বুরকিনা ফাসোতে ভয়াবহ হামলা চালিয়ে ৬০০ জনকে গুলি করে হত্যা

ছবি সংগৃহীত

 

বিগত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলার মুখোমুখি হয়েছে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ বুরকিনা ফাসো। দেশটিতে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে গুলি চালিয়ে ৬০০ জনকে হত্যা করেছে আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট জঙ্গিগোষ্ঠী জামায়াত নুসরাত আল-ইসলাম ওয়াল-মুসলিম (জেএনআইএম)। নিহতদের সবাই বেসামরিক নাগরিক। তাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

 

শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এ গণহত্যার তথ্য জানিয়েছে মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন

 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত আগস্টে বুরকিনা ফাসোর বারসালোঘো শহরে আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট জঙ্গি-গোষ্ঠী জামায়াত নুসরাত আল-ইসলাম ওয়াল-মুসলিম (জেএনআইএম) এই হত্যাকাণ্ড চালায়।

 

সন্ত্রাসীদের আক্রমণ থেকে বাঁচতে প্রতিরক্ষামূলক পরিখা খনন করছিলেন বারসালাঘোর বাসিন্দারা। সন্ত্রাসীরা মোটরসাইকেলে করে গ্রামটিতে প্রবেশ করে হামলা চালান। এরপর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে প্রায় ৬০০ জনকে হত্যা করেন। নিহতদের প্রায় সবাইই নারী ও শিশু। বুরকিনা ফাসোর ইতিহাসে এটি অন্যতম বড় হত্যাকাণ্ড।

 

সিএনএনে তদন্তে উঠে এসেছে যে, আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট এই জঙ্গি গোষ্ঠী ২০১৫ সালে মালি থেকে বুরকিনা ফাসোতে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকেই দেশটিতে তারা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে।

 

ফ্রান্স সরকারের মূল্যায়নের ভিত্তিতে সিএনএন জানাচ্ছে, জেএনআইএম-এর হামলায় নিহতের সংখ্যা প্রায় ৬০০ জন। যাদের সবাই বেসামরিক নাগরিক এবং বেশিরভাগই নারী ও শিশু। তবে, জাতিসংঘের অনুমান অনুযায়ী, সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হামলায় নিহতের সংখ্যা ২০০ জন।

 

এ বিষয়ে জেএনআইএমের দাবি করেছে যে, তারা দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন গোষ্ঠীর ৩০০ জন সদস্যকে হত্যা করেছে। নিহতদের কেউই বেসামরিক নয়।

 

এ হত্যাকাণ্ড থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা জানান, সেনাবাহিনীর নির্দেশ অনুযায়ী বারসালাঘোর শহরের চারপাশে একটি বিশাল পরিখা খনন করছিলেন তারা। সে সময়ই জেএনআইএমের বন্দুকধারীরা হামলা চালান।

 

বেঁচে যাওয়া এক ব্যক্তি সিএনএনকে বলেন, ঘটনার দিন শহরের বাইরে ৪ কিলোমিটার দূরে একটি পরিখা খননের কাজ করছিলেন তিনি। এই পরিখা খনন করাচ্ছিল সেনাবাহিনী। বেলা প্রায় ১১টার দিকে প্রথম গুলির শব্দ শুনতে পান তিনি।

 

তিনি বলেন, পালানোর জন্য হামাগুঁড়ি দিয়ে পরিখায় যাওয়ার চেষ্টা করলে দেখতে পাই হামলাকারীরা পরিখাটি অনুসরণ করছেন। পরে হামাগুঁড়ি দিয়ে পরিখা থেকে বের হয়ে একটি ঝোঁপের নিচে বিকেল পর্যন্ত লুকিয়ে ছিলাম।

 

তিনি আরও বলেন, পরিখার মধ্যে যে পথটুকু আমি পাড়ি দিয়েছি, পুরো পথটিই ছিল রক্তাক্ত। সবাই চিৎকার করছিল।

 

হামলায় পরিবারের দুই সদস্যকে হারিয়েছেন এমন একজন সিএনএনকে বলেন, হামলাকারীরা সারাদিন মানুষ হত্যা করেছেন। তিনদিন ধরে আমরা মরদেহ উদ্ধার করছিলাম। চারিদিকে মরদেহ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল। আমাদের অন্তরে ভয় ঢুকে গেল। দাফনের সময় মাটিতে এত মরদেহ পড়ে ছিল যে, এ কাজ করা কঠিন ছিল।

 

উল্লেখ্য, বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোর একটি হলো বুরকিনা ফাসো। ২০১৫ সাল থেকে সাহেল অঞ্চলের এই দেশটি সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে ২০ হাজারে বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। আর বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ২০ লাখের বেশি মানুষ।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» যাত্রীবাহী বাসের চাপায় অটোচালকসহ দুজন নিহত

» আবারও রেকর্ড গড়েছে স্বর্ণের দাম

» পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি করার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার

» টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের ডাবল সেঞ্চুরি

» ছেলের বন্ধুরা আমাকে ‘দিদি’ বলে ডাকে: শ্রাবন্তী

» কিছু আসনের লোভে জাতীয় স্বার্থের বাইরে গিয়ে কেউ পিআর চাইছে: সালাহউদ্দিন

» গাজায় গণহত্যা চলছে, দায়ী ইসরায়েল: জাতিসংঘ তদন্ত কমিশন

» বিশেষ অভিযানে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত আরও ১১২৬ জন আসামি গ্রেফতার

» ফখরুল-আব্বাসসহ ৬৭ জনকে অব্যাহতি দিলো আদালত

» জামায়াতের আন্দোলন সরকারবিরোধী না : ব্যারিস্টার ফুয়াদ

  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

বুরকিনা ফাসোতে ভয়াবহ হামলা চালিয়ে ৬০০ জনকে গুলি করে হত্যা

ছবি সংগৃহীত

 

বিগত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলার মুখোমুখি হয়েছে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ বুরকিনা ফাসো। দেশটিতে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে গুলি চালিয়ে ৬০০ জনকে হত্যা করেছে আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট জঙ্গিগোষ্ঠী জামায়াত নুসরাত আল-ইসলাম ওয়াল-মুসলিম (জেএনআইএম)। নিহতদের সবাই বেসামরিক নাগরিক। তাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

 

শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এ গণহত্যার তথ্য জানিয়েছে মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন

 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত আগস্টে বুরকিনা ফাসোর বারসালোঘো শহরে আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট জঙ্গি-গোষ্ঠী জামায়াত নুসরাত আল-ইসলাম ওয়াল-মুসলিম (জেএনআইএম) এই হত্যাকাণ্ড চালায়।

 

সন্ত্রাসীদের আক্রমণ থেকে বাঁচতে প্রতিরক্ষামূলক পরিখা খনন করছিলেন বারসালাঘোর বাসিন্দারা। সন্ত্রাসীরা মোটরসাইকেলে করে গ্রামটিতে প্রবেশ করে হামলা চালান। এরপর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে প্রায় ৬০০ জনকে হত্যা করেন। নিহতদের প্রায় সবাইই নারী ও শিশু। বুরকিনা ফাসোর ইতিহাসে এটি অন্যতম বড় হত্যাকাণ্ড।

 

সিএনএনে তদন্তে উঠে এসেছে যে, আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট এই জঙ্গি গোষ্ঠী ২০১৫ সালে মালি থেকে বুরকিনা ফাসোতে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকেই দেশটিতে তারা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে।

 

ফ্রান্স সরকারের মূল্যায়নের ভিত্তিতে সিএনএন জানাচ্ছে, জেএনআইএম-এর হামলায় নিহতের সংখ্যা প্রায় ৬০০ জন। যাদের সবাই বেসামরিক নাগরিক এবং বেশিরভাগই নারী ও শিশু। তবে, জাতিসংঘের অনুমান অনুযায়ী, সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হামলায় নিহতের সংখ্যা ২০০ জন।

 

এ বিষয়ে জেএনআইএমের দাবি করেছে যে, তারা দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন গোষ্ঠীর ৩০০ জন সদস্যকে হত্যা করেছে। নিহতদের কেউই বেসামরিক নয়।

 

এ হত্যাকাণ্ড থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা জানান, সেনাবাহিনীর নির্দেশ অনুযায়ী বারসালাঘোর শহরের চারপাশে একটি বিশাল পরিখা খনন করছিলেন তারা। সে সময়ই জেএনআইএমের বন্দুকধারীরা হামলা চালান।

 

বেঁচে যাওয়া এক ব্যক্তি সিএনএনকে বলেন, ঘটনার দিন শহরের বাইরে ৪ কিলোমিটার দূরে একটি পরিখা খননের কাজ করছিলেন তিনি। এই পরিখা খনন করাচ্ছিল সেনাবাহিনী। বেলা প্রায় ১১টার দিকে প্রথম গুলির শব্দ শুনতে পান তিনি।

 

তিনি বলেন, পালানোর জন্য হামাগুঁড়ি দিয়ে পরিখায় যাওয়ার চেষ্টা করলে দেখতে পাই হামলাকারীরা পরিখাটি অনুসরণ করছেন। পরে হামাগুঁড়ি দিয়ে পরিখা থেকে বের হয়ে একটি ঝোঁপের নিচে বিকেল পর্যন্ত লুকিয়ে ছিলাম।

 

তিনি আরও বলেন, পরিখার মধ্যে যে পথটুকু আমি পাড়ি দিয়েছি, পুরো পথটিই ছিল রক্তাক্ত। সবাই চিৎকার করছিল।

 

হামলায় পরিবারের দুই সদস্যকে হারিয়েছেন এমন একজন সিএনএনকে বলেন, হামলাকারীরা সারাদিন মানুষ হত্যা করেছেন। তিনদিন ধরে আমরা মরদেহ উদ্ধার করছিলাম। চারিদিকে মরদেহ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল। আমাদের অন্তরে ভয় ঢুকে গেল। দাফনের সময় মাটিতে এত মরদেহ পড়ে ছিল যে, এ কাজ করা কঠিন ছিল।

 

উল্লেখ্য, বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোর একটি হলো বুরকিনা ফাসো। ২০১৫ সাল থেকে সাহেল অঞ্চলের এই দেশটি সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে ২০ হাজারে বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। আর বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ২০ লাখের বেশি মানুষ।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Design & Developed BY ThemesBazar.Com