লাগামহীন সংক্রমণ পাত্তা দিচ্ছে না কেউ

লাগামহীন বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। এক সপ্তাহের ব্যবধানে নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হারই বেড়েছে ১১৯ শতাংশ। দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ২২৪ শতাংশের বেশি। নমুনা পরীক্ষা করাতে বুথগুলোতে বেড়েছে ভিড়। হাসপাতালে ভর্তি করোনা রোগীর সংখ্যা সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ৭১.৮১ শতাংশ। অথচ, বাড়ছে না শুধু সচেতনতা। করোনার লাগামহীন ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণকে পাত্তাই দিচ্ছেন না কেই। সরকারঘোষিত ১১ দফা বিধিনিষেধ যেন শুধু কাগজেই আছে, বাস্তবে নেই। এমনকি টিকাদান কেন্দ্রগুলোও যেন পরিণত হয়েছে করোনা সংক্রমণের হটস্পটে।

 

গতকাল দুপুর ১২টার দিকে মিরপুরের মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজে গিয়ে মনেই হয়নি দেশে কোনো মহামারি আছে। তখন চলছিল শিক্ষার্থীদের টিকাদান। টিকা নিতে স্কুলের বাইরে সড়কে গায়ে গা লাগিয়ে দাঁড়িয়ে শত শত শিক্ষার্থী। সেই সঙ্গে জড়ো হন শয়ে শয়ে অভিভাবক। পুরো এলাকা যেন সমাবেশস্থলে পরিণত হয়। কারও মুখে মাস্ক আছে, কারও আবার নেই। দলবদ্ধ হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলছিল অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের খোসগল্প। একটু দূরে একা দাঁড়িয়ে ছিলেন জাহানারা নামের এক অভিভাবক। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এখানেই তো আজ অনেকের করোনা হয়ে যাবে। দূরে দাঁড়িয়ে আছি, তারপরও কয়েক ভাবি গল্প করতে এসেছিলেন। একজন তো নাকি কখনই মাস্ক পরেন না। বাচ্চারা যেভাবে গাদাগাদি করে লাইনে দাঁড়িয়ে আছে, তাতেই তো ভয় হচ্ছে।’ কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা উচ্চবিদ্যালয়ে গিয়েও পাওয়া যায় একই চিত্র। শিক্ষার্থীদের টিকার সারিতে ছিল না কোনো ফাঁকা জায়গা। হাঁটার জায়গা পর্যন্ত ছিল না। অনেকেরই মাস্ক ছিল না। ভিড়ের ছবি তুলতে গেলে সবাই মাস্ক খুলে চিৎকার দিয়ে জয়সূচক চিহ্ন দেখায়, যেন কোনো উৎসব চলছে! এদিকে বিধিনিষেধ কার্যকরের প্রথম দিন গত ১৩ জানুয়ারি দেশে ২৪ ঘণ্টায় ৩ হাজার ৩৫৯ জন রোগী শনাক্তের খবর দেওয়া হয়। শনাক্তের হার ছিল ১২.০৩ শতাংশ। হাসপাতালে ১ হাজার ২৭০ জন করোনা রোগী ভর্তি ছিল। সপ্তাহের ব্যবধানে গতকাল ১০ হাজার ৮৮৮ জন রোগী শনাক্তের খবর দেওয়া হয় ২৪ ঘণ্টায়। শনাক্তের হার ছিল ২৬.৩৭ শতাংশ। হাসপাতালে ভর্তি করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৮২ জনে। করোনা ঠেকাতে এক সপ্তাহ ধরে সরকারের ১১ দফা বিধিনিষেধ জারি থাকলেও গতকাল রাজধানীর অলিগলি, হোটেল-রেস্তোরাঁ,  সেলুন, বাজার- কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানার নজির দেখা যায়নি।  দেদার মাস্কছাড়া ঘুরতে দেখা গেছে নগরবাসীকে। উল্টো বিধিনিষেধের প্রথম দিনের তুলনায় গতকাল মাস্কের ব্যবহার ছিল আরও কম। সরকারের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, অফিস-আদালত, দোকান, শপিং মল, বাজার, হোটেল-রেস্তোরাঁসহ সব জনসমাগমস্থলে মাস্ক না পরলে শাস্তির মুখে পড়তে হবে। রেস্তোরাঁয় খাদ্য গ্রহণে দেখাতে হবে টিকা সনদ। নির্দেশনা বাস্তবায়নে পরিচালনা করা হবে মোবাইল কোর্ট। এ ছাড়া গণপরিবহনে প্রথমে অর্ধেক আসনে যাত্রী নেওয়ার কথা বলা হলেও পরে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার শর্তে সব আসনে যাত্রী নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে যাত্রী নেওয়া নিষিদ্ধ। তবে গতকাল অধিকাংশ গণপরিবহনে দাঁড়িয়ে যাত্রী নিতে দেখা গেছে। রাজধানীর শাহজাদপুর থেকে ভিক্টর পরিবহনের একটি গাড়িতে পল্টন পর্যন্ত যাওয়ার সময় দেখা যায়, বাসের মধ্যে সব সময়ই ৪-৬ জন যাত্রী দাঁড়িয়ে ছিলেন। চালক-হেলপার কারও মুখে মাস্ক ছিল না। ৮-১০ জন যাত্রী সবসময়ই মাস্কহীন ছিলেন বাসের মধ্যে। শাহজাদপুর থেকে পল্টন পর্যন্ত প্রশাসনের কাউকেই বাসটির গতিরোধ করে স্বাস্থ্যবিধির কথা জিজ্ঞাসা করতে দেখা যায়নি। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে দেশের বিভিন্ন স্থানে মোবাইল কোর্টের অভিযান চললেও তা বড় কোনো প্রভাব ফেলতে পারছে না। এদিকে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র খোদ সচিবালয়েই দেখা যায়নি স্বাস্থ্যবিধি। সচিবালয় ঘুরে আমাদের সিনিয়র রিপোর্টার জানান, দর্শনার্থীরা প্রবেশের সময় মুখে মাস্ক রাখলেও ভিতরে ঢুকেই খুলে ফেলছেন। সচিবালয়ের মধ্যে ক্যান্টিনগুলোতে গাড়িচালক, দর্শনার্থী ও কর্মচারীদের মাস্ক খুলে দীর্ঘ সময় গল্প করতে দেখা গেছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়েও মাস্কের ব্যবহার খুব একটা দেখা যায়নি। লিফটের মধ্যেও অনেককে মাস্ক ছাড়া চলাচল করতে দেখা গেছে। এদিকে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে মাস্ক না পরার কারণ সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া গেছে। অনেকের মধ্যেই সংক্রমণ নিয়ে ভীতি চলে গেছে। কেউ কেউ আবার মনে করছেন, ওমিক্রনে আক্রান্ত হলে মৃত্যুঝুঁকি কম, উল্টো অ্যান্টিবডি তৈরি হবে। তবে এমন ধারণাকে ভয়ঙ্কর মন্তব্য করে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. মুশতাক  হোসেন লাদেশ , ওমিক্রন সংক্রমণ বাড়লে ইউরোপের জন্য তেমন সমস্যা হবে না। তারা বড় সংখ্যক মানুষকে টিকা দিয়েছে। আবার অনেকেই আক্রান্ত হয়ে গেছে। এ দুটোর কোনোটাই আমাদের এখানে হয়নি। তাই এখানে ওমিক্রন কতটা বিপদ বয়ে আনবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।

 

মূলত করোনার কারণে মানুষ আর্থিকভাবে যে ক্ষতির শিকার হয়েছে, তা এখনো পুষিয়ে নিতে পারেনি। তাই ডেল্টা সংক্রমণ বাড়লেও অনেকে গুরুত্ব দিত না। এখানে জীবিকার প্রশ্ন জড়িত। শুধু পুলিশ দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে সামাজিকভাবে করতে হবে। কারণ প্রতিবেশী সুরক্ষিত না থাকলে আপনিও থাকবেন না। আপনি সুস্থ হয়ে উঠলেও বাড়ির প্রবীণ বা ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিটি সুস্থ নাও হতে পারেন।

 

এক দিনেই শনাক্ত ১০৮৮৮ জনমৃত্যু চার : ৫ মাসেরও বেশি সময় পর দেশে আবারও এক দিনে ১০ হাজারের বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। সেই সঙ্গে সাড়ে ৫ মাস পর প্রতি ১০০টি নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে ফের ২৬ জনের বেশি মানুষের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। গত এক দিনে করোনায় মৃত্যু হয়েছে চার জনের। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৪১ হাজার ২৯২ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১০ হাজার ৮৮৮ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ২৬.৩৭ শতাংশ। সবশেষ এক দিনে ১০ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছিল গত ১২ আগস্ট। তবে সেই দিন শনাক্ত হয়েছিল ১০ হাজার ১২৬ জন। এ ছাড়া সবশেষ ২৬ শতাংশের বেশি শনাক্ত হারের খবর দেওয়া হয় গত ৬ আগস্ট।

 

গত এক দিনে করোনায় মৃত্যু হয়েছে চারজনের। গতকাল পর্যন্ত দেশে মোট ১৬ লাখ ৫৩ হাজার ১৮২ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ২৮ হাজার ১৮০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৮৪৫ জন। মৃতদের ৫৫ শতাংশের বেশিই ছিলেন ষাটোর্ধ্ব।

সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» এক্স থেকে আয়ের সুযোগ

» এশিয়ার সর্ববৃহৎ দল দাবি করা আ.লীগ আজ অস্তিত্বহীন : মাসুদ

» দেশকে এগিয়ে নিতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান রাষ্ট্রপতির

» প্রতিমা বিসর্জন আজ

» সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমেই জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে : ইশরাক

» হজযাত্রীদের প্রাথমিক নিবন্ধন ২৩ অক্টোবরের মধ্যেই শেষ করতে হবে

» জার্মানিতে উৎসবমুখর শারদীয় দুর্গোৎসব

» কাজল-রানির পূজায় বলিউড তারকারা

» ডাকাতির ঘটনায় ৬ জন গ্রেফতার

» ট্রাকচাপায় দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

লাগামহীন সংক্রমণ পাত্তা দিচ্ছে না কেউ

লাগামহীন বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। এক সপ্তাহের ব্যবধানে নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হারই বেড়েছে ১১৯ শতাংশ। দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ২২৪ শতাংশের বেশি। নমুনা পরীক্ষা করাতে বুথগুলোতে বেড়েছে ভিড়। হাসপাতালে ভর্তি করোনা রোগীর সংখ্যা সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ৭১.৮১ শতাংশ। অথচ, বাড়ছে না শুধু সচেতনতা। করোনার লাগামহীন ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণকে পাত্তাই দিচ্ছেন না কেই। সরকারঘোষিত ১১ দফা বিধিনিষেধ যেন শুধু কাগজেই আছে, বাস্তবে নেই। এমনকি টিকাদান কেন্দ্রগুলোও যেন পরিণত হয়েছে করোনা সংক্রমণের হটস্পটে।

 

গতকাল দুপুর ১২টার দিকে মিরপুরের মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজে গিয়ে মনেই হয়নি দেশে কোনো মহামারি আছে। তখন চলছিল শিক্ষার্থীদের টিকাদান। টিকা নিতে স্কুলের বাইরে সড়কে গায়ে গা লাগিয়ে দাঁড়িয়ে শত শত শিক্ষার্থী। সেই সঙ্গে জড়ো হন শয়ে শয়ে অভিভাবক। পুরো এলাকা যেন সমাবেশস্থলে পরিণত হয়। কারও মুখে মাস্ক আছে, কারও আবার নেই। দলবদ্ধ হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলছিল অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের খোসগল্প। একটু দূরে একা দাঁড়িয়ে ছিলেন জাহানারা নামের এক অভিভাবক। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এখানেই তো আজ অনেকের করোনা হয়ে যাবে। দূরে দাঁড়িয়ে আছি, তারপরও কয়েক ভাবি গল্প করতে এসেছিলেন। একজন তো নাকি কখনই মাস্ক পরেন না। বাচ্চারা যেভাবে গাদাগাদি করে লাইনে দাঁড়িয়ে আছে, তাতেই তো ভয় হচ্ছে।’ কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা উচ্চবিদ্যালয়ে গিয়েও পাওয়া যায় একই চিত্র। শিক্ষার্থীদের টিকার সারিতে ছিল না কোনো ফাঁকা জায়গা। হাঁটার জায়গা পর্যন্ত ছিল না। অনেকেরই মাস্ক ছিল না। ভিড়ের ছবি তুলতে গেলে সবাই মাস্ক খুলে চিৎকার দিয়ে জয়সূচক চিহ্ন দেখায়, যেন কোনো উৎসব চলছে! এদিকে বিধিনিষেধ কার্যকরের প্রথম দিন গত ১৩ জানুয়ারি দেশে ২৪ ঘণ্টায় ৩ হাজার ৩৫৯ জন রোগী শনাক্তের খবর দেওয়া হয়। শনাক্তের হার ছিল ১২.০৩ শতাংশ। হাসপাতালে ১ হাজার ২৭০ জন করোনা রোগী ভর্তি ছিল। সপ্তাহের ব্যবধানে গতকাল ১০ হাজার ৮৮৮ জন রোগী শনাক্তের খবর দেওয়া হয় ২৪ ঘণ্টায়। শনাক্তের হার ছিল ২৬.৩৭ শতাংশ। হাসপাতালে ভর্তি করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৮২ জনে। করোনা ঠেকাতে এক সপ্তাহ ধরে সরকারের ১১ দফা বিধিনিষেধ জারি থাকলেও গতকাল রাজধানীর অলিগলি, হোটেল-রেস্তোরাঁ,  সেলুন, বাজার- কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানার নজির দেখা যায়নি।  দেদার মাস্কছাড়া ঘুরতে দেখা গেছে নগরবাসীকে। উল্টো বিধিনিষেধের প্রথম দিনের তুলনায় গতকাল মাস্কের ব্যবহার ছিল আরও কম। সরকারের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, অফিস-আদালত, দোকান, শপিং মল, বাজার, হোটেল-রেস্তোরাঁসহ সব জনসমাগমস্থলে মাস্ক না পরলে শাস্তির মুখে পড়তে হবে। রেস্তোরাঁয় খাদ্য গ্রহণে দেখাতে হবে টিকা সনদ। নির্দেশনা বাস্তবায়নে পরিচালনা করা হবে মোবাইল কোর্ট। এ ছাড়া গণপরিবহনে প্রথমে অর্ধেক আসনে যাত্রী নেওয়ার কথা বলা হলেও পরে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার শর্তে সব আসনে যাত্রী নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে যাত্রী নেওয়া নিষিদ্ধ। তবে গতকাল অধিকাংশ গণপরিবহনে দাঁড়িয়ে যাত্রী নিতে দেখা গেছে। রাজধানীর শাহজাদপুর থেকে ভিক্টর পরিবহনের একটি গাড়িতে পল্টন পর্যন্ত যাওয়ার সময় দেখা যায়, বাসের মধ্যে সব সময়ই ৪-৬ জন যাত্রী দাঁড়িয়ে ছিলেন। চালক-হেলপার কারও মুখে মাস্ক ছিল না। ৮-১০ জন যাত্রী সবসময়ই মাস্কহীন ছিলেন বাসের মধ্যে। শাহজাদপুর থেকে পল্টন পর্যন্ত প্রশাসনের কাউকেই বাসটির গতিরোধ করে স্বাস্থ্যবিধির কথা জিজ্ঞাসা করতে দেখা যায়নি। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে দেশের বিভিন্ন স্থানে মোবাইল কোর্টের অভিযান চললেও তা বড় কোনো প্রভাব ফেলতে পারছে না। এদিকে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র খোদ সচিবালয়েই দেখা যায়নি স্বাস্থ্যবিধি। সচিবালয় ঘুরে আমাদের সিনিয়র রিপোর্টার জানান, দর্শনার্থীরা প্রবেশের সময় মুখে মাস্ক রাখলেও ভিতরে ঢুকেই খুলে ফেলছেন। সচিবালয়ের মধ্যে ক্যান্টিনগুলোতে গাড়িচালক, দর্শনার্থী ও কর্মচারীদের মাস্ক খুলে দীর্ঘ সময় গল্প করতে দেখা গেছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়েও মাস্কের ব্যবহার খুব একটা দেখা যায়নি। লিফটের মধ্যেও অনেককে মাস্ক ছাড়া চলাচল করতে দেখা গেছে। এদিকে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে মাস্ক না পরার কারণ সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া গেছে। অনেকের মধ্যেই সংক্রমণ নিয়ে ভীতি চলে গেছে। কেউ কেউ আবার মনে করছেন, ওমিক্রনে আক্রান্ত হলে মৃত্যুঝুঁকি কম, উল্টো অ্যান্টিবডি তৈরি হবে। তবে এমন ধারণাকে ভয়ঙ্কর মন্তব্য করে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. মুশতাক  হোসেন লাদেশ , ওমিক্রন সংক্রমণ বাড়লে ইউরোপের জন্য তেমন সমস্যা হবে না। তারা বড় সংখ্যক মানুষকে টিকা দিয়েছে। আবার অনেকেই আক্রান্ত হয়ে গেছে। এ দুটোর কোনোটাই আমাদের এখানে হয়নি। তাই এখানে ওমিক্রন কতটা বিপদ বয়ে আনবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।

 

মূলত করোনার কারণে মানুষ আর্থিকভাবে যে ক্ষতির শিকার হয়েছে, তা এখনো পুষিয়ে নিতে পারেনি। তাই ডেল্টা সংক্রমণ বাড়লেও অনেকে গুরুত্ব দিত না। এখানে জীবিকার প্রশ্ন জড়িত। শুধু পুলিশ দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে সামাজিকভাবে করতে হবে। কারণ প্রতিবেশী সুরক্ষিত না থাকলে আপনিও থাকবেন না। আপনি সুস্থ হয়ে উঠলেও বাড়ির প্রবীণ বা ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিটি সুস্থ নাও হতে পারেন।

 

এক দিনেই শনাক্ত ১০৮৮৮ জনমৃত্যু চার : ৫ মাসেরও বেশি সময় পর দেশে আবারও এক দিনে ১০ হাজারের বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। সেই সঙ্গে সাড়ে ৫ মাস পর প্রতি ১০০টি নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে ফের ২৬ জনের বেশি মানুষের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। গত এক দিনে করোনায় মৃত্যু হয়েছে চার জনের। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৪১ হাজার ২৯২ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১০ হাজার ৮৮৮ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ২৬.৩৭ শতাংশ। সবশেষ এক দিনে ১০ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছিল গত ১২ আগস্ট। তবে সেই দিন শনাক্ত হয়েছিল ১০ হাজার ১২৬ জন। এ ছাড়া সবশেষ ২৬ শতাংশের বেশি শনাক্ত হারের খবর দেওয়া হয় গত ৬ আগস্ট।

 

গত এক দিনে করোনায় মৃত্যু হয়েছে চারজনের। গতকাল পর্যন্ত দেশে মোট ১৬ লাখ ৫৩ হাজার ১৮২ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ২৮ হাজার ১৮০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৮৪৫ জন। মৃতদের ৫৫ শতাংশের বেশিই ছিলেন ষাটোর্ধ্ব।

সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com