মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস চেয়ে উচ্চ আদালতে আপিল করলেন বরখাস্ত হওয়া পুলিশ কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার দাশ ও পরিদর্শক লিয়াকত আলী। দেশজুড়ে আলোচিত সেনাবাহিনীর মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় তাদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়া হয়েছিল গত ৩১ জানুয়ারি। এই রায়ের দুই সপ্তাহ পর সোমবার আসামির পক্ষে হাইকোর্টে আপিল আবেদন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রদীপের আইনজীবী রানা দাসগুপ্ত। তিনি বলেন, ‘সোমবার আপিলটি ফাইল করা হয়েছে। আবেদনে আমরা বলেছি, বিচারিক আদালত তার বিরুদ্ধে যে রায় ও আদেশ দিয়েছেন তা সুষ্ঠু বিচার বিশ্লেষণ করে হয়নি। রায়টি তাড়াহুড়া করে দিয়েছেন। আমাদের আপিলটি শুনানি করে বিচারিক আদালতের রায় বাতিল ও রদ করার আর্জি জানিয়েছি।
এ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আরেক আসামি লিয়াকত আলীর পক্ষেও আপিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রানা দাশগুপ্ত। তার পক্ষে আইনজীবী হিসেবে আপিল আবেদনে শুনানি করবেন এসএম শাহজাহান।
উচ্চ আদালতে রানা দাসগুপ্ত ছাড়াও প্রদীপের পক্ষে লড়বেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মুনসুরুল হক চৌধুরী ও ব্যারিস্টার সিফাত মাহমুদ।
সিনহা হত্যা মামলায় ওসি প্রদীপ ও পরিদর্শক লিয়াকতের ডেথ রেফারেন্স গত ৮ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে এসে পৌঁছায়। গত ৩১ জানুয়ারি আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাঈল।
রায়ে দুজনকে মৃত্যুদণ্ড ও ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া সাতজনকে খালাস দেয়া হয়েছে।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরে এপিবিএন চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।
সেনাবাহিনী থেকে অবসরে যাওয়া সিনহা ‘লেটস গো’ নামে একটি ভ্রমণবিষয়ক প্রামাণ্যচিত্র বানানোর জন্য প্রায় এক মাস ধরে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকার একটি রিসোর্টে অবস্থান করছিলেন। ওই কাজে তার সঙ্গে ছিলেন স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের শিক্ষার্থী সাহেদুল ইসলাম সিফাত ও শিপ্রা দেবনাথ।
কক্সবাজারের পুলিশ তখন বলেছিল, সিনহা তার পরিচয় দিয়ে তল্লাশিতে বাধা দেন। পরে পিস্তল বের করলে চেকপোস্টের পুলিশ তাকে গুলি করে।
তবে মামলার রায়ে বিচারক বলেছেন, এই হত্যা ছিল পরিকল্পিত।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন টেকনাফ থানার এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত, এএসআই সাগর দেব ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা, বাহারছড়ার মারিশবুনিয়া গ্রামের মো. নুরুল আমিন, মোহাম্মদ আয়াজ ও মো. নিজাম উদ্দিন।
খালাস পাওয়া সাতজন হলেন টেকনাফ থানার কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল-মামুন, মোহাম্মদ মোস্তফা, এপিবিএনের সদস্য এসআই মোহাম্মদ শাহজাহান, কনস্টেবল মোহাম্মদ রাজীব ও মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ।