সম্পদ নিয়ে সন্তানদের কাড়াকাড়ি, ২৪ ঘণ্টা গ্যারেজে পড়েছিল বাবার লাশ

মৃত্যুর ২৪ ঘণ্টা পরও বাবার মরদেহ দাফন করতে দেয়নি সন্তান। একপর্যায়ে মরদেহে পচন ধরায় এলাকাবাসীর চাঁদায় ভাড়া করা হয় অ্যাম্বুলেন্স। বাবার মরদেহ যখন দাফন হচ্ছে নিজ গ্রামে তখন দুই সন্তান ব্যস্ত সম্পত্তির ভাগবাটোয়ারায়। ঘটনাটি রাজধানীর বাড্ডা এলাকার।

 

সাবেক ব্যাংকার ফিরোজ ভুইয়া মারা যান গত শুক্রবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায়। ২৪ ঘণ্টা পরও শনিবার সন্ধ্যায় মরদেহ পড়েছিল বাড়ির নিচতলার গ্যারেজে। আঙিনায় ছিল না কোনো শোকের আবহ। পাশে ছিল না স্বজনদের উপস্থিতি। মৃত্যুর পর যেন নিজ বাসায় অজ্ঞাত মরদেহ হয়ে উঠেছিলেন ফিরোজ ভুইয়া।

নিচতলায় যখন তার বাবার নিথর মরদেহ, বাড়ির উপরের তলায় তখন সম্পত্তি নিয়ে দুই সন্তানের কাড়াকাড়ি। সন্তানদের এমন হৃদয়হীন আচরণে মীমাংসা খুঁজতে সালিশে বসে এলাকাবাসী!

c

জানা যায়, ফিরোজ ভুইয়ার বড় ছেলে রাকিব ভুইয়া কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন। রাকিবের অভিযোগ, সম্পত্তির লোভে ছোট ভাই তার বাবাকে হত্যা করেছে। তিনি  বলেন, ‘ওরা আমার বাবারে হত্যা করেছে। আমার মারেও মারধর করছে। বাড্ডার পাঁচতলা বাড়ি ও বাবা-মায়ের অবসরের এক কোটি টাকা এবং নরসিংদীর আরও একটি বাড়ি নিজের নামে লিখে নিয়েছে আমার ছোট ভাই আবির।

 

রাকিব ভুইয়া বলেন, ‘যার যার ওয়ারিশ তাকে বুঝিয়ে দিলে এ বিবাদ হয় না। আমারে না দিক আমার মাকে তো দিতো পারতো, মাকেও দেয়নি।’

ফিরোজ ভুইয়ার স্ত্রী খাদিজার অভিযোগও ছোট ছেলে আবিরের দিকে। তিনি বলেন, ‘মেশিন দিয়ে চাপ দিছে না বিষ মিশিয়েছে জানি না। ছোট ছেলে ঢাকার বাড়িও নিছে নরসিংদীরটাও নিছে।’

12

নিজের ওপর নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে রাকিবের মা বলেন, ‘দরজায় হাত রেখে চাপা দিয়ে নির্যাতন করতো ছোট ছেলে। সন্তানের নির্যাতনের ভয়ে আমাকে প্রতিবেশীর আশ্রয়ে থাকতে হতো।

 

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ছোট ছেলে আবির  বলেন, ‘বাবা আমাকে সব সম্পত্তি লিখে দিয়েছেন। এলাকার লোকজনের কারণে মরদেহ দাফনে সমস্যা হয়েছে।

 

এলাকাবাসীর অভিযোগ, ফিরোজ ভুইয়ার ছোট ছেলে (আবির ভুইয়া) বাটপার, চিটার। সে তার বাবাকে সঠিক চিকিৎসা করতে দেয়নি। কষ্ট দিয়েছে। লোকটা না খেয়ে চিকিৎসার অভাবে মারা গেছেন। ছোট ছেলে জানাজায় শরিক হয়নি। দুটি বাড়ি ও ৯০ লাখ টাকা সব নিয়েছে। এটা স্বাভাবিক মৃত্যু নয়। তাকে (ফিরোজ ভুইয়াকে) হত্যা করা হয়েছে।

v

ফিরোজ ভুইয়ার মৃত্যুর প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাত ৮টায় পুলিশ এসে অ্যাম্বুলেন্সে মরদেহ পাঠায় গ্রামের বাড়ি নরসিংদীতে। রাতেই দাফন সম্পন্ন হয়। পুলিশ জানায়, কেউ হত্যার অভিযোগ করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্যাংকে নিজের নামে কোটি টাকা থাকা সত্ত্বেও ঢাকার বাসার তৃতীয় তলায় পরিত্যক্ত আসবাবপত্র রাখার একটি কক্ষে (স্টোর রুমে) থাকতেন ফিরোজ ভুইয়া ও তার স্ত্রী খাদিজা। নির্যাতনের ভয়ে মা থাকতে চাইতেন না ছোট ছেলের কাছে। ফিরোজ ভুইয়া শূন্য হাতে বিদায় নিলেন পৃথিবী থেকে।

 

এ বিষয়ে বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ  বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ কোনো লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সূএ:জাগো নিউজ

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» নতুন মায়েরা সকালে এই ৫ সুপারফুড খান

» হার্ট অ্যাটাক পরবর্তী ১ থেকে ২ ঘণ্টা কেন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ?

» বিশ্বের সবচেয়ে দামি খাবার ক্যাভিয়ার আসলে কী?

» এশিয়া কাপ থেকে বিদায় বাংলাদেশ, ফাইনালে ভারত

» মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় স্কুলশিক্ষক নিহত

» সহিংসতায় আহতদের চিকিৎসা ও আয়ের ব্যবস্থা করবে সরকার: প্রধানমন্ত্রী

» সজীব ওয়াজেদ জয়ের ৫৩তম জন্মবার্ষিকী আগামীকাল

» অলিম্পিক উদ্বোধনের আগে ফ্রান্সের রেল নেটওয়ার্কে ভয়াবহ হামলা

» যুবলীগ কর্মী জুয়েলকে হত্যার পর গাছে ঝুলিয়ে রাখে জামায়াত-শিবির ক্যাডাররা

» কেন বিষাক্ত মানুষদের ছেঁটে ফেলতে বললেন পরিণীতি?

উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

সম্পদ নিয়ে সন্তানদের কাড়াকাড়ি, ২৪ ঘণ্টা গ্যারেজে পড়েছিল বাবার লাশ

মৃত্যুর ২৪ ঘণ্টা পরও বাবার মরদেহ দাফন করতে দেয়নি সন্তান। একপর্যায়ে মরদেহে পচন ধরায় এলাকাবাসীর চাঁদায় ভাড়া করা হয় অ্যাম্বুলেন্স। বাবার মরদেহ যখন দাফন হচ্ছে নিজ গ্রামে তখন দুই সন্তান ব্যস্ত সম্পত্তির ভাগবাটোয়ারায়। ঘটনাটি রাজধানীর বাড্ডা এলাকার।

 

সাবেক ব্যাংকার ফিরোজ ভুইয়া মারা যান গত শুক্রবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায়। ২৪ ঘণ্টা পরও শনিবার সন্ধ্যায় মরদেহ পড়েছিল বাড়ির নিচতলার গ্যারেজে। আঙিনায় ছিল না কোনো শোকের আবহ। পাশে ছিল না স্বজনদের উপস্থিতি। মৃত্যুর পর যেন নিজ বাসায় অজ্ঞাত মরদেহ হয়ে উঠেছিলেন ফিরোজ ভুইয়া।

নিচতলায় যখন তার বাবার নিথর মরদেহ, বাড়ির উপরের তলায় তখন সম্পত্তি নিয়ে দুই সন্তানের কাড়াকাড়ি। সন্তানদের এমন হৃদয়হীন আচরণে মীমাংসা খুঁজতে সালিশে বসে এলাকাবাসী!

c

জানা যায়, ফিরোজ ভুইয়ার বড় ছেলে রাকিব ভুইয়া কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন। রাকিবের অভিযোগ, সম্পত্তির লোভে ছোট ভাই তার বাবাকে হত্যা করেছে। তিনি  বলেন, ‘ওরা আমার বাবারে হত্যা করেছে। আমার মারেও মারধর করছে। বাড্ডার পাঁচতলা বাড়ি ও বাবা-মায়ের অবসরের এক কোটি টাকা এবং নরসিংদীর আরও একটি বাড়ি নিজের নামে লিখে নিয়েছে আমার ছোট ভাই আবির।

 

রাকিব ভুইয়া বলেন, ‘যার যার ওয়ারিশ তাকে বুঝিয়ে দিলে এ বিবাদ হয় না। আমারে না দিক আমার মাকে তো দিতো পারতো, মাকেও দেয়নি।’

ফিরোজ ভুইয়ার স্ত্রী খাদিজার অভিযোগও ছোট ছেলে আবিরের দিকে। তিনি বলেন, ‘মেশিন দিয়ে চাপ দিছে না বিষ মিশিয়েছে জানি না। ছোট ছেলে ঢাকার বাড়িও নিছে নরসিংদীরটাও নিছে।’

12

নিজের ওপর নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে রাকিবের মা বলেন, ‘দরজায় হাত রেখে চাপা দিয়ে নির্যাতন করতো ছোট ছেলে। সন্তানের নির্যাতনের ভয়ে আমাকে প্রতিবেশীর আশ্রয়ে থাকতে হতো।

 

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ছোট ছেলে আবির  বলেন, ‘বাবা আমাকে সব সম্পত্তি লিখে দিয়েছেন। এলাকার লোকজনের কারণে মরদেহ দাফনে সমস্যা হয়েছে।

 

এলাকাবাসীর অভিযোগ, ফিরোজ ভুইয়ার ছোট ছেলে (আবির ভুইয়া) বাটপার, চিটার। সে তার বাবাকে সঠিক চিকিৎসা করতে দেয়নি। কষ্ট দিয়েছে। লোকটা না খেয়ে চিকিৎসার অভাবে মারা গেছেন। ছোট ছেলে জানাজায় শরিক হয়নি। দুটি বাড়ি ও ৯০ লাখ টাকা সব নিয়েছে। এটা স্বাভাবিক মৃত্যু নয়। তাকে (ফিরোজ ভুইয়াকে) হত্যা করা হয়েছে।

v

ফিরোজ ভুইয়ার মৃত্যুর প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাত ৮টায় পুলিশ এসে অ্যাম্বুলেন্সে মরদেহ পাঠায় গ্রামের বাড়ি নরসিংদীতে। রাতেই দাফন সম্পন্ন হয়। পুলিশ জানায়, কেউ হত্যার অভিযোগ করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্যাংকে নিজের নামে কোটি টাকা থাকা সত্ত্বেও ঢাকার বাসার তৃতীয় তলায় পরিত্যক্ত আসবাবপত্র রাখার একটি কক্ষে (স্টোর রুমে) থাকতেন ফিরোজ ভুইয়া ও তার স্ত্রী খাদিজা। নির্যাতনের ভয়ে মা থাকতে চাইতেন না ছোট ছেলের কাছে। ফিরোজ ভুইয়া শূন্য হাতে বিদায় নিলেন পৃথিবী থেকে।

 

এ বিষয়ে বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ  বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ কোনো লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সূএ:জাগো নিউজ

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com