জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ প্রশাসনসহ সামগ্রিক রাজনৈতিক ইস্যুতে শিগগিরই বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসবে বিএনপি। দলের স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই এ আলোচনা শুরু হবে বলে আশা করছেন নেতারা। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্যকে দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগসহ বৈঠকের তারিখ নির্ধারণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনকালীন ‘নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ প্রশাসন’ প্রতিষ্ঠায় ‘এক দফা আন্দোলনে’ যেতে চায় দলটি। সে লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বৃহত্তর একটা রাজনৈতিক ঐক্য গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে শুক্রবারের স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠকে। স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ সম্পর্কে বলেন, ‘এই অবৈধ সরকারকে আর কেউ ক্ষমতায় দেখতে চায় না। আর আলোচনাটা হচ্ছে একটা চলমান প্রক্রিয়া। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আমাদের সব সময়ই যোগাযোগ আছে। আমরা শিগগিরই তাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করব। এর আগে আপনাদের জানানো হবে।
এ বিষয়ে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত দলের মহাসচিব জানাবেন। তবে ‘এক দফা আন্দোলন’ এখন আর শুধু বিএনপির একার বিষয় নয়। সমগ্র দেশের মানুষই এখন এক দফা আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পরিবর্তন চায়। কারণ দেশের মানুষ আর এই ‘রাতের ভোটের সরকার’কে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তারা তাদের ভোটাধিকারসহ সব মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আর সেসব অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন তো বিএনপি করছেই। করোনা সংক্রমণের কারণে আপাতত মাঠের কর্মসূচিটা একটু শিথিল করা হয়েছে মাত্র।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থায়ী কমিটির অপর একজন সদস্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আমাদের একটাই করণীয়। সেটা হচ্ছে- আন্দোলনের মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠায় দেশব্যাপী কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা। আর সেটা আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলে কখনই সম্ভব নয়। সে জন্যই এ সরকারকে বিদায় করার মধ্য দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করতে হবে।
স্থায়ী কমিটির অপর একজন সদস্য বলেন, এক দফা আন্দোলন বাস্তবায়নের জন্যই সমমনা সব দলকে নিয়ে ‘বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য’ গড়ে তুলতে হবে। স্থায়ী কমিটির সর্বশেষ বৈঠকেও এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ইতোমধ্যে সমমনা বাম, ডান ও ইসলামপন্থি কয়েকটি দলের সঙ্গে বিএনপির যোগাযোগ হয়েছে। এখন দ্রুতই তাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক শুরু করবে দলটি। বৈঠকে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আগামী দিনের নির্বাচন ও সরকার গঠনের ক্ষেত্রে গঠনমূলক পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরা হবে বিএনপির পক্ষ থেকে। একই সঙ্গে সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক ইস্যুতে দলগুলোর মনোভাবও জানতে চাওয়া হবে। ‘এক দফা দাবি’ আদায়ে প্রাথমিকভাবে নিজ নিজ দলীয় ব্যানারে যুগপৎ আন্দোলনের বিষয়েও বিএনপির নীতিনির্ধারকরা একমত হয়েছেন। এ ছাড়া যেসব দল নির্বাচন কমিশন গঠন প্রশ্নে রাষ্ট্রপতির সংলাপে অংশগ্রহণ করেনি, তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানানোরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।
দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্তের কথা মহাসচিব বলবেন। তবে এটুকু বলতে পারি যে, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ প্রশাসনের দাবিতে সব রাজনৈতিক দলই শুধু নয়, সমগ্র জাতি আজ একাট্টা। কাজেই এখন আর নির্বাচন কমিশন আইনে কিছু আসে-যায় না। কারণ এই (নির্বাচন কমিশন) আইন যে সরকার পাস করেছে, সে সরকারই তো অবৈধ। এই সরকারকে বাংলাদেশের গণতন্ত্রে বিশ্বাসী কোনো মানুষ আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। এ ছাড়া নিরপেক্ষ সরকার ও বিএনপি চেয়ারপারসনের মুক্তি দাবিতে আমাদের আন্দোলন তো চলছেই। করোনার কারণে মাঠের কর্মসূচি আপাতত শিথিল করা হয়েছে। করোনার প্রাদুর্ভাব কমে গেলে যথারীতি আমাদের কর্মসূচি শুরু হবে।