লিবিয়ায় মাফিয়াদের বন্দীদশা থেকে ছেলেকে উদ্ধার করলেন মা

মাফিয়া চক্রের হাতে বন্দি থাকা ছেলেকে উদ্ধার করে দেশে ফিরেছেন লিবিয়া প্রবাসী আবুল খায়েরের স্ত্রী শাহীনুর বেগম (৪৫)। ঘটনাটি ঘটে কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার উপজেলার কালিকাপুর গ্রামে।

 

সোমবার সরেজমিন শাহিনুরের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘদিন পর মা-ছেলেকে দেখতে ভিড় জমিয়েছেন এলাকাবাসী।

 

শাহিনুর বেগম ও তার পুত্র ইয়াকুব হোসাইন’র সাথে কথা বলে জানা যায় তাদের দুঃসাহসী অভিযানের কাহিনী।

 

পরিবারে সচ্ছলতা আনতে ২০১৯ সালে লিবিয়ায় পাড়ি জমান কুমিল্লার দেবীদ্বারে ইয়াকুব হাসান। সেখানে উচ্চ আয়ের আশায় হবিগঞ্জের এক দালালের খপ্পরে পড়ে অবৈধভাবে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার চেষ্টা করেন ইয়াকুব। কিন্তু ইতালি যাওয়ার পথে ল্যাম্ব দোসা দ্বীপে মাফিয়াদের হাতে আটক হন ইয়াকুবসহ অন্তত ১৫০ বংলাদেশি।

 

দীর্ঘ ছয় মাস ছেলের খোঁজ না পেয়ে পাগলপ্রায় হয়ে পড়েন মা শাহীনুর বেগম (৪৫)। ছেলেকে ফিরে পেতে পুনরায় দালাল চক্রের মাধ্যমে চার দফায় প্রায় ২০ লাখ টাকা দেন মাফিয়াদের।

 

এরপরও ছেলেকে ফিরে না পেয়ে লিবিয়া প্রবাসী স্বামীর সহযোগিতায় পাসপোর্ট ও ভিসা করে ছেলেকে উদ্ধার করতে লিবিয়া যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন শাহীনুর।

 

গত ৯ জানুয়ারি লিবিয়ার উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়েন শাহীনুর বেগম। অবশেষে নানা নাটকীয়তা শেষে ২১ মার্চ মা শাহীনুর ছেলেকে নিয়ে নিজ বাড়িতে ফেরেন।

 

এ বিষয়ে শাহীনুর বেগম বলেন, লিবিয়ায় গিয়ে স্বামীর সঙ্গে ব্যাঙ্গাজি শহরে অবস্থান করি। পরে পর্যায়ক্রমে প্রথমে বাংলা ভাষা জানেন এমন কয়েকজনকে খুঁজে বের করে তাদের কাছে সব খুলে বলি। তারা আমাকে বাংলাদেশ দূতাবাস এবং জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন। দূতাবাস ও আইওএমের কর্মকর্তারা সব শুনে আমাকে সাহায্য করেন। জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) কর্মকর্তারা লিবিয়া সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে ইয়াকুবকে উদ্ধার করেন। গত ২১ মার্চ ছেলেকে নিয়ে কুমিল্লায় নিজ বাড়িতে ফেরেন।

 

ইয়াকুব জানায়, সেখানে আমাদের খুব অত্যাচার করা হতো। খাওয়ার জন্য একটা রুটি আর পানি দিতো। আমাদের দেখাশোনার দায়িত্বে ছিলেন সাতজন বাংলাদেশি। তাদের একজনের নাম সুজন। বাকিদের নাম মনে নেই। তারাও মাফিয়াদের হাতে অনেক আগে ধরা পড়েন। তবে তারা মাফিয়াদের কিছুটা বিশ্বস্ত। এই সাতজন আমাদের নিয়মিত পেটাতেন। কোনো কথা ছাড়াই হাতের কাছে যা পেতেন তাই দিয়ে পেটাতেন। তাদের কোনো মায়া-দয়া ছিলো না। তারাই আমাদের সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিয়েছেন।

 

ছেলে উদ্ধারে মায়ের এমন সাহসী ভূমিকা কুমিল্লাজুড়ে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে।

এ খবরে উপজেলার জাফরগঞ্জ ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামের বাড়িতে মা-ছেলেকে দেখতে ভিড় করছেন সাধারণ মানুষ।

সূূএ:বাংলাদেশ জার্নালডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» বিএনপি নেতাদের সতর্ক থাকার আহ্বান রিজভীর

» বাংলাদেশ ভ্রমণে কানাডার সতর্কতা জারি

» জনগণের ৭০ ভাগ পিআরের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে: মতিউর রহমান আকন্দ

» বদরুদ্দীন উমর ছিলেন বহু রাজনীতিবীদের শিক্ষক: মির্জা ফখরুল

» বিএনপি সেই গণতন্ত্রের কথা বলে, যে গণতন্ত্রে মানুষ ভোটের অধিকার নিশ্চিত করে  : ড. মঈন খান

» সুন্দরবনের উপকূলের বাগেরহাটে শাপলা বিক্রি করেই চলছে দিনমজুর হানিফের সংসার, সরকারী সহায়তা বঞ্চিত!

» লালমনিরহাটে শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে প্রস্তুত ৪ শত ৬৮ টি পূজা মন্ডব

» আগৈলঝাড়ার সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রিয় মুখ ললিতা সরকার শিক্ষা ও নৃত্যকলায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত

» ঢাকা থেকে জামালপুরের আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতা গ্রেফতার

» গানের শিক্ষক নিয়োগ বাতিল না করলে সরকারকে বাধ্য করার হুমকি ওলামা পরিষদের

  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

লিবিয়ায় মাফিয়াদের বন্দীদশা থেকে ছেলেকে উদ্ধার করলেন মা

মাফিয়া চক্রের হাতে বন্দি থাকা ছেলেকে উদ্ধার করে দেশে ফিরেছেন লিবিয়া প্রবাসী আবুল খায়েরের স্ত্রী শাহীনুর বেগম (৪৫)। ঘটনাটি ঘটে কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার উপজেলার কালিকাপুর গ্রামে।

 

সোমবার সরেজমিন শাহিনুরের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘদিন পর মা-ছেলেকে দেখতে ভিড় জমিয়েছেন এলাকাবাসী।

 

শাহিনুর বেগম ও তার পুত্র ইয়াকুব হোসাইন’র সাথে কথা বলে জানা যায় তাদের দুঃসাহসী অভিযানের কাহিনী।

 

পরিবারে সচ্ছলতা আনতে ২০১৯ সালে লিবিয়ায় পাড়ি জমান কুমিল্লার দেবীদ্বারে ইয়াকুব হাসান। সেখানে উচ্চ আয়ের আশায় হবিগঞ্জের এক দালালের খপ্পরে পড়ে অবৈধভাবে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার চেষ্টা করেন ইয়াকুব। কিন্তু ইতালি যাওয়ার পথে ল্যাম্ব দোসা দ্বীপে মাফিয়াদের হাতে আটক হন ইয়াকুবসহ অন্তত ১৫০ বংলাদেশি।

 

দীর্ঘ ছয় মাস ছেলের খোঁজ না পেয়ে পাগলপ্রায় হয়ে পড়েন মা শাহীনুর বেগম (৪৫)। ছেলেকে ফিরে পেতে পুনরায় দালাল চক্রের মাধ্যমে চার দফায় প্রায় ২০ লাখ টাকা দেন মাফিয়াদের।

 

এরপরও ছেলেকে ফিরে না পেয়ে লিবিয়া প্রবাসী স্বামীর সহযোগিতায় পাসপোর্ট ও ভিসা করে ছেলেকে উদ্ধার করতে লিবিয়া যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন শাহীনুর।

 

গত ৯ জানুয়ারি লিবিয়ার উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়েন শাহীনুর বেগম। অবশেষে নানা নাটকীয়তা শেষে ২১ মার্চ মা শাহীনুর ছেলেকে নিয়ে নিজ বাড়িতে ফেরেন।

 

এ বিষয়ে শাহীনুর বেগম বলেন, লিবিয়ায় গিয়ে স্বামীর সঙ্গে ব্যাঙ্গাজি শহরে অবস্থান করি। পরে পর্যায়ক্রমে প্রথমে বাংলা ভাষা জানেন এমন কয়েকজনকে খুঁজে বের করে তাদের কাছে সব খুলে বলি। তারা আমাকে বাংলাদেশ দূতাবাস এবং জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন। দূতাবাস ও আইওএমের কর্মকর্তারা সব শুনে আমাকে সাহায্য করেন। জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) কর্মকর্তারা লিবিয়া সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে ইয়াকুবকে উদ্ধার করেন। গত ২১ মার্চ ছেলেকে নিয়ে কুমিল্লায় নিজ বাড়িতে ফেরেন।

 

ইয়াকুব জানায়, সেখানে আমাদের খুব অত্যাচার করা হতো। খাওয়ার জন্য একটা রুটি আর পানি দিতো। আমাদের দেখাশোনার দায়িত্বে ছিলেন সাতজন বাংলাদেশি। তাদের একজনের নাম সুজন। বাকিদের নাম মনে নেই। তারাও মাফিয়াদের হাতে অনেক আগে ধরা পড়েন। তবে তারা মাফিয়াদের কিছুটা বিশ্বস্ত। এই সাতজন আমাদের নিয়মিত পেটাতেন। কোনো কথা ছাড়াই হাতের কাছে যা পেতেন তাই দিয়ে পেটাতেন। তাদের কোনো মায়া-দয়া ছিলো না। তারাই আমাদের সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিয়েছেন।

 

ছেলে উদ্ধারে মায়ের এমন সাহসী ভূমিকা কুমিল্লাজুড়ে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে।

এ খবরে উপজেলার জাফরগঞ্জ ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামের বাড়িতে মা-ছেলেকে দেখতে ভিড় করছেন সাধারণ মানুষ।

সূূএ:বাংলাদেশ জার্নালডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Design & Developed BY ThemesBazar.Com