ফ্রান্স সফরে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল হিসেবে খ্যাত প্রাসাদ-সম অট্টালিকায় অবস্থান করছেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। ২০১৫ সালে এই বাড়িটি তিনি কিনেছিলেন। ফ্রান্স সফরে তিনি ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে বৈঠক করবেন।
প্যারিসের বাইরে ভার্সাইয়ের কাছে অবস্থিত শ্যাঁতু লুই ফোরটিন নামের বাড়িটিকে ফরচুন সাময়িকী বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল বাড়ি বলে অভিহিত করেছে। মোট ৫৭ একর জায়গার ওপর তৈরি এই বাড়ি।
চলমান ইউরোপ সফরের অংশ হিসেবে বুধবার গ্রিস থেকে ফ্রান্সে গিয়েছেন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। ২০১৮ সালে সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যার পর এই প্রথম ইউরোপ সফরে গিয়েছেন সৌদি আরবের ৩৬ বছর বয়সী এই ডি ফ্যাক্টো নেতা। সোমবার গ্রিসের উদ্দেশে রিয়াদ ত্যাগ করেন তিনি। সেখানে গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিটসোকিসের সঙ্গে বৈঠক শেষে বুধবার গ্রিস থেকে ফ্রান্সে আসেন তিনি।
যে প্রাসাদে বর্তমানে অবস্থান করছেন সৌদি যুবরাজ, সেখানে একসময় ফ্রান্সের রাজা চতুর্দশ লুইসের একটি দূর্গ ছিল। ঊনবিংশ শতাব্দির সেই দূর্গটির ২০০৯ সালে বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। অবশ্য সেই দূর্গটির কাছাকাছিই ‘ভার্সাইলিস প্যালেস’ নামে ফ্রান্সের রাজপরিবারের আরেকটি প্রাসাদ রয়েছে, সেটিকে যত্নের সঙ্গ সংরক্ষিত রেখেছে ফরাসি সরকার।
শ্যাঁতু লুই ফোরটিন নামের প্রাসাদটিতে রয়েছে একটি নাইটক্লাব, সোনার কারুকাজ খচিত ঝর্না, একটি ছোট আকারের সিনেমা হল এবং একটি বিশাল অ্যাকোরিয়াম। সেই অ্যাকোরিয়াম পরিদর্শনের জন্য একটি আন্ডারওয়াটার গ্লাস চেম্বারও রয়েছে। চেম্বারটি বহুমূল্য সোফা ও অন্যান্য আসাবাবে সজ্জিত।
ফ্রান্সের রাজা চতুর্দশ লুইসের নামাঙ্কিত এই বাসভবনটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১০ সালে। কাকতালীয়ভাবে প্রাসাদটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে খাসোগি পরিবার। ২০০৯ সালে ফ্রান্সের সরকারের কাছ থেকে জমিসহ দূর্গটি কিনে নিয়েছিলেন ফ্রান্সের অন্যতম শীর্ষ রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী ইমাদ খাসোগি, যিনি সম্পর্কে জামাল খাসোগির চাচাত ভাই। ভবনটির প্রথম মালিকও ছিলেন তিনি।
২০১৫ সালে ইমাদ খাসোগি ভবনটি বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে ওই বছরই আন্তর্জাতিক জ্বালানি অনুসন্ধান ও বিপণন কোম্পানি শেলের মাধ্যমে ২৭ কোটি ৫০ লাখ ইউরোতে (৩০ কোটি ডলার) সেটি কিনে নেন মোহাম্মদ বিন সালমান। মার্কিন বাণিজ্য সাময়িকী ফরচুন সে সময় এই প্রাসাদটিকে বিশ্বের সবচেয়ে দামী বাসভবন বলে উল্লেখ করেছিল।
তবে ভবনটি সেসময় কিনলেও হিসেবে নিজের নাম গোপন রেখেছিলেন সৌদি যুবরাজ। ২০১৭ সালে শ্যাঁতু লুই ফোরটিন’র নতুন মালিক হিসেবে নিজের নাম প্রকাশ করেন তিনি।
সৌদি রাজপরিবারের কঠোর সমালোচক হিসেবে পরিচিত সাংবাদিক জামাল খাসোগি মার্কিন দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্টে নিয়মিত লিখতেন। ২০১৮ বিয়ের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু কাগজপত্র তুলতে তুরস্কের সৌদি দূতাবাসে গিয়েছিলেন তিনি।
কিন্তু সেখানে খাসোগিকে হত্যা করে তার মরদেহ জ্বালিয়ে দেওয়া হয় এবং এই হত্যার দায় বর্তায় মোহাম্মদ বিন সালমানের ওপর। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের নেতারা অভিযোগ জানিয়ে আসছিলেন—সৌদি যুবরাজের নির্দেশেই ঘটানো হয় এ হত্যাকাণ্ড।
সৌদি রাজ সিংহাসনের উত্তরাধিকারী অবশ্য সবসময়ই এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন, তবে পশ্চিমা বিশ্বের নেতারা তার বক্তব্যে একেবারেই আস্থা না রাখায় আন্তর্জাতিক বিশ্বে ভাবমূর্তি সংকটে পড়েন মোহাম্মদ বিন সালমান। সে কারণে এতদিন ইউরোপ সফরেও যাননি তিনি।
তবে ইউক্রেনে রুশ বাহিনী বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর পর কিছু পরিবর্তন এসেছে বিশ্বব্যাবস্থায়। রাশিয়ার জ্বালানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে ঝুঁকছে ইউরোপ। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে বৈশ্বিক জ্বালানি নিরাপত্তা বিষয়ে বৈঠক করতেই ফ্রান্সে গেছেন সৌদি যুবরাজ।
সূত্র: সিবিএস নিউজ