বাংলাদেশ-মালয়েশিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করা হয়েছে। আগামীতে এ সম্পর্ককে আরও বিকশিত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশকে স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় মালয়েশিয়া।
বুধবার (৩০ মার্চ) রাজধানী কুয়ালালামপুরের জেডব্লিউ মেরিয়ট হোটেলের হলরুমে বাংলাদেশ হাইকমিশনের আয়োজনে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন করা হয়েছে। উভয় দেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। পরে কেক কাটা ও বাংলাদেশি শিল্পীদের মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
মালয়েশিয়ার সিনিয়র মিনিস্টার (ওয়ার্কস) দাতুক সেরী ফাদিল্লাহ ইউসুফ বলেন, বাংলাদেশ মালয়েশিয়ার বন্ধুরাষ্ট্র ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক অংশীদার। উভয় দেশের চলমান ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। উভয় দেশ বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়াতে কাজ করতে পারে। মালয়েশিয়া বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বাড়াতে আগ্রহী।
বাংলাদেশের ধারাবাহিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, দুদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে। জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ভিশন-২০৪১ রূপকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশ উন্নত বিশ্বের কাতারে শামিল হতে চলেছে।
তিনি বলেন, বিদেশি বিনিয়োগে মালয়েশিয়ার অবস্থান নবম। বাংলাদেশ তৈরি পোশাক, পাটজাত পণ্য, প্লাস্টিক, হালকা যন্ত্রপাতি ও চামড়াজাত পণ্যসহ বিভিন্ন পণ্য মালয়েশিয়ায় রপ্তানি করছে। বাংলাদেশ ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে ৩০৬ দশমিক ৫৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য মালয়েশিয়ায় রপ্তানি করেছে। একই সময়ে ১ হাজার ৫৭৬ দশমিক ৮৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি করেছে।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ১০০টি স্পেশাল ইকোনমিক জোন গড়ে তোলার কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। অনেকগুলোর কাজ প্রায় শেষের পথে। এখানে মালয়েশিয়া ফার্নিচার, কৃষিপণ্য প্রসেসিংসহ সংশ্লিষ্ট শিল্পখাতে বিনিয়োগ করলে লাভবান হবে। বাংলাদেশ সরকার বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে।
সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, বর্তমানে মালয়েশিয়ায় ২৮ হাজারের অধিক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। তাদের মাধ্যমে বিস্তৃত হচ্ছে দুদেশের সাংস্কৃতিক বন্ধন। এছাড়া উপযোগী ও অনুকূল পরিবেশ থাকায় প্রতিবছর দেড় লাখের বেশি বাংলাদেশি মালয়েশিয়া ভ্রমণে আসেন।
তিনি বলেন, মালয়েশিয়ায় কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীরা সততা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান তৈরি করে নিয়েছেন। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে বাংলাদেশি কর্মীর ব্যাপক চাহিদা। অনেক কোম্পানি কর্মী হিসেবে বাংলাদেশিদের পছন্দ করে। কারণ বাংলাদেশি কর্মীরা কর্মঠ। গত ১৯ ডিসেম্বর দুদেশের মধ্যকার শ্রম রপ্তানির এমওইউ সই হয়েছে। বাংলাদেশি কর্মীদের কল্যাণ নিশ্চিতে কাজ করছে দুদেশ।
অনুষ্ঠানে মালয়েশিযায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. গোলাম সারোয়ার স্বাগত বক্তব্যে বন্ধুপ্রতীম দুদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের চিত্র তুলে ধরেন।
বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, মালয়েশিয়া সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস ও ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানটি প্রাণবন্ত হয়ে উঠে। এছাড়া সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার উজ জামান, আইজিপি বেনজীর আহমেদ, বাংলাদেশ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, বাংলাদেশ কমিউনিটি নেতারা ও হাইকমিশনের কর্মকর্তারাও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। সূএ:জাগোনিউজ২৪.কম