মাসে ভাড়া অর্ধকোটি উত্তরায় চুক্তি করে সরকারি জমি ভাগবাটোয়ারা অবৈধ মার্কেট

রাজধানীর উত্তরার সোনারগাঁ জনপথ। সড়কের পাশেই স্থানীয়দের ভাষ্যমতে রাজউকের ৩১ থেকে ৩২টি প্লট। এসব প্লটের কাগজে-কলমে মালিকানা এখনো সরকারি সংস্থাটির। তবে সেখানে গড়ে উঠেছে মার্কেট। রয়েছে প্রায় ৩০০টি দোকান। আছে রেস্টুরেন্ট, গাড়ির গ্যারেজ ও বিশাল কাঁচাবাজার। এসব স্থাপনা অবৈধভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। সেখান থেকে মাসিক ভাড়া উঠছে অর্ধকোটি টাকা।

ভাগবাটোয়ারাও হয় একাধিক ধাপে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিকলীগ ও রাজউকের কর্মকর্তা পাচ্ছেন এই টাকার ভাগ। মাস শেষ না হতেই ভাগের টাকা পৌঁছে যায় তাদের কাছে। সরকারি জমি নিজেদের কব্জায় রাখতে কিছু প্লটের ক্ষেত্রে টুকে রাখা হয়েছে নানা মামলা।

মজার বিষয় হলো সরকারি জমিতে গড়ে তোলা এই মার্কেটের ভাড়ার ভাগ নিতে রীতিমতো চুক্তিপত্র সই হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, রাজউকের প্লট দখলের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৫১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শরীফুর রহমান। প্লট রাজউকের হলেও ভাড়ার চুক্তি করেন কাউন্সিলর। নিজেই বুঝিয়ে দেন দোকানদারদের। রাজউকের প্লটের উপর স্থাপনা নির্মাণ, ভাড়া আদায় ও টাকার ভাগবাটোয়ার বিষয়ে সমঝোতা চুক্তিপত্রও করেন তিনি। -এর হাতে আসা ২০১৯ সালের ১৬ই এপ্রিলে তার স্বাক্ষরিত একটি সমঝোতার চুক্তিপত্রে দেখা যায়, ১০০ টাকার তিন পাতার একটি স্ট্যাম্পে ৮২ ও ৮৩ নং বাণিজ্যিক প্ল্লটের সমঝোতা চুক্তি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ২টি প্লটের বিভিন্ন দোকান থেকে প্রতি মাসে কম বেশি ৩ লাখ টাকা ভাড়া আদায় হয়। প্লটে অস্থায়ী মার্কেট নির্মাণে সহযোগিতা করায় উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম শুভকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা প্রদান করার কথা বলা আছে। বিনিময়ে তিনি সেখানে ‘ঝামেলা সৃষ্টি’ করতে পারবেন না। আশরাফুল ইসলাম শুভ অবশ্য এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ছাত্রলীগ এর সংগঠন পরিচালনা ও গতিশীল রাখার জন্য পশ্চিম থানা ছাত্রলীগের সভাপতি শাকিল উজ জামান বিপুলকে মাসিক ২০ হাজার ও সাধারণ সম্পাদক সাইদুল ইসলামকে ২০ হাজার টাকা প্রদান করার কথাও বলা আছে। স্থানীয় প্রশাসন ম্যানেজের কথাও বলা আছে চুক্তিতে। বলা হয়েছে, রাজউক কোনো উচ্ছেদ অভিযান চালালে সেই স্থানে চুক্তি করা ব্যক্তি পুনরায় দোকান তুলতে পারবেন, অন্য কেউ দোকান তুলতে পারবে না। প্লট রাজউক কাউকে বরাদ্দ দেয়ার আগ পর্যন্ত এ চুক্তি বলবৎ থাকবে। ভাড়ার টাকার বণ্টন/লেনদেন এর বিষয়ে কাউন্সিলরকে অবহিত করতে হবে। কোনো প্রকার অনিয়ম, শর্ত ভঙ্গ ও ঝগড়া-বিবাদের সৃষ্টি হলে কাউন্সিলর যেকোনো ব্যবস্থা নিতে পারবেন।

সরজমিন দেখা যায়,  উত্তরা সোনারগাঁ জনপথ সড়কের দু’পাশ ১১ ও ১৩- এ দুটি সেক্টরের আওতায়। জমজম টাওয়ারের পর থেকে দুই পাশেই ফুটপাত সংলগ্ন রাজউকের জায়গায় টিনশেড মার্কেট। এ মার্কেটে রয়েছে প্রায় ৩০০টি দোকান। এরমধ্যে ২৬০টি ফার্নিচারের দোকান। বাকিগুলোর মধ্যে রয়েছে রেস্টুরেন্ট, গাড়ির গ্যারেজ, বেডিং তৈরির দোকানসহ কাঁচাবাজার। জমজম টাওয়ারের পার্শ্ব থেকে ময়লার মোড় পর্যন্ত প্রায় ৭-৮শ’ মিটার জায়গায় এসব স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। রাজউকের কর্মকর্তারা এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকায় বাস্তবে কয়টি প্লট রয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে স্থানীয় ব্যবস্থায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, সেখানে ৩১ থেকে ৩২টির মতো প্লট রয়েছে। এরমধ্যে ২টি প্লট ২টি প্রতিষ্ঠানকে বুঝিয়ে দিয়েছে রাজউক। বাকি প্লটগুলো অবৈধ দখলে রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফার্নিচার মার্কেট থেকে টাকা তোলার দায়িত্ব পালন করেন জসিম, জহির, খোকন ও নাজমুল। জহিরের দখলে রয়েছে মার্কেটের ২০নং প্লট। প্রত্যেক দোকান ও ফুটপাত থেকে টাকা তোলেন তারা। ১২ নম্বর ময়লার মোড়ের পরে কবরস্থানের পাশে বাঁশেরপট্টি থেকে টাকা তোলেন খোকন। এ ছাড়া মার্কেটের নিয়ন্ত্রণ করেন যুবলীগের কয়েকজন নেতা। তবে স্থাপনা নির্মাণ, ভাড়া আদায় ও টাকার ভাগবাটোয়ার বিষয়ে সমঝোতা চুক্তিপত্রে যাদের নাম রয়েছে তারা এখন তেমন একটা টাকা পাচ্ছেন না। চুক্তিপত্রে নাম থাকা একাধিকজনের সঙ্গে আলাপ করলে তারা জানায়, ৩ বছর আগে কাউন্সিলরসহ যে চুক্তি হয়েছে, তা চুক্তিতেই সীমাবদ্ধ। ২০১৯ সালে ফার্নিচার মার্কেট থেকে কিছু টাকা পেলেও পরবর্তী সময়ে তা বেশিদিন পাওয়া যায়নি। স্থানীয় কাউন্সিলর তার নিজস্ব বাহিনী দিয়ে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন। তাকে সহযোগিতা করছেন উত্তরা এলাকার সরকারি দলের নেতাকর্মীরা।

একাধিক ফার্নিচার ব্যবসায়ী বলেন, দোকানে বেচাবিক্রি না থাকলেও ধারদেনা করে মাসিক ভাড়া ও ধার্যকৃত টাকা পরিশোধ করতে হয়। নামে বেনামে দোকান বরাদ্দ দিয়ে কাউন্সিলরের লোকজন টাকা তোলেন। ব্যবসায়ীদের সবসময় আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়। কখন আবার দোকান থেকে উচ্ছেদ হন। তারা বলছেন, আমরা বৈধভাবে ব্যবসা করতে চাই। রাজউকের জায়গায় আমরা দোকান নির্মাণ করলেও সব সুযোগ-সুবিধা চুষে নিচ্ছেন স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কেটের একাধিক দোকান মালিক জানান, ২০১৪ সাল থেকে রাজউকের এই জায়গায় মাছ বাজার ছিল। কালক্রমে এখানে দোকান নির্মাণ হয়। স্থানীয় প্রভাবশালীরা ভাগে ভাগে জায়গা নিজেরা দখল করে। অবৈধ জেনেও সেখানে দোকান করছেন তারা। এর আগে কয়েকবার রাজউক অভিযান চালিয়ে ভেঙে দেয়। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে এসব জায়গায় স্থানীয় কাউন্সিলরের সহযোগিতায় ফের দোকান নির্মাণ হয়। ফার্নিচারের বড় মার্কেট করা হয়। কাউন্সিলর নিজে উপস্থিত থেকে সবাইকে দোকান বুঝিয়ে দিয়েছেন। স্ট্যাম্পের মাধ্যমে সবার কাছ থেকে স্বাক্ষর নিয়েছেন।

ছাত্রলীগ নেতা আশরাফুল ইসলাম শুভ  বলেন, আগে খালি প্লট পেয়ে সেখানে একটি চায়ের দোকান বসিয়েছিলাম। পরবর্তীতে আমি আমার দোকান সরিয়ে নিয়ে গেছি। এখন আমি গ্রামে থাকি। আমি ওই ফার্নিচার মার্কেট থেকে কোনো টাকা পয়সা পাইনি। আমার সঙ্গে যোগাযোগও নেই। যখন সেখানে চায়ের দোকান ছিল, তখন কাউন্সিলরসহ একটা সমঝোতা চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু কোনোদিন আমি টাকা নেইনি। কারা কীভাবে সেখান থেকে টাকা তুলছেন জানা নেই।

এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৫১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শরীফুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। কয়েক দফা তার কার্যালয়ে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তার মাধ্যমে বক্তব্য দেয়ার অনুরোধ করা হয় -এর তরফে। কয়েকদিন অপেক্ষা করেও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। উত্তরা জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. মোরশেদ আলম বলেন, চুক্তিপত্রের বিষয়ে তার জানা নেই। প্রশাসনের নামে এ ধরনের কাজ কেউ করলে আমরা খোঁজ নেবো।

দায়িত্বে থাকা রাজউকের উপ-পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-২) আমিনুল ইসলাম  বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রাজউকের জায়গায় অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। তবে কে বা কারা এসব নিয়ন্ত্রণ করেছেন, ভাড়া তুলছেন আমার জানা নেই। ওই প্লটগুলোর মধ্যে কয়েকটি নিয়ে মামলা রয়েছে। কাগজপত্র দেখে বলতে হবে। কাগজপত্র সব ঠিকঠাক করে সবগুলো প্লটে থাকা স্থাপনা উচ্ছেদ করবো। তবে ফার্নিচার মার্কেটের নির্মাণে রাজউকের কর্মকর্তাদের যোগসাজশ রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে ফোন কেটে দেন রাজউকের এ কর্মকর্তা। এদিকে উত্তরার প্লট দখলের বিষয়ে রাজউকের চেয়ারম্যান এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে প্লট দখল করে একটা চক্র ব্যবসা করে আসছে। সেখানে কিছু প্লট নিয়ে মামলা চলমান আছে। মামলাগুলো নিষ্পত্তি হলে এক সঙ্গে সব উচ্ছেদ করা হবে। সূএ:মানবজমিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ভারতীয়দের জন্য ভিসা সীমিত করলো বাংলাদেশ

» ভারতের অপপ্রচারে ক্ষতি নেই, আমাদের চিকিৎসা ও বাজার সবই আছে : উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন

» আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার প্রশ্নে কোনো আপস নেই : নুর

» দরিদ্র দেশগুলোকে ১০ হাজার কোটি ডলার ঋণ দেবে বিশ্বব্যাংক

» নির্বাচন কমিশনে ৪টি নতুন কমিটি গঠন

» ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক হবে প্রতিবেশীর মতো : সারজিস

» বাঙালী জাতি ঐক্যবদ্ধ থাকলে যত বড় সাম্রাজ্যবাদী শক্তি হোক না কেন আমরা জিতবেই.. মাওলানা মামুনুল হক

» ব্র্যাক ব্যাংক-কে ‘বেস্ট ব্যাংকিং পার্টনার অফ দ্যা ইয়ার ২০২৩’ স্বীকৃতি দিয়েছে জেডটিই বাংলাদেশ

» পলাশে নবাগত ইউএনওর সাথে সাংবাদিকদের মতবিনিময় সভা

» অন্তর্বর্তী সরকার ব্যর্থ হলে বড় বিদ্রোহ হবে: উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

মাসে ভাড়া অর্ধকোটি উত্তরায় চুক্তি করে সরকারি জমি ভাগবাটোয়ারা অবৈধ মার্কেট

রাজধানীর উত্তরার সোনারগাঁ জনপথ। সড়কের পাশেই স্থানীয়দের ভাষ্যমতে রাজউকের ৩১ থেকে ৩২টি প্লট। এসব প্লটের কাগজে-কলমে মালিকানা এখনো সরকারি সংস্থাটির। তবে সেখানে গড়ে উঠেছে মার্কেট। রয়েছে প্রায় ৩০০টি দোকান। আছে রেস্টুরেন্ট, গাড়ির গ্যারেজ ও বিশাল কাঁচাবাজার। এসব স্থাপনা অবৈধভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। সেখান থেকে মাসিক ভাড়া উঠছে অর্ধকোটি টাকা।

ভাগবাটোয়ারাও হয় একাধিক ধাপে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিকলীগ ও রাজউকের কর্মকর্তা পাচ্ছেন এই টাকার ভাগ। মাস শেষ না হতেই ভাগের টাকা পৌঁছে যায় তাদের কাছে। সরকারি জমি নিজেদের কব্জায় রাখতে কিছু প্লটের ক্ষেত্রে টুকে রাখা হয়েছে নানা মামলা।

মজার বিষয় হলো সরকারি জমিতে গড়ে তোলা এই মার্কেটের ভাড়ার ভাগ নিতে রীতিমতো চুক্তিপত্র সই হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, রাজউকের প্লট দখলের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৫১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শরীফুর রহমান। প্লট রাজউকের হলেও ভাড়ার চুক্তি করেন কাউন্সিলর। নিজেই বুঝিয়ে দেন দোকানদারদের। রাজউকের প্লটের উপর স্থাপনা নির্মাণ, ভাড়া আদায় ও টাকার ভাগবাটোয়ার বিষয়ে সমঝোতা চুক্তিপত্রও করেন তিনি। -এর হাতে আসা ২০১৯ সালের ১৬ই এপ্রিলে তার স্বাক্ষরিত একটি সমঝোতার চুক্তিপত্রে দেখা যায়, ১০০ টাকার তিন পাতার একটি স্ট্যাম্পে ৮২ ও ৮৩ নং বাণিজ্যিক প্ল্লটের সমঝোতা চুক্তি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ২টি প্লটের বিভিন্ন দোকান থেকে প্রতি মাসে কম বেশি ৩ লাখ টাকা ভাড়া আদায় হয়। প্লটে অস্থায়ী মার্কেট নির্মাণে সহযোগিতা করায় উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম শুভকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা প্রদান করার কথা বলা আছে। বিনিময়ে তিনি সেখানে ‘ঝামেলা সৃষ্টি’ করতে পারবেন না। আশরাফুল ইসলাম শুভ অবশ্য এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ছাত্রলীগ এর সংগঠন পরিচালনা ও গতিশীল রাখার জন্য পশ্চিম থানা ছাত্রলীগের সভাপতি শাকিল উজ জামান বিপুলকে মাসিক ২০ হাজার ও সাধারণ সম্পাদক সাইদুল ইসলামকে ২০ হাজার টাকা প্রদান করার কথাও বলা আছে। স্থানীয় প্রশাসন ম্যানেজের কথাও বলা আছে চুক্তিতে। বলা হয়েছে, রাজউক কোনো উচ্ছেদ অভিযান চালালে সেই স্থানে চুক্তি করা ব্যক্তি পুনরায় দোকান তুলতে পারবেন, অন্য কেউ দোকান তুলতে পারবে না। প্লট রাজউক কাউকে বরাদ্দ দেয়ার আগ পর্যন্ত এ চুক্তি বলবৎ থাকবে। ভাড়ার টাকার বণ্টন/লেনদেন এর বিষয়ে কাউন্সিলরকে অবহিত করতে হবে। কোনো প্রকার অনিয়ম, শর্ত ভঙ্গ ও ঝগড়া-বিবাদের সৃষ্টি হলে কাউন্সিলর যেকোনো ব্যবস্থা নিতে পারবেন।

সরজমিন দেখা যায়,  উত্তরা সোনারগাঁ জনপথ সড়কের দু’পাশ ১১ ও ১৩- এ দুটি সেক্টরের আওতায়। জমজম টাওয়ারের পর থেকে দুই পাশেই ফুটপাত সংলগ্ন রাজউকের জায়গায় টিনশেড মার্কেট। এ মার্কেটে রয়েছে প্রায় ৩০০টি দোকান। এরমধ্যে ২৬০টি ফার্নিচারের দোকান। বাকিগুলোর মধ্যে রয়েছে রেস্টুরেন্ট, গাড়ির গ্যারেজ, বেডিং তৈরির দোকানসহ কাঁচাবাজার। জমজম টাওয়ারের পার্শ্ব থেকে ময়লার মোড় পর্যন্ত প্রায় ৭-৮শ’ মিটার জায়গায় এসব স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। রাজউকের কর্মকর্তারা এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকায় বাস্তবে কয়টি প্লট রয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে স্থানীয় ব্যবস্থায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, সেখানে ৩১ থেকে ৩২টির মতো প্লট রয়েছে। এরমধ্যে ২টি প্লট ২টি প্রতিষ্ঠানকে বুঝিয়ে দিয়েছে রাজউক। বাকি প্লটগুলো অবৈধ দখলে রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফার্নিচার মার্কেট থেকে টাকা তোলার দায়িত্ব পালন করেন জসিম, জহির, খোকন ও নাজমুল। জহিরের দখলে রয়েছে মার্কেটের ২০নং প্লট। প্রত্যেক দোকান ও ফুটপাত থেকে টাকা তোলেন তারা। ১২ নম্বর ময়লার মোড়ের পরে কবরস্থানের পাশে বাঁশেরপট্টি থেকে টাকা তোলেন খোকন। এ ছাড়া মার্কেটের নিয়ন্ত্রণ করেন যুবলীগের কয়েকজন নেতা। তবে স্থাপনা নির্মাণ, ভাড়া আদায় ও টাকার ভাগবাটোয়ার বিষয়ে সমঝোতা চুক্তিপত্রে যাদের নাম রয়েছে তারা এখন তেমন একটা টাকা পাচ্ছেন না। চুক্তিপত্রে নাম থাকা একাধিকজনের সঙ্গে আলাপ করলে তারা জানায়, ৩ বছর আগে কাউন্সিলরসহ যে চুক্তি হয়েছে, তা চুক্তিতেই সীমাবদ্ধ। ২০১৯ সালে ফার্নিচার মার্কেট থেকে কিছু টাকা পেলেও পরবর্তী সময়ে তা বেশিদিন পাওয়া যায়নি। স্থানীয় কাউন্সিলর তার নিজস্ব বাহিনী দিয়ে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন। তাকে সহযোগিতা করছেন উত্তরা এলাকার সরকারি দলের নেতাকর্মীরা।

একাধিক ফার্নিচার ব্যবসায়ী বলেন, দোকানে বেচাবিক্রি না থাকলেও ধারদেনা করে মাসিক ভাড়া ও ধার্যকৃত টাকা পরিশোধ করতে হয়। নামে বেনামে দোকান বরাদ্দ দিয়ে কাউন্সিলরের লোকজন টাকা তোলেন। ব্যবসায়ীদের সবসময় আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়। কখন আবার দোকান থেকে উচ্ছেদ হন। তারা বলছেন, আমরা বৈধভাবে ব্যবসা করতে চাই। রাজউকের জায়গায় আমরা দোকান নির্মাণ করলেও সব সুযোগ-সুবিধা চুষে নিচ্ছেন স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কেটের একাধিক দোকান মালিক জানান, ২০১৪ সাল থেকে রাজউকের এই জায়গায় মাছ বাজার ছিল। কালক্রমে এখানে দোকান নির্মাণ হয়। স্থানীয় প্রভাবশালীরা ভাগে ভাগে জায়গা নিজেরা দখল করে। অবৈধ জেনেও সেখানে দোকান করছেন তারা। এর আগে কয়েকবার রাজউক অভিযান চালিয়ে ভেঙে দেয়। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে এসব জায়গায় স্থানীয় কাউন্সিলরের সহযোগিতায় ফের দোকান নির্মাণ হয়। ফার্নিচারের বড় মার্কেট করা হয়। কাউন্সিলর নিজে উপস্থিত থেকে সবাইকে দোকান বুঝিয়ে দিয়েছেন। স্ট্যাম্পের মাধ্যমে সবার কাছ থেকে স্বাক্ষর নিয়েছেন।

ছাত্রলীগ নেতা আশরাফুল ইসলাম শুভ  বলেন, আগে খালি প্লট পেয়ে সেখানে একটি চায়ের দোকান বসিয়েছিলাম। পরবর্তীতে আমি আমার দোকান সরিয়ে নিয়ে গেছি। এখন আমি গ্রামে থাকি। আমি ওই ফার্নিচার মার্কেট থেকে কোনো টাকা পয়সা পাইনি। আমার সঙ্গে যোগাযোগও নেই। যখন সেখানে চায়ের দোকান ছিল, তখন কাউন্সিলরসহ একটা সমঝোতা চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু কোনোদিন আমি টাকা নেইনি। কারা কীভাবে সেখান থেকে টাকা তুলছেন জানা নেই।

এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৫১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শরীফুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। কয়েক দফা তার কার্যালয়ে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তার মাধ্যমে বক্তব্য দেয়ার অনুরোধ করা হয় -এর তরফে। কয়েকদিন অপেক্ষা করেও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। উত্তরা জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. মোরশেদ আলম বলেন, চুক্তিপত্রের বিষয়ে তার জানা নেই। প্রশাসনের নামে এ ধরনের কাজ কেউ করলে আমরা খোঁজ নেবো।

দায়িত্বে থাকা রাজউকের উপ-পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-২) আমিনুল ইসলাম  বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রাজউকের জায়গায় অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। তবে কে বা কারা এসব নিয়ন্ত্রণ করেছেন, ভাড়া তুলছেন আমার জানা নেই। ওই প্লটগুলোর মধ্যে কয়েকটি নিয়ে মামলা রয়েছে। কাগজপত্র দেখে বলতে হবে। কাগজপত্র সব ঠিকঠাক করে সবগুলো প্লটে থাকা স্থাপনা উচ্ছেদ করবো। তবে ফার্নিচার মার্কেটের নির্মাণে রাজউকের কর্মকর্তাদের যোগসাজশ রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে ফোন কেটে দেন রাজউকের এ কর্মকর্তা। এদিকে উত্তরার প্লট দখলের বিষয়ে রাজউকের চেয়ারম্যান এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে প্লট দখল করে একটা চক্র ব্যবসা করে আসছে। সেখানে কিছু প্লট নিয়ে মামলা চলমান আছে। মামলাগুলো নিষ্পত্তি হলে এক সঙ্গে সব উচ্ছেদ করা হবে। সূএ:মানবজমিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com