মাপৃথিবীর মধুরতম ডাক। আমাদের পৃথিবীর আলো দেখাতে তারা সীমাহীন কষ্ট সহ্য করেন। গর্ভাবস্থায় তাই মায়ের দরকার বাড়তি পুষ্টি, বাড়তি যত্ন। অথচ আমরা কি প্রত্যেকে আসলেই জানি সঠিকভাবে কেমন করে যত্ন নিতে হবে! মায়ের যত্ন কখনই তার নিজের একার পক্ষে করা সম্ভব না কারণ গর্ভধারণের পর অনেক মায়ের অবস্থাই নাজুক হয়ে যায়। আপনার কাছের মানুষটিকে মানসিক, নৈতিক সহায়তা করতে জেনে নিন কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য। সন্তান সম্ভবা মা হলে আপনি কিভাবে নিবেন নিজের যত্ন তাই আজকে আমরা আপনাদের জানাবো।
সঠিক সময়ে নিয়মিতভাবে চেক-আপ না করালে মা ও শিশু উভয়ের শারীরিক ক্ষতি হতে পারে। এমনকি বাচ্চা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই WHO (world health organisation ) ১৩ টি Antenatal visit নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে ৪ টি অবশ্যই করতে হবে। এর মানে হলো, গর্ভাবস্থায় কাছের স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়মিত এই পরীক্ষা করতে হবে দেখার জন্য যে বাচ্চা বা মায়ের কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা।
৪ টি আবশ্যক পরীক্ষাঃ
(১) ১৬ সপ্তাহের মধ্যে – রক্তশূন্যতা, সিফিলিস, প্রসব জনিত কোন জটিলতা আছে কিনা। জন্ম পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্য শিক্ষাও নিতে হবে।
(২) ২৪ থেকে ২৮ সপ্তাহের মধ্যে – বাচ্চা ঠিক মতো বাড়ছে কিনা, পেটের বেড়ে যাওয়া অংশ মেপে পরীক্ষা করাতে হবে।
(৩) ৩২ তম সপ্তাহে – এক্লামশিয়া (উচ্চ রক্ত চাপ, প্রস্রাবে প্রোটিনযাওয়া, হাত পা ফুলে যাওয়া আছে কিনা), জন্ম পরিকল্পনাকে আরও উন্নত করা।
(৪) ৩৬ তম সপ্তাহে – বাচ্চার পজিশন, জরায়ুতে কীভাবে আছে, মাথা নাকি পা বা শরীরের অন্য অংশ নীচের দিকে তা জানতে হবে। জন্ম পরিকল্পনার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
শেষ হলো ভিজিটের পালা। কিন্তু এর সাথে কিছু টেস্ট-ও করতে হবে। ডাক্তাররা প্রায়ই এসব টেস্ট করতে দেন। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রসব জনিত কোন জটিলতা হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে তা আগেই নির্ণয় করা।
রুটিন টেস্ট-
(১) Hb %, CBC, VDRL
(২) Random Blood Sugar
(৩) Ultrasonogram of whole abdomen
বিশেষ টেস্ট-
(১) TORCHES test, HBS Ag
(২) Maternal serum alpha fetoprotein
(৩) Ultrasound examination
(৪) Cervical cytology ( pap smear )
গর্ভাবস্থার বিপদচিহ্ন সমূহ –
এই বিপদচিহ্ন গুলোর একটিও দেখা দিলে সাথে সাথে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
(১) তীব্র মাথা ব্যাথা
(২) অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
(৩) যোনিপথে রক্তপাত হওয়া
(৪) তলপেটে ব্যথা
(৫) চোখে ঝাপসা দেখা
(৬) হাত পা ফুলে যাওয়া
(৭) বাচ্চার নড়া চড়া বন্ধ হয়ে যাওয়া
সন্তান-সম্ভবা মায়ের খাদ্যাভাসঃ
গর্ভাবস্থায় মায়ের প্রয়োজন পুষ্টিকর খাদ্য। কারণ পূর্বে আপনি যাই খেতেন তা শুধু আপনার উপর প্রভাব ফেলত। আর এখন এটা আপনার বাচ্চার সুস্থতার সাথে জড়িত। খুব বেশি না কিন্তু সুষম খাদ্য খেতে হবে। সাধারণত দিনে ২১০০ ক্যালরি খাদ্য একজন সুস্থ মানুষের জন্যে যথেষ্ট। কিন্তু গর্ভাবস্থায় চাহিদা বেড়ে যায়। ২৫০০ ক্যালরি সমপরিমাণ খাদ্য প্রয়োজন হতে পারে।
(১) প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাদ্য খেতে হবে। সবুজ শাক-সবজি, মাছ-মাংস খেতে হবে। অবশ্যই নিয়মিত খেতে হবে, পাশাপাশি ভাত, ডাল, শস্য দানা, আলুও খেতে হবে।
(২) আয়রন ও ফলিক এসিড এর চাহিদা বেড়ে যায়। আয়রন প্লাসেন্টা তৈরি হওয়ার জন্যে রক্ত যোগায়। ব্রকলি, কচু শাক, পালং শাক তাই গর্ভাবস্থায় জরুরী। ঘাটতি থাকে নিয়মিত ট্যাবলেট খেতে হবে। ঘাটতির পরিমাণ বেশি হলে রক্ত দিতে হতে পারে।
বাচ্চার ( সাপ্তাহিক ) অঙ্গ গঠন- প্রথম তিন মাসে বাচ্চার সব অঙ্গ গঠন শুরু হয়। তাই এ সময় খুব সাবধানে থাকতে হয়।
(১) ৫ম সপ্তাহ – মস্তিস্ক, সুষুম্না কাণ্ড, হৃদপিণ্ড ও খাদ্যনালী গঠন হওয়া শুরু হয়।
(২) ষষ্ঠ – ৭ম সপ্তাহ- হাত ও পা কুঁড়ির আকার ধারণ করে। কান ও চোখ তৈরি শুরু হয়। হৃদপিণ্ড তৈরি হতে থাকে ও সঠিক তালে স্পন্দিত হয়।
(৩) ৮ম সপ্তাহ – ফুসফুস তৈরি শুরু হয়। মস্তিষ্ক বাড়তে থাকে।
(৪) ৯ম সপ্তাহ – কনুই ও পায়ের পাতা দেখা সম্ভব হয়। স্তনের বোটা ও লোম তৈরি হয়। সব প্রয়োজনীয় অঙ্গ তৈরি হওয়া শুরু হয়।
(৫) ১০ম সপ্তাহ- চোখের পাপড়ি আরও উন্নত হয়। অন্ন নালি ঘুরে নতুন অবস্থান নেয়। মুখ সুন্দর আকার নেয়।
(৬) ১১তম-১২তম সপ্তাহ – মাথা শরীরের অর্ধেক আকার ধারণ করে। হাত পা সরু ও লম্বা হয়। বাচ্চা আঙ্গুল দিয়ে হাত মুঠো করতে পারে।
যা যা করা যাবে না ও সাধারণ কিছু উপদেশঃ
(১) সন্তান সম্ভবা মা এর ভারি কাজ করা যাবে না ( সিঁড়ি দিয়ে ওঠা নামা কম করতে হবে, ভারি জিনিস ওঠানো যাবে না, ঝাঁকুনি দেয়া যানবাহন বা রাস্তায় চলা যাবে না।
(২) সন্তান সম্ভবা মা ধূমপান, মদ পান বন্ধ করতে হবে। পর্যাপ্ত পানি খেতে হবে ও বিশ্রাম নিতে হবে।
(৩) অনেক ওষুধ আছে যা খেলে বাচ্চার ক্ষতি হতে পারে বা বিকলাঙ্গ হতে পারে। প্রায়ই ব্যবহার করা হয় এমন কিছু ওষুধের নাম হচ্ছে – celecoxib, ibuprofen, all oral contraceptives, testosterone, griseofulvin, sulfisoxazole, povidone iodine, metronidazole, methotrexate এরকম আরও কিছু ওষুধ। এ সময় যেকোন ওষুধ খাওয়ার আগেই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
সন্তান মায়ের জন্য অতি আদরের মানিক রতন। বাচ্চার মঙ্গলের জন্যে মা সবই করতে পারেন। একটু সচেতন থাকলেই এড়ানো যাবে ঝুঁকিপূর্ণ অনেক পরিস্থিতি। সন্তান সম্ভবা মা নিয়মগুলো যত্নের সাথে পালন করুন। সুস্থ, সুন্দর বাচ্চার হাসি মুখ দেখার শুভকামনা রইল।
সূএ: সাজগোজ ডট কম