প্রায় নয় বছর সাভারের রানা প্লাজার ভবন ধসে এক হাজারের বেশি শ্রমিকের মৃত্যু হয়। বিশ^জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করা ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় গ্রেপ্তার হন ভবনটির মালিক সোহেল রানা। পুলিশের করা হত্যা মামলার আসামি সোহেল রানা কারাগারে বন্দী। মামলায় ৪১ আসামির মধ্যে জামিনে আছেন ৩২ আসামি। পলাতক ছয়জন। সোহেল রানার বাবা আবদুল খালেকসহ মারা গেছেন দুই আসামি।
হত্যা মামলাটি বর্তমানে মামলাটি ঢাকা জেলা দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন। এই মামলায় সোহেল রানার বিরুদ্ধে স্বাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে মামলার বাদির স্বাক্ষ্য নেওয়া শেষ করেছে আদালত। গত ১৬ মার্চ মামলার বাদি পুলিশের স্বাক্ষ্য দেন আদালতে। আজ ২৪ মার্চ মামলার পরবর্তী ধার্য তারিখ রয়েছে। খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, গাজীপুরের কাশিমপুর পার্ট-২ কারাগারে সোহেল রানা অন্য সাধারণ বন্দীদের মতোই তিনি সেলে থাকেন। প্রায় নয় বছর ধরে কারাগারে থাকার কারণে কারাজীবনের সঙ্গে অনেকটা অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। ভাবলেশহীন অবস্থায় দিন কাটান। ইতিহাসে স্থান করে নেওয়া ভয়ংকর ট্রাজেডির জন্য দায়ী হিসেবে তেমন কোনো অনুশোচনা বোধও তার মধ্যে লক্ষ্য করা যায় না।
কারাগারের একটি সূত্র জানায়, সাধারণ বন্দীদের সঙ্গে একটি সেলে থাকেন এক সময় বিলাসবহুল জীবনযাপনকারী এই সোহেল রানা। তিনি সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠে যান। অন্যান্য বন্দীদের সঙ্গে গল্পগুজব করে সময় কাটান। কারাগার থেকে দেওয়া সাধারণ খাবারই খান। আগে পরিবারের সদস্যরা নিয়ম করে তাকে দেখতে গেলেও গত দুই বছর ধরে করোনার প্রকোপের কারণে খুব একটা যান না। এছাড়া ২০২০ সালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন সোহেল রানার বাবা আবদুল খালেক। তার বাবাও এই মামলার আসামি ছিলেন।
কাশিমপুর পার্ট-২ কারাগারের জেলার মো. আবু সায়েম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘সোহেল রানা একজন সাধারণ বন্দী। অন্য আর দশজনের মতোই কারাগারে আছেন। কারাগারে দেয়া খাবার খান। তবে প্রিজন ক্যান্টিন থেকেও চাইলে খাবার কিনে খেতে পারেন। কারাবিধি মোতাবেক তিনি সব সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকালে সাভার বাসস্ট্যান্ডের কাছে নয় তলা বিশিষ্ট রানা প্লাজা ভবনটি ধসে পড়ে। ভবনটির তৃতীয় তলা থেকে নবম তলা পর্যন্ত ছিল পাঁচটি পোশাক কারখানা। এতে প্রায় চার হাজার পোশাক শ্রমিক কাজ করতেন। ভবন ধসের সঙ্গে সঙ্গে ধ্বংসস্তূপের ভেতরে চাপা পড়েন চার হাজার পোশাক শ্রমিক। তাদের কান্না আর আহাজারিতে শোকের মাতম নেমে আসে পুরো সাভারে। ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে দুই হাজার ৪৩৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়, যাদের বেশির ভাগই পঙ্গুত্ব বরণ করে। ভয়াবহতম এই ট্রাজেডিতে এক হাজার ১৩৬ জনের মৃত্যু হয়।
ঘটনার পরপর ভবনটির মালিক সোহেল রানা পালিয়ে দেশত্যাগের চেষ্টা করেন। ঘটনার চার দিন পর যশোরের বেনাপোল থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর থেকে রানা কারাগারেই আছেন। মাঝে ২০১৭ সালে একটি দুর্নীতি মামলায় তার তিন বছরের কারাদণ্ড হয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মো. মিজানুর রহমান স্বজল ঢাকা টাইমসকে বলেন, এই মামলায় স্বাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে মামলার বাদি পুলিশ পরিদর্শক ওয়ালি আকরাম খান স্বাক্ষ্য দিয়েছেন। ২৪ মার্চ মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছে আদালত। রানা প্লাজা ধ্বসের ঘটনায় মোট তিনটি মামলা হয়। এর মধ্যে অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ এনে হত্যা মামলাটি করে পুলিশ। ইমারত নির্মাণ আইন লঙ্ঘন করে ভবন নির্মাণের অভিযোগে অপর মামলাটি করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। আর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ভবন নির্মাণসংক্রান্ত দুর্নীতি নিয়ে আরেকটি মামলা করে।
২০১৬ সালের ১৮ জুলাই হত্যার অভিযোগে সোহেল রানাসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালত অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন।
রানা প্লাজা ধসের জন্য ছয়জন সরকারি কর্মকর্তাকে অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি করার অনুমতি না পাওয়ার কারণে তিন বছর ঝুলে ছিল এই মামলা। সেসময় জনপ্রশাসন ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের যুক্তি ছিল, যারা বড় অপরাধ করেননি, তাদের অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি করার অনুমতি দিতে পারবে না তারা। শেষ পর্যন্ত সরকারের অনুমোদন না পাওয়া গেলেও তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। সূএ:ঢাকাটাইমস ডটকম