ঘড়িটি আবার উল্টিয়ে দেওয়া হতো। এভাবে সারাদিন ঘড়ির ব্যবহার করা হতো।
মধ্যযুগে ইউরোপে এই ঘড়ি প্রচুর পরিমাণে ব্যবহার করা হতো। বহু বিখ্যাত চিত্রকর্মেও এই ঘড়ির প্রতিকৃতি রয়েছে। সামান্য নড়াচড়ায় কোনো সমস্যা হয় না বলে এই ঘড়ি জাহাজেও ব্যবহার করা হতো। সেক্ষেত্রে ঘড়িটি উল্টিয়ে দেওয়ার জন্য একজন লোক নিযুক্ত থাকতো। এছাড়াও সতেরো শতাব্দীতে বহু গির্জায় ধর্ম উপদেশ দেওয়ার সময় এই ঘড়ি ব্যবহৃত হতো। সূর্যঘড়ি বা জলঘড়ির মতো এতো অসুবিধা না থাকায় এ ঘড়ি অনেক জনপ্রিয়তা পায়।
আগুনঘড়ি
সময় নির্ণয়ের জন্য মানুষ বহু জিনিস ব্যবহার করে এসেছে যুগ যুগ ধরে। বহু জিনিস নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে। আগুনও বাদ যায়নি এর থেকে। প্রাচীনকালে মানুষ এক টুকরা কাঠ পুড়তে কতক্ষণ লাগে তা থেকে সময় নির্ণয় করতো। তবে এটি ছিল খুবই ত্রুটিপূর্ণ। কারণ কোনো কাঠ পুড়তে হয়তো সারাদিন লাগে আবার কোনো কাঠ দুই মিনিটেই পুড়ে শেষ হয়ে যেতো। ফলে এমন কিছু দরকার ছিল যা সমানভাবে পুড়বে।
প্রাচীনকালে চীনে এক ধরনের দড়ি ঘড়ির প্রচলন ছিল। একটি দড়িতে সমান দূরত্বে কয়েকটি গিঁট দেওয়া হতো। এরপর দড়ির এক প্রান্তে আগুন জ্বালিয়ে দিলে আস্তে আস্তে দড়িটি পুড়তে শুরু করতো। একটি গিঁট থেকে পুড়ে অন্য গিঁট পর্যন্ত পৌঁছাতে যতক্ষণ লাগছে তা থেকে সময় নির্ণয় করা হতো।
মোমঘড়ি
এরপর নয়ের শতাব্দীতে ইংল্যান্ডে অ্যালফ্রেড দ্য গ্রেট ক্যান্ডেল ক্লক আবিষ্কার করেছিলেন। তিনি একটি লম্বা মোমবাতি নিয়ে তাতে সমান মাপের কিছু দাগ কেটে দেন। এরপর মোমবাতিটিকে জ্বালিয়ে দেওয়া হতো। আর মোমবাতি জ্বলতে জ্বলতে কমতে থাকতো। তখন মোমবাতির উপর দেয়া চিহ্নগুলো আস্তে আস্তে ছোট হতে থাকতো। এভাবে তিনি সময়ের অনুমান করতেন।
আধুনিক ঘড়ির সংস্করণ-
অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ঘড়ি
১১ শতকে চীনের জ্যোতির্বিজ্ঞানী হরলজিস এবং মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার সু সং একসঙ্গে কাজ করে পানি চালিত একটি অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ঘড়ি তৈরি করেন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, পুরোপুরি যান্ত্রিক পদ্ধতিতে তৈরি প্রথম ঘড়ি হচ্ছে ক্লক। তাহলে অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ঘড়ি কে আবিষ্কার করেন? এই ঘড়ি তৈরিতে অবদান রয়েছে অনেক কারিগরের।
কেউ কেউ মনে করেন, গ্রিক পদার্থবিদ আর্কিমিডিস খ্রিস্টপূর্ব ২০০ অব্দে প্রথম ক্লক আবিষ্কার করেন। তিনি চাকাযুক্ত ঘড়ি তৈরি করেন। এই ধরনের ঘড়ির প্রচলন সর্বপ্রথম গির্জাগুলোতে শুরু হয়। ভারি কোনো বস্তুকে একটি চাকার সঙ্গে যুক্ত করা হতো। ফলে মহাকর্ষ শক্তির টানে চাকাটি ঘুরতে চাইতো। তবে চাকার এই ঘূর্ণনকে বিশেষ কৌশলে নিয়ন্ত্রন করা হতো যাতে চাকাটি ধীরে ধীরে ঘুরে।
এই চাকার সঙ্গে লাগিয়ে দেওয়া হতো সময় নির্দেশক কাঁটা। পরে এই ধরনের ঘড়িতে ডায়ালের প্রচলন শুরু হয়। ১২০৬ সালে মুসলমান জ্যোতির্বিজ্ঞানী আল-জাহেরি নামাজ ও রোজার সময় সঠিকভাবে নির্ণয় করতে পানি চালিত অন্য একটি অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ঘড়ি তৈরি করেন যাতে একবার পানি ভরে দিলে ঘড়ি অনেকদিন চলতো। এমনকি এক বছরও চলতো।
মেকানিক্যাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ঘড়ি
ইতিহাস আর মিডিয়া রিপোর্ট অনুসারে, আধুনিক ঘড়ির আবিষ্কার করেন পোপ সিলভেস্টার। পোপ সিলভেস্টার ৯৯৬ সালে যন্ত্রঘড়ি আবিষ্কার করেছিলেন। যন্ত্রঘড়িতে অনেকগুলো চাকা লাগানো থাকতো। এই ঘড়িতে ঘন্টার কাঁটা ব্যবহার করা হতো, যা নির্দিষ্ট সময়ে বেজে উঠতো। ইউরোপে এই ঘড়ির ব্যবহার ১৩ শতাব্দীর মাঝখানে বেশ কিছু জায়গায় শুরু হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এই ঘড়িও তখন সম্পূর্ণ ছিল না। এই ঘড়িতে মিনিট আর সেকেন্ডের কাঁটা ছিল না।
১৪ শতকের দিকে মেকানিক্যাল ঘড়ি বা যন্ত্রঘড়ি সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। ১২৮৮ সালে ওয়েস্ট মিনিস্টার হলে এবং ১২৯২ সালে ক্যান্টাবেরি ক্যাথিড্রালে মেকানিক্যাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ঘড়ি বসানো হয়। মধ্যযুগে ক্লকের প্রচলন অনেক বেড়ে যায়। তবে এদের কোনোটাই সঠিক সময় দিতো না। ১৩৬৪ সালে ফ্রান্সের রাজা পঞ্চম চার্লস একটি ঘড়ি নির্মাণ করার পরিকল্পনা করেন। ১৫ বছর পর এই ঘড়ির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়। বিখ্যাত ঘড়ি নির্মাতা হেনরী দ্য ডিক এটি নির্মাণ করেন। এটাই সে যুগের সবচেয়ে আধুনিক ঘড়ি।
দোলক ঘড়ি
নিখুঁত সময় নির্ণয়ের জন্য এরপর মানুষ ঘড়ি তৈরিতে স্প্রিংয়ের ব্যবহার শুরু করে। ফলে ঘড়িগুলোর আকার অনেক কমে আসে। ১৬ শতকে ইউরোপে নবযুগের সূচনা হয়। এই সময় ঘড়ির অনেক উন্নয়ন সাধিত হয়। এরপর বিখ্যাত বিজ্ঞানী গ্যালিলিও প্রথম দোলকের ধর্ম সম্পর্কিত সূত্র আবিষ্কার করেন। যা পরবর্তীতে ঘড়িতে ব্যবহৃত হয়। যার ফলে আবিষ্কৃত হয় দোলক ঘড়ি।
পরে ১৮ শতকে ঘড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে আরো অনেক উন্নয়ন ঘটে। ১৫৮০ সালে বিজ্ঞানী গ্যালিলিও দোলক আবিষ্কার করেন। তখন তিনি দোলকের দোলনকালকে কাজে লাগিয়ে সর্বপ্রথম দোলক ঘড়ির থিয়োরি দাঁড় করান। তাঁর থিয়োরিকে কাজে লাগিয়ে ডাচ বিজ্ঞানী সি. হাইজেনস সর্বপ্রথম দোলক ঘড়ি তৈরি করেন।
১৬৭৩ সালে ওলন্দাজ গণিতবিদ ক্রিস্টিয়ান হাইগেনস একটি ঘড়ি তৈরি করেন, যা দোলক ঘড়ির একটি উন্নততর সংস্করণ। ক্রিস্টিয়ান হাইগেনস সমুদ্রতলে নিখুঁতভাবে দ্রাঘিমাংশ পরিমাপ করার প্রয়োজনে আরেকটি দোলক ঘড়ি তৈরি করেন। তার নামানুসারে এই ঘড়ির নাম দেওয়া হয় ‘হাইগেনের ঘড়ি’।
পকেট ঘড়ি
ঘড়িতে ঝুলন্ত ভারি বস্তু ব্যবহারের চলন উঠে যাওয়ার পর পকেটে বহনযোগ্য ছোট ঘড়ি তৈরি হয়। এগুলোই ‘ওয়াচ’ নামে পরিচিত। এটাই আমাদের বর্তমান যুগের ঘড়িগুলোর আদিরূপ। এই ধরণের ঘড়িগুলো গোলাকার ডিম আকৃতির ছিল। এজন্য এগুলোকে বলা হতো ‘নুরেমবার্গের ডিম’। একটি ডিম্বাকৃতি কেসের মধ্যে ঘড়ির সব যন্ত্রাংশকে রাখা হতো।
১৬৭৫ সালে ক্রিস্টিয়ান হাইগেনস এবং রবার্ট হুক সর্বপ্রথম পকেট ঘড়ি তৈরি করেন। এই ঘড়িতে একটি প্যাঁচানো স্প্রিং ব্যবহার করা হয়। তৈরি করার পর সারা পৃথিবীতে এই পকেট ঘড়ির ব্যাপক জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে এবং সর্বস্তরে ব্যবহার করা শুরু হয়। পরবর্তীতে এ ধরনের ওয়াচের চাহিদা দিন দিন বাড়তে থাকে।
ফলে জীবজন্তু, ফুল, বই, ঝিনুক প্রভৃতি আকৃতির ঘড়িও তৈরি হতে থাকে। এমনকি তারা ঘড়িতে অনেক দামী দামী যন্ত্রাংশের ব্যবহার করতো। ঘড়ির অলংকরণের জন্য মুক্তা, হীরা ব্যবহার করা হতো। পরবর্তীতে ঘড়িতে কমদামী ‘জুয়েল’ এর ব্যবহার শুরু হয়। ফলে কমতে থাকে ঘড়ির দাম। ঘড়ি হয়ে উঠে সহজলভ্য।
হাত ঘড়ি
১৫৭১ সালে ইংরেজ রাষ্ট্রনায়ক রবার্ট ডুডলি সর্বপ্রথম ইংল্যান্ডের রানী প্রথম এলিজাবেথকে একটি হাত ঘড়ি উপহার দেন। প্রথম দিকে হাত ঘড়ি ছিল শুধুমাত্র মেয়েদের ব্যবহার করার জন্য। ছেলেদের জন্য ছিল পকেট ঘড়ি। তাছাড়া মিলিটারি সৈন্যরাও সেই সময় হাতঘড়ি ব্যবহার করতো। সর্বপ্রথম কে ও কোথায় হাত ঘড়ি আবিষ্কার করেছিল তার সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
তবে অনেকের মতে, ১৫২৪ সালে পিটার হেনেলিন প্রথম পকেট ঘড়ি তৈরি করেছিল। ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দের পূর্বে অধিকাংশ ঘড়িই ছিল পকেট ঘড়ি। ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের পূর্বে, সমস্ত ঘড়িতে একটি ঘূর্ণায়মান ঘণ্টার কাঁটা এবং একটি দীর্ঘতর মিনিটের কাঁটার সঙ্গে একটি নম্বরযুক্ত ডায়াল ছিল।
বৈদ্যুতিক বা ব্যাটারি চালিত ঘড়ি
১৮১৪ সালে ইংরেজ বিজ্ঞানী স্যার ফ্রান্সিস রোনাল্ডস লন্ডনে সর্বপ্রথম ব্যাটারি চালিত ঘড়ি তৈরি করেন। ১৮৪১ সালে সর্বপ্রথম আলেকজেন্ডার বেইন এবং জন বারউইচ ব্যাটারি চালিত দোলক ঘড়ি আবিষ্কার করেন।
ডিজিটাল ক্লক
১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ডিজিটাল ঘড়ি বাজারে আসে। ডিজিটাল ঘড়ির ভিতরে ক্ষুদ্র কম্পিউটার রয়েছে। এতে ডায়ালে কাঁটার পরিবর্তে একটি সংখ্যা হিসেবে সময় দেখায়। ঘড়ির বহু পরিবর্তনের পর ১৮৮৩ সালে জোসেফ পালওয়েবার সর্বপ্রথম পকেটে বহনযোগ্য ডিজিটাল ক্লক তৈরি করেন। এরপর ১৯৭০ সালে এলইডি ডিসপ্লেযুক্ত প্রথম হাত ঘড়ির প্রচলন হয়।
হ্যামিল্টন ওয়াচ কোম্পানি ‘পালসার’ নামের এই ঘড়ি তৈরি করেছিল। এরপর নানা ঘড়ি প্রস্তুতকারী কোম্পানির আবির্ভাব ঘটে। এদের মধ্যে প্রতিযোগিতার ফলে নতুন নতুন সব ডিজিটাল হাত ঘড়ির আবির্ভাব হয়। এক্ষত্রে ক্যাসিও কোম্পানির ডিজিটাল ঘড়িগুলো অনেক জনপ্রিয়তা লাভ করে। এদের মধ্যে ক্যাসিও এফ-৯১ডব্লিউ মডেলটি সবচেয়ে জনপ্রিয়তা পায়।
স্মার্টওয়াচ
হাতঘড়ির সবচেয়ে আধুনিক রূপ হচ্ছে স্মার্টওয়াচ। আগেকার সাধারণ ডিজিটাল হাতঘড়িতে ক্যালেন্ডার, ক্যালকুলেটর প্রভৃতি থাকলেও সর্বপ্রথম স্মার্টওয়াচ চালু হয় ২০১০ সালে। এই স্মার্টওয়াচগুলোতে বিভিন্ন মোবাইল অ্যাপও চালানো যেতো। এরপর স্মার্টওয়াচে নানা ধরনের সুবিধা যোগ করা হয়। বিখ্যাত অ্যাপল কোম্পানি নিয়ে আসে তাদের স্মার্টওয়াচ। এর সঙ্গে সঙ্গে আবির্ভাব ঘটে এন্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমযুক্ত স্মার্টওয়াচেরও। শীর্ষ এন্ড্রয়েড স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান স্যামসাং তৈরি করা শুরু করে এন্ড্রয়েড চালিত স্মার্টওয়াচ ‘স্যামসাং গিয়ার’।
এতে মোবাইল ফোনের মতো প্রায় সব ধরনের সুবিধাই রয়েছে। এছাড়া স্মার্টওয়াচ খুব সহজেই স্মার্টফোনের সঙ্গে ব্লুটুথ কিংবা ওয়াইফাই দিয়ে যুক্ত করে স্মার্টফোনের কল কিংবা মেসেজ রিসিভ করা যায়। হাঁটার সময় স্টেপ কাউন্ট, হার্টবিট নির্ণয় ইত্যাদি কাজও আজকাল করা যাচ্ছে স্মার্টওয়াচের মাধ্যমে। প্রায় সব স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আজকাল স্মার্টওয়াচ নির্মাণে মনোযোগ দিয়েছে। ফলে আশা করা যাচ্ছে সামনের দিনগুলোতে আরও উন্নতি ঘটবে এই স্মার্টওয়াচের। সূএ:ডেইলি বাংলাদেশ ডটকম