রোজা রাখতে অপারগ নারীর সওয়াব কেমন?

বিশেষ কিছু শারীরিক সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে হয় নারীদের। তাই বরকতের মাসে যখন তারা এই অপারগতার সম্মুখীন হন, এক ধরণের চাপা কষ্ট অনুভব করেন। মনকষ্ট আসাটা স্বাভাবিক। একবার হজ করতে গিয়ে একই রকম মনোবেদনায় কান্না করেছিলেন উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা (রা.)। সহিহ বুখারিতে বর্ণিত হয়েছে—

 

রাসুলুল্লাহ (স.) একবার হজে যাবার সময় মক্কার কাছাকাছি অবস্থিত সারিফ নামক জায়গায় থামলেন। এসময় তিনি দেখলেন, হজরত আয়েশা (রা.) কাঁদছেন। জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী হয়েছে’? আয়েশা (রা.) জবাব দিলেন, ‘আমি যদি এবছর হজ না করতাম!’ সঙ্গে-সঙ্গেই রাসুলুল্লাহ (স.) বুঝে গেলেন। তাই জিজ্ঞেস করলেন, ‘সম্ভবত তোমার হায়েজ শুরু হয়েছে।’ আয়েশা (রা.) জবাব দিলেন, ‘হ্যাঁ’। রাসুলুল্লাহ (স.) তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, ‘এই ব্যাপারটি আল্লাহ তাআলা সকল আদম কন্যার জন্য নির্ধারিত করেছেন’। সান্ত্বনা দেওয়ার পর তিনি এই অবস্থায় করণীয় কী, তা শিখিয়ে দিলেন। তিনি বললেন, ‘হাজীরা যা করে, তুমিও তাই করবে। তবে পবিত্র হওয়ার আগ পর্যন্ত কাবার চারদিকে তাওয়াফ করবে না।’ (বুখারি ও মুসলিম)

 

হজের বরকতময় সময়ে তাওয়াফ করতে না পারায় মা আয়েশা (রা.) অনেক কষ্ট পেয়েছিলেন, একইভাবে রমজানের মতো বরকময় মাসেও নারীরা চাপা কষ্ট বেদনা অনুভব করেন। কিন্তু এতে হতাশ হওয়ার কারণ নেই। এমন অবকাশ ইসলাম রাখেনি যে, ইবাদতে অন্যরা তাদের পেছনে ফেলে দেবে। এরকম বৈধ কারণে নারীর ইবাদতে বিঘ্ন ঘটলে, ইবাদত না করেও ইবাদতের সমান সওয়াব বলে হাদিসে এসেছে। সহিহ বুখারিতে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন—

 

‘কেউ অসুস্থ হলে অথবা সফরে থাকলে তেমন সওয়াবই পাবে, যেমনটা সে সুস্থ অবস্থায় বা সফরে না থাকা অবস্থায় পেতো।’ (বুখারি: ২৯৯৬)

 

নারীদের পিরিয়ড বা অন্য অসুস্থতার ক্ষেত্রেও একই বিধান প্রযোজ্য। কারণ, একটি বৈধ কারণেই তিনি রোজা রাখতে অপারগ হয়েছেন। এ প্রসঙ্গে ইবনে হাজার (রহ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো আমল এমনিতে করতো, কিন্তু সাধ্যাতীত হওয়ায় পারেনি, সে ব্যক্তির ক্ষেত্রে হাদিসটি প্রযোজ্য’।

 

আরেকটি উদাহরণে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে। একবার রাসুলুল্লাহ (স.) মদীনায় কয়েকজন সাহাবীকে রেখে যুদ্ধে গিয়েছিলেন। তিনি তাঁর সঙ্গে থাকা সাহাবীদের বললেন—

 

তোমরা এমন এক পা-ও ফেলোনি এবং এমন কোনো উপত্যকাও অতিক্রম করোনি, যার সওয়াব আমাদের সঙ্গে যোগ না দেওয়া ব্যক্তিরা পাবে না। (অর্থাৎ তারা আমাদের সঙ্গে যোগ না দিয়েও আমাদের মতোই সওয়াব পাবে।) কারণ, তারা একটি বৈধ কারণে আসতে পারেনি।

 

এতে প্রমাণিত হয়, কোনো বৈধ কারণে ইবাদত ছুটে গেলে, সেই ইবাদতের পুরো সওয়াব দেওয়া হয়। সুতরাং রমজানের রোজার বরকত নিয়ে নারীদের হতাশ হবার কারণ নেই। আল্লাহর নির্দেশপালনে আন্তরিকতা, ভয় ও একনিষ্ঠতা থাকলে যথাযথ প্রতিদান পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সকল নারীকে রমজানের বরকতলাভে ধন্য করুন। আমিন।  সূএ:ঢাকা মেইল ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতার দায় নিতে হচ্ছে এনসিপিকে: হাসনাত আব্দুল্লাহ

» দেশের অর্থনীতি ‘ফোকলা’ করে দিয়ে গেছে আওয়ামী লীগ: মঈন খান

» ব্যবসায়ী শাহ আলম হত্যা মামলায় চাচাতো ভাই গ্রেফতার

» পাউরুটি কীভাবে খেলে ওজন কমবে?

» সেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে যে একাদশ নিয়ে মাঠে নামবে টাইগাররা

» প্রকাশ্যে ক্যাটরিনার বেবিবাম্প!

» সহোদর দুই ভাইকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা

» অনেক ষড়যন্ত্র হচ্ছে, বিএনপিকে অপবাদ দেওয়া হচ্ছে: ফখরুল

» পূজার ছুটিতে পূর্বাঞ্চলে চলবে ৪ জোড়া স্পেশাল ট্রেন

» কিমা পুরি তৈরির রেসিপি

  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

রোজা রাখতে অপারগ নারীর সওয়াব কেমন?

বিশেষ কিছু শারীরিক সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে হয় নারীদের। তাই বরকতের মাসে যখন তারা এই অপারগতার সম্মুখীন হন, এক ধরণের চাপা কষ্ট অনুভব করেন। মনকষ্ট আসাটা স্বাভাবিক। একবার হজ করতে গিয়ে একই রকম মনোবেদনায় কান্না করেছিলেন উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা (রা.)। সহিহ বুখারিতে বর্ণিত হয়েছে—

 

রাসুলুল্লাহ (স.) একবার হজে যাবার সময় মক্কার কাছাকাছি অবস্থিত সারিফ নামক জায়গায় থামলেন। এসময় তিনি দেখলেন, হজরত আয়েশা (রা.) কাঁদছেন। জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী হয়েছে’? আয়েশা (রা.) জবাব দিলেন, ‘আমি যদি এবছর হজ না করতাম!’ সঙ্গে-সঙ্গেই রাসুলুল্লাহ (স.) বুঝে গেলেন। তাই জিজ্ঞেস করলেন, ‘সম্ভবত তোমার হায়েজ শুরু হয়েছে।’ আয়েশা (রা.) জবাব দিলেন, ‘হ্যাঁ’। রাসুলুল্লাহ (স.) তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, ‘এই ব্যাপারটি আল্লাহ তাআলা সকল আদম কন্যার জন্য নির্ধারিত করেছেন’। সান্ত্বনা দেওয়ার পর তিনি এই অবস্থায় করণীয় কী, তা শিখিয়ে দিলেন। তিনি বললেন, ‘হাজীরা যা করে, তুমিও তাই করবে। তবে পবিত্র হওয়ার আগ পর্যন্ত কাবার চারদিকে তাওয়াফ করবে না।’ (বুখারি ও মুসলিম)

 

হজের বরকতময় সময়ে তাওয়াফ করতে না পারায় মা আয়েশা (রা.) অনেক কষ্ট পেয়েছিলেন, একইভাবে রমজানের মতো বরকময় মাসেও নারীরা চাপা কষ্ট বেদনা অনুভব করেন। কিন্তু এতে হতাশ হওয়ার কারণ নেই। এমন অবকাশ ইসলাম রাখেনি যে, ইবাদতে অন্যরা তাদের পেছনে ফেলে দেবে। এরকম বৈধ কারণে নারীর ইবাদতে বিঘ্ন ঘটলে, ইবাদত না করেও ইবাদতের সমান সওয়াব বলে হাদিসে এসেছে। সহিহ বুখারিতে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন—

 

‘কেউ অসুস্থ হলে অথবা সফরে থাকলে তেমন সওয়াবই পাবে, যেমনটা সে সুস্থ অবস্থায় বা সফরে না থাকা অবস্থায় পেতো।’ (বুখারি: ২৯৯৬)

 

নারীদের পিরিয়ড বা অন্য অসুস্থতার ক্ষেত্রেও একই বিধান প্রযোজ্য। কারণ, একটি বৈধ কারণেই তিনি রোজা রাখতে অপারগ হয়েছেন। এ প্রসঙ্গে ইবনে হাজার (রহ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো আমল এমনিতে করতো, কিন্তু সাধ্যাতীত হওয়ায় পারেনি, সে ব্যক্তির ক্ষেত্রে হাদিসটি প্রযোজ্য’।

 

আরেকটি উদাহরণে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে। একবার রাসুলুল্লাহ (স.) মদীনায় কয়েকজন সাহাবীকে রেখে যুদ্ধে গিয়েছিলেন। তিনি তাঁর সঙ্গে থাকা সাহাবীদের বললেন—

 

তোমরা এমন এক পা-ও ফেলোনি এবং এমন কোনো উপত্যকাও অতিক্রম করোনি, যার সওয়াব আমাদের সঙ্গে যোগ না দেওয়া ব্যক্তিরা পাবে না। (অর্থাৎ তারা আমাদের সঙ্গে যোগ না দিয়েও আমাদের মতোই সওয়াব পাবে।) কারণ, তারা একটি বৈধ কারণে আসতে পারেনি।

 

এতে প্রমাণিত হয়, কোনো বৈধ কারণে ইবাদত ছুটে গেলে, সেই ইবাদতের পুরো সওয়াব দেওয়া হয়। সুতরাং রমজানের রোজার বরকত নিয়ে নারীদের হতাশ হবার কারণ নেই। আল্লাহর নির্দেশপালনে আন্তরিকতা, ভয় ও একনিষ্ঠতা থাকলে যথাযথ প্রতিদান পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সকল নারীকে রমজানের বরকতলাভে ধন্য করুন। আমিন।  সূএ:ঢাকা মেইল ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Design & Developed BY ThemesBazar.Com