উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ক্রমশ দ্রুতগতিতে বাড়ছে সিজারিয়ান ডেলিভারির প্রচলন। একসময় হার খুবই থাকলেও, বর্তমানে খুব কম পরিবারই পাওয়া যায় যেখানে নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে সন্তান জন্মগ্রহণ করছে। ক্রমবর্ধমান এই প্রবণতার জন্য কেউ কেউ দায়ী করছেন হাসপাতাল ও নার্সিংহোমগুলোকে। কেউবা আবার মনে করছেন, আধুনিক জীবনধারায় অভ্যস্ত দম্পতিরাই বেছে নিচ্ছেন সিজারিয়ান ডেলিভারি।
নরমাল ডেলিভারির ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দিলে তবেই সিজারিয়ান ডেলিভারি করানো উচিত। তবে অনেক ক্ষেত্রে এমনও দেখা যায় শুভ সময় দেখে মা-বাবা নিজেরাই প্রসবের দিন বেছে নেন। কেউ কেউ আবার প্রসব যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে এটি গ্রহণ করেন। কেন বাড়ছে সিজারিয়ান ডেলিভারির সংখ্যা?
লেডি হার্ডিঞ্জ মেডিক্যাল কলেজের সিনিয়র অধ্যাপক ডা. মঞ্জু পুরী জানাচ্ছেন, সাম্প্রতিক এক গবেষণায় তারা দেখেছেন যে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ সিজারিয়ান ঘটনা বেসরকারি হাসপাতালে হয়। দিল্লি সরকারের সঙ্গে গবেষণায় তারা এখনও পর্যন্ত যে পর্যালোচনা করেছেন তাতে এই বিষয়টিই উঠে এসেছে। বর্তমানে তারা তথ্য সংগ্রহ করছেন এবং এটি সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করছেন।
সিজারিয়ানের প্রতি মানুষের ঝোঁক কেন?
চিকিৎসক মঞ্জুর মতে, এর পেছনে দুই-তিনটি কারণ রয়েছে। বর্তমানে রোগীর প্রোফাইল পাল্টে গেছে। এখন মেট্রো শহরে গর্ভাবস্থা দেরিতে, শরীর ভারী হয়ে যাওয়, ইভিএফের মতো ঘটনা ঘটে। রোগীর দিক থেকে খেয়াল করলে দেখা যায় বর্তমানে স্থূলতা ও ডায়াবেটিসের পরিমাণ অনেক বেড়েছে। ফলে নারীদের স্বাস্থ্য খারাপ হচ্ছে। স্বাভাবিক জীবনে কোনো ফিজিক্যাল অ্যাকটিভিটি না থাকায়, গর্ভাবস্থার জটিলতা বাড়ে। অন্যদিকে, ব্যথাহীন নরমাল ডেলিভারির সুবিধা সরকারি দিক থেকে হাসপাতালগুলিতে পাওয়া যায় না। সরকার বা অন্য কোনো সংস্থার দ্বারা এটিতে উৎসাহও দেওয়া হয় না।
অন্যদিকে ডাক্তারের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যায়, বেশিরভাগ ডাক্তাররা ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা এই কাজে নিযুক্ত থাকেন। এরপরও কোনো জটিলতা দেখা দিলে দায়ভার চিকিৎসকের ওপরেই পড়ে। যদি নরমালে সমস্যা বাড়ে তাহলে আগেই সিজারিয়ান কেন করা হয়নি সেই প্রশ্ন তোলে পরিবার। অর্থাৎ রোগীর পরিবারও যেমন ভয় পায়, আবার পরবর্তী অশান্তির আশঙ্কায় চিকিৎসকেরাও ভয় পান। ফলাফলে বাড়ছে সিজারিয়ান ডেলিভারির সংখ্যা।
সিজারিয়ান ডেলিভারি এড়াতে করণীয়
এই বিষয়টিকে এড়াতে রোগী ও চিকিৎসক উভয় পক্ষকেই সচেতন হতে হবে।
রোগীর যা করনীয়-
১. শরীর সুস্থ রাখুন
২. ওজন ভারসাম্যপূর্ণ রাখুন
৩. সঠিক বয়সে শিশু গ্রহণের পরিকল্পনা করুন
৪. সিগারেটের মতো মাদক থেকে দূরে থাকুন
preg
সিস্টেমে যে পরিবর্তনগুলি আনতে হবে-
১. হাসপাতালে পেইন ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থা থাকতে হবে
২. অ্যান্টি নেটাল এক্সারসাইজ থাকতে হবে
৩. হাসপাতালে ধাত্রী থাকতে হবে
৪. নরমাল ডেলিভারি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে হবে
এই বিষয়গুলো উভয়পক্ষ মেনে চললেই কমবে সিজারিয়ান ডেলিভারি সংখ্যা। সূএ:ঢাকা মেইল ডটকম