রমজান এবং ঈদুল ফিতরকে লক্ষ্য করে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারীরা রাজধানীর বিভিন্ন অলি-গলিতে ওৎপেতে থাকে। সুযোগ পাওয়া মাত্রই তারা পথচারী, রিকশা আরোহী, যানজটে থাকা সিএনজি, অটোরিকশার যাত্রীদের ধারালো অস্ত্র প্রদর্শন করে সর্বস্ব লুটে নেয়। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ কিছু বাজারে গাড়ী প্রবেশ করা মাত্রাই চাঁদা নির্ধারণ করে দেয় এবং জোরপূর্বক সেটা আদায়ও করে নেয় তারা।
রাজধানীতে পৃথক ১৫টি অভিযানে এই চক্রের ৫৩জন ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- আওয়াল (৪৫), আতিক (৩৫), আলাউদ্দিন (৪৫), ইসমাইল (৫৪), জুয়েল (৪৩), দুলাল (৪৫), বদির উদ্দিন বাবু (৫০), বাবুল (৫২), বাবুল হাওলাদার (৪৯), মোস্তফা হাওলাদার (৫০), সাহেব আলী (৫৪), তানভির (৪০), জালাল হোসেন (৩০), নিয়ামুল হোসেন (২৯), ময়নুল হোসেন (৪৫), মিন্টু খান (২৫), মেনু মিয়া (৩৮), ইং রনি (৩১), রানা (২৪), রানা সরকার (৩৫), মহসীন (২৫), রনজিৎ দাস (৪৮), রাসেল শিকদার (২১), হারেজ (৪৩), বাদশা (২৯), আল আমীন সর্দার (২০), শহীদ (২৭), রাজু (৩৫), রফিক (২৫), রোমান (৪২), আকবর (২০), ইমন (১৯), রাব্বি (১৯), হৃদয় (১৯), হোসেন (১৯), আল আমিন (২২), ইসমাইল হোসেন (২২), নাইমুল ইসলাম মিশু (২৫), নুরুল হক (২৫), রতন (২২), রাব্বি (১৯), শফিকুল ইসলাম (২৪), সাগর হোসেন শামীম (২০), উজ্জল মিয়া (২০), আক্কাছ (৫০), ইউছুফ (৩২), জাহিদ (৪৪), মুন্সি মুছা আহমেদ (৫২), রবিন মিয়া (৩২), সাগর (২৭), সুজন (৪৫), সোহাগ মৃধা (৩২) ও সোহেল সরকার (৩১)।
এসময় তাদের কাছ থেকে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৭৩০ টাকা, ৬০ টি মোবাইল ও ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত ৪৫ টি দেশিয় অস্ত্র উদ্ধার।
মঙ্গলবার ভোররাতে রাজধানীর রমনা, খিলগাঁও, হাতিরঝিল, শাহজাহানপুর, পল্টন, মতিঝিল, শাহবাগ ও ওয়ারী এলাকা থেকে সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজ ও ছিনতাইকারী চক্রের মূলহোতাসহ ৩৩ জন চাঁদাবাজ ও ২০ জন ছিনতাইকারীসহ ৫৩ জন গ্রেফতার করা হয়।
র্যাব-৩ জানায়, তারা দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার সবজি ও ফলের দোকান, ফুটপাতের অস্থায়ী দোকান, লেগুনা স্ট্যান্ড এবং মালবাহী গাড়ী হতে অবৈধভাবে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করে আসছিল। তারা আরও জানায় যে, রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমান দোকানসমূহের মালিকদেরকে ভয়ভীতি দেখিয়ে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রত্যেক দোকানদারদের কাছ থেকে তারা দৈনিক ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা হারে চাঁদা আদায় করতো।
ওয়ারী থানাধীন কাপ্তান বাজারে চাঁদাবাজি শুরু হয় মূলত রাত ১২ টার পর থেকে, চলে ভোররাত পর্যন্ত। পোল্ট্রি মুরগী বহনকারী কোনো গাড়ি এই বাজারে প্রবেশ করা মাত্রই গাড়ির ধরন ও মুরগীর পরিমান এর উপর নির্ভর করে চাঁদার পরিমান ঠিক করে দেয়া হয় এবং জোরপূর্বক তা আদায় করা হয়। কেউ যদি চাঁদা না দেয় তাহলে নানাভাবে হয়রানি করার উদ্দেশ্যে গাড়ির মালামাল আনলোড/বিক্রিতে ইচ্ছাকৃতভাবে বাধা সৃষ্টি করা হত। তাছাড়াও যেসব গাড়িতে তুলনামূলকভাবে ছোট/অসুস্থ/মৃত মুরগী পাওয়া যায় তাদেরকে বেশি চাঁদা দিতে হয়। প্রতিরাতে এখান থেকে কয়েক লাখ টাকা চাঁদা সংগ্রহ করা হয়।
রমনা থানাধীন শান্তিনগরে মূলত রাস্তার ধারে ভাসমান দোকান থেকে নির্দিষ্ট হারে প্রতিদিন চাঁদা আদায় করা হয়। সকাল ও বিকাল দুই শিফটে চাঁদা আদায় করা হয়। এই কাজে ৪/৫ জনের একটি গ্রুপ জড়িত। প্রতিদিন এখান থেকে প্রায় লক্ষাধিক টাকা উত্তোলন করা হয়। চাঁদার টাকা না দিলে তারা নিরীহ দোকানদারদের হুমকি প্রদান করে এবং তাদের হাতে থাকা লাঠি দিয়ে মার পিট করতো।
তাদের কথা মতো কেউ চাঁদার টাকা না দিলে দোকান বসতে দেওয়া হবে না বলে দোকানদারদের হুমকি দেয়া হয়। লেগুনা স্ট্যান্ডে তাদের কথা মত কেউ চাঁদার টাকা না দিলে এই রুটে কোনো লেগুনা চলতে দেওয়া হবে না মর্মে হুমকি প্রদান করে। তখন লেগুনা চালকরা পেটের দায়ে বিনা প্রতিবাদে চাঁদা পরিশোধ করতে বাধ্য হয়। এ সকল চাঁদাবাজদের আইনের আওতায় আনার ফলে নিরীহ দোকানদার ও লেগুনা চালকদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
পবিত্র মাহে রমজান এবং ঈদুল ফিতরকে লক্ষ্য করে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারীরা রাজধানীর বিভিন্ন অলি-গলিতে ওৎপেতে থাকে। সুযোগ পাওয়া মাত্রই তারা পথচারী, রিকশা আরোহী, যানজটে থাকা সিএনজি, অটোরিকশার যাত্রীদের ধারালো অস্ত্র প্রদর্শন করে সর্বস্ব লুটে নিত। ইফতারের সময় এবং সেহেরির পর তুলনামূলক জনশূন্য রাস্তায় ছিনতাইকারীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তাদের ছিনতাইকাজে বাধা দিলে তারা নিরীহ পথচারীদের প্রাণঘাতী আঘাত করতে দ্বিধা বোধ করতো না।
রাজধানীবাসী এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে রাজধানীতে আগত যাত্রীরা যেন নিরাপদে ঈদের কেনাকাটা করে নির্বিঘ্নে স্বস্তির সাথে বাড়ি ফিরে যেতে পারেন এবং ব্যবসায়ীরা নির্ভয়ে চাঁদাবাজমুক্ত পরিবেশে ব্যবসা করতে পারেন, এ লক্ষ্য ভবিষ্যতে সকল চাঁদাবাজ ও ছিনতাইকারী চক্রের বিরুদ্ধে র্যাবের সাড়াঁশি অভিযান অব্যাহত থাকবে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।