সিলেটে সাদা সোনা লুটের ‘মহোৎসব’

সাদা পাথর। নজরকাড়া পর্যটন স্পট। সাদা পাথর সমৃদ্ধি এলাকা হওয়ার কারণেই নামকরণ করা হয়েছিল সাদা পাথর। কেউ কেউ এটিকে বলেন ‘সাদা সোনা’। পাথরকে ঘিরে গড়ে ওঠা সাদা পাথর এলাকায় এবার চোখ পড়েছে পাথরখেকোদের। রাতের আঁধারে সাদা পাথর থেকে লুট করা হচ্ছে পাথর। প্রতিদিন অর্ধশতাধিকের বেশি নৌকা যোগে পাথর লুটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ক্রাশার মিলে। সম্প্রতি পুলিশের অভিযানেও মিলেছে সত্যতা।  কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশ সাদা পাথর লুটের ঘটনায় ২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

পরে তাদের ভাষ্য থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ৭ জনকে আসামি করে মামলা করেছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন- এলাকার পাথরখেকো ও বর্তমান লাইনম্যান শাহাবউদ্দিন ও লোকজনের নেতৃত্বে সাদা পাথরে অবাধে লুটপাট হচ্ছে। এ মামলায় আসামি হয়েছে শাহাবউদ্দিনের ভাগিনা রাসেলও। কিন্তু রহস্যজনক কারণে পুলিশ প্রকৃত দোষীদের এড়িয়ে গেছে। ঘটনা গত মঙ্গলবারের। ওই দিন কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশের একটি দল ট্রাক্টর বোঝাই পাথর সহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করে। পরে পাথর চুরির ঘটনায় এসআই শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে ৭ জনের বিরুদ্ধে কোম্পানীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। উপজেলার ভোলাগঞ্জ গুচ্ছ গ্রামের আব্দুল শহীদের  ছেলে মোহাম্মদ আলী, দক্ষিণ রাজনগর গ্রামের মৃত আব্দুল মালেকের ছেলে আব্দুল আলিম, রাজনগর নতুন বস্তির বাছির মিয়ার ছেলে রুহুল, দক্ষিণ রাজনগর গ্রামের খলিল মিয়ার ছেলে বাবুল মিয়া, কলাবাড়ী গ্রামের আদু মোল্লার  ছেলে কামরুল, কালিবাড়ী গ্রামের মৃত মখলিছ মিয়ার  ছেলে রাসেল মিয়া ও রাজনগর গ্রামের আইনুল মিয়াকে আসামি করে মামলা করা হয়। মামলায় চাঁদাবাজ শাহাব উদ্দিনের ভাগিনা রাসেলের নাম থাকলেও অদৃশ্য কারণে শাহাব উদ্দিনকে করা হয়নি মামলার আসামি-  জানিয়েছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা। পুলিশ জানায়- সাদা পাথরের পর্যটন এলাকা থেকে এই পাথরগুলো লুট করে বিভিন্ন ক্রাশার মিলে রাখা হচ্ছিল। ধবধবে সাদা পাথর হওয়ার কারণে সহজেই বুঝা যায় এই পাথর সাদা পাথর এলাকারই। পাথর লুটের ঘটনায় গ্রেপ্তারের পর মোহাম্মাদ আলী ও আলীম উদ্দিন সাদা পাথর লুটের কথা স্বীকার করে। এরপর তাদের মুখ থেকে লুটকারী চক্রের খবর মিলে। তাদের মুখ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আসামি করা হয়েছে আরও ৫ জনকে। এদের মধ্যে কয়েকজন চিহ্নিত পাথরখেকো চক্রের সদস্য রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আগে একাধিক মামলা হয়েছে। তবে- যাদের আসামি করা হয়েছে তাদের মূল হোতা শাহাবউদ্দিনকে আসামি না করায় ক্ষোভ বাড়ছে এলাকায়। স্থানীয়রা জানিয়েছেন- অভাব-অনটনে দিন যাপন করলেও কখনো কেউ সাদা পাথরে হাত দেয়নি। পর্যটক এলাকা বাঁচিয়ে রাখতে সবাই কাজ করছে। এই অবস্থায় সাদা পাথর লুট কখনো মেনে নেয়া সম্ভব নয়। তারা জানান- রাতের আঁধারে অর্ধশতাধিক নৌকা পাথর লুট করা হচ্ছে। গত ১৫-২০ দিন ধরে একইভাবে পাথর লুট করা হচ্ছে। সীমান্তরক্ষী বিজিবি’র পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন এলাকার মানুষ। এদিকে- কালাইরাগ এলাকা থেকে লাল পাথর লুটপাটের অভিযোগ করা হয়েছে। ওই এলাকায়ও একই সিন্ডিকেট পাথর লুট করছে বলে জানিয়েছেন এলাকার মানুষ। এবং নির্ধারিত স্টোন ক্রাশার মিলে নিয়ে তারা এই পাথর মজুত করে বিক্রি করছে।  কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি সুকান্ত চক্রবর্তী মানবজমিনকে জানিয়েছেন- সাদা পাথর লুটের খবর পেয়ে পুলিশ অভিযান চালায়। এবং পাথর ট্রাক্টরসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মুখ থেকে আরও ৫ জনের নাম পাওয়া গেছে। তাদেরকে মামলায় আসামি করা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আপাতত এ ঘটনায় জড়িতদের মধ্যে শাহাবউদ্দিনের নাম পাওয়া যায়নি। তদন্তে পাওয়া গেলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি। সূএ:  মানবজমিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» সংস্কারবিহীন তড়িঘড়ি নির্বাচনে গেলে আবারও গণঅভ্যুত্থান ঘটতে পারে : নুর

» আগামীকাল গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়

» করাচিতে ভবন ধসে নিহত ২৭, শেষ হয়েছে উদ্ধার অভিযান

» তরুণ সমাজ আর স্বৈরাচার হতে চায় না: হাসনাত

» ইসলাম প্রচারে কেউ বাধা দিলে প্রতিরোধ করা হবে : মাসুদ সাঈদী

» সীমান্তে আগ্রাসন চালানো হলে আমরা সীমান্তে লং মার্চ ঘোষণা করব: নাহিদ ইসলাম

» ইসলামিক এনজিওগুলোকে সামাজিক ব্যবসায় এগিয়ে আসার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

» উপাচার্যদের হাতে-পায়ে ধরে দায়িত্ব দিয়েছি, কেউ স্বেচ্ছায় নেননি : শিক্ষা উপদেষ্টা

» এই বিপ্লব সফল হয়েছে মানুষের রক্ত-ঘামের বিনিময়ে : আসিফ মাহমুদ

» ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপিই জিতবে : মাহমুদুর রহমান মান্না

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

সিলেটে সাদা সোনা লুটের ‘মহোৎসব’

সাদা পাথর। নজরকাড়া পর্যটন স্পট। সাদা পাথর সমৃদ্ধি এলাকা হওয়ার কারণেই নামকরণ করা হয়েছিল সাদা পাথর। কেউ কেউ এটিকে বলেন ‘সাদা সোনা’। পাথরকে ঘিরে গড়ে ওঠা সাদা পাথর এলাকায় এবার চোখ পড়েছে পাথরখেকোদের। রাতের আঁধারে সাদা পাথর থেকে লুট করা হচ্ছে পাথর। প্রতিদিন অর্ধশতাধিকের বেশি নৌকা যোগে পাথর লুটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ক্রাশার মিলে। সম্প্রতি পুলিশের অভিযানেও মিলেছে সত্যতা।  কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশ সাদা পাথর লুটের ঘটনায় ২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

পরে তাদের ভাষ্য থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ৭ জনকে আসামি করে মামলা করেছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন- এলাকার পাথরখেকো ও বর্তমান লাইনম্যান শাহাবউদ্দিন ও লোকজনের নেতৃত্বে সাদা পাথরে অবাধে লুটপাট হচ্ছে। এ মামলায় আসামি হয়েছে শাহাবউদ্দিনের ভাগিনা রাসেলও। কিন্তু রহস্যজনক কারণে পুলিশ প্রকৃত দোষীদের এড়িয়ে গেছে। ঘটনা গত মঙ্গলবারের। ওই দিন কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশের একটি দল ট্রাক্টর বোঝাই পাথর সহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করে। পরে পাথর চুরির ঘটনায় এসআই শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে ৭ জনের বিরুদ্ধে কোম্পানীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। উপজেলার ভোলাগঞ্জ গুচ্ছ গ্রামের আব্দুল শহীদের  ছেলে মোহাম্মদ আলী, দক্ষিণ রাজনগর গ্রামের মৃত আব্দুল মালেকের ছেলে আব্দুল আলিম, রাজনগর নতুন বস্তির বাছির মিয়ার ছেলে রুহুল, দক্ষিণ রাজনগর গ্রামের খলিল মিয়ার ছেলে বাবুল মিয়া, কলাবাড়ী গ্রামের আদু মোল্লার  ছেলে কামরুল, কালিবাড়ী গ্রামের মৃত মখলিছ মিয়ার  ছেলে রাসেল মিয়া ও রাজনগর গ্রামের আইনুল মিয়াকে আসামি করে মামলা করা হয়। মামলায় চাঁদাবাজ শাহাব উদ্দিনের ভাগিনা রাসেলের নাম থাকলেও অদৃশ্য কারণে শাহাব উদ্দিনকে করা হয়নি মামলার আসামি-  জানিয়েছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা। পুলিশ জানায়- সাদা পাথরের পর্যটন এলাকা থেকে এই পাথরগুলো লুট করে বিভিন্ন ক্রাশার মিলে রাখা হচ্ছিল। ধবধবে সাদা পাথর হওয়ার কারণে সহজেই বুঝা যায় এই পাথর সাদা পাথর এলাকারই। পাথর লুটের ঘটনায় গ্রেপ্তারের পর মোহাম্মাদ আলী ও আলীম উদ্দিন সাদা পাথর লুটের কথা স্বীকার করে। এরপর তাদের মুখ থেকে লুটকারী চক্রের খবর মিলে। তাদের মুখ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আসামি করা হয়েছে আরও ৫ জনকে। এদের মধ্যে কয়েকজন চিহ্নিত পাথরখেকো চক্রের সদস্য রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আগে একাধিক মামলা হয়েছে। তবে- যাদের আসামি করা হয়েছে তাদের মূল হোতা শাহাবউদ্দিনকে আসামি না করায় ক্ষোভ বাড়ছে এলাকায়। স্থানীয়রা জানিয়েছেন- অভাব-অনটনে দিন যাপন করলেও কখনো কেউ সাদা পাথরে হাত দেয়নি। পর্যটক এলাকা বাঁচিয়ে রাখতে সবাই কাজ করছে। এই অবস্থায় সাদা পাথর লুট কখনো মেনে নেয়া সম্ভব নয়। তারা জানান- রাতের আঁধারে অর্ধশতাধিক নৌকা পাথর লুট করা হচ্ছে। গত ১৫-২০ দিন ধরে একইভাবে পাথর লুট করা হচ্ছে। সীমান্তরক্ষী বিজিবি’র পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন এলাকার মানুষ। এদিকে- কালাইরাগ এলাকা থেকে লাল পাথর লুটপাটের অভিযোগ করা হয়েছে। ওই এলাকায়ও একই সিন্ডিকেট পাথর লুট করছে বলে জানিয়েছেন এলাকার মানুষ। এবং নির্ধারিত স্টোন ক্রাশার মিলে নিয়ে তারা এই পাথর মজুত করে বিক্রি করছে।  কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি সুকান্ত চক্রবর্তী মানবজমিনকে জানিয়েছেন- সাদা পাথর লুটের খবর পেয়ে পুলিশ অভিযান চালায়। এবং পাথর ট্রাক্টরসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মুখ থেকে আরও ৫ জনের নাম পাওয়া গেছে। তাদেরকে মামলায় আসামি করা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আপাতত এ ঘটনায় জড়িতদের মধ্যে শাহাবউদ্দিনের নাম পাওয়া যায়নি। তদন্তে পাওয়া গেলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি। সূএ:  মানবজমিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com