শাহবাজ শরিফ ঢাকা থেকে উড়িয়ে নেন হুজুর সাইদাবাদীকে

নঈম নিজাম: ক্ষমতার ভিতর-বাইর কখনো মেলানো যায় না। ক্ষমতায় থাকলে সবকিছু রঙিন মনে হয়। ক্ষমতা হারালে সবকিছু পানসে। তখন উপলব্ধি করা যায় বাস্তবতা। একবার এক সাবেক মন্ত্রীকে প্রশ্ন করেছিলাম ক্ষমতার ভিতরে ছিলেন, বাইরে ছিলেন। ক্ষমতায় থাকার সময় শুভানুধ্যায়ীর অভাব হয় না। আমলা, কামলা, কর্মী, সমর্থকের ভিড় লেগে থাকে। ক্ষমতা হারানোর পরের অভিজ্ঞতা কী? জবাবে সাবেক মন্ত্রী হাসলেন। বললেন, ক্ষমতা হারানোর পর কেউ কারও নয়। দুই দিন আগে যারা স্যালুট দিত, নির্দেশের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকত তাদের চেহারা মুহূর্তে বদলে যায়। অনেকে টেলিফোনও রিসিভ করে না। কর্মী-সমর্থকদের ভালোবাসায় কৃত্রিমতা চলে আসে। ক্ষমতা হারানোর পর প্রথম প্রথম আশা তৈরি হয় আবার ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার। সে স্বপ্ন নিভে গেলে বাড়তে থাকে হতাশা। অনেকে তা মেনে নিতে পারে না। তখন হঠাৎ বয়স বেড়ে যায়। নিরাশা তৈরি হয়। ফলে কেউ যায় পীর-ফকিরের কাছে। কেউ ব্যস্ত থাকে ধর্মকর্মে। শুধু বাংলাদেশ নয়, উপমহাদেশের রাজনীতিতে একই চিত্র। ভারতে ভোটের আগে রাজনীতিবিদদের অনেকে যান সাধুসন্ন্যাসীদের কাছে। পূজার্চনা বাড়িয়ে দেন। খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বসেন ধ্যানে। পাকিস্তানের নেতারা যান পীরের দরবারে। পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ একবার ঢাকায় এসেছিলেন ভোটের আগে। সে ভোটে তাঁর ভাই নওয়াজ শরিফের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বেনজির ভুট্টো। আর বেনজিরকে হারাতে তাঁরা শরণাপন্ন হন ঢাকার সায়েদাবাদের পীর সাইদুর রহমান সাইদাবাদীর। তখন সাইদাবাদীর প্রসার বাংলাদেশেও ছিল। বাংলাদেশের অনেক ক্ষমতাবান যেতেন তাঁর দরবারে।

 

ব্যক্তিগত জীবনে নওয়াজ শরিফ ছিলেন হুজুর সাইদাবাদীর ভক্ত। সময়ের অভাবে তিনি ঢাকা আসতে পারছিলেন না। তাই সিদ্ধান্ত নিলেন হুজুর সাইদাবাদীকে পাকিস্তানে নিয়ে যাবেন। বেনজির ভুট্টোও ১৯৮৮ সালে তাঁর প্রথম ভোটে জিতেছিলেন বাংলাদেশের পীরের দোয়া নিয়ে! সে পীরের নাম মুজিবুর রহমান চিশতি। তিনি থাকতেন ঢাকার মোহাম্মদপুরে। গ্রামের বাড়ি জয়পুরহাট। জিয়াউল হক ক্ষমতায় থাকার শেষ সময় লন্ডনে মুজিবুর রহমান চিশতির সঙ্গে বেনজিরের সাক্ষাৎ হয়েছিল। বেনজিরের মাথায় ফুঁ দিয়ে দোয়া দেন চিশতি। তারপর বলেন, ‘এবার তুমি ক্ষমতায় আসবে। তোমাকে হারানো যাবে না।’ বেনজির অবাক বিস্ময় নিয়ে বলেছিলেন, ‘জিয়াউল হক প্রেসিডেন্ট থাকলে ক্ষমতা পাওয়া অসম্ভব।’ জবাবে চিশতি বললেন, ‘জিয়াউল হক চিরতরে চলে যাবে। ভয়াবহ ঘটনা ঘটবে। ভোটে জিতবে তুমি।’ তারপর বললেন, ‘ভোটে জিতে ক্ষমতায় এসে তুমি আসবে আমার কাছে। ঢাকায় নয় তোমার আমন্ত্রণ আমার গ্রামের বাড়ি জয়পুরহাটে।’ বিস্ময় নিয়ে বেনজির তাকাতে চিশতি এবার বললেন, ‘আমার কথা সত্য হলে তোমাকে আসতে হবে আমার গ্রামের বাড়ি বাংলাদেশের জয়পুরহাটে।’ অক্সফোর্ড পড়ুয়া আধুনিক ধ্যান-ধারণার বেনজির কথা দেন এমন ঘটনা ঘটলে তিনি বাংলাদেশে এসে সালাম করে যাবেন চিশতিকে। মুজিবুর রহমান চিশতির এ বয়ান ঘটে যায় বেনজিরের বাস্তব জীবনে। জিয়াউল হক নিহত হন হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায়। বেনজির ভোটে জেতেন। আর বিজয়ের পরপরই বাংলাদেশ সফরের আগ্রহের কথা জানান। তখন ক্ষমতায় হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তিনি বিস্মিত হলেন, কারণ রাষ্ট্রীয় নয়, ব্যক্তিগত সফরে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় আসতে চান। তিনি যাবেন এক অজানা পীরের দরবারে জয়পুরহাটে। জুলফিকার আলী ভুট্টোর কন্যা বেনজির প্রধানমন্ত্রী হয়ে ঢাকায় আসেন। তিনি বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারে যান জয়পুরহাটের একটি গ্রামে। বেনজিরের সফর ঘিরে সরকারি বিভাগগুলোকে অনেক খাটতে হয়েছিল। মুজিবুর রহমান চিশতির গ্রামে যাওয়ার সড়ক মাত্র ১৫ দিনে নির্মিত হয়। বানানো হয় আলাদা হেলিপ্যাড। এরশাদ অন্য দেশের প্রধানমন্ত্রীর এমন ব্যক্তিগত সফরে বিরক্ত হয়েছিলেন। তার পরও কূটনৈতিক শিষ্টাচার বজায় রাখতে সবকিছুর আয়োজন করেন।

 

নওয়াজ শরিফও জানতেন বেনজিরের এক পীর আছেন বাংলাদেশে। সে পীরের দোয়ায় বেনজির প্রথম ক্ষমতায় আসেন। ক্ষমতাহারা নওয়াজ শরিফও আবার ক্ষমতায় আসতে বাংলাদেশি পীর ধরেন। সায়েদাবাদের সাইদুর রহমান ওরফে সাইদাবাদীর দোয়া নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ১৯৯৭ সালের সে নির্বাচনের শেষ মুহূর্তের কঠিন প্রচারণার সময় নওয়াজের জন্য তখন ঢাকা আসা কঠিন ছিল। তাই তিনি হুজুরকে পাকিস্তান নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। নওয়াজ শরিফ তাঁর ছোট ভাই শাহবাজ শরিফ, যিনি এখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী তাঁকে ঢাকা পাঠান। শাহবাজ শরিফকে ঢাকায় বিমানবন্দরের ভিআইপি টার্মিনালে স্বাগত জানান শেখ নজরুল ইসলাম। তিনি ‘লাল সবুজ’ পত্রিকাটি বের করতেন। ব্যবসায়ী মানুষ। ব্যক্তিগত জীবনে আওয়ামী লীগের সমর্থক হলেও তিনি ছিলেন সাইদাবাদীর মসজিদের সভাপতি। কঠিন ভক্ত ছিলেন পীরের। মরহুম আবদুর রাজ্জাকের ¯েœহধন্য ছিলেন শেখ নজরুল। হুজুর সাইদাবাদীকে সব ঝড়ঝাপ্টা থেকে রক্ষা করতেন তিনি। শাহবাজ শরিফকে তিনি নিয়ে যান সায়েদাবাদের দরবার শরিফে। এক ঘণ্টার নোটিসে সাইদাবাদীর পাসপোর্টে পাকিস্তানের ভিসা লাগানো হয়। তারপর তাঁকে সঙ্গে নিয়ে পাকিস্তান উড়ে যান শাহবাজ শরিফ। ঢাকায় তাঁর সফর ছিল কয়েক ঘণ্টার জন্য। পরে শেখ নজরুলের কাছে জেনেছিলাম, সরাসরি নওয়াজের বাড়িতে ওঠেন সাইদাবাদী। প্রতিদিন সাইদাবাদীকে কদমবুসি করে নওয়াজ বের হতেন ভোটের প্রচারণায়। হুজুর ফুঁ দিতেন। সাইদাবাদীর দোয়া নিয়ে বের হতেন নওয়াজ। ’৯৭ সালের সে ভোটে বেনজিরকে হারালেন নওয়াজ শরিফ। জিতে প্রধানমন্ত্রী হন পাকিস্তানের। এর আগে ১৯৯০ সালের ভোটে নওয়াজ হারিয়েছিলেন বেনজিরকে।

 

পাকিস্তানের দুই নেতার বাংলাদেশি দুই পীরের নিজেদের ভাগ্যের শেষটা ভালো ছিল না। অন্যের ভবিষ্যদ্বাণী করলেও নিজেদের ভবিষ্যৎ তাঁরা জানতেন না। দুজনের পরিণতি হয়েছিল অনেক কঠিন। কী হয়েছিল তা জানানোর আগে আরেকটা কথা বলে রাখি, মুজিবুর রহমান চিশতি আর সাইদাবাদীকে একবার ডেকে নিয়েছিলেন ধানমন্ডি জাহাজবাড়ির পীর শেরে খাজা। তিনি অবশ্য নিজেকে পীর বলতে নারাজ ছিলেন। তিনি নিজেকে বলতেন আধ্যাত্মিক সাধক। মানুষকে ঠকাবেন না সাইদাবাদী ও চিশতি এমন অঙ্গীকার করিয়ে তার ভিডিও করে রাখেন শেরে খাজা। সেই তওবা পড়ানোর সাক্ষী ছিলেন দুজন সাংবাদিক। শেরে খাজা ছিলেন ভারত সমর্থক সাধক। সে সময় আলোচিত তিনজনের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কানেকশন ছিল। এবার চিশতি আর সাইদাবাদীর দুই পরিণতির কথা বলছি।

 

মুজিবুর রহমান চিশতির নিষ্ঠুর মৃত্যু হয়েছিল। তিনি খুনের শিকার হন। তাকে ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাড়িতে খুন করে চলে যায় ভিন্নমতাবলম্বীরা। নিজেকে রক্ষা করতে পারেননি চিশতি। অন্যদিকে হুজুর সাইদাবাদী পাকিস্তান থেকে ফিরে কলকাতায় গিয়ে বিপাকে পড়েন। তিনি মনে করতেন তাঁকে কলকাতায় বিপদে ফেলেন শেরে খাজা। কারণ ভারতের সঙ্গে শেরে খাজার সম্পর্ক ছিল গভীর।

 

সাইদাবাদী সন্তান না হওয়া নারীদের চিকিৎসা করানোর বিজ্ঞাপন দিতেন পত্রিকায়। সন্তান না হওয়া নারীরা তাঁর দরবারে ভিড়ও করতেন। সন্তান হওয়ার পর বিজ্ঞাপন দিত সাপ্তাহিক চিত্রবাংলা ও দৈনিক খবরে। আজমির যাওয়ার পথে কলকাতায় অবস্থান নেন সাইদাবাদী। আনন্দবাজার পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেন সন্তান না হওয়া নারীদের চিকিৎসা দেওয়ার। কলকাতার নিউমার্কেট এলাকার কাছাকাছি স্থানে কয়েক দিনের দরবার বসান অস্থায়ীভাবে। নারী-পুরুষের ভিড় বাড়তে থাকে। কলকাতার গোয়েন্দা পুলিশের ডিসি ছিলেন তখন নজরুল ইসলাম নামে এক কর্মকর্তা। তিনি খুব দাপুটে ছিলেন।

 

হুজুর সাইদাবাদীর প্রতি ছিল তাঁর কঠোর নজরদারি। সন্তানপ্রত্যাশী নারীদের ডিম পড়া দিতেন হুজুর। নারীরা কাঁচা ডিম নিয়ে যেত। হুজুর হাতে নিয়ে সে ডিমে ফুঁ দিলে তা সেদ্ধ হয়ে যেত। একজন নারী গোয়েন্দাকে বিশেষ কেমিক্যাল মেশানো ডিম দিয়ে হুজুরের কাছে পাঠান ডিসি নজরুল। এ ডিমে কলকাতা পুলিশের বিশেষ চিহ্ন ছিল। যা সাদা চোখে ধরা পড়বে না। নারী কর্মকর্তা হুজুরের সামনে গেলেন। জানালেন তাঁর সন্তান হয় না। তিনি হুজুরের দোয়া চান। সঙ্গে নিয়ে যাওয়া ডিম হুজুরের হাতে দেন। হুজুর ডিমে ফুঁ দেওয়ার সময় কৌশলে তা রেখে দেন। পাশে থাকা সেদ্ধ ডিম নারী কর্মকর্তার হাতে দেন। এ কৌশল সাধারণ মানুষ ধরতে পারত না। নারী পুলিশ চ্যালেঞ্জ করে বসেন হুজুরকে। কাছে থাকা গোয়েন্দা পুলিশ ছুটে আসে। তাঁরা হুজুর সাইদাবাদীকে আটক করলেন। টানা জিজ্ঞাসাবাদ চলল। সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ কর্মকর্তা নজরুল বললেন, সাইদাবাদী হুজুরের সন্তান দেওয়ার কার্যক্রম পুরোটাই ভন্ডামি। তাঁর ডিম রহস্য তাঁরা উদ্ঘাটন করেছেন। এ নিয়ে আরও তদন্ত হবে। আনন্দবাজার পত্রিকায় এ খবর বড় করে প্রকাশ পায়। মুহূর্তে খবর চলে আসে ঢাকায়। হুজুরকে মুক্ত করতে তৎপর হলেন ঢাকা থেকে দুই মন্ত্রী। ১৯৯৬ সালের আওয়ামী লীগ সরকার তখন ক্ষমতায়। শেখ নজরুল ইসলাম সাউথ ব্লকে ফোন করালেন দুই মন্ত্রীকে দিয়ে। কাজ হলো। সাইদাবাদী মুক্ত হয়ে দেশে ফিরলেন।

 

সাইদাবাদী তাঁর কলকাতাকা-কে নিয়তি বলে মনে করতেন। জগৎ সংসারে নিয়তি বলে একটা কথা আছে। মানি আর না মানি নিয়তির ওপর পীর-ফকির কারও কোনো হাত থাকে না। ক্ষমতা, যশ, খ্যাতি সবকিছু কখন কীভাবে উড়ে যাবে কেউ জানে না। বাংলাদেশের রাজনীতিতেও একটা সময় পীর- ফকিরদের একটা প্রভাব ছিল। এখন তা নেই। সামরিক ক্ষমতাবানেরা পীর-ফকিরদের কাছে বেশি যেতেন। জেনারেল আইয়ুব খান, জিয়াউর রহমান, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ধরনা দিতেন পীরের দরবারে। তাঁদের অনেক পীর ছিল।

 

এরশাদ আমলে হুজুর সাইদাবাদী ও আটরশির পীরের দরবারে ক্ষমতাবানদের ভিড় থাকত। ওরসে যোগ দিয়ে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে তাঁরা প্রার্থনা করতেন। মন্ত্রী-এমপিরা যেতেন। দুই হাত ভরে দোয়া নিতেন। এরশাদ সরকারের অনেক আধুনিক মন্ত্রীও হুজুর সাইদাবাদীর জ্যোতি টেলকম পাউডারের বিজ্ঞাপনের মডেল হয়েছিলেন। তাঁরা কেন এ পাউডারের মডেল হয়েছিলেন সে প্রশ্নের জবাব পরে দিতে পারেননি। ভোটের রাজনীতিতে পীর-ফকিরের দরকার পড়ে না।

 

গণতন্ত্রে জনগণই শক্তিশালী। ক্ষমতাবানরা ততক্ষণ ভালো থাকেন যতক্ষণ জনগণের ওপর তারা নির্ভরশীল থাকেন। জনগণ থেকে দূরে সরলে, বিশ্বাসহারা হলেই সর্বনাশ হয়ে যায়। ক্ষমতায় থাকার সময় কেউ তা বুঝতে চান না। উপলব্ধি করতে চান না দুই দিনের দুনিয়ায় এ ক্ষমতা, অর্থবিত্ত সবকিছু মূল্যহীন।

লেখক : সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।  সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» রাষ্ট্রপতির কাছে পরিচয়পত্র দিলেন বুলগেরিয়ার রাষ্ট্রদূত

» ড. ইউনূস চান সার্কের কার্যক্রম শুরু হোক: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

» দুদকের মামলায় হাইকোর্টে ওসি প্রদীপের স্ত্রীর জামিন

» থার্টিফার্স্ট নাইটে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে যা বললেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্ট

» সিরিয়ায় আসাদের পতন নিয়ে যা বললেন হাসনাত আব্দুল্লাহ

» জেনে রাখুন এই ভুলে গিজার বিস্ফোরণ হয়

» গাঁজা সেবন নিয়ে বিরোধে যুবক খুন, গ্রেফতার ২

» আটকে দেওয়া হলো বিএনপির তিন সংগঠনের পদযাত্রা

» ১৮ কোটি মানুষ দিল্লির আধিপত্য প্রতিহত করতে প্রস্তুত: রিজভী

» অবৈধভাবে অবস্থানরত বিদেশিদের বাংলাদেশে থাকতে দেওয়া হবে না: জাহাঙ্গীর আলম

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

শাহবাজ শরিফ ঢাকা থেকে উড়িয়ে নেন হুজুর সাইদাবাদীকে

নঈম নিজাম: ক্ষমতার ভিতর-বাইর কখনো মেলানো যায় না। ক্ষমতায় থাকলে সবকিছু রঙিন মনে হয়। ক্ষমতা হারালে সবকিছু পানসে। তখন উপলব্ধি করা যায় বাস্তবতা। একবার এক সাবেক মন্ত্রীকে প্রশ্ন করেছিলাম ক্ষমতার ভিতরে ছিলেন, বাইরে ছিলেন। ক্ষমতায় থাকার সময় শুভানুধ্যায়ীর অভাব হয় না। আমলা, কামলা, কর্মী, সমর্থকের ভিড় লেগে থাকে। ক্ষমতা হারানোর পরের অভিজ্ঞতা কী? জবাবে সাবেক মন্ত্রী হাসলেন। বললেন, ক্ষমতা হারানোর পর কেউ কারও নয়। দুই দিন আগে যারা স্যালুট দিত, নির্দেশের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকত তাদের চেহারা মুহূর্তে বদলে যায়। অনেকে টেলিফোনও রিসিভ করে না। কর্মী-সমর্থকদের ভালোবাসায় কৃত্রিমতা চলে আসে। ক্ষমতা হারানোর পর প্রথম প্রথম আশা তৈরি হয় আবার ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার। সে স্বপ্ন নিভে গেলে বাড়তে থাকে হতাশা। অনেকে তা মেনে নিতে পারে না। তখন হঠাৎ বয়স বেড়ে যায়। নিরাশা তৈরি হয়। ফলে কেউ যায় পীর-ফকিরের কাছে। কেউ ব্যস্ত থাকে ধর্মকর্মে। শুধু বাংলাদেশ নয়, উপমহাদেশের রাজনীতিতে একই চিত্র। ভারতে ভোটের আগে রাজনীতিবিদদের অনেকে যান সাধুসন্ন্যাসীদের কাছে। পূজার্চনা বাড়িয়ে দেন। খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বসেন ধ্যানে। পাকিস্তানের নেতারা যান পীরের দরবারে। পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ একবার ঢাকায় এসেছিলেন ভোটের আগে। সে ভোটে তাঁর ভাই নওয়াজ শরিফের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বেনজির ভুট্টো। আর বেনজিরকে হারাতে তাঁরা শরণাপন্ন হন ঢাকার সায়েদাবাদের পীর সাইদুর রহমান সাইদাবাদীর। তখন সাইদাবাদীর প্রসার বাংলাদেশেও ছিল। বাংলাদেশের অনেক ক্ষমতাবান যেতেন তাঁর দরবারে।

 

ব্যক্তিগত জীবনে নওয়াজ শরিফ ছিলেন হুজুর সাইদাবাদীর ভক্ত। সময়ের অভাবে তিনি ঢাকা আসতে পারছিলেন না। তাই সিদ্ধান্ত নিলেন হুজুর সাইদাবাদীকে পাকিস্তানে নিয়ে যাবেন। বেনজির ভুট্টোও ১৯৮৮ সালে তাঁর প্রথম ভোটে জিতেছিলেন বাংলাদেশের পীরের দোয়া নিয়ে! সে পীরের নাম মুজিবুর রহমান চিশতি। তিনি থাকতেন ঢাকার মোহাম্মদপুরে। গ্রামের বাড়ি জয়পুরহাট। জিয়াউল হক ক্ষমতায় থাকার শেষ সময় লন্ডনে মুজিবুর রহমান চিশতির সঙ্গে বেনজিরের সাক্ষাৎ হয়েছিল। বেনজিরের মাথায় ফুঁ দিয়ে দোয়া দেন চিশতি। তারপর বলেন, ‘এবার তুমি ক্ষমতায় আসবে। তোমাকে হারানো যাবে না।’ বেনজির অবাক বিস্ময় নিয়ে বলেছিলেন, ‘জিয়াউল হক প্রেসিডেন্ট থাকলে ক্ষমতা পাওয়া অসম্ভব।’ জবাবে চিশতি বললেন, ‘জিয়াউল হক চিরতরে চলে যাবে। ভয়াবহ ঘটনা ঘটবে। ভোটে জিতবে তুমি।’ তারপর বললেন, ‘ভোটে জিতে ক্ষমতায় এসে তুমি আসবে আমার কাছে। ঢাকায় নয় তোমার আমন্ত্রণ আমার গ্রামের বাড়ি জয়পুরহাটে।’ বিস্ময় নিয়ে বেনজির তাকাতে চিশতি এবার বললেন, ‘আমার কথা সত্য হলে তোমাকে আসতে হবে আমার গ্রামের বাড়ি বাংলাদেশের জয়পুরহাটে।’ অক্সফোর্ড পড়ুয়া আধুনিক ধ্যান-ধারণার বেনজির কথা দেন এমন ঘটনা ঘটলে তিনি বাংলাদেশে এসে সালাম করে যাবেন চিশতিকে। মুজিবুর রহমান চিশতির এ বয়ান ঘটে যায় বেনজিরের বাস্তব জীবনে। জিয়াউল হক নিহত হন হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায়। বেনজির ভোটে জেতেন। আর বিজয়ের পরপরই বাংলাদেশ সফরের আগ্রহের কথা জানান। তখন ক্ষমতায় হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তিনি বিস্মিত হলেন, কারণ রাষ্ট্রীয় নয়, ব্যক্তিগত সফরে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় আসতে চান। তিনি যাবেন এক অজানা পীরের দরবারে জয়পুরহাটে। জুলফিকার আলী ভুট্টোর কন্যা বেনজির প্রধানমন্ত্রী হয়ে ঢাকায় আসেন। তিনি বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারে যান জয়পুরহাটের একটি গ্রামে। বেনজিরের সফর ঘিরে সরকারি বিভাগগুলোকে অনেক খাটতে হয়েছিল। মুজিবুর রহমান চিশতির গ্রামে যাওয়ার সড়ক মাত্র ১৫ দিনে নির্মিত হয়। বানানো হয় আলাদা হেলিপ্যাড। এরশাদ অন্য দেশের প্রধানমন্ত্রীর এমন ব্যক্তিগত সফরে বিরক্ত হয়েছিলেন। তার পরও কূটনৈতিক শিষ্টাচার বজায় রাখতে সবকিছুর আয়োজন করেন।

 

নওয়াজ শরিফও জানতেন বেনজিরের এক পীর আছেন বাংলাদেশে। সে পীরের দোয়ায় বেনজির প্রথম ক্ষমতায় আসেন। ক্ষমতাহারা নওয়াজ শরিফও আবার ক্ষমতায় আসতে বাংলাদেশি পীর ধরেন। সায়েদাবাদের সাইদুর রহমান ওরফে সাইদাবাদীর দোয়া নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ১৯৯৭ সালের সে নির্বাচনের শেষ মুহূর্তের কঠিন প্রচারণার সময় নওয়াজের জন্য তখন ঢাকা আসা কঠিন ছিল। তাই তিনি হুজুরকে পাকিস্তান নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। নওয়াজ শরিফ তাঁর ছোট ভাই শাহবাজ শরিফ, যিনি এখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী তাঁকে ঢাকা পাঠান। শাহবাজ শরিফকে ঢাকায় বিমানবন্দরের ভিআইপি টার্মিনালে স্বাগত জানান শেখ নজরুল ইসলাম। তিনি ‘লাল সবুজ’ পত্রিকাটি বের করতেন। ব্যবসায়ী মানুষ। ব্যক্তিগত জীবনে আওয়ামী লীগের সমর্থক হলেও তিনি ছিলেন সাইদাবাদীর মসজিদের সভাপতি। কঠিন ভক্ত ছিলেন পীরের। মরহুম আবদুর রাজ্জাকের ¯েœহধন্য ছিলেন শেখ নজরুল। হুজুর সাইদাবাদীকে সব ঝড়ঝাপ্টা থেকে রক্ষা করতেন তিনি। শাহবাজ শরিফকে তিনি নিয়ে যান সায়েদাবাদের দরবার শরিফে। এক ঘণ্টার নোটিসে সাইদাবাদীর পাসপোর্টে পাকিস্তানের ভিসা লাগানো হয়। তারপর তাঁকে সঙ্গে নিয়ে পাকিস্তান উড়ে যান শাহবাজ শরিফ। ঢাকায় তাঁর সফর ছিল কয়েক ঘণ্টার জন্য। পরে শেখ নজরুলের কাছে জেনেছিলাম, সরাসরি নওয়াজের বাড়িতে ওঠেন সাইদাবাদী। প্রতিদিন সাইদাবাদীকে কদমবুসি করে নওয়াজ বের হতেন ভোটের প্রচারণায়। হুজুর ফুঁ দিতেন। সাইদাবাদীর দোয়া নিয়ে বের হতেন নওয়াজ। ’৯৭ সালের সে ভোটে বেনজিরকে হারালেন নওয়াজ শরিফ। জিতে প্রধানমন্ত্রী হন পাকিস্তানের। এর আগে ১৯৯০ সালের ভোটে নওয়াজ হারিয়েছিলেন বেনজিরকে।

 

পাকিস্তানের দুই নেতার বাংলাদেশি দুই পীরের নিজেদের ভাগ্যের শেষটা ভালো ছিল না। অন্যের ভবিষ্যদ্বাণী করলেও নিজেদের ভবিষ্যৎ তাঁরা জানতেন না। দুজনের পরিণতি হয়েছিল অনেক কঠিন। কী হয়েছিল তা জানানোর আগে আরেকটা কথা বলে রাখি, মুজিবুর রহমান চিশতি আর সাইদাবাদীকে একবার ডেকে নিয়েছিলেন ধানমন্ডি জাহাজবাড়ির পীর শেরে খাজা। তিনি অবশ্য নিজেকে পীর বলতে নারাজ ছিলেন। তিনি নিজেকে বলতেন আধ্যাত্মিক সাধক। মানুষকে ঠকাবেন না সাইদাবাদী ও চিশতি এমন অঙ্গীকার করিয়ে তার ভিডিও করে রাখেন শেরে খাজা। সেই তওবা পড়ানোর সাক্ষী ছিলেন দুজন সাংবাদিক। শেরে খাজা ছিলেন ভারত সমর্থক সাধক। সে সময় আলোচিত তিনজনের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কানেকশন ছিল। এবার চিশতি আর সাইদাবাদীর দুই পরিণতির কথা বলছি।

 

মুজিবুর রহমান চিশতির নিষ্ঠুর মৃত্যু হয়েছিল। তিনি খুনের শিকার হন। তাকে ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাড়িতে খুন করে চলে যায় ভিন্নমতাবলম্বীরা। নিজেকে রক্ষা করতে পারেননি চিশতি। অন্যদিকে হুজুর সাইদাবাদী পাকিস্তান থেকে ফিরে কলকাতায় গিয়ে বিপাকে পড়েন। তিনি মনে করতেন তাঁকে কলকাতায় বিপদে ফেলেন শেরে খাজা। কারণ ভারতের সঙ্গে শেরে খাজার সম্পর্ক ছিল গভীর।

 

সাইদাবাদী সন্তান না হওয়া নারীদের চিকিৎসা করানোর বিজ্ঞাপন দিতেন পত্রিকায়। সন্তান না হওয়া নারীরা তাঁর দরবারে ভিড়ও করতেন। সন্তান হওয়ার পর বিজ্ঞাপন দিত সাপ্তাহিক চিত্রবাংলা ও দৈনিক খবরে। আজমির যাওয়ার পথে কলকাতায় অবস্থান নেন সাইদাবাদী। আনন্দবাজার পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেন সন্তান না হওয়া নারীদের চিকিৎসা দেওয়ার। কলকাতার নিউমার্কেট এলাকার কাছাকাছি স্থানে কয়েক দিনের দরবার বসান অস্থায়ীভাবে। নারী-পুরুষের ভিড় বাড়তে থাকে। কলকাতার গোয়েন্দা পুলিশের ডিসি ছিলেন তখন নজরুল ইসলাম নামে এক কর্মকর্তা। তিনি খুব দাপুটে ছিলেন।

 

হুজুর সাইদাবাদীর প্রতি ছিল তাঁর কঠোর নজরদারি। সন্তানপ্রত্যাশী নারীদের ডিম পড়া দিতেন হুজুর। নারীরা কাঁচা ডিম নিয়ে যেত। হুজুর হাতে নিয়ে সে ডিমে ফুঁ দিলে তা সেদ্ধ হয়ে যেত। একজন নারী গোয়েন্দাকে বিশেষ কেমিক্যাল মেশানো ডিম দিয়ে হুজুরের কাছে পাঠান ডিসি নজরুল। এ ডিমে কলকাতা পুলিশের বিশেষ চিহ্ন ছিল। যা সাদা চোখে ধরা পড়বে না। নারী কর্মকর্তা হুজুরের সামনে গেলেন। জানালেন তাঁর সন্তান হয় না। তিনি হুজুরের দোয়া চান। সঙ্গে নিয়ে যাওয়া ডিম হুজুরের হাতে দেন। হুজুর ডিমে ফুঁ দেওয়ার সময় কৌশলে তা রেখে দেন। পাশে থাকা সেদ্ধ ডিম নারী কর্মকর্তার হাতে দেন। এ কৌশল সাধারণ মানুষ ধরতে পারত না। নারী পুলিশ চ্যালেঞ্জ করে বসেন হুজুরকে। কাছে থাকা গোয়েন্দা পুলিশ ছুটে আসে। তাঁরা হুজুর সাইদাবাদীকে আটক করলেন। টানা জিজ্ঞাসাবাদ চলল। সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ কর্মকর্তা নজরুল বললেন, সাইদাবাদী হুজুরের সন্তান দেওয়ার কার্যক্রম পুরোটাই ভন্ডামি। তাঁর ডিম রহস্য তাঁরা উদ্ঘাটন করেছেন। এ নিয়ে আরও তদন্ত হবে। আনন্দবাজার পত্রিকায় এ খবর বড় করে প্রকাশ পায়। মুহূর্তে খবর চলে আসে ঢাকায়। হুজুরকে মুক্ত করতে তৎপর হলেন ঢাকা থেকে দুই মন্ত্রী। ১৯৯৬ সালের আওয়ামী লীগ সরকার তখন ক্ষমতায়। শেখ নজরুল ইসলাম সাউথ ব্লকে ফোন করালেন দুই মন্ত্রীকে দিয়ে। কাজ হলো। সাইদাবাদী মুক্ত হয়ে দেশে ফিরলেন।

 

সাইদাবাদী তাঁর কলকাতাকা-কে নিয়তি বলে মনে করতেন। জগৎ সংসারে নিয়তি বলে একটা কথা আছে। মানি আর না মানি নিয়তির ওপর পীর-ফকির কারও কোনো হাত থাকে না। ক্ষমতা, যশ, খ্যাতি সবকিছু কখন কীভাবে উড়ে যাবে কেউ জানে না। বাংলাদেশের রাজনীতিতেও একটা সময় পীর- ফকিরদের একটা প্রভাব ছিল। এখন তা নেই। সামরিক ক্ষমতাবানেরা পীর-ফকিরদের কাছে বেশি যেতেন। জেনারেল আইয়ুব খান, জিয়াউর রহমান, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ধরনা দিতেন পীরের দরবারে। তাঁদের অনেক পীর ছিল।

 

এরশাদ আমলে হুজুর সাইদাবাদী ও আটরশির পীরের দরবারে ক্ষমতাবানদের ভিড় থাকত। ওরসে যোগ দিয়ে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে তাঁরা প্রার্থনা করতেন। মন্ত্রী-এমপিরা যেতেন। দুই হাত ভরে দোয়া নিতেন। এরশাদ সরকারের অনেক আধুনিক মন্ত্রীও হুজুর সাইদাবাদীর জ্যোতি টেলকম পাউডারের বিজ্ঞাপনের মডেল হয়েছিলেন। তাঁরা কেন এ পাউডারের মডেল হয়েছিলেন সে প্রশ্নের জবাব পরে দিতে পারেননি। ভোটের রাজনীতিতে পীর-ফকিরের দরকার পড়ে না।

 

গণতন্ত্রে জনগণই শক্তিশালী। ক্ষমতাবানরা ততক্ষণ ভালো থাকেন যতক্ষণ জনগণের ওপর তারা নির্ভরশীল থাকেন। জনগণ থেকে দূরে সরলে, বিশ্বাসহারা হলেই সর্বনাশ হয়ে যায়। ক্ষমতায় থাকার সময় কেউ তা বুঝতে চান না। উপলব্ধি করতে চান না দুই দিনের দুনিয়ায় এ ক্ষমতা, অর্থবিত্ত সবকিছু মূল্যহীন।

লেখক : সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।  সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com