বঙ্গোপসাগরের বুকে অনন্য দ্বীপ চর বিজয়

চারদিকে অথই জলরাশি, আর শুধু ধু-ধু বালু। বঙ্গোপসাগরের বুক চিরে জেগে ওঠা এক অনন্য ভুবন ‘চর বিজয়’। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেনা-অচেনা পাখির কলকাকলীতে মুখরিত থাকে এ চরে। বালিয়াড়িতে অগণিত লাল কাঁকড়া নৃত্য। এ যেন ভিন্ন নয়নাভিরাম নীল দিগন্তবিস্তৃত অপরূপ সৌন্দর্যের হাতছানি। গঙ্গামতী সৈকত থেকে দক্ষিণ-পূর্ব কোণে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে গভীর এ দ্বীপটির অবস্থান। তবে কুয়াকাটায় আগত দেশী-বিদেশী পর্যটকদের কাছে যোগ হয়েছে এক নতুন মাত্রা। এ দ্বীপটি পর্যটন শিল্পে ঘটবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এমন প্রত্যাশা করেছেন আগত পর্যটকসহ ট্যুরিস্ট ব্যবসায়িরা।

 

স্থানীয় ও ট্যুরিস্ট ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গেছে, বর্ষা মৌসুমে পানিতে ডুবে থাকলেও শীত মৌসুমে প্রায় পাঁচ হাজার একর আয়তন নিয়ে জেগে ওঠে এ চর। ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছের অভয়ারণ্য হওয়ায় সারা বছর এর আশপাশে থাকে জেলেদের উপস্থিতি। ভ্রমণপিপাসুদের একটি দল এই দ্বীপের সন্ধান পায়। জেলেদের ভাষায় ‘হাইরের চর’ হলেও এটির নাম দেয়া হয়েছে ‘চর বিজয়’।

 

বিজয়ের মাসে চরটি আবিষ্কার হয় বলেই চর শব্দের সঙ্গে বিজয় শব্দটি যুক্ত করে লাল সবুজের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন তারা। পরে জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে বন বিভাগ ওই চরে গোল, ছইলা, কেওড়া ও সুন্দর গাছের চারা রোপন করে। বর্তমানে অস্থায়ী বাসস্থান তৈরি করে মাছ শিকার ও শুঁটকি প্রক্রিয়াজাত করে জেলেরা। এর ফলে ওই চরে লাল কাকড়ার ছুটাছুটি ও অতিথি পাখির অবাধ বিচরনে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে বলে একাধিক পর্যটকরা জানিয়েছেন।

পর্যটন সংশ্লিষ্ট সংগঠন কুয়াকাটা টুরিজাম ম্যানেজম্যন্ট অ্যাসোসিয়েশন কুটুমের সাধারন সম্পাদক হোসাইন আমির বলেন, সে দিন ছিল ২০১৭ সালের ৩ ডিসেম্বর। সৈকতের একটি চায়ের দোকানে বসে আমারা কয়েক জন মিলে কথা বলছিলাম নুতন জায়গায় বেড়াতে যাব। হঠাৎ করে এক জেলে বলেন ভাই সাগরের মাঝে জেগে উঠেছে বিশাল একটি চর। তখন বুদ্ধি করলাম কিভাবে যাব। পরে ফেসবুক আইডিতে একটি পোস্ট দিলাম “নতুনের সন্ধানে আমরা” যাচ্ছি, আপনারাও সঙ্গী হতে পারেন। এরপর ২০১৭ সালে ৫ ডিসেম্বর কয়েক জন মিলে ট্রলার যোগে ওই চরে যাই। এর পর শুরু হয় এ চরটির শুভ সূচনা। প্রতিবছর শীত মৌসুমে কয়েক লাখ অতিথি পাখির আগমন ঘটে। আর শীত কমে আবার পাখিগুলো যে যার মতো অন্যত্র চলে যায়। প্রতিদিনই পর্যটকরা ট্রলার যোগে এ চরটিকে দেখতে যায়। কুয়াকাটা সৈকত থেকে ট্যুরিস্ট বোট নিয়ে মাত্র দেড় ঘণ্টায় চরবিজয় পৌঁছানো যায়। বঙ্গোপসাগরের বুকে এ যেন এক অনন্য ভুবন ‘চর বিজয়।

 

তবে ইউএসএইড ওয়ার্ল্ড ফিস ইকোফিস-২ এক্টিভিটি প্রকল্পের সহযোগী গবেষক সাগরিকা স্মৃতি এ চরটি থেকে ফিরে এসে বলেন, এই চরটিতে প্রতিনিয়ত পর্যটকরা যাচ্ছে। আরা তাদের ফেলে রাখা প্লাষ্টিক বর্জ দূষন বাড়াচ্ছে। এছাড়া পর্যটকদের সমাগমের কারনে অতিথি পাখি, ললা কাঁকড়া ও সামুদ্রিক কচ্ছপের অবাধ বিচরন কমে যাবে বলে তিনি ধারনা করেন। এছাড়া এই চরটির আশপাশে ছোট ফাঁসের জাল দিয়ে জেলেরা বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক মাছের পোনা নিধন করছে। তবে জেলেদের পাতা জালে অতিথি পাখিও মারা পড়ছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

 

মহিপুর বনবিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, চরটিতে পর্যায়ক্রমে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের আওতায় আনা হবে। পশু পাখির অভয়ারন্য গড়ে তোলার জন্য বেশ কিছু ম্যানগ্রোভ জাতীয় গাছের চারা রোপন করার পরিকল্পনা রয়েছে।
কুয়াকাটা পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, সাগরের মধ্যখানে একটুকরা ভূমি। এটি কুয়াকাটার জন্য আর্শীবাদ। তবে পযটকদের ভ্রমনের জন্য চর বিজয়কে আকর্ষনিয় পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে তোলার দাবি করেছেন তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক সাংবাদিকদের জানান, জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে চর বিজয়ে সবুজ বেষ্টনী করার পরিকল্পনা রয়েছে।সূএ:বাংলাদেশে প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» বাংলাদেশ-ভারত প্রথম টি-টোয়েন্টিতে নিরাপত্তায় ২,৫০০ পুলিশ মোতায়েন

» নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হবে কিনা তা নিশ্চিত নয় বাইডেন

» আজও বন্ধ ঢাকা থেকে উপকূলের ৬ রুটে নৌযান চলাচল

» জুতা-বার্গার, অদ্ভুত আকৃতির গাড়ি বানানোই নেশা তার

» উপদেষ্টাদের পাশে এখনো আওয়ামী লীগের প্রেতাত্মারা: ফারুক

» তেলবাহী ট্যাংকারে আগুন, ৪৮ ক্রু উদ্ধার

» স্বৈরাচারীদের রাজনীতি করার কোনও অধিকার নেই: কর্নেল অলি

» অস্ত্রসহ তিন সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার

» ওয়ান শুটারগান ও চার রাউন্ড গুলি উদ্ধার

» ফ্রিজের খাবার খেলে হতে পারে ইউরিন ইনফেকশন!

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

বঙ্গোপসাগরের বুকে অনন্য দ্বীপ চর বিজয়

চারদিকে অথই জলরাশি, আর শুধু ধু-ধু বালু। বঙ্গোপসাগরের বুক চিরে জেগে ওঠা এক অনন্য ভুবন ‘চর বিজয়’। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেনা-অচেনা পাখির কলকাকলীতে মুখরিত থাকে এ চরে। বালিয়াড়িতে অগণিত লাল কাঁকড়া নৃত্য। এ যেন ভিন্ন নয়নাভিরাম নীল দিগন্তবিস্তৃত অপরূপ সৌন্দর্যের হাতছানি। গঙ্গামতী সৈকত থেকে দক্ষিণ-পূর্ব কোণে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে গভীর এ দ্বীপটির অবস্থান। তবে কুয়াকাটায় আগত দেশী-বিদেশী পর্যটকদের কাছে যোগ হয়েছে এক নতুন মাত্রা। এ দ্বীপটি পর্যটন শিল্পে ঘটবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এমন প্রত্যাশা করেছেন আগত পর্যটকসহ ট্যুরিস্ট ব্যবসায়িরা।

 

স্থানীয় ও ট্যুরিস্ট ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গেছে, বর্ষা মৌসুমে পানিতে ডুবে থাকলেও শীত মৌসুমে প্রায় পাঁচ হাজার একর আয়তন নিয়ে জেগে ওঠে এ চর। ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছের অভয়ারণ্য হওয়ায় সারা বছর এর আশপাশে থাকে জেলেদের উপস্থিতি। ভ্রমণপিপাসুদের একটি দল এই দ্বীপের সন্ধান পায়। জেলেদের ভাষায় ‘হাইরের চর’ হলেও এটির নাম দেয়া হয়েছে ‘চর বিজয়’।

 

বিজয়ের মাসে চরটি আবিষ্কার হয় বলেই চর শব্দের সঙ্গে বিজয় শব্দটি যুক্ত করে লাল সবুজের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন তারা। পরে জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে বন বিভাগ ওই চরে গোল, ছইলা, কেওড়া ও সুন্দর গাছের চারা রোপন করে। বর্তমানে অস্থায়ী বাসস্থান তৈরি করে মাছ শিকার ও শুঁটকি প্রক্রিয়াজাত করে জেলেরা। এর ফলে ওই চরে লাল কাকড়ার ছুটাছুটি ও অতিথি পাখির অবাধ বিচরনে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে বলে একাধিক পর্যটকরা জানিয়েছেন।

পর্যটন সংশ্লিষ্ট সংগঠন কুয়াকাটা টুরিজাম ম্যানেজম্যন্ট অ্যাসোসিয়েশন কুটুমের সাধারন সম্পাদক হোসাইন আমির বলেন, সে দিন ছিল ২০১৭ সালের ৩ ডিসেম্বর। সৈকতের একটি চায়ের দোকানে বসে আমারা কয়েক জন মিলে কথা বলছিলাম নুতন জায়গায় বেড়াতে যাব। হঠাৎ করে এক জেলে বলেন ভাই সাগরের মাঝে জেগে উঠেছে বিশাল একটি চর। তখন বুদ্ধি করলাম কিভাবে যাব। পরে ফেসবুক আইডিতে একটি পোস্ট দিলাম “নতুনের সন্ধানে আমরা” যাচ্ছি, আপনারাও সঙ্গী হতে পারেন। এরপর ২০১৭ সালে ৫ ডিসেম্বর কয়েক জন মিলে ট্রলার যোগে ওই চরে যাই। এর পর শুরু হয় এ চরটির শুভ সূচনা। প্রতিবছর শীত মৌসুমে কয়েক লাখ অতিথি পাখির আগমন ঘটে। আর শীত কমে আবার পাখিগুলো যে যার মতো অন্যত্র চলে যায়। প্রতিদিনই পর্যটকরা ট্রলার যোগে এ চরটিকে দেখতে যায়। কুয়াকাটা সৈকত থেকে ট্যুরিস্ট বোট নিয়ে মাত্র দেড় ঘণ্টায় চরবিজয় পৌঁছানো যায়। বঙ্গোপসাগরের বুকে এ যেন এক অনন্য ভুবন ‘চর বিজয়।

 

তবে ইউএসএইড ওয়ার্ল্ড ফিস ইকোফিস-২ এক্টিভিটি প্রকল্পের সহযোগী গবেষক সাগরিকা স্মৃতি এ চরটি থেকে ফিরে এসে বলেন, এই চরটিতে প্রতিনিয়ত পর্যটকরা যাচ্ছে। আরা তাদের ফেলে রাখা প্লাষ্টিক বর্জ দূষন বাড়াচ্ছে। এছাড়া পর্যটকদের সমাগমের কারনে অতিথি পাখি, ললা কাঁকড়া ও সামুদ্রিক কচ্ছপের অবাধ বিচরন কমে যাবে বলে তিনি ধারনা করেন। এছাড়া এই চরটির আশপাশে ছোট ফাঁসের জাল দিয়ে জেলেরা বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক মাছের পোনা নিধন করছে। তবে জেলেদের পাতা জালে অতিথি পাখিও মারা পড়ছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

 

মহিপুর বনবিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, চরটিতে পর্যায়ক্রমে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের আওতায় আনা হবে। পশু পাখির অভয়ারন্য গড়ে তোলার জন্য বেশ কিছু ম্যানগ্রোভ জাতীয় গাছের চারা রোপন করার পরিকল্পনা রয়েছে।
কুয়াকাটা পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, সাগরের মধ্যখানে একটুকরা ভূমি। এটি কুয়াকাটার জন্য আর্শীবাদ। তবে পযটকদের ভ্রমনের জন্য চর বিজয়কে আকর্ষনিয় পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে তোলার দাবি করেছেন তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক সাংবাদিকদের জানান, জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে চর বিজয়ে সবুজ বেষ্টনী করার পরিকল্পনা রয়েছে।সূএ:বাংলাদেশে প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com