মেয়াদি কৃষিঋণ নবায়নে ছাড় ডাউন পেমেন্ট ছাড়াই ঋণ নবায়ন করা যাবে

এককালীন অর্থ ডাউন পেমেন্ট পরিশোধ ছাড়াই তিন বছরের জন্য ঋণ নবায়ন করা যাবে। কিস্তি পরিশোধে ছাড় থাকবে ছয় মাস। আবার নতুন ঋণ পেতেও কোনো বাধা থাকবে না গ্রাহকদের। অভ্যন্তরীণ বাজারে কৃষি পণ্যের দাম বৃদ্ধি ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ বিশেষ ছাড় দিয়েছে। এ বিষয়ে ব্যাংকগুলোর জন্য গতকাল মঙ্গলবার নতুন নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

 

জানা গেছে, করোনার কারণে গত ২০২০ ও ২০২১ সালে ঋণের কোনো কিস্তি পরিশোধ না করেই খেলাপি থেকে মুক্ত থাকতে পেরেছিলেন সব ধরনের ঋণগ্রহীতা। এ শিথিলতা চলতি বছর থেকে তুলে দেয়া হয়েছে। এতেই সমস্যায় পড়ে গেছেন ঋণখেলাপিরা। এখন ঋণ পরিশোধ করতে এসেই বিপত্তিতে পড়ে গেছেন। ঋণ আদায় না বাড়ায় মার্চে খেলাপি ঋণ বেড়ে গেছে। যদিও এ বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো প্রতিবেদন তৈরি করা হয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বিশ্বব্যাপী করোনা ধকল কাটতে না কাটতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে অভ্যন্তরীণ বাজারে। আন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন কৃষিজ ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা স্বাভাবিক রাখতেই ঋণ নবায়নের নীতিমালা শিথিল করা হয়েছে।

 

উপকরণের মূল্য এবং পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় সামগ্রিক আমদানি মূল্য বেড়েছে। আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় অভ্যন্তরীণ বাজারে পণ্যমূল্য বেড়ে গেছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে শিল্পের উৎপাদন ব্যয়ের ওপর। কৃষিশিল্পের উদ্যোক্তারা ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না। এতে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাচ্ছে।

 

আর কোনো গ্রাহক ঋণখেলাপি হলে নতুন করে ঋণ পাচ্ছেন না। অভ্যন্তরীণ বাজারে কৃষি পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি রোধ করতে এবং উদ্যোক্তাদের

বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ব্যাংক গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ডাউন পেমেন্টের শর্ত শিথিল করে স্বল্পমেয়াদি কৃষি ঋণ তিন বছরের জন্য পুনঃতফসিল করা যাবে। পুনঃতফসিলের তারিখ থেকে ছয় মাসের জন্য গ্রেস পিরিয়ড দিতে হবে। ক্ষেত্রবিশেষে ডাউন পেমেন্ট ছাড়াই এ ঋণ নবায়ন করা যাবে। ঋণ নবায়নের পর আলোচ্য খাতের ঋণগ্রহীতাদের কোনো অর্থ নতুনভাবে জমা ব্যতিরেকেই পুনরায় নতুন ঋণ প্রদান করা যাবে। আবার সার্টিফিকেট মামলা চলাকালীন গ্রাহকের সাথে সমঝোতার মাধ্যমে সার্টিফিকেট মামলা স্থগিত বা নিষ্পত্তিপূর্বক ঋণ পুনঃতফসিল করা যাবে। এ সুবিধা ইতোমধ্যে পুনঃতফসিলকৃত স্বল্পমেয়াদি কৃষি ঋণের ক্ষেত্রেও দিতে হবে।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, শুধু কৃষিতেই নয়, অন্যান্য খাতের গ্রাহকদের একটি উল্লেখিত অংশ ও ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না। এ কারণে সামগ্রিক খেলাপি ঋণ বেড়ে যাচ্ছে।

 

এক দিকে ঋণ আদায় কাক্সিক্ষত হারে হচ্ছে না, অপর দিকে কমে যাচ্ছে আমানত প্রবাহ। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সামগ্রিক আমদানি ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এতে ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রা সঙ্কটের পাশাপাশি তহবিল ব্যবস্থাপনায়ও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বেশির ভাগ ব্যাংকেরই টাকার সঙ্কট চলছে। এ সঙ্কট মেটাতে কোনো কোনো ব্যাংক বেঁধে দেয়া সুদের বাইরে বেশি সুদে আমানত নিচ্ছে। এরপরেও সঙ্কট মিটছে না।

 

বাধ্য হয়ে ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে হাত পাতছে। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রায় প্রতি কার্যদিবসেই সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলোর কাছে রিজার্ভ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা বিক্রি করছে। একই সাথে বিশেষ তহবিল ও বিশেষ রেপোর মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে নগদ অর্থ সরবরাহ করছে। ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ আদায়ের নীতিমালা আরো শিথিল না করলে ঋণ আদায় বেড়ে যেত; কিন্তু স্বল্পমেয়াদি কৃষি ঋণ নবায়নে নীতিমালা শিথিল করায় নগদ আদায়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ রকম অন্য খাতগুলোর জন্যও নীতিমালা শিথিল করলে ব্যাংকগুলোর সঙ্কট আরো বেড়ে যেতে পারে। এ কারণে তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অবস্থান শক্ত রাখার দাবি জানিয়েছেন। সূএ:ঢাকা মেল ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» রাষ্ট্রপতির কাছে পরিচয়পত্র দিলেন বুলগেরিয়ার রাষ্ট্রদূত

» ড. ইউনূস চান সার্কের কার্যক্রম শুরু হোক: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

» দুদকের মামলায় হাইকোর্টে ওসি প্রদীপের স্ত্রীর জামিন

» থার্টিফার্স্ট নাইটে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে যা বললেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্ট

» সিরিয়ায় আসাদের পতন নিয়ে যা বললেন হাসনাত আব্দুল্লাহ

» জেনে রাখুন এই ভুলে গিজার বিস্ফোরণ হয়

» গাঁজা সেবন নিয়ে বিরোধে যুবক খুন, গ্রেফতার ২

» আটকে দেওয়া হলো বিএনপির তিন সংগঠনের পদযাত্রা

» ১৮ কোটি মানুষ দিল্লির আধিপত্য প্রতিহত করতে প্রস্তুত: রিজভী

» অবৈধভাবে অবস্থানরত বিদেশিদের বাংলাদেশে থাকতে দেওয়া হবে না: জাহাঙ্গীর আলম

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

মেয়াদি কৃষিঋণ নবায়নে ছাড় ডাউন পেমেন্ট ছাড়াই ঋণ নবায়ন করা যাবে

এককালীন অর্থ ডাউন পেমেন্ট পরিশোধ ছাড়াই তিন বছরের জন্য ঋণ নবায়ন করা যাবে। কিস্তি পরিশোধে ছাড় থাকবে ছয় মাস। আবার নতুন ঋণ পেতেও কোনো বাধা থাকবে না গ্রাহকদের। অভ্যন্তরীণ বাজারে কৃষি পণ্যের দাম বৃদ্ধি ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ বিশেষ ছাড় দিয়েছে। এ বিষয়ে ব্যাংকগুলোর জন্য গতকাল মঙ্গলবার নতুন নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

 

জানা গেছে, করোনার কারণে গত ২০২০ ও ২০২১ সালে ঋণের কোনো কিস্তি পরিশোধ না করেই খেলাপি থেকে মুক্ত থাকতে পেরেছিলেন সব ধরনের ঋণগ্রহীতা। এ শিথিলতা চলতি বছর থেকে তুলে দেয়া হয়েছে। এতেই সমস্যায় পড়ে গেছেন ঋণখেলাপিরা। এখন ঋণ পরিশোধ করতে এসেই বিপত্তিতে পড়ে গেছেন। ঋণ আদায় না বাড়ায় মার্চে খেলাপি ঋণ বেড়ে গেছে। যদিও এ বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো প্রতিবেদন তৈরি করা হয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বিশ্বব্যাপী করোনা ধকল কাটতে না কাটতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে অভ্যন্তরীণ বাজারে। আন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন কৃষিজ ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা স্বাভাবিক রাখতেই ঋণ নবায়নের নীতিমালা শিথিল করা হয়েছে।

 

উপকরণের মূল্য এবং পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় সামগ্রিক আমদানি মূল্য বেড়েছে। আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় অভ্যন্তরীণ বাজারে পণ্যমূল্য বেড়ে গেছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে শিল্পের উৎপাদন ব্যয়ের ওপর। কৃষিশিল্পের উদ্যোক্তারা ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না। এতে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাচ্ছে।

 

আর কোনো গ্রাহক ঋণখেলাপি হলে নতুন করে ঋণ পাচ্ছেন না। অভ্যন্তরীণ বাজারে কৃষি পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি রোধ করতে এবং উদ্যোক্তাদের

বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ব্যাংক গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ডাউন পেমেন্টের শর্ত শিথিল করে স্বল্পমেয়াদি কৃষি ঋণ তিন বছরের জন্য পুনঃতফসিল করা যাবে। পুনঃতফসিলের তারিখ থেকে ছয় মাসের জন্য গ্রেস পিরিয়ড দিতে হবে। ক্ষেত্রবিশেষে ডাউন পেমেন্ট ছাড়াই এ ঋণ নবায়ন করা যাবে। ঋণ নবায়নের পর আলোচ্য খাতের ঋণগ্রহীতাদের কোনো অর্থ নতুনভাবে জমা ব্যতিরেকেই পুনরায় নতুন ঋণ প্রদান করা যাবে। আবার সার্টিফিকেট মামলা চলাকালীন গ্রাহকের সাথে সমঝোতার মাধ্যমে সার্টিফিকেট মামলা স্থগিত বা নিষ্পত্তিপূর্বক ঋণ পুনঃতফসিল করা যাবে। এ সুবিধা ইতোমধ্যে পুনঃতফসিলকৃত স্বল্পমেয়াদি কৃষি ঋণের ক্ষেত্রেও দিতে হবে।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, শুধু কৃষিতেই নয়, অন্যান্য খাতের গ্রাহকদের একটি উল্লেখিত অংশ ও ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না। এ কারণে সামগ্রিক খেলাপি ঋণ বেড়ে যাচ্ছে।

 

এক দিকে ঋণ আদায় কাক্সিক্ষত হারে হচ্ছে না, অপর দিকে কমে যাচ্ছে আমানত প্রবাহ। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সামগ্রিক আমদানি ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এতে ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রা সঙ্কটের পাশাপাশি তহবিল ব্যবস্থাপনায়ও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বেশির ভাগ ব্যাংকেরই টাকার সঙ্কট চলছে। এ সঙ্কট মেটাতে কোনো কোনো ব্যাংক বেঁধে দেয়া সুদের বাইরে বেশি সুদে আমানত নিচ্ছে। এরপরেও সঙ্কট মিটছে না।

 

বাধ্য হয়ে ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে হাত পাতছে। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রায় প্রতি কার্যদিবসেই সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলোর কাছে রিজার্ভ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা বিক্রি করছে। একই সাথে বিশেষ তহবিল ও বিশেষ রেপোর মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে নগদ অর্থ সরবরাহ করছে। ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ আদায়ের নীতিমালা আরো শিথিল না করলে ঋণ আদায় বেড়ে যেত; কিন্তু স্বল্পমেয়াদি কৃষি ঋণ নবায়নে নীতিমালা শিথিল করায় নগদ আদায়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ রকম অন্য খাতগুলোর জন্যও নীতিমালা শিথিল করলে ব্যাংকগুলোর সঙ্কট আরো বেড়ে যেতে পারে। এ কারণে তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অবস্থান শক্ত রাখার দাবি জানিয়েছেন। সূএ:ঢাকা মেল ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com