বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের ৫১তম শাহাদাতবার্ষিকী

বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ মোস্তফা কামালের ৫১তম শাহাদাতবার্ষিকী আজ। ১৯৭১ সালের ১৮ এপ্রিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় দরুইন গ্রামে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে তিনি শহীদ হন। 

 

সেদিন তিনি একাই লড়াই করে বাঁচিয়েছিলেন সহযোদ্ধাদের। এই বীরশ্রেষ্ঠকে স্মরণে আজ (সোমবার) বাদ আসর ভোলা সদর উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল জামে মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।

 

বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ মোস্তফা কামালের জন্ম ১৯৪৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর ভোলা জেলার দৌলতখান উপজেলার হাজিপুর গ্রামে। বাবা হাবিলদার মো. হাবিবুর রহমান ও মা মালেকা বেগম। আশির দশকে মেঘনার ভাঙনে তার জন্মগ্রাম বিলীন হয়ে যায়। ১৯৮২ সালে সরকার সদর উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নে মৌটুপি গ্রামে কিছু সম্পত্তিসহ তার বাবা-মার জন্য একটি পাকা বাসভবন নির্মাণ করে তাদের পুনর্বাসিত করে। বর্তমানে এ গ্রামের নাম পরিবর্তন করে বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল নগর রাখা হয়েছে। বাড়ির পাশেই ২০০৮ সালে সরকারিভাবে নির্মাণ করা হয়েছে ‘বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর’।

 

১৯৬৭ সালে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। ৭ মার্চ জাতির পিতার ঐতিহাসিক ভাষণ শুনে তিনি বীরদর্পে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। সিপাহী মোস্তফা কামালের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের ১৬ এপ্রিল ১টি মুক্তিযোদ্ধা দল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দিকে এগিয়ে আসা হানাদার বাহিনীকে ঠেকাতে আখাউড়ার দরুইন গ্রামে অবস্থান নেয়। ১৮ এপ্রিল সকাল ১১টার দিকে শুরু হয় প্রচণ্ড বৃষ্টি। একইসঙ্গে শত্রুর গোলাবর্ষণ। মুক্তিযোদ্ধারাও পাল্টা অবস্থা নিয়ে সম্মুখ যুদ্ধে লিপ্ত হয়। মেশিনগান চালানো অবস্থায় এক মুক্তিযোদ্ধার বুকে গুলি লাগে। মুহূর্তের মধ্যে মোস্তফা কামাল এগিয়ে এসে চালাতে লাগলেন মেশিনগান। গর্জন করে উঠে তার হাতের অস্ত্র। মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে কোন অত্যাধুনিক অস্ত্র ছিল না। সংখায়ও অনেক কম ছিলো তারা। সবাইকে নিরাপদে যেতে অবিরাম গুলি চালাতে থাকেন তিনি। তার গোলাবর্ষণে শত্রুদের থমকে যেতে হয়েছে। মারা পড়েছে বেশ কয়েকজন পাক সেনা। ততক্ষণে দলের অন্য সদস্যরা নিরাপদে পিছু হটেছেন। একসময় মোস্তফা কামালের গুলি শেষ হয়ে যায়। হঠাৎ করেই একটি গুলি এসে লাগে তার বুকে। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। মারা যান মোস্তফা কামাল। তার এমন বীরত্বের কারণে সহযোদ্ধাদের প্রাণ রক্ষা পায়। জাতির এ শ্রেষ্ঠ সন্তানকে দরুইনের মাটিতে সমাহিত করা হয়।

অসীম সাহসিকতার জন্য তাকে সর্বোচ্চ বীরত্বসূচক খেতাব বীরশ্রেষ্ঠ প্রদান করে বাংলাদেশ সরকার।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» রাষ্ট্রপতির কাছে পরিচয়পত্র দিলেন বুলগেরিয়ার রাষ্ট্রদূত

» ড. ইউনূস চান সার্কের কার্যক্রম শুরু হোক: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

» দুদকের মামলায় হাইকোর্টে ওসি প্রদীপের স্ত্রীর জামিন

» থার্টিফার্স্ট নাইটে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে যা বললেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্ট

» সিরিয়ায় আসাদের পতন নিয়ে যা বললেন হাসনাত আব্দুল্লাহ

» জেনে রাখুন এই ভুলে গিজার বিস্ফোরণ হয়

» গাঁজা সেবন নিয়ে বিরোধে যুবক খুন, গ্রেফতার ২

» আটকে দেওয়া হলো বিএনপির তিন সংগঠনের পদযাত্রা

» ১৮ কোটি মানুষ দিল্লির আধিপত্য প্রতিহত করতে প্রস্তুত: রিজভী

» অবৈধভাবে অবস্থানরত বিদেশিদের বাংলাদেশে থাকতে দেওয়া হবে না: জাহাঙ্গীর আলম

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের ৫১তম শাহাদাতবার্ষিকী

বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ মোস্তফা কামালের ৫১তম শাহাদাতবার্ষিকী আজ। ১৯৭১ সালের ১৮ এপ্রিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় দরুইন গ্রামে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে তিনি শহীদ হন। 

 

সেদিন তিনি একাই লড়াই করে বাঁচিয়েছিলেন সহযোদ্ধাদের। এই বীরশ্রেষ্ঠকে স্মরণে আজ (সোমবার) বাদ আসর ভোলা সদর উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল জামে মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।

 

বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ মোস্তফা কামালের জন্ম ১৯৪৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর ভোলা জেলার দৌলতখান উপজেলার হাজিপুর গ্রামে। বাবা হাবিলদার মো. হাবিবুর রহমান ও মা মালেকা বেগম। আশির দশকে মেঘনার ভাঙনে তার জন্মগ্রাম বিলীন হয়ে যায়। ১৯৮২ সালে সরকার সদর উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নে মৌটুপি গ্রামে কিছু সম্পত্তিসহ তার বাবা-মার জন্য একটি পাকা বাসভবন নির্মাণ করে তাদের পুনর্বাসিত করে। বর্তমানে এ গ্রামের নাম পরিবর্তন করে বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল নগর রাখা হয়েছে। বাড়ির পাশেই ২০০৮ সালে সরকারিভাবে নির্মাণ করা হয়েছে ‘বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর’।

 

১৯৬৭ সালে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। ৭ মার্চ জাতির পিতার ঐতিহাসিক ভাষণ শুনে তিনি বীরদর্পে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। সিপাহী মোস্তফা কামালের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের ১৬ এপ্রিল ১টি মুক্তিযোদ্ধা দল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দিকে এগিয়ে আসা হানাদার বাহিনীকে ঠেকাতে আখাউড়ার দরুইন গ্রামে অবস্থান নেয়। ১৮ এপ্রিল সকাল ১১টার দিকে শুরু হয় প্রচণ্ড বৃষ্টি। একইসঙ্গে শত্রুর গোলাবর্ষণ। মুক্তিযোদ্ধারাও পাল্টা অবস্থা নিয়ে সম্মুখ যুদ্ধে লিপ্ত হয়। মেশিনগান চালানো অবস্থায় এক মুক্তিযোদ্ধার বুকে গুলি লাগে। মুহূর্তের মধ্যে মোস্তফা কামাল এগিয়ে এসে চালাতে লাগলেন মেশিনগান। গর্জন করে উঠে তার হাতের অস্ত্র। মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে কোন অত্যাধুনিক অস্ত্র ছিল না। সংখায়ও অনেক কম ছিলো তারা। সবাইকে নিরাপদে যেতে অবিরাম গুলি চালাতে থাকেন তিনি। তার গোলাবর্ষণে শত্রুদের থমকে যেতে হয়েছে। মারা পড়েছে বেশ কয়েকজন পাক সেনা। ততক্ষণে দলের অন্য সদস্যরা নিরাপদে পিছু হটেছেন। একসময় মোস্তফা কামালের গুলি শেষ হয়ে যায়। হঠাৎ করেই একটি গুলি এসে লাগে তার বুকে। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। মারা যান মোস্তফা কামাল। তার এমন বীরত্বের কারণে সহযোদ্ধাদের প্রাণ রক্ষা পায়। জাতির এ শ্রেষ্ঠ সন্তানকে দরুইনের মাটিতে সমাহিত করা হয়।

অসীম সাহসিকতার জন্য তাকে সর্বোচ্চ বীরত্বসূচক খেতাব বীরশ্রেষ্ঠ প্রদান করে বাংলাদেশ সরকার।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com