প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি মো. আজিজুল হক রানা ওরফে শাহনেওয়াজ ওরফে রুমানকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগ।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বুধবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান।
আজিজুল হক রানার কাছ থেকে জিহাদী বই, দুটি মোবাইল ফোন, পেনড্রাইভ ও কম্পিউটারের হার্ডডিক্স জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত মো. আজিজুল হক রানার বিরুদ্ধে খিলক্ষেত থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে একটি মামলা করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আসাদুজ্জামান বলেন, ‘বিশেষ অভিযান চালিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টা মামলায় ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ২০০০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার সফরসঙ্গীদের হত্যার উদ্দেশ্যে কোটালীপাড়ার শেখ লুৎফর রহমান সরকারি আদর্শ কলেজ মাঠে অবস্থিত সভামঞ্চের পাশে মাটির নিচে একটি ৪০ কেজি ওজনের বোমা এবং হ্যালিপ্যাডের পাশে মাটির নিচে একটি ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রাখা হয়। মো. আজিজুল হক রানা ওরফে শাহনেওয়াজ ওরফে রুমান মুফতি হান্নানের সাথে বোমা পুঁতে রাখার দায়িত্বে ছিলেন। ঘটনাটি প্রকাশ পেলে বোমা দুটি উদ্ধারের পর আজিজুল হক ওরফে শাহনেওয়াজ গোপালগঞ্জ, কোটালীপাড়া থেকে পালিয়ে ঢাকায় চলে আসে।
গ্রেপ্তারকৃতের বরাত দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসাদুজ্জামান আরও বলেন, ‘আজিজুল হক রানা ১৯৮৭ সালে গাজীপুরের শ্রীপুরে জামিয়া আনোয়ারিয়া মাদ্রাসায় নূরানী বিভাগে ভর্তি হয়। তিনি ওই মাদ্রাসার ওস্তাদ ও হরকাতুল জিহাদের সক্রিয় সদস্য, মুফতি হান্নানের অনুসারী, মাওলানা আমিরুল ইসলামের সংস্পর্শে আসে। মাওলানা আমিরুল ইসলাম তাকে হরকাতুল জিহাদে যোগদানের জন্য উদ্বুদ্ধ করে। ওই মাদ্রাসায় মুফতি হান্নান, আব্দুর রউফ, আব্দুস সালামসহ হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের বিভিন্ন সিনিয়র সদস্যের যাতায়াত ছিল এবং হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশ (হুজি-বি) সদস্যদের ওই মাদ্রাসায় গোপন বৈঠক হতো।
অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃত আজিজুল হক সংগঠনে যোগদানের পর অন্য ছাত্রসহ প্রশিক্ষণ ও তালিম নেয়ার জন্য হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি ইজহারের চট্টগ্রামের লালখান মাদ্রাসায় যায় এবং তালিম নেয়। তালিম শেষে সেখানে সে বোমা তৈরি, আত্মরক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। মুফতি হান্নান সংগঠনের অপারেশনাল কার্যক্রমের জন্য সাহসী জিহাদী বিশ্বস্ত কয়েকজন লোক সংগ্রহ করার জন্য মাওলানা আমিরুল ইসলামকে দায়িত্ব দিলে সে আজিজুল হক রানা ওরফে শাহনেওয়াজ ওরফে রুমানকে নির্বাচন করে। আমিরুল ইসলাম তাকে একটি পত্র লিখে দিলে পত্র সহকারে গোপালগঞ্জ বিসিক এলাকায় সোনার বাংলা সাবান ও মোমবাতি তৈরির কারখানায় পাঠায়। তখন মুফতি হান্নানের সাথে সাক্ষাৎ করে তাকে মাওলানা আমিরুল ইসলামের পত্রটি দেয়। মুফতি হান্নান তাকে সংগঠনের নিয়মকানুন সম্পর্কে বুঝিয়ে দেয় এবং আজিজুল হক নাম পরিবর্তন করে ‘শাহনেওয়াজ’ দেয়।
আসাদুজ্জামান আরও বলেন, ‘আজিজুল হক নতুন নাম শাহনেওয়াজ পরিচয়ে আনুমানিক ১৫ দিন মোমবাতি প্যাকিংয়ের কাজ করে। বিশ্বস্ততা অর্জন করলে কারখানার পিছনে একটি কক্ষে গোপন বৈঠকে উপস্থিত থাকার অনুমতি পায়। কারখানায় মোমবাতি ও সাবান তৈরির আড়ালে বোমা তৈরির কাজ চলতো। বোমা তৈরির কাজে আজিজুল হকসহ মো. ইউসুফ ওরফে মোসহাব, মেহেদী হাসান ওরফে আবদুল ওয়াদুদ, ওয়াসিম আক্তার ওরফে তারেক হোসেন, মো. মহিবুল ওরফে মফিজুর রহমান, শেখ মো. এনামুল হক, আনিসুল ইসলাম ওরফে আনিস জড়িত ছিল।
আজিজুল হক দীর্ঘ ২১ বছর বিভিন্ন পেশার আড়ালে নিজেকে আত্মগোপন করে রাখেন এবং অত্যন্ত গোপনে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যান। তিনি নিজেকে লুকিয়ে রাখতে টেইলারিং, মুদি দোকানদার, বই বিক্রেতা, ড্রাইভার এবং সবশেষ প্রিন্টিং ও স্ট্যাম্পপ্যাড বানানোর কাজ করতেন।
উল্লেখ্য, ২০০০ সালের ২২ জুলাই গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় শেখ লুৎফর রহমান আদর্শ সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভার প্যান্ডেল তৈরির সময় শক্তিশালী একটি বোমা দেখতে পাওয়া যায়। সেনাবাহিনীর একটি দল ৭৬ কেজি ওজনের ওই বোমা উদ্ধার করে। পরদিন ২৩ জুলাই ৪০ কেজি ওজনের আরেকটি বোমা উদ্ধার করা হয়।