সিইসি ও নির্বাচন কমিশনারদের মেয়াদ শেষ হওয়ায় হঠাৎই সচিবালয়ে কর্মকর্তাদের বদলি করা হচ্ছে। অনেকে ব্যক্তিগত রেষারেষির কারণেও বদলি হচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
গত দুই দিনে চারটি পৃথক প্রজ্ঞাপনে বরিশাল ও সিলেট বিভাগের দুই অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, দুই জেলার সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, সাত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও দুই জেলার অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। এ ছাড়া পৃথক আদেশে সদ্য বিদায়ী নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার ও কবিতা খানমের ব্যক্তিগত কর্মকর্তার দফতর বদল করা হয়েছে। জানা গেছে, সিইসি ও চার নির্বাচন কমিশনারের একান্ত সচিবদের বদলি করার চিন্তাভাবনা চলছে। যে কোনো সময় তাদের বদলির আদেশ জারি হতে পারে। এ ছাড়া ইসি সচিবালয়, এনআইডি উইং, নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের যারা একই শাখায় সাত থেকে ১০ বছর ধরে কাজ করছেন তাদের যে কোনো সময় বদলি করা হতে পারে।
ইসি সচিবালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বলছেন, রদ-বদলি রুটিন কাজ। হঠাৎ করে কাউকে বদলি করা হচ্ছে না। অনেকেই তিন বছরের বেশি সময় ধরে ইসি সচিবালয়ে রয়েছেন। কেবল তাদেরই বদলি করা হচ্ছে। অনেকের দফতর বদল করা হচ্ছে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে নির্বাচনী অনিয়মের কারণে কিছু বদলি হচ্ছে। আবার দেশব্যাপী ইউনিয়ন পরিষদসহ অন্যান্য নির্বাচন চলার কারণে কিছু বদলি আদেশ স্থগিত ছিল। সে বদলিগুলো এখন জারি হচ্ছে। এ ছাড়া আগামীতে মাঠ কর্মকর্তাদের ইসি সচিবালয়ে কাজ শেখার সুযোগ দিতে আরও রদ-বদলি হবে। এদিকে হঠাৎ এ বদলির বিষয়ে দুই ধরনের কথা বলছেন ইসি কর্মকর্তারা। কেউ বলছেন ইসি সচিবালয়ে অনেকেই ১০ থেকে ১২ বছর ধরে একই দফতরে কাজ করছেন। অনেকেই রয়েছেন চার-পাঁচ বছর ধরে একই দফতরে। তাই ইসি সচিবালয় নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যারা একই দফতরে তিন বছরের বেশি সময় ধরে রয়েছেন তাদের মাঠ পর্যায়ে বদলি করা হবে। এ ক্ষেত্রে মাঠ কর্মকর্তাদের ইসি সচিবালয়ে কাজের সুযোগ দেওয়া হবে। যাতে মাঠ কর্মকর্তারাও ইসি সচিবালয়ে কাজ শেখার সুযোগ পান। অনেকের অভিযোগ, হঠাৎ করে ঢাকা থেকে মাঠ পর্যায়ে বদলি করা হলে তারা পরিবার নিয়ে বিপদে পড়বেন। আবার মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারাও দীর্ঘদিন জেলা-উপজেলায় থাকায় ক্ষুব্ধ রয়েছেন ইসি সচিবালয় কর্মকর্তাদের ওপর। তাদের বক্তব্য, যাদের লবিং বেশি তারা ইসি সচিবালয়ে আছেন ১০ থেকে ১২ বছর ধরে। আর যাদের লবিং নেই তারা মাঠ পর্যায় থেকে ইসি সচিবালয়ে আসতে পারছেন না।
জানা গেছে, ইসি সচিবালয়ের সব কর্মকর্তা আতঙ্কে রয়েছেন বদলি নিয়ে। কাকে কখন কোথায় বদলি করা হবে তা কেউ জানেন না। তাদের ভাষায়, ক্ষমতা বদলের মতো অবস্থা বিরাজ করছে নির্বাচন কমিশনে।
অনেক কর্মকর্তা বলছেন, নির্বাচন কমিশন শূন্য থাকায় হঠাৎ করেই চলছে রদবদল। কেননা নির্বাচন কমিশন থাকলে বদলির ক্ষেত্রে অন্তত সচিবালয়কে জবাবদিহির মুখোমুখি হতে হতো। যেহেতু ইসি নেই তাই যাকে খুশি বদল করা হচ্ছে। জানা গেছে, গত দুই দিনে ১৮ কর্মকর্তাকে রদবদল করা হয়েছে।
১৪ ফেব্রয়ারি এক প্রজ্ঞাপনে তিনজনকে বদলি করা হয়। এর মধ্যে বাগেরহাট জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে সাতক্ষীরায়। সাতক্ষীরার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে আনা হয়েছে ইসি সচিবালয়ে। বরিশালের অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে বাগেরহাটে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে- বদলি কর্মকর্তারা ১৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বর্তমান কর্মস্থল থেকে মুক্ত হবেন। অন্যথায় ১৭ ফেব্রুয়ারি তাৎক্ষণিক অবমুক্ত বলে গণ্য হবেন।
অন্য এক প্রজ্ঞাপনে যশোরের সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে বগুড়ায়। কুষ্টিয়ার সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে দেওয়া হয়েছে যশোরে। সিলেটের অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে কুষ্টিয়ার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে। নাটোরের জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে আনা হয়েছে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে। দিনাজপুরের অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে দেওয়া হয়েছে নাটোরে।
১৪ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে নরসিংদীর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে বদরি করা হয়েছে নোয়াখালী। নোয়াখালীর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে দেওয়া হয়েছে নরসিংদী। একই দিনে আরেক প্রজ্ঞাপনে ভোলার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে দেওয়া হয়েছে মাদারীপুরে। পটুয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে ভোলার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে। গতকাল প্রকাশিত এক আদেশে সদ্য বিদায়ী নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার ও কবিতা খানমের ব্যক্তিগত কর্মকর্তার দফতর বদল করা হয়েছে। তাদের একজনকে দেওয়া হয়েছে পরিকল্পনা উন্নয়ন ও গবেষণা শাখায়, আরেকজনকে সংস্থাপন অধিশাখায়। এ ছাড়া তিন ব্যক্তিগত কর্মকর্তার দফতর বদল করা হয়েছে। সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন