বেড়েই চলছে চাল-ডাল-তেলের দাম, চরম বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ

করোনায় দেশের অধিকাংশ মানুষের আয় কমেছে। বিপরীতে ওষুধ, সবজি এবং তেল, চাল, ডালসহ সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে।

 

সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় পণ্য চাল। গত সপ্তাহে খুচরা বাজারে চালের দাম কেজিপ্রতি ২ টাকা করে বেড়েছে। আর গত বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে একই সময়ের তুলনায় কেজিপ্রতি চালের দাম বেড়েছে ৫ টাকা থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত। চালের পাশাপাশি ডালের দাম গত বছরের তুলনায় বেড়েছে ১০-৩৫ টাকা পর্যন্ত। এই দাম বৃদ্ধিতে চরম বিপাকে পড়েছেন মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষ।

 

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার এখন বড় ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে। ফলে খুচরা ব্যবসায়ীরা বেশি দাম দিয়ে কিনছি। তাই বেশি দামে বিক্রি করছি। আর দাম বাড়ায় বিক্রি কমে গেছে। এতে মুনাফাও কমছে বলে জানান তারা।

 

ভোক্তারা বলছেন, তেল, চাল-ডালসহ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন নিম ও মধ্য আয়ের মানুষ। অনেকে করোনাকালে কাজ হারিয়েছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ ঋণ করে দিন পার করছেন। কেউবা খেয়ে-না খেয়ে কোনো রকমে দিন পার করছেন।

 

মঙ্গলবার  রাজধানীর বাজারগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে, গুটি স্বর্ণা অর্থাৎ মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫২ টাকা কেজিতে। অথচ ২০২১ সালের একই সময়ে এই চালের দাম ছিল ৪৩ থেকে ৪৫ টাকা কেজি। কেজি প্রতি দাম বেড়েছে ৫ থেকে ৭ টাকা।

 

আজ বাজারে মাঝারি মানের পাইজম যেমন- ২৮ এবং ২৯ নম্বর চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৫৮ টাকা কেজিতে। এক বছর আগেও এই চাল বিক্রি হতো ৪৫-৪৮ টাকা কেজিতে।

 

এছাড়াও বাজারে ভালো মিনিকেট চাল খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি। পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৬২ টাকা কেজিতে। মাঝারি মানের মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৬২ থেকে ৬৫ টাকায়। যা পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজিতে। এছাড়াও নিম্নমানের মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজিতে। গত বছর এই চাল সর্বোচ্চ ৫৪ থেকে ৫৮ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে।

 

ভালো মানের নাজিরশাইল খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকা কেজিতে। মাঝারি মানের নাজির বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা এবং নিম্নমানের নাজির বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭০ টাকা কেজি। গত বছর এই চাল বিক্রি হয়েছিল ৫৮-৬৫ টাকা কেজিতে। অন্যদিকে কাটারি ভোগ ১০০ টাকা এবং চিনিগুঁড়া চাল বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকা কেজিতে।

 

রামপুরা বাজারের ব্যবসায়ী আনিছুল ইসলাম বলেন, দুই মাস ধরে চালের দাম বাড়তি। গত সপ্তাহে নতুন করে আরেক দফা বেড়েছে। এ বছর কোনো বন্যা হয়নি। তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তারপরও চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে।

 

মালিবাগ চৌধুরী পাড়ার মিতু রাইস এজেন্সির কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান বলেন, আমাদের যে পরিমাণ ধান প্রয়োজন গত অর্থবছরেও তার কাছাকাছি ধান উৎপাদন হয়েছে। সুতরাং, চালের দাম বৃদ্ধির কোনো কারণ দেখছি না। তারপরও আমন মৌসুম থেকেই চালের দাম বাড়তে শুরু করেছে। এখনো বাড়ছে।

 

রাজধানীর গুলশানের একটি বেসরকারি ক্লিনিকের রিসিপশনে কর্মরত রয়েছে আবু জাফর। তিনি মধ্যবাড্ডার পোস্ট অফিস গলিতে দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করছেন আট বছর ধরে। করোনার আগের তিনি কিনতেন মিনিকেট চাল। এখন কিনছেন মোটা চাল স্বর্ণা। মধ্যবাড্ডার পাইকারি দোকান থেকে চাল কেনার সময়ে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, মাসের প্রথমেই আমি এক বস্তা করে চাল কিনি। কারণ, চাল থাকলে খালি সাদা ভাত খেয়ে হলেও দিন পার করা যাবে। খিদে মেটানো যায়।

জাফর বলেন, আগে নিতাম চিকন চাল, এখন সেই দামে মোটা চাল কিনি। প্রতিদিন খাবারের সময় দুই ছেলেই চিৎকার-চেঁচামেচি করে। আর বলে এই চালের ভাত খাওয়া যায় না। তখন আমি তাদের বিভিন্নভাবে বুঝাই।

 

তিনি বলেন, করোনার আগে বেতন পেতাম ২৫ হাজার টাকা। ২০২০ সালে করোনার সময় বেতন ৪ হাজার টাকা কমেছে। এখন বেতন পাই ২১ হাজার টাকা। বাসা ভাড়া দেই ১১ হাজার টাকা। আর বাকি ১০ হাজার টাকা খাওয়া-দাওয়া। দুই ছেলের মাদরাসা ও কলেজের খরচ দিয়ে মাস পার করতে পারছি না। গত এক বছরে সংসার চালাতে আমি ৭৫ হাজার টাকা ঋণ করেছি। এই টাকা কীভাবে পরিশোধ করব সেই চিন্তায় ঘুম আসে না।

 

পোশাক কারখানার শ্রমিক নাসিমুল হক মায়ের দোয়া এন্টারপ্রাইজ থেকে চাল কেনেন ২ কেজি। জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি বেতন পাই ১৫ হাজার টাকা। বাসা ভাড়া ও খাওয়া-দাওয়ার পর আর কিছুই থাকে না। বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মা। তাদের খাবারের টাকা দিতে পারছি না। তারা খুব কষ্ট করে চলছে।

 

তিনি বলেন, গত চার মাসে একদিন মুরগির মাংস দিয়ে ভাত খাইনি। কীভাবে খাব কন? ৫২ টাকার নিচে কোনো চাল নেই, তেলের কেজি পৌনে দুইশ টাকা, ডালের কেজি দেড়শ টাকা, সবজির কেজি একশ টাকা। কোন জিনিসটা কিনব?

এক বছর আগের অর্থাৎ ২০২১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি নাজিরশাইল চাল কেজি প্রতি বিক্রি হয়েছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। মাঝারি মানের পাইজম চাল বিক্রি হয়েছিল ৫০ থেকে ৫৬ টাকা। আর দরিদ্র মানুষের খাবারের মোট চাল কেজিপ্রতি বিক্রি হয়েছিল ৪৪ থেকে ৪৮ টাকা।

টিসিবির তথ্য মতে, রাজধানীর বাজারে বড় দানার মসুর ডাল কেজিপ্রতি বিক্রি হয়েছে ৯৫ থেকে ১০০ টাকা। ২০২১ সালে একই সময়ে মসুর ডাল বিক্রি হয়েছে কেজি প্রতি ৬৫ টাকা ৭০ টাকা।

একইভাবে মাঝারি মানের মুশর ডাল কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১০৫ থেকে ১১০ টাকা। যা এক বছর আগের একই সময়ে বিক্রি হয়েছিল ৭৫ থেকে ৮৫ টাকা। আর ছোট দানার ডাল বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টকা কেজিতে। যা এক বছর আগে বিক্রি হয়েছিল ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজিতে।

 

মুগ ডাল বিক্রি হয়েছে ১২০-১৩৫ টাকা কেজিতে। ২০২১ সালের একই সময় যা বিক্রি হয়েছিল ১০০ থেকে ১৪০ টাকা কেজিতে। এছাড়াও বৃহস্পতিবার এ্যাংকর ডাল কেজিপ্রতি বিক্রি হয়েছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকায়। যা এক বছর আগে ছিল ৩৮ থেকে ৪৫ টাকা দরে। তবে ছোলা ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ভোক্তার অধিকার নিয়ে কাজ করা কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) মনে করছে, তেল-চিনি, চাল-ডাল, মাছ-মাংসসহ সব ধরনের পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। যা ভোক্তাদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। ভোক্তাদের উপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করছে। সরকারের উচিত দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা।  সূএ:পূর্ব পশ্চিম ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» খালেদা জিয়ার সঙ্গে রাষ্ট্রদূত আনসারীর সাক্ষাৎ

» সারা দেশ অচল করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল

» জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাৎবার্ষিকীতে ৮ দিনের কর্মসূচি বিএনপির

» বিগত ১৬ বছরে দুদু ভাই একটা গণপ্রস্রাব কর্মসূচির ডাক দিলেই পারতো !: সারজিস

» বুধবার সকাল ১০টা পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিলেন ইশরাকের সমর্থকরা

» দেশের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক প্রধান উপদেষ্টার

» উপদেষ্টাদের জন্য ২৫ গাড়ি কেনার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিল সরকার

» আমাকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করে লাভ নেই: আসিফ মাহমুদ

» জামালপুরের মেলান্দহে গাঁজার গাছসহ একজন আটক

» বর্ষসেরা এসএমই ব্যাংকার অ্যাওয়ার্ড জিতলেন ব্র্যাক ব্যাংকের সৈয়দ আব্দুল মোমেন

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

বেড়েই চলছে চাল-ডাল-তেলের দাম, চরম বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ

করোনায় দেশের অধিকাংশ মানুষের আয় কমেছে। বিপরীতে ওষুধ, সবজি এবং তেল, চাল, ডালসহ সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে।

 

সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় পণ্য চাল। গত সপ্তাহে খুচরা বাজারে চালের দাম কেজিপ্রতি ২ টাকা করে বেড়েছে। আর গত বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে একই সময়ের তুলনায় কেজিপ্রতি চালের দাম বেড়েছে ৫ টাকা থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত। চালের পাশাপাশি ডালের দাম গত বছরের তুলনায় বেড়েছে ১০-৩৫ টাকা পর্যন্ত। এই দাম বৃদ্ধিতে চরম বিপাকে পড়েছেন মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষ।

 

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার এখন বড় ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে। ফলে খুচরা ব্যবসায়ীরা বেশি দাম দিয়ে কিনছি। তাই বেশি দামে বিক্রি করছি। আর দাম বাড়ায় বিক্রি কমে গেছে। এতে মুনাফাও কমছে বলে জানান তারা।

 

ভোক্তারা বলছেন, তেল, চাল-ডালসহ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন নিম ও মধ্য আয়ের মানুষ। অনেকে করোনাকালে কাজ হারিয়েছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ ঋণ করে দিন পার করছেন। কেউবা খেয়ে-না খেয়ে কোনো রকমে দিন পার করছেন।

 

মঙ্গলবার  রাজধানীর বাজারগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে, গুটি স্বর্ণা অর্থাৎ মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫২ টাকা কেজিতে। অথচ ২০২১ সালের একই সময়ে এই চালের দাম ছিল ৪৩ থেকে ৪৫ টাকা কেজি। কেজি প্রতি দাম বেড়েছে ৫ থেকে ৭ টাকা।

 

আজ বাজারে মাঝারি মানের পাইজম যেমন- ২৮ এবং ২৯ নম্বর চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৫৮ টাকা কেজিতে। এক বছর আগেও এই চাল বিক্রি হতো ৪৫-৪৮ টাকা কেজিতে।

 

এছাড়াও বাজারে ভালো মিনিকেট চাল খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি। পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৬২ টাকা কেজিতে। মাঝারি মানের মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৬২ থেকে ৬৫ টাকায়। যা পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজিতে। এছাড়াও নিম্নমানের মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজিতে। গত বছর এই চাল সর্বোচ্চ ৫৪ থেকে ৫৮ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে।

 

ভালো মানের নাজিরশাইল খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকা কেজিতে। মাঝারি মানের নাজির বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা এবং নিম্নমানের নাজির বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭০ টাকা কেজি। গত বছর এই চাল বিক্রি হয়েছিল ৫৮-৬৫ টাকা কেজিতে। অন্যদিকে কাটারি ভোগ ১০০ টাকা এবং চিনিগুঁড়া চাল বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকা কেজিতে।

 

রামপুরা বাজারের ব্যবসায়ী আনিছুল ইসলাম বলেন, দুই মাস ধরে চালের দাম বাড়তি। গত সপ্তাহে নতুন করে আরেক দফা বেড়েছে। এ বছর কোনো বন্যা হয়নি। তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তারপরও চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে।

 

মালিবাগ চৌধুরী পাড়ার মিতু রাইস এজেন্সির কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান বলেন, আমাদের যে পরিমাণ ধান প্রয়োজন গত অর্থবছরেও তার কাছাকাছি ধান উৎপাদন হয়েছে। সুতরাং, চালের দাম বৃদ্ধির কোনো কারণ দেখছি না। তারপরও আমন মৌসুম থেকেই চালের দাম বাড়তে শুরু করেছে। এখনো বাড়ছে।

 

রাজধানীর গুলশানের একটি বেসরকারি ক্লিনিকের রিসিপশনে কর্মরত রয়েছে আবু জাফর। তিনি মধ্যবাড্ডার পোস্ট অফিস গলিতে দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করছেন আট বছর ধরে। করোনার আগের তিনি কিনতেন মিনিকেট চাল। এখন কিনছেন মোটা চাল স্বর্ণা। মধ্যবাড্ডার পাইকারি দোকান থেকে চাল কেনার সময়ে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, মাসের প্রথমেই আমি এক বস্তা করে চাল কিনি। কারণ, চাল থাকলে খালি সাদা ভাত খেয়ে হলেও দিন পার করা যাবে। খিদে মেটানো যায়।

জাফর বলেন, আগে নিতাম চিকন চাল, এখন সেই দামে মোটা চাল কিনি। প্রতিদিন খাবারের সময় দুই ছেলেই চিৎকার-চেঁচামেচি করে। আর বলে এই চালের ভাত খাওয়া যায় না। তখন আমি তাদের বিভিন্নভাবে বুঝাই।

 

তিনি বলেন, করোনার আগে বেতন পেতাম ২৫ হাজার টাকা। ২০২০ সালে করোনার সময় বেতন ৪ হাজার টাকা কমেছে। এখন বেতন পাই ২১ হাজার টাকা। বাসা ভাড়া দেই ১১ হাজার টাকা। আর বাকি ১০ হাজার টাকা খাওয়া-দাওয়া। দুই ছেলের মাদরাসা ও কলেজের খরচ দিয়ে মাস পার করতে পারছি না। গত এক বছরে সংসার চালাতে আমি ৭৫ হাজার টাকা ঋণ করেছি। এই টাকা কীভাবে পরিশোধ করব সেই চিন্তায় ঘুম আসে না।

 

পোশাক কারখানার শ্রমিক নাসিমুল হক মায়ের দোয়া এন্টারপ্রাইজ থেকে চাল কেনেন ২ কেজি। জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি বেতন পাই ১৫ হাজার টাকা। বাসা ভাড়া ও খাওয়া-দাওয়ার পর আর কিছুই থাকে না। বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মা। তাদের খাবারের টাকা দিতে পারছি না। তারা খুব কষ্ট করে চলছে।

 

তিনি বলেন, গত চার মাসে একদিন মুরগির মাংস দিয়ে ভাত খাইনি। কীভাবে খাব কন? ৫২ টাকার নিচে কোনো চাল নেই, তেলের কেজি পৌনে দুইশ টাকা, ডালের কেজি দেড়শ টাকা, সবজির কেজি একশ টাকা। কোন জিনিসটা কিনব?

এক বছর আগের অর্থাৎ ২০২১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি নাজিরশাইল চাল কেজি প্রতি বিক্রি হয়েছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। মাঝারি মানের পাইজম চাল বিক্রি হয়েছিল ৫০ থেকে ৫৬ টাকা। আর দরিদ্র মানুষের খাবারের মোট চাল কেজিপ্রতি বিক্রি হয়েছিল ৪৪ থেকে ৪৮ টাকা।

টিসিবির তথ্য মতে, রাজধানীর বাজারে বড় দানার মসুর ডাল কেজিপ্রতি বিক্রি হয়েছে ৯৫ থেকে ১০০ টাকা। ২০২১ সালে একই সময়ে মসুর ডাল বিক্রি হয়েছে কেজি প্রতি ৬৫ টাকা ৭০ টাকা।

একইভাবে মাঝারি মানের মুশর ডাল কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১০৫ থেকে ১১০ টাকা। যা এক বছর আগের একই সময়ে বিক্রি হয়েছিল ৭৫ থেকে ৮৫ টাকা। আর ছোট দানার ডাল বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টকা কেজিতে। যা এক বছর আগে বিক্রি হয়েছিল ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজিতে।

 

মুগ ডাল বিক্রি হয়েছে ১২০-১৩৫ টাকা কেজিতে। ২০২১ সালের একই সময় যা বিক্রি হয়েছিল ১০০ থেকে ১৪০ টাকা কেজিতে। এছাড়াও বৃহস্পতিবার এ্যাংকর ডাল কেজিপ্রতি বিক্রি হয়েছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকায়। যা এক বছর আগে ছিল ৩৮ থেকে ৪৫ টাকা দরে। তবে ছোলা ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ভোক্তার অধিকার নিয়ে কাজ করা কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) মনে করছে, তেল-চিনি, চাল-ডাল, মাছ-মাংসসহ সব ধরনের পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। যা ভোক্তাদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। ভোক্তাদের উপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করছে। সরকারের উচিত দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা।  সূএ:পূর্ব পশ্চিম ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com