কালবৈশাখী ঝড়ে রংপুরের কয়েকটি উপজেলার ৮ শতাধিক ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে বেশি ক্ষতি হয়েছে বদরগঞ্জ উপজেলায়। এ উপজেলার ২টি ইউনিয়নের ৫ শতাধিক ঘরবাড়ি লণ্ডভণ্ড হয়েছে।
এছাড়াও কাউনিয়া, গংগাচড়া ও পীরগঞ্জের কয়েকটি গ্রামে আঘাত হানে কালবৈশাখী। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী ঝড় ও শিলাবৃষ্টির আঘাতে ঘরবাড়ির ক্ষতির পাশাপাশি উড়ে গেছে স্থাপনা। এসময় ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে আম, ভুট্টা, গম, ধানসহ উঠতি ফসলের ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।
মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) রাত ৯টা থেকে প্রায় ১০টা পর্যন্ত থেমে থেমে কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টি আঘাত হানে।
রংপুর আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৭ দশমিক শূন্য মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বৃষ্টির পরিমাণ কম হলেও ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের বেগ বেশি ছিল। কোথাও কোথাও ভারী বজ্রপাতও হয়েছে।
এ কালবৈশাখী ঝড়ে রংপুর জেলার বদরগঞ্জ উপজেলার বিষ্ণুপুর ও রামনাথপুর ইউনিয়নের মধ্যে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ঘরবাড়ির। এসময় গাছ-পালা উপড়ে পড়ে, মাটির বাড়িঘর ভেঙে যায়। এ দুটি ইউনিয়নের প্রায় ৫ শতাধিক ঘরবাড়ির ক্ষতি সাধন হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন।
বিষ্ণপুর ইউনিয়নের আবু তালেব জানান, রাত ৯টার পরেই হঠাৎ তীব্র বাতাস শুরু হয়। প্রায় নিমিষেই চোখের সামনে ঘর বাড়ি উড়ে গেল। রাতে থাকার মতো ঘর ছিল না।
বুজরুক হাজিপুর গ্রামের আক্কাছ আলী বলেন, হঠাৎ রাতে যখন ঘুমানোর প্রস্তুতি চলছিল, তখন ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়। আমার নিজের ঘরবাড়িসহ আশপাশের অনেকের বাড়ি ভেঙে তছনছ হয়েছে।
বদরগঞ্জ উপজেলার বিষ্ণপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শান্তু চৌধুরী বলেন, রাতে ঘূর্ণিঝড় থেমে যাওয়ার পর বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখেছি। এই ইউনিয়নের ৪ ওয়ার্ডে ৪ শতাধিক বাড়ি-ঘর ভেঙে গেছে। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তালিকা করে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করা হচ্ছে।
বদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সাঈদ জানান, কালবৈশাখী ঝড়ে এ উপজেলার দুটি ইউনিয়নের ৫ শতাধিক ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে। এই এলাকার সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পরিদর্শন ও শুকনো খাবার, নগদ টাকা প্রদানের জন্য ইতোমধ্যে তালিকা করে বিতরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিকেলের মধ্যে সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যানসহ সেগুলো বিতরণ করা হবে।
এদিকে কালবৈশাখী ঝড়ের তাণ্ডবে কাউনিয়া, পীরগঞ্জ, গংগাচড়ার বিভিন্ন এলাকার অসংখ্য ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসময় ঝড়ে আহত শিশুসহ কয়েকজন চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। অনেক ঘরবাড়ি, গাছগাছালি ও উঠতি ফসলের ক্ষতি হয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় সারারাত বিচ্ছিন্ন ছিল বিদ্যুৎ সংযোগ।
অন্যদিকে রংপুর-মীরবাগ ও কাউনিয়া ব্রিজসংলগ্ন এলাকায় ঝড়ে রেললাইনের ওপর গাছ ভেঙে পড়ায় সকালে কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস আটকা পরে ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। পরে গাছ অপসারণ করে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করে।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ওবায়দুর রহমান মন্ডল জানান, এবারের কালবৈশাখী ঝরে ফসলের তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি, তবে গাছপালার ক্ষতি হয়েছে।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ কে এম কামরুল হাসান জানান, মঙ্গলবার রাতে যে ঘূর্ণিঝড় ও শিলাবৃষ্টি হয়েছে। সেই ঝড়ের স্থায়িত্ব ছিল ৫০ মিনিট। আগামী দুই-এক দিন রংপুর অঞ্চলে আরও ঝড়-বৃষ্টি হতে পারে বলেও জানিয়েছেন তিনি।