বিধ্বস্ত মসজিদের চারপাশে ফিলিস্তিনি মুসলিমরা নামাজ পড়ছেন

ছবি সংগৃহীত

 

ইসরায়েলি বিমান হামলায় বিধ্বস্ত মসজিদের চারপাশে বা ধ্বংসাবশেষের মধ্যেই ফিলিস্তিনি মুসলিমরা নামাজ আদায় করছেন। সোমবার রমজানের প্রথম দিন থেকেই তারা এভাবে নামাজ আদায় করছেন। দেখা গেছে, সোমবার গাজায় বিধ্বস্ত একটি মসজিদে নামাজের নিয়তে হাত বেঁধে একজন ইমামের পেছনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে, কিছু ফিলিস্তিনি পুরুষ নামাজ আদায় করেন। এর আগে রোজার মাসে মসজিদের ধংসস্তুপের মধ্যে নামাজ আদায়ের এমন দৃশ্য কখনো দেখেনি ফিলিস্তিনবাসী। খবর এফপি’র।

 

যুদ্ধ-বিধ্বস্ত অঞ্চল জুড়ে অস্থায়ী শিবিরে বসবাসকারী অনেকেই নামাজে অংশ নিতে পরেননি। তারা তাদের পরিবারের জন্য কিছু খাবারের সন্ধানে রাস্তায় নামেন। ইসরায়েলি বাহিনীর স্থল অভিযানে খান ইউনিসে নিজ পরিবারের জন্য তৈরি করা এক বাড়ির মালিক জাকি হুসেইন আবু মনসুর বলেন, “আমার ইচ্ছে হয়, বিমানগুলি আমার ওপর বোমা ফেলুক এবং আমি তাতে মারা যাই।” ৬৩ বছর বয়সী  মনসুর এএফপিকে বলেন, “এই জীবনের চেয়ে মরে যাওয়া ভালো। কখনও কখনও আমাদের প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো বাজারে দেখি, কিন্তু আমরা সেগুলি কিনতে অক্ষম।”

 

এই রমজানে গাজায় বঞ্চনার রূপই যেন স্বাভাবিক হয়ে দেখা দিয়েছে। রাফাহ’র বাজারে খাদ্য সামগ্রীর সঙ্কট দেখা দিয়েছে। কয়েকটি দোকানে ঐতিহ্যগতভাবে রমজানে বিক্রি হওয়া ‘কাতায়েফ’ নামে এক ধরনের মিষ্টান্ন পাওয়া যাচ্ছে। রোজার মাসে সাধারণত রাস্তায় যে উজ্জ্বল আলো ও সাজসজ্জা শোভা পায়, তা স্পষ্টতই অনুপস্থিত। তবে কিছু কিছু স্টলে রমজানের ফানুস প্রদর্শন করা হচ্ছে। গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে বাস্তুচ্যুত হওয়া ও বর্তমানে রাফাহতে আশ্রয় নেয়া ৩৯ বছর বয়সী মাইসা আল-বালবিসি বলেন, “আমরা শাকসবজির দামও দিতে পারি না, ফলের কথা ছেড়ে দিন।” দুই সন্তানের মা তার তাঁবুর কাছে এএফপিকে বলেন, “সবকিছুই খুব দামি। বাচ্চাদের ও আমার জন্য আমি কিছুই কিনতে পারছি না। এমনকি সবচেয়ে সাধারণ জিনিসের দামও আকাশচুম্বী হয়েছে।”

 

৭ অক্টোবরে হামাসের হামলার প্রতিশোধ নিতে ইসরায়েলের নিরবচ্ছিন্ন সামরিক অভিযানের মধ্যে ফিলিস্তিনিরা এই বছর রমজান পালন করছেন। সরকারি ইসরায়েলি পরিসংখ্যানের উপর ভিত্তি করে এএফপির তথ্য অনুযায়ী, হামাসের ওই অভিযানে প্রায় ১ হাজার ১৬০ জন নিহত হয়, যাদের  বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। আর, হামাস পরিচালিত অঞ্চলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অনুসারে, হামাসকে নির্মূল করার লক্ষ্যে ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক অবিরাম হামলায় অন্তত ৩১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

 

বাস্তুচ্যুতদের জন্য জনাকীর্ণ শিবিরে বাধ্য হয়ে বসবাসকারিদের খাদ্য ঘাটতি ও অস্বাস্থ্যকর অন্ধকারাচ্ছন্ন জীবনযাত্রার বাস্তবতা পবিত্র মাসের উৎসবের মেজাজকে ম্লান করে দিয়েছে। জাতিসংঘের মতে, রাফাতে আশ্রয়প্রার্থী দেড়কোটি মানুষের বেশিরভাগই খাবার, পানি ও ওষুধ পাচ্ছে না। এর আগে, ইসরায়েল ও মিশরের গাজা উপত্যকার দীর্ঘ অবরোধ সত্ত্বেও, পূর্ববর্তী বছরগুলোতে রমজানের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্যগুলো পাওয়া যেত।

 

এবার রমজানের প্রথম দিনে সূর্য উদিত হওয়ার সাথে সাথে রাফাহ জুড়ে বিমান হামলার ধোঁয়া দেখা যায়। ৫০ বছর বয়সী আউনি আল-কায়য়াল বলেন, তিনি জেগে ওঠার সাথে সাথে মৃতদেহ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স দেখতে পান। তিনি এএফপিকে বলেন, “রমজানের শুরুটা ছিল দুঃখজনক ও হতাশাব্যঞ্জক, সর্বত্র রক্তের গন্ধ ও দুর্গন্ধ। আমি আমার তাঁবুতে  জেগে উঠেছি এবং এ অবস্থা দেখে কাঁদতে শুরু করেছি।” সূএ:-বাসস

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» নতুন মায়েরা সকালে এই ৫ সুপারফুড খান

» হার্ট অ্যাটাক পরবর্তী ১ থেকে ২ ঘণ্টা কেন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ?

» বিশ্বের সবচেয়ে দামি খাবার ক্যাভিয়ার আসলে কী?

» এশিয়া কাপ থেকে বিদায় বাংলাদেশ, ফাইনালে ভারত

» মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় স্কুলশিক্ষক নিহত

» সহিংসতায় আহতদের চিকিৎসা ও আয়ের ব্যবস্থা করবে সরকার: প্রধানমন্ত্রী

» সজীব ওয়াজেদ জয়ের ৫৩তম জন্মবার্ষিকী আগামীকাল

» অলিম্পিক উদ্বোধনের আগে ফ্রান্সের রেল নেটওয়ার্কে ভয়াবহ হামলা

» যুবলীগ কর্মী জুয়েলকে হত্যার পর গাছে ঝুলিয়ে রাখে জামায়াত-শিবির ক্যাডাররা

» কেন বিষাক্ত মানুষদের ছেঁটে ফেলতে বললেন পরিণীতি?

উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

বিধ্বস্ত মসজিদের চারপাশে ফিলিস্তিনি মুসলিমরা নামাজ পড়ছেন

ছবি সংগৃহীত

 

ইসরায়েলি বিমান হামলায় বিধ্বস্ত মসজিদের চারপাশে বা ধ্বংসাবশেষের মধ্যেই ফিলিস্তিনি মুসলিমরা নামাজ আদায় করছেন। সোমবার রমজানের প্রথম দিন থেকেই তারা এভাবে নামাজ আদায় করছেন। দেখা গেছে, সোমবার গাজায় বিধ্বস্ত একটি মসজিদে নামাজের নিয়তে হাত বেঁধে একজন ইমামের পেছনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে, কিছু ফিলিস্তিনি পুরুষ নামাজ আদায় করেন। এর আগে রোজার মাসে মসজিদের ধংসস্তুপের মধ্যে নামাজ আদায়ের এমন দৃশ্য কখনো দেখেনি ফিলিস্তিনবাসী। খবর এফপি’র।

 

যুদ্ধ-বিধ্বস্ত অঞ্চল জুড়ে অস্থায়ী শিবিরে বসবাসকারী অনেকেই নামাজে অংশ নিতে পরেননি। তারা তাদের পরিবারের জন্য কিছু খাবারের সন্ধানে রাস্তায় নামেন। ইসরায়েলি বাহিনীর স্থল অভিযানে খান ইউনিসে নিজ পরিবারের জন্য তৈরি করা এক বাড়ির মালিক জাকি হুসেইন আবু মনসুর বলেন, “আমার ইচ্ছে হয়, বিমানগুলি আমার ওপর বোমা ফেলুক এবং আমি তাতে মারা যাই।” ৬৩ বছর বয়সী  মনসুর এএফপিকে বলেন, “এই জীবনের চেয়ে মরে যাওয়া ভালো। কখনও কখনও আমাদের প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো বাজারে দেখি, কিন্তু আমরা সেগুলি কিনতে অক্ষম।”

 

এই রমজানে গাজায় বঞ্চনার রূপই যেন স্বাভাবিক হয়ে দেখা দিয়েছে। রাফাহ’র বাজারে খাদ্য সামগ্রীর সঙ্কট দেখা দিয়েছে। কয়েকটি দোকানে ঐতিহ্যগতভাবে রমজানে বিক্রি হওয়া ‘কাতায়েফ’ নামে এক ধরনের মিষ্টান্ন পাওয়া যাচ্ছে। রোজার মাসে সাধারণত রাস্তায় যে উজ্জ্বল আলো ও সাজসজ্জা শোভা পায়, তা স্পষ্টতই অনুপস্থিত। তবে কিছু কিছু স্টলে রমজানের ফানুস প্রদর্শন করা হচ্ছে। গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে বাস্তুচ্যুত হওয়া ও বর্তমানে রাফাহতে আশ্রয় নেয়া ৩৯ বছর বয়সী মাইসা আল-বালবিসি বলেন, “আমরা শাকসবজির দামও দিতে পারি না, ফলের কথা ছেড়ে দিন।” দুই সন্তানের মা তার তাঁবুর কাছে এএফপিকে বলেন, “সবকিছুই খুব দামি। বাচ্চাদের ও আমার জন্য আমি কিছুই কিনতে পারছি না। এমনকি সবচেয়ে সাধারণ জিনিসের দামও আকাশচুম্বী হয়েছে।”

 

৭ অক্টোবরে হামাসের হামলার প্রতিশোধ নিতে ইসরায়েলের নিরবচ্ছিন্ন সামরিক অভিযানের মধ্যে ফিলিস্তিনিরা এই বছর রমজান পালন করছেন। সরকারি ইসরায়েলি পরিসংখ্যানের উপর ভিত্তি করে এএফপির তথ্য অনুযায়ী, হামাসের ওই অভিযানে প্রায় ১ হাজার ১৬০ জন নিহত হয়, যাদের  বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। আর, হামাস পরিচালিত অঞ্চলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অনুসারে, হামাসকে নির্মূল করার লক্ষ্যে ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক অবিরাম হামলায় অন্তত ৩১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

 

বাস্তুচ্যুতদের জন্য জনাকীর্ণ শিবিরে বাধ্য হয়ে বসবাসকারিদের খাদ্য ঘাটতি ও অস্বাস্থ্যকর অন্ধকারাচ্ছন্ন জীবনযাত্রার বাস্তবতা পবিত্র মাসের উৎসবের মেজাজকে ম্লান করে দিয়েছে। জাতিসংঘের মতে, রাফাতে আশ্রয়প্রার্থী দেড়কোটি মানুষের বেশিরভাগই খাবার, পানি ও ওষুধ পাচ্ছে না। এর আগে, ইসরায়েল ও মিশরের গাজা উপত্যকার দীর্ঘ অবরোধ সত্ত্বেও, পূর্ববর্তী বছরগুলোতে রমজানের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্যগুলো পাওয়া যেত।

 

এবার রমজানের প্রথম দিনে সূর্য উদিত হওয়ার সাথে সাথে রাফাহ জুড়ে বিমান হামলার ধোঁয়া দেখা যায়। ৫০ বছর বয়সী আউনি আল-কায়য়াল বলেন, তিনি জেগে ওঠার সাথে সাথে মৃতদেহ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স দেখতে পান। তিনি এএফপিকে বলেন, “রমজানের শুরুটা ছিল দুঃখজনক ও হতাশাব্যঞ্জক, সর্বত্র রক্তের গন্ধ ও দুর্গন্ধ। আমি আমার তাঁবুতে  জেগে উঠেছি এবং এ অবস্থা দেখে কাঁদতে শুরু করেছি।” সূএ:-বাসস

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com