সিলেটে টিকিট কালোবাজারিরা র‌্যাবের নজরে

এক সময় ছিল কালোবাজারি আলমগীরের নাম। টিকিট কালোবাজারি করে এখন সে আবাসিক হোটেল ব্যবসায়ী। এখন ‘ভাসছে’ আব্দুল্লাহর নাম। সঙ্গে তিতন, কবির, জুফেন ও নোমান। সিলেট রেলওয়ে স্টেশনে এখন তাদের নাম মুখে মুখে। কাউন্টারে টিকিট নেই। অনলাইনেও সংগ্রহ করা যায়নি। টিকিট পাওয়া যাবে কালোবাজারে।

সিলেটের রেলওয়ে স্টেশনের ওই দালাল চক্রের কাছে পাওয়া যায় ট্রেনের টিকিট। কখনো দ্বিগুণ, কখনো তিনগুণ দামে ওদের কাছ থেকে কিনতে হয়। এতে যাত্রীরা হয়ে পড়েছেন অসহায়। খোদ রেলওয়ে স্টেশন থেকে বলে দেয়া হয়; ‘যমুনা কিংবা আসমা মার্কেটে যাও টিকিট পাবেন’। মানুষ বাধ্য হয়ে রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে এসব মার্কেটে টিকিটের জন্য দৌড়াচ্ছে। ঈদকে সামনে রেখে সক্রিয় ওই চক্র। এরই মধ্যে নজর পড়েছে র‌্যাবের। গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়েছেন র‌্যাব সদস্যরা। গ্রেপ্তার করেছেন টিকিট চোরাচালানি সিন্ডিকেটের সদস্য জুফেন আহমদকে। যমুনা মার্কেট। সিলেট রেলওয়ের স্টেশনের সামনের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল লাগোয়া মার্কেট। স্টেশনে টিকিট পাওয়া না গেলে এই মার্কেটে মিলে। এ কথা সবাই জানেন। এ মার্কেটে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি চক্রের মধ্যে ওয়ান মিডিয়ার আব্দুল্লাহ সবার শীর্ষে। ওই মার্কেটে বরইকান্দির আব্দুল্লাহর ফোন ফ্যাক্সের দোকান। তিতন, জুফেনসহ আরও কয়েকজনের দোকান হচ্ছে এই মার্কেটে। রেলওয়ে স্টেশনের কর্মকর্তাদের নিয়ে নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে তারা ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি করছে। ঈদ সামনে। এরই মধ্যে সিলেটে টিকিট নিয়ে হাহাকার শুরু হয়েছে। টিকিট সংকট। কিন্তু টিকই পাওয়া যাচ্ছে কালোবাজারে। খোদ রেলওয়ে স্টেশনের ভেতরের কবির এন্টারপ্রাইজের মালিক কবিরও এই টিকিট কালোবাজারের সঙ্গে সক্রিয়। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, টিকিট কালোবাজারের অভিযানে কয়েক মাস আগে জিআরপি থানা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিল কবির। কারাবরণের পর সম্প্রতি বেরিয়ে এসেছে। জেলে থাকলেও টিকিট বিক্রির ব্যবসা বন্ধ হয়নি বলে জানান তারা। র‌্যাব জানায়- অভিযোগ এবং গোয়েন্দা নজরদারির ভিত্তিতে তারা রেলওয়ে স্টেশনের আশেপাশের এলাকায় অভিযান শুরু করেছেন। শনিবার বিকালে তারা অভিযান চালান যমুনা মার্কেটে। এ সময় মার্কেটের দোকানে বসেই ট্রেনের টিকিট কালোবাজারে বিক্রি করছিল জুফেন আহমদ। র‌্যাব তাকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করে। এ সময় মার্কেটেই ছিল তিতন, আব্দুল্লাহসহ কয়েকজন। তারা র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায়। সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের টিকিট কাউন্টারের কয়েকজন কর্মচারীও মার্কেটে ছিল। তারাও পালিয়ে যায়। র‌্যাব-৯ এর মিডিয়া অফিসার সহকারী পুলিশ সুপার সৌমেন মজুমদার জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে সিলেটে অবৈধভাবে ট্রেনের টিকিট জনসাধারণের কাছে দ্বিগুণ অথবা তারও বেশি মূল্যে বিক্রি করে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ওই চক্র। কাউন্টারে টিকিট সংকটের সুযোগ কাজে লাগিয়ে কালোবাজারিরা এমনটি করছে। তারা অনলাইনে ভিন্ন ভিন্ন পরিচয়পত্র ও মুঠোফোন নম্বর ব্যবহার করে টিকিট সংগ্রহ করে চড়া দামে সাধারণ যাত্রীদের কাছে বিক্রি করছে। তাদের দৌরাত্ম্যের কারণে যাত্রীরা জিম্মি। গ্রেপ্তার জুফেনের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে র?্যাব আরও জানায়- ঈদকে টার্গেট করে এ চক্রের দৌরাত্ম্য আরও বেড়ে যায়। তাই আসন্ন ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে সিলেটে এ চক্রের সদস্যরা বেশি সক্রিয় রয়েছে। সিলেটে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারিদের এই দৌরাত্ম্য ও অপতৎপরতা ঠেকাতে অবশেষে মাঠে নেমেছে র?্যাব-৯। তাদের এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে র‌্যাবের মিডিয়া অফিসার। সিলেটের জিআরপির ওসি আলীম হোসেন। কয়েক মাস আগে রেলওয়ে পুলিশের ওসি হিসেবে বদলি হয়ে এসেই টিকিট কালোবাজারি বন্ধ করতে কাজ শুরু করেন। স্টেশনের ভেতরের এবং বাইরের কালোবাজারিদের ধরতে কয়েকটি অভিযান চালান। এতে গ্রেপ্তারও হন কয়েকজন। সিলেটের জিআরপি ওসি আলীম হোসেন জানিয়েছেন, ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি বন্ধ করা সহজ। যদি সিলেট রেলস্টেশনের ম্যানেজার, স্টেশন মাস্টার, বুকিং ইনচার্জ ও আমরা পুলিশরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজে নামে তবে সফলতা আসবে। নতুবা পুরনো চেহারাই থাকবে। তবে- টিকিট কালোবাজারি সিলেটের স্টেশনে আগের চেয়ে অনেক কমেছে বলে জানান তিনি। এজন্য পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। এদিকে যমুনা মার্কেটে র‌্যাবের নজর পড়ার কারণে এখন রেলস্টেশনের পার্শ্ববর্তী আসমা ম্যানশনে টিকিট ‘কালোবাজারি জোন’ গড়ে তুলেছে সিন্ডিকেটরা। এ মার্কেটের কয়েকটি দোকানে স্টেশনের টিকিট বেশি দামে মিলে।  সূএ: মানবজমিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» রাষ্ট্রপতির কাছে পরিচয়পত্র দিলেন বুলগেরিয়ার রাষ্ট্রদূত

» ড. ইউনূস চান সার্কের কার্যক্রম শুরু হোক: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

» দুদকের মামলায় হাইকোর্টে ওসি প্রদীপের স্ত্রীর জামিন

» থার্টিফার্স্ট নাইটে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে যা বললেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্ট

» সিরিয়ায় আসাদের পতন নিয়ে যা বললেন হাসনাত আব্দুল্লাহ

» জেনে রাখুন এই ভুলে গিজার বিস্ফোরণ হয়

» গাঁজা সেবন নিয়ে বিরোধে যুবক খুন, গ্রেফতার ২

» আটকে দেওয়া হলো বিএনপির তিন সংগঠনের পদযাত্রা

» ১৮ কোটি মানুষ দিল্লির আধিপত্য প্রতিহত করতে প্রস্তুত: রিজভী

» অবৈধভাবে অবস্থানরত বিদেশিদের বাংলাদেশে থাকতে দেওয়া হবে না: জাহাঙ্গীর আলম

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

সিলেটে টিকিট কালোবাজারিরা র‌্যাবের নজরে

এক সময় ছিল কালোবাজারি আলমগীরের নাম। টিকিট কালোবাজারি করে এখন সে আবাসিক হোটেল ব্যবসায়ী। এখন ‘ভাসছে’ আব্দুল্লাহর নাম। সঙ্গে তিতন, কবির, জুফেন ও নোমান। সিলেট রেলওয়ে স্টেশনে এখন তাদের নাম মুখে মুখে। কাউন্টারে টিকিট নেই। অনলাইনেও সংগ্রহ করা যায়নি। টিকিট পাওয়া যাবে কালোবাজারে।

সিলেটের রেলওয়ে স্টেশনের ওই দালাল চক্রের কাছে পাওয়া যায় ট্রেনের টিকিট। কখনো দ্বিগুণ, কখনো তিনগুণ দামে ওদের কাছ থেকে কিনতে হয়। এতে যাত্রীরা হয়ে পড়েছেন অসহায়। খোদ রেলওয়ে স্টেশন থেকে বলে দেয়া হয়; ‘যমুনা কিংবা আসমা মার্কেটে যাও টিকিট পাবেন’। মানুষ বাধ্য হয়ে রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে এসব মার্কেটে টিকিটের জন্য দৌড়াচ্ছে। ঈদকে সামনে রেখে সক্রিয় ওই চক্র। এরই মধ্যে নজর পড়েছে র‌্যাবের। গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়েছেন র‌্যাব সদস্যরা। গ্রেপ্তার করেছেন টিকিট চোরাচালানি সিন্ডিকেটের সদস্য জুফেন আহমদকে। যমুনা মার্কেট। সিলেট রেলওয়ের স্টেশনের সামনের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল লাগোয়া মার্কেট। স্টেশনে টিকিট পাওয়া না গেলে এই মার্কেটে মিলে। এ কথা সবাই জানেন। এ মার্কেটে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি চক্রের মধ্যে ওয়ান মিডিয়ার আব্দুল্লাহ সবার শীর্ষে। ওই মার্কেটে বরইকান্দির আব্দুল্লাহর ফোন ফ্যাক্সের দোকান। তিতন, জুফেনসহ আরও কয়েকজনের দোকান হচ্ছে এই মার্কেটে। রেলওয়ে স্টেশনের কর্মকর্তাদের নিয়ে নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে তারা ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি করছে। ঈদ সামনে। এরই মধ্যে সিলেটে টিকিট নিয়ে হাহাকার শুরু হয়েছে। টিকিট সংকট। কিন্তু টিকই পাওয়া যাচ্ছে কালোবাজারে। খোদ রেলওয়ে স্টেশনের ভেতরের কবির এন্টারপ্রাইজের মালিক কবিরও এই টিকিট কালোবাজারের সঙ্গে সক্রিয়। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, টিকিট কালোবাজারের অভিযানে কয়েক মাস আগে জিআরপি থানা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিল কবির। কারাবরণের পর সম্প্রতি বেরিয়ে এসেছে। জেলে থাকলেও টিকিট বিক্রির ব্যবসা বন্ধ হয়নি বলে জানান তারা। র‌্যাব জানায়- অভিযোগ এবং গোয়েন্দা নজরদারির ভিত্তিতে তারা রেলওয়ে স্টেশনের আশেপাশের এলাকায় অভিযান শুরু করেছেন। শনিবার বিকালে তারা অভিযান চালান যমুনা মার্কেটে। এ সময় মার্কেটের দোকানে বসেই ট্রেনের টিকিট কালোবাজারে বিক্রি করছিল জুফেন আহমদ। র‌্যাব তাকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করে। এ সময় মার্কেটেই ছিল তিতন, আব্দুল্লাহসহ কয়েকজন। তারা র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায়। সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের টিকিট কাউন্টারের কয়েকজন কর্মচারীও মার্কেটে ছিল। তারাও পালিয়ে যায়। র‌্যাব-৯ এর মিডিয়া অফিসার সহকারী পুলিশ সুপার সৌমেন মজুমদার জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে সিলেটে অবৈধভাবে ট্রেনের টিকিট জনসাধারণের কাছে দ্বিগুণ অথবা তারও বেশি মূল্যে বিক্রি করে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ওই চক্র। কাউন্টারে টিকিট সংকটের সুযোগ কাজে লাগিয়ে কালোবাজারিরা এমনটি করছে। তারা অনলাইনে ভিন্ন ভিন্ন পরিচয়পত্র ও মুঠোফোন নম্বর ব্যবহার করে টিকিট সংগ্রহ করে চড়া দামে সাধারণ যাত্রীদের কাছে বিক্রি করছে। তাদের দৌরাত্ম্যের কারণে যাত্রীরা জিম্মি। গ্রেপ্তার জুফেনের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে র?্যাব আরও জানায়- ঈদকে টার্গেট করে এ চক্রের দৌরাত্ম্য আরও বেড়ে যায়। তাই আসন্ন ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে সিলেটে এ চক্রের সদস্যরা বেশি সক্রিয় রয়েছে। সিলেটে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারিদের এই দৌরাত্ম্য ও অপতৎপরতা ঠেকাতে অবশেষে মাঠে নেমেছে র?্যাব-৯। তাদের এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে র‌্যাবের মিডিয়া অফিসার। সিলেটের জিআরপির ওসি আলীম হোসেন। কয়েক মাস আগে রেলওয়ে পুলিশের ওসি হিসেবে বদলি হয়ে এসেই টিকিট কালোবাজারি বন্ধ করতে কাজ শুরু করেন। স্টেশনের ভেতরের এবং বাইরের কালোবাজারিদের ধরতে কয়েকটি অভিযান চালান। এতে গ্রেপ্তারও হন কয়েকজন। সিলেটের জিআরপি ওসি আলীম হোসেন জানিয়েছেন, ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি বন্ধ করা সহজ। যদি সিলেট রেলস্টেশনের ম্যানেজার, স্টেশন মাস্টার, বুকিং ইনচার্জ ও আমরা পুলিশরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজে নামে তবে সফলতা আসবে। নতুবা পুরনো চেহারাই থাকবে। তবে- টিকিট কালোবাজারি সিলেটের স্টেশনে আগের চেয়ে অনেক কমেছে বলে জানান তিনি। এজন্য পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। এদিকে যমুনা মার্কেটে র‌্যাবের নজর পড়ার কারণে এখন রেলস্টেশনের পার্শ্ববর্তী আসমা ম্যানশনে টিকিট ‘কালোবাজারি জোন’ গড়ে তুলেছে সিন্ডিকেটরা। এ মার্কেটের কয়েকটি দোকানে স্টেশনের টিকিট বেশি দামে মিলে।  সূএ: মানবজমিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com